AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বাংলা ভাষা আমাদের জাতীয় সম্পদ


Ekushey Sangbad

০৮:২৪ এএম, অক্টোবর ১৭, ২০১৪
বাংলা ভাষা আমাদের জাতীয় সম্পদ

একুশে সংবাদ : জাতীয় সম্পদের কথা উঠলেই আমাদের চোখে ভাসে গ্যাস, তেল, কয়লা, কৃষিক্ষেত্র, শিল্প-কারখানা ইত্যাদি। এসব সম্পদ বটে। এগুলোকে ব্যবহার করে জনগণ উপকৃত হয় বলেই তা জনগণের সম্পদ। আমরা কখনও ভেবে দেখেছি যে, এগুলোকে ব্যবহার করার জন্য ভাষা অপরিহার্য। ভাষা প্রয়োগ না করে, শ্রমশক্তির সঙ্গে চিন্তাশক্তি যুক্ত না করে এগুলোকে কাজে লাগানো যায় না-কোনো উৎপাদনও সম্ভব হয় না। গ্যাস, তেল, কয়লা, কৃষিক্ষেত্র, শিল্প-কারখানা এগুলোতে যারা কাজ করেন তারা কাজের জন্য কোন ভাষায় চিন্তা করেন। কোন ভাষায় তারা যন্ত্রপাতির সঙ্গে, কাজের পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হন? বাংলাদেশে অবশ্যই বাংলা ভাষা। ইংরেজির মাধ্যমেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু শিখতে হয়। যারা ইংরেজি মাধ্যমে শেখেন তারাও মনে মনে বাংলা অবলম্বন করেই চিন্তা করেন এবং পরে ইংরেজিতে অগ্রসর হন। ইংরেজির মাধ্যমে জ্ঞান নিয়ে তারা বাংলায় ফিরে আসেন। এতে মনের মধ্যে, চিন্তার প্রক্রিয়ায় অনুবাদের একটি ব্যাপার ঘটে। বিদেশি ভাষায় জ্ঞানার্জনের বেলায় এ অনুবাদ অপরিহার্য- এর কোনো বিকল্প নেই। বিদেশি ভাষাকে মাতৃভাষার স্থান দিতে গেলে তার ফল ভালো হয় না। জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ, মেঘনাদ সাহা, সত্যেন্দ্রনাথ বসু-এরা সবাই নিজেদের বিজ্ঞান সাধনায় মনে মনে এ অনুবাদ করার কথা বলেছেন এবং বাঙালির জন্য বাংলা ভাষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন, তারপর গুরুত্ব দিয়েছেন ইংরেজি ও অন্যান্য বিদেশি ভাষায়। এ অনুবাদের কোনো বিকল্প নেই বলে তারা মত প্রকাশ করেছেন। মধুসূদন, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, প্রমথ চৌধুরী, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, বেগম রোকেয়া প্রমুখও বিদেশি ভাষা বিশেষ করে ইংরেজি শেখার প্রশ্নে গুরুত্ব দিয়েছেন; তবে তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন বাংলা ভাষা ভালো করে শেখার ও বাংলা ভাষাকে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে-সাহিত্যে সমৃদ্ধ করে তোলার বিষয়ে। উন্নত ভাষাগুলোতে রয়েছে সমৃদ্ধ জ্ঞানভান্ডার। ওইসব জ্ঞানভান্ডার থেকে জ্ঞান আহরণ করে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করার ব্যাপারে সব সময় বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ মনীষীরা জোর দিয়েছেন। বাংলা ভাষা ও বাঙালিত্বকে বিসর্জন দেয়ার কথা তারা ভাবতে পারেননি। ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠাসূত্রে বাঙালি ইংরেজি শিখেছে। তাও খুব সংক্ষিপ্ত প্রক্রিয়ায় নয়। ইংরেজ আমলে বাঙালি বিস্ময়বিমুগ্ধ হয়ে পরিচিত হয় স্টিম ইঞ্জিন, অটোমোবাইলস ইত্যাদির সঙ্গে। প্রথমে এগুলোকে বাঙালি অলৌকিক ব্যাপার মনে করেছে। মনে করেছে, ইংরেজ অলৌকিক শক্তির অধিকারী। ইংরেজের আনুকূল্য লাভের ও ইংরেজি শেখার জন্য সে উন্মাদ হয়ে উঠেছে। অধিকাংশ বাঙালি অবশ্য ইংরেজির সুযোগ নিতে পারেনি, তারা দরিদ্র, দুর্বল। যারা ইংরেজির সুযোগ নিতে পেরেছে, প্রথম পর্যায়ে ইংরেজির প্রতি তাদের অনুরাগ ছিল একেবারেই অন্ধ। তারা যত কিছু ইংরেজি ভাষায় ও ইংলিশ স্টাইলে করতে চেয়েছে; কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানেই তারা বুঝেছে যে, বাঙালির সব কাজ- বিশেষ করে সৃষ্টিশীলতা ইংরেজিতে সাফল্যের পথ পাবে না। তখন তারা বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতিতে ফিরে আসে। মধুসূদন ইংরেজিতে কাব্য লিখে ব্যর্থতার বোধ নিয়ে বাংলায় ফিরে আসেন এবং বিস্ময়করভাবে সাফল্যের পরিচয় দেন। বঙ্কিম ইংরেজিতে উপন্যাস লিখে ব্যর্থতাবোধ নিয়ে বাংলায় ফিরে আসেন এবং পরম সাফল্যের পরিচয় দেন। ইংরেজ শাসনামলে অফিস-আদালতে, শিক্ষা ব্যবস্থায় বাঙালি ইংরেজি অবলম্বনে বাধ্য হয়েছে এবং ইংরেজিতেই সেসব করেছে। কিন্তু যেখানেই স্বাধীনতা পেয়েছে সেখানেই সেসব বাংলায় চর্চা করেছে। সাহিত্য সৃষ্টিতে ও জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চায় বাংলা ভাষাকে অত্যন্ত উন্নত অবস্থায় উন্নীত করেছে। বিশ শতকের শুরুতে জাপানি, চীনা, কোরিয়ান, ভিয়েতনাম, আফগান, ফারসি, আরবি ইত্যাদি ভাষার তুলনায় বাংলা অনেক উন্নত ও সমৃদ্ধ ছিল। পাকিস্তান আমলেও পূর্ব পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয় সব ব্যবস্থা বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির বিরোধী ছিল। তারপরও ব্রিটিশ শাসন থেকে বাংলার উন্নতির যে ধারা চলছিল, তা অব্যাহত ছিল। ১৯৫০, '৬০, '৭০, '৮০-এর দশকে ঢাকাকেন্দ্রিক সংস্কৃতিতে বাংলা ভাষার যে উন্নতি সাধিত হয়েছিল, তা বিরাট। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত গ্রন্থ তালিকা দেখলে বোঝা যায়, বাংলা ভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার বিরাট অগ্রগতি। ওই সময়ে অন্য অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বাংলায় গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে; কিন্তু পরে এমন সব ঘটনা ঘটতে থাকে যার ফলে বাংলা ভাষার সংস্কৃতিতে ভাটা দেখা যায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পর বিশ্বব্যবস্থায় যে পরিবর্তন ঘটে, তাতে বাংলার অগ্রগতি রুদ্ধ হয়ে যায়। ইংরেজির প্রতি আকর্ষণ প্রবল হয়। কিন্তু ইংরেজি শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা যে উন্নত হয়েছে তা বলা যাবে না। যেসব ঘটনা দ্বারা বাংলার গতি রুদ্ধ হয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যাক- এনজিও ও সিভিল সোসাইটির প্রবর্তন। এসব সংস্থা পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিবর্গের অর্থসাহায্য বা অনুদান নিয়ে কাজ করে। এদের কার্যক্রম ও ভূমিকা বাংলা ভাষার স্বাভাবিক বিকাশের পরিপন্থী। এরা সব কাজ সরলভাবে করে না, কূটনীতি অবলম্বন করে থাকে। নিওলিবারেলিজম কার্যকর করা। বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল, জাতিসংঘ ইত্যাদি নানা কৌশলে এবং সরাসরি চাপ দিয়ে অর্থনীতিতে, রাজনীতিতে ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে নিওলিবারেলিজম অবলম্বন করে নগ্ন পুঁজিবাদ প্রবর্তন করে চলছে। একদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সম্পূর্ণ অবসান ঘটিয়ে নগ্ন পুঁজিবাদ প্রবর্তন, অন্যদিকে নিঃরাজনীতিকরণ ও সংস্কৃতির বহুত্যবাদ। এ প্রক্রিয়ায় যারা যুক্ত তারা ইংরেজির অন্ধ অনুসারী। এদের কার্যকলাপ দ্বারা বাংলাবিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে। বিশ্বায়ন। বিশ্বায়ন হলো অত্যুন্নত প্রযুক্তির সুযোগ নিয়ে উপনিবেশবাদ, ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ধারায় বিশ্বব্যবস্থার পুনর্গঠন। বিশ্বায়নপন্থীরা নানাভাবে ইংরেজির প্রতি অনুরাগ ও বাংলার প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলোপ ও সমাজতন্ত্রের ব্যর্থতা। এর ফলে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুসরণে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল, জাতিসংঘ ইত্যাদি নির্দেশ অনুসরণ করেই চলতে হবে। ধারণা সৃষ্টি করা হয়েছে যে, এ ধারায় চলতে হলে ইংরেজি অবলম্বন করতে হবে-বাংলা নিয়ে কিছু করা যাবে না। নতুন প্রযুক্তির ফলে সৃষ্ট বিভ্রান্তি। টেলিভিশন, ইন্টারনেট ইত্যাদি দেখে অনেকের মনে ধারণা জেগেছে যে, যারা এসব আবিষ্কার করেছে-পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিবর্গ তারা অলৌকিক শক্তির অধিকারী। ফলে তাদের শক্তির প্রতি দেখা দিয়েছে এক অদ্ভুত মোহমুগ্ধতা। ধারণা জেগেছে যে, শুধু ইংরেজি ভাষার মাধ্যমেই এসব সম্ভব। সে জন্য ইংরেজির দিকে প্রবল ঝোঁক দেখা দিয়েছে এবং বাংলার প্রতি বিরূপ হয়েছে। অর্থ আয়ের জন্য ইংরেজি। ধারণা সৃষ্টি করা হয়েছে যে, প্রভূত অর্থ আয় ও সম্পত্তির মালিক হওয়ার জন্য এ যুগে ইংরেজিই অবলম্বন। বৈশ্বিক বাস্তবতায় ইংরেজির বিকল্প নেই। সে জন্য ইংরেজির প্রতি অন্ধ আকর্ষণ। এ রাষ্ট্রগুলোকে বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে গেলেই দেখা যাবে, ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের লক্ষ করা দরকার, কোনো রাষ্ট্রই জাতীয় ভাষা ত্যাগ করে ইংরেজি গ্রহণ করছে না। যদি কোনো রাষ্ট্র জাতীয় ভাষা ত্যাগ করে ইংরেজি গ্রহণ করে থাকে তা হলে সেটা এমন কোনো দৃষ্টান্ত নয় যে, বাংলাদেশকে তা অনুসরণ করতে হবে। আমাদের অনুসন্ধান করে দেখা দরকার ফ্রান্স, জার্মানি, স্কেন্ডিনেভিয়ান রাষ্ট্রগুলো, রাশিয়া, জাপান, চীন প্রভৃতি রাষ্ট্রের ভাষানীতি। আমাদের দেখা দরকার ইংরেজি ও জাতীয় ভাষা নিয়ে ওইসব রাষ্ট্র কীভাবে চলছে। তারপর স্থির করা দরকার আমাদের জাতীয় ভাষানীতি। পর্যবেক্ষণে গেলেই দেখা যায়, জাতীয় ভাষা অবলম্বন করেই প্রত্যেক জাতি ও প্রত্যেক রাষ্ট্র উন্নতি সাধন করে। পরাধীন জাতিই বিদেশি ভাষা গ্রহণ করে। তারা স্বাধীনতা ও জাতীয় ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে। সংগ্রামের ধারা ধরেই তারা উন্নতি করে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় ইংরেজি মাতৃভাষা। এ ভাষাকে সমৃদ্ধ করার জন্য ওইসব রাষ্ট্রের উদ্যোগ-আয়োজনের অন্ত নেই। বাংলাদেশে আমরা যদি উন্নতি করতে চাই তাহলে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা ও বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সংগ্রাম করতে হবে। বাংলা ভাষা রাষ্ট্র ভাষা না থাকলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা থাকবে না। অন্যদিক থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা না থাকলে বাংলা ভাষাও রাষ্ট্রভাষা থাকবে না। জাতীয় ভাষা ও জাতীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে বাংলাদেশের সরকার এবং আওয়ামী লীগ, বিএনপি প্রভৃতি দলের কোনো সচেতনতা নেই। একমাত্র ক্ষমতালিপ্সা ও সম্পত্তিলিপ্সা তাদের চালকশক্তি। সে জন্যই বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মূল ধারাকে দ্বিধাবিভক্ত করে ইংলিশ ভার্সন থেকে নতুন ধারা সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে শিক্ষার সুব্যবস্থা হবে না। বাংলা মাধ্যমের শিক্ষাকে উন্নত করার এবং ভালো ইংরেজি শিক্ষার জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান ব্যবস্থায় যারা ছেলেমেয়েদের ভালো ইংরেজি শেখাতে চান তাদের জন্য ইংলিশ ভার্সন নয়, 'এ' লেভেল, 'ও' লেভেলই ভালো। আবুল কাসেম ফজলুল হক একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৭-১০-০১৪:
Link copied!