ভেষজ চাষে সফল মধুপুরের কৃষকরা
একুশে সংবাদ: টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গারো গ্রামগুলোর চিত্র বদলে দিয়েছে ভেষজের বাণিজ্যিক চাষ। প্রাণ বৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি বাড়তি আয় রোজগার হওয়ায় দারিদ্র্য বিমোচনে ভেষজ চাষাবাদকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে অনেকেই। এখন তারা আগের চেয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, মধুপুর উপজেলার টেলকি গ্রামের নির্মলা হাগিদক বাড়িতে গারো চুং (মদ) তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতে হতো। জুন-জুলাইয়ে গারো মদের চাহিদা কমলে সংসারে অনটন নেমে আসতো। তার দুর্দশার অন্ত ছিলো না। কিন্তু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেম্প (সোসাইটি ফর প্রটেকশন অব মেডিসিনাল প্ল্যান্ট এ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট)-এর সাথে পরিচিত হওয়ার পর তার জীবনের কর্ম পরিধি বেড়ে যায়। সেম্প তাকে ভেষজ চাষে উদ্বুদ্ধ করে এবং প্রশিক্ষণ দেয়। পাশাপাশি বিনামূল্যে ভেষজ বীজ সরবরাহ করে।
প্রায় ৬ বছর আগে বাড়ির চারপাশের পতিত দুই একর জমিতে দুর্লভ প্রজাতির ভেষজ আবাদ শুরু করে। আর সেম্প উৎপাদিত ভেষজ এ্যালোপ্যাথিক কোম্পানি, আয়ুর্বেদ, ইউনানী, হোমিও ও কবিরাজ ঘরে কাচাঁমাল হিসেবে বিক্রির বন্দোবস্ত করে দেয়। ভেষজ বিক্রি করে তার মাসে আয় হয় ১০/১২ হাজার টাকা। ভেষজ চাষে বাড়তি কোন খরচ নেই। কোন পোকা-মাকড়ের উপদ্রব নেই। তাকে এখন আর গারো চুং (মদ) বিক্রি করে চলতে হয় না।
নির্মলা হাগিদকের দেখাদেখি সেম্পের কারিগরি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে গেচুয়া, জলই, গায়রা, ভেদুরিয়া, জয়নাগাছা, চুনিয়া, পীরগাছা ও রাজঘাট গ্রামের দুই শতাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গারো পরিবার ভেষজ চাষে এগিয়ে এসেছে। বাসক, শতমূলি, সর্পগন্ধা, কালমেঘা, অশ্বগন্ধা, নাগদানা, পুদিনা, অর্জুন, থানকুনি, চিতামূল, আমলকি, বহেড়া, হরিতকি, ঘৃতকুমারী, নাগেশ্বর, সোনালু, মেথি, যষ্ঠিমধু ও বিহিদানা সহ প্রায় ৫শ’ প্রজাতির দুর্লভ ও বিলুপ্ত প্রায় ভেষজের আবাদ হচ্ছে।
এগুলো বাজারজাত ও বিপণনে শুধুমাত্র এপি কোম্পানী এখান থেকে ১৪৭ প্রকার ওষুধি বৃক্ষের কাচাঁমাল কিনে নেন। সেম্পের সহযোগিতায় চাষীরা ২০টি ভেষজ নার্সারী গড়ে তুলেছে। এসব নার্সারীতে বিপুল পরিমাণ ভেষজ চারা রয়েছে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে গ্রাহকরা এসে চারা নিয়ে যায়। সেম্প ১৫টি এনজিওকে ভেষজ চাষের ওপর বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
সেম্পের চেয়ারম্যান রবি খান জানান, মধুপুরের প্রাকৃতিক বনাঞ্চল উজাড় হওয়ায় দেশীয় চিকিৎসার জন্য সস্তায় ভেষজ কাচাঁমাল সরবরাহের সব চেয়ে বড় উৎস বিনষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য এখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভেষজ চাষাবাদের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
একুশে সংবাদ ডটকম/প্রতিনিধি/মামুন/১৯.১০.২০১৪
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :