AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের পুরোধা আবুল হুসেন


Ekushey Sangbad

০৬:৫৮ এএম, অক্টোবর ১৫, ২০১৪
বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের পুরোধা আবুল হুসেন

একুশে সংবাদ ডেস্ক: মুসলিম সাহিত্য সমাজের অন্যতম সংগঠক ছিলেন সাহিত্যিক ও চিন্তক আবুল হুসেন। তিনি একাধারে প্রাবন্ধিক, চিন্তাবিদ, সমাজ সংস্কারক। আজ তার মৃত্যুবার্ষিকী। ১৮৯৬ সালের ৬ জানুয়ারি যশোর জেলার পানিসারা গ্রামে মামার বাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস যশোরের কাউরিয়া গ্রামে। বাবা হাজী মোহাম্মদ মুসা ছিলেন একজন বিশিষ্ট আলেম। ১৯১৪ সালে আবুল হুসেন যশোর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। পরে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আইএ ও বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ (১৯২০), বিএল (১৯২২) ও এমএল (১৯৩১) ডিগ্রি লাভ করেন। কলকাতার হেয়ার স্কুলে (১৯২০-২১) শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু হয়। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিভাগের লেকচারার (১৯২১) এবং মুসলিম হলের হাউস টিউটর নিযুক্ত হন। ১৯৩২ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি পেশায় যোগদান করেন। তিনি বাংলার বিধানসভা কর্তৃক গৃহীত ওয়াক্ফ আইনের মূল খসড়া প্রণয়ন করেন। আবুল হুসেন মুসলমান সমাজে আধুনিক শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো বিস্তারের উদ্দেশে লেখনী পরিচালনা করেন। মননশীল প্রবন্ধকার হিসেবে তিনি কৃষক-সমাজের দুঃখ-দুর্দশার মুক্তির পথনির্দেশ করেন তার 'বাংলার বলশী' গ্রন্থের প্রবন্ধগুলোতে। আমাদের জাতীয় জীবনে এ গ্রন্থের রাজনীতিক তথা পল্লী সংস্কারকের পাঠ এখনও প্রাসঙ্গিক। রুশ বিপ্লবের প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি 'কৃষকের আর্তনাদ', 'কৃষকের দুর্দশা' ও 'কৃষি বিপ্লবের সূচনা' প্রবন্ধ রচনা করেন। আবুল হুসেন ছিলেন ঢাকার বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের পুরোধা। এ বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন প্রতিভাত হয় বাংলার দ্বিতীয় জাগরণ বলে। সেই জাগরণের তিনি ছিলেন প্রধান কা-ারি। তিনি মুক্তচিন্তা, মননশীলতা ও প্রগতিশীলতার সঙ্গে বাঙালি মুসলমানের পরিচয় করিয়ে দেয়ায় উদ্যোগী হন। ঢাকায় মুসলিম সাহিত্য সমাজ (১৯২৬) গঠন এবং এর মুখপত্র 'শিখা' সম্পাদনা ও প্রকাশ করে এ আন্দোলনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন। কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী মোতাহার হোসেন, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও আবুল ফজল ছিলেন তার সহযাত্রী। অন্ধভাবে শাস্ত্র ও সমাজবিধি পালন নয়, মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তি দ্বারা যাচাই করার পক্ষে তারা মত প্রকাশ করেন। অবশ্য তাদের এ আন্দোলনের পথ নিষ্কণ্টক ছিল না। ঢাকার রক্ষণশীল মুসলিম সমাজ থেকে বাধা এসেছিল। পরে অবস্থা এরূপ দাঁড়ায় যে, আবুল হুসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ত্যাগ করে কলকাতায় যেতে বাধ্য হন। আবুল হুসেন চিন্তা ও যুগের নবায়নে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি চেয়েছেন, যুগের প্রয়োজনে কালিক ও দৈশিক প্রেক্ষাপট বিচার করে বাঙালি মুসলমান যেন সামনের দিকে এগিয়ে যায়। তাই যুক্তি ও মানবকল্যাণের বোধ থেকেও তিনি ও তার সহচররা শুরু করেছিলেন বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন। নিজের বক্তব্যে বা লেখায় কখনোই তিনি কৌশলের আশ্রয় নেননি। সারা জীবন অপ্রিয় কঠোর সত্য কথা বলে তিনি ধর্মান্ধ, সম্মোহিত মুসলমানকে জাগাতে চেষ্টা করেছেন। তার এবং তার সহযোদ্ধাদের তৎকালীন চিন্তা ও রচনায় যেসব ক্ষুরধার বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে- তা বাঙালি মুসলমান সমাজে ছিল অকল্পনীয় ও অভূতপূর্ব। কিন্তু সেই জাগরণ পূর্ণতা পায়নি। আবুল হুসেন এবং তার সহযোদ্ধারা ধর্মীয় অনাচারের ভিত্তিটিকে শক্ত হাতে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এর পরের পর্বটি সম্পন্ন করার দায়িত্ব বর্তেছিল তার পরবর্তী প্রজন্মের ওপর। সেই উত্তরাধিকার ধারণ সম্ভব হয়নি। সমকালীন বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আবুল হুসেনের উত্তরাধিকার ধারণ আবশ্যক। বাঙালি মুসলমানদের শিক্ষা সমস্যা (১৯২৮), মুসলিম কালচার (১৯২৮), বাঙলার নদী সমস্যা, শতকরা পঁয়তালি্লশের জের, সুদ-রিবা ও রেওয়াজ, নিষেধের বিড়ম্বনা প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য রচনা। এগুলোর মধ্যে প্রথম তিনটি বিখ্যাত গ্রন্থ। বাংলা একাডেমি থেকে 'আবুল হুসেন রচনাবলি' নামে তার রচনাসমগ্র প্রকাশ হয়। মুক্তবুদ্ধি ও উদার চিন্তার অধিকারী আবুল হুসেন ছিলেন এদেশে অসাম্প্রদায়িক সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম পথিকৃৎ। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৩৮ সালের ১৫ অক্টোবর কলকাতায় তিনি পরলোকগমন করেন। একুশে সংবাদ ডটকম/মামুন/১৫.১০.২০১৪
Link copied!