প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় পাটকল শ্রমিকদের মুখে হাসি
একূশে সংবাদ : ব্যক্তিমালিকানায় থাকা বন্ধ শিল্প-কারখানা উদ্ধার করে ফের চালুর ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত রোববার (১২ অক্টোবর) সচিবালয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে এ ঘোষণা দেন তিনি।
তার এ ঘোষণায় নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন খুলনার বন্ধ থাকা পাটকলের হাজার হাজার শ্রমিক।
বেসরকারি পাট সুতা বস্ত্রকল শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সবুজ বুধবার দুপুরে বাংলানিউজকে বলেন, কোনো মন্ত্রী এ ঘোষণা দিলে আমরা খুশি হতাম না। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী নিজে এ ঘোষণা দিয়েছেন সে কারণে আমরা নতুন করে আশায় বুক বাঁধছি।
তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার ফলে খুলনার বন্ধ থাকা ব্যক্তিমালিকানাধীন ৪টি মিল চালু হবে এবং শ্রমিকদের অসহায় জীবন-যাপন দূর হবে। তাদের মুখে হাসি ফুটবে।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে অভিনন্দন জানিয়ে বাস্তবায়নের দাবিতে মিছিল-সমাবেশ করেছে বেসরকারি পাটকলের শ্রমিকরা।
বন্ধ মহসেন জুট মিলের শ্রমিক আব্দুস সালাম জানান, মিল বন্ধের পর অনেকে বেকার হয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন পার করছেন। কেউ কেউ হতাশায়
রোগে-শোকে ভুগছেন। বর্তমানে রিকশা চালিয়ে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছেন শ্রমিকদের কেউ কেউ।
প্রধানমন্ত্রী বন্ধ মিল চালু করবে এমন সংবাদ শুনে তিনি খুশি হয়েছেন বলে জানান।
জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে মিলগুলোকে রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়। পরে নব্বই দশকে বেশ কয়েকটি মিল ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে মহসেন, এ্যাজাক্স, সোনালী জুট মিলও ব্যক্তিমালিকানায় দেওয়া হয়। তবে অর্থসংকট ও লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে মালিকরা মিলগুলো বন্ধ করে রেখেছে বলে শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন।
বর্তমানে খুলনার মহসেন, এ্যাজাক্স, সোনালী ও স্পেশালাইজডসহ যশোরের আরও একটি মিল বন্ধ রয়েছে। এসব মিল চালুর দাবিতে শ্রমিকরা রাজপথ-রেলপথ, সমাবেশ, অবরোধ, বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন।
সোনালী জুট মিল গেটের সামনে কথা হয় এক শ্রমিকনেতার সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ শ্রমিকনেতা বলেন, মালিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে আর শ্রমিকরা মজুরি-বেতন না পেয়ে অসহায় জীবনযাপন করে। অনেক মালিক মিল দেখিয়ে ঋণ নিয়ে ঢাকায় গার্মেন্টস করেছে। এ খবর মিডিয়ায় প্রকাশ হয় না।
তিনি জানান, নব্বই দশকে খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ব মিলগুলো ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে একে একে মিলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। লোকসান বা অর্থসংকটে নয়, মালিকপক্ষের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে মিলগুলো বন্ধ হয়েছে। ফলে অর্ধ লাখ শ্রমিক বেকার হয়েছেন।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এর বাস্তবায়ন করা হলে বন্ধ থাকা খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৫টি মিল চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা খুলনা নিউজপ্রিন্ট, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি ও হার্ডবোর্ড মিলের শ্রমিকদের মাঝেও আশার আলো উঁকি দিয়েছে।
বন্ধ দাদা ম্যাচের শ্রমিক আব্দুস সত্তার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর খুলনার শ্রমিকরা অনেকটা আশায় বুক বেঁধে রয়েছে তাদের মিল চালু হবে। তারা দু’বেলা দু’মুঠো খাবার খেয়ে বেঁচে থাকবেন। তাদের কষ্টের অবসান হবে।
একূশে সংবাদ ডটকম/আর/১৯-১০-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :