চট্টগ্রামে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য
একুশে সংবাদ : পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে কোচিং ও মডেল টেস্ট বাণিজ্য এখন রমরমা। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মোটা অঙ্কের বিনিময়ে কোচিং ও মডেল টেস্টে অংশ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের শতভাগ নিশ্চয়তার নামে চলছে এসব প্রতারণা। রমরমা কোচিং বাণিজ্যে নীতিমালা অসহায়।
২০১২ সালে সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার। এতে বলা হয়, সব বিষয়ে অতিরিক্ত ক্লাস করলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি নেয়া যাবে না। বিষয়টি সংযোজন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশোধন করে। নীতিমালা অনুযায়ী, ১ হাজার ২০০ টাকা দিয়েই শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ আটটি বিষয়ে পড়তে পারবে। অতিরিক্ত ক্লাসের জন্য মহানগর এলাকায় প্রতি বিষয়ে ১২টি ক্লাসের জন্য ৩০০ টাকা, জেলা শহরে ২০০ টাকা ও উপজেলা পর্যায়ে ১৫০ টাকার বেশি নেয়া যাবে না বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়। তবে ওই নীতিমালার ফাঁকফোকরে বিশেষ মহল কোচিং বাণিজ্য এখনও অব্যাহত রেখেছে।
সরেজমিন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আসন্ন পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক সমাপনী ও অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নগর ও উপজেলা পর্যায়ে আগের মতোই রমরমা কোচিং ও মডেল টেস্ট বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের এ বাণিজ্যে অংশ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। কোনো কোনো অভিভাবক এর সঙ্গে একমত পোষণ না করলে তাদের সন্তানরা নানা বৈরী পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে। নীতিমালার তোয়াক্কা না করে নেয়া হচ্ছে খেয়াল-খুশিমতো টাকা। কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাসিক হিসাবে, আবার কোনো প্রতিষ্ঠানে এককালীন টাকা আদায় করা হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার কোচিং ও মডেল টেস্ট বাবদ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নগর পর্যায়ে প্রতি মাসে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা আদায় করার তথ্যও পাওয়া গেছে। আর নগর পর্যায়ে জেএসসি পরীক্ষার কোচিং ও মডেল টেস্ট বাবদ নেয়া হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টারগুলোতেও একই হারে টাকা নেয়া হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে এ হারে টাকা আদায় করছে না, তবে নীতিমালার কোনো তোয়াক্কাও করছে না। নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অথবা নিজের বাসাবাড়ি অথবা অন্যত্র ভাড়া করা ভবনে শিক্ষকরা এ ধরনের বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। বাহারি নামের নানা কোচিং সেন্টারগুলোর পাশাপাশি অনেক কোচিং সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে নাম ছাড়া। কিছু কোচিং সেন্টার কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের শতভাগ নিশ্চয়তার নামে মানুষকে প্রতারিত করছে। বিভিন্ন এলাকায় সাঁটা হচ্ছে রঙবেরঙের পোস্টার ও ব্যানার।
অভিভাবকদের অভিমত, কোচিং বাণিজ্যের কাছে নীতিমালা অসহায়। নীতিমালায় উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে কোনো তদারক দল মাঠে নেই। বাধ্য হয়ে তারা সন্তানদের কোচিংয়ে দিচ্ছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, এ ব্যাপারে তারা অনেকের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন। থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তারা।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৮-১০-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :