AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ভাবুন তো, কোথায় আছি আমরা?


Ekushey Sangbad

০৫:৫২ এএম, অক্টোবর ২০, ২০১৪
ভাবুন তো, কোথায় আছি আমরা?

একুশে সংবাদ : সকালবেলা আমি টিভির সামনে সাধারণত বসি না। ফলে তাৎক্ষণিক খবরাখবর কিছু জানতে পারি না। নাস্তা করে বাজারে গিয়েছিলাম। ফেরার একটু পরই আমার স্ত্রী বললেন একটা খারাপ খবর আছে। খুব একটা বিচলিত হইনি। কারণ ভালো খবর তো এখন সাধারণত শোনা যায় না। ভাবলাম পরিচিত কারও গ্রেফতার, জামিন বাতিল কিংবা মামলায় জড়ানোর খবর, কোনো সড়ক দুর্ঘটনার খবর অথবা বাসার ফ্রিজ, টিভি, ওয়াশিং মেশিন বা গিজার নষ্ট হয়ে যাওয়ার দুঃসংবাদ! না, ওসব কিছু নয়। বিষণ্ন কণ্ঠে জানালেন, পিয়াস করিম মারা গেছেন। চমকে উঠলাম খবরটা শুনে। মাত্র ক'দিন আগে ৩ অক্টোবর ওবায়েদ ভাইয়ের মেয়ে শ্যামা ওবায়েদের আমন্ত্রণে তার নেতৃত্বাধীন একটি সংগঠনের অনুষ্ঠানে প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল, কথা হয়েছিল। গুপ্তহত্যা, গুম-অপহরণের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় অন্যতম অতিথি আলোচক ছিলেন ড. পিয়াস করিম। বিএনপি ও বিএনপিপন্থীদের এ ধরনের অনুষ্ঠানে পিয়াস প্রায়ই অপরিহার্য আলোচক থাকতেন। আমাকে আলোচক হিসেবে দেখে একটু অবাকই হলেন। গিয়েছিলাম শ্যামা ওবায়েদের অনুরোধে। ওবায়েদ ভাইয়ের মেয়ে, তার কথা ফেলতে পারিনি। তাতেও দুই-একজন নাকি বলেছেন, 'কী ব্যাপার, কাজী সিরাজ আবার লাইন লাগাতে চাচ্ছে নাকি?' ওদের সঙ্গে লাইন লাগানোর জন্য যেন আমার ঘুম হচ্ছে না আর কি! যাকগে, প্রসঙ্গে আসা যাক। পিয়াস করিমের সঙ্গে আমার তেমন মধুর কোনো সম্পর্ক ছিল না। তার সঙ্গে পরিচয় ছিল তাও মনে ছিল না। অতি সম্প্রতি তিনিই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে তার একটা খারাপ সম্পর্ক যাচ্ছিল। হঠাৎ একদিন রাতে ফোন করলেন। মঞ্চের সংগঠকদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির কথা বললেন। আগে পরিচয় দিয়ে বললেন, বাড়ি কুমিল্লা। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কুমিল্লা জেলা সম্মেলনে চট্টগ্রাম থেকে এসেছিলাম আমি। উঠেছিলাম তখন আমাদের সংগঠনের কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি কামাল উদ্দিন চৌধুরীর (পরে বিএনপির জেলা সাধারণ সম্পাদক ও কুমিল্লা পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান) চর্থার বাসায়। পিয়াস করিমকে সে বাসায় নিয়ে এসেছিলেন সংগঠনের কুমিল্লা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আইউব (সাবেক অতিরিক্ত সচিব)। এরা দু'জনই এখন পরলোকগত। সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, আমি তাকে একটি বই পড়তে দিয়েছিলাম_ 'ছোটদের রাজনীতি'। সে কথা তার মনে আছে। আমারও মনে পড়ল। পিয়াস তখন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। সেই বয়সেই তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির হাতেখড়ি নিয়েছিলেন। বাংলাভিশনের এক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বন্ধু মাহফুজউল্লাহকে সাক্ষী রেখেও কথাটা তিনি বলেছিলেন। শেষ দেখার দিনও আবার বললেন। তার সম্পর্কে একটি মহলের চরম দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল ও স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষের লোক বলে যে প্রচারটা আছে, আমার যাতে সে ভুল ধারণাটি না থাকে সেজন্যই হয়তো বারবার তিনি তার অতীত স্মরণ করিয়ে দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, আমাদের অনেকের মতোই এখন বাম রাজনীতির সঙ্গে তিনি নেই সত্য, তবে যেরকম প্রচার আছে, সেরকম পচন তার ধরেনি। আমার মনে করা না করায় তার কিছু যায় আসে না। তা জেনেও শেষ দেখার দিন প্রেসক্লাবের সেই আলোচনা সভার ফাঁকে তাকে বলতে পেরেছিলাম, সব ব্যাপারে আমরা সবাই একমত হতে পারব বা হতেই হবে, তেমন কোনো কথা নেই; তবে তার বিরোধীরা যেমন ভাবে আমি তেমন ভাবি না। মাহমুদুর রহমান মান্নার ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত লেখায়ও স্পষ্ট হয়েছে, পিয়াস প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গেই যুক্ত থাকতে চেয়েছিলেন এবং সেই প্রত্যয় নিয়েই নাগরিক ঐক্যে যোগদান করেছিলেন। জনাব মান্না তাকে সংগঠনের আরও গুরুদায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন; কিন্তু তিনি তা নেননি। গণজাগরণ মঞ্চের ভয় এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি যাওয়ার হুমকির মুখে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সেই দুঃসময়ে তার পাশে দাঁড়ানোয় তিনি খালেদা জিয়া ও বিএনপির প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন। লেখালেখি, টকশোতে সাহসের সঙ্গে বিএনপি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন। শুধু ড. পিয়াস করিম কেন, শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী যারাই বিএনপি ও ২০-দলীয় জোটের পক্ষাবলম্বন করেন লীগপন্থীরা তাদের সবাইকেই মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের অনুসারী ও দোসর বলে চিত্রিত করে। অনেকে বলেন, এটা তাদের একটা 'ক্রনিক ডিজিজ'-এ পরিণত হয়েছে। পিয়াস গণজাগরণ মঞ্চের ব্যাপারে বিএনপির অবস্থানকে সমর্থন করেছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে, বিএনপির অবস্থানটা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থানের পরিপূরক নয়, ছিল আওয়ামী লীগের অবস্থানের বিরোধী। জাগরণ মঞ্চের সংগঠকদের সম্পর্কে খালেদা জিয়ার মন্তব্য ছিল দুঃখজনক এবং অতি অবিবেচনাপ্রসূত। তবে গণজাগরণ মঞ্চের ব্যাপারে শাসক লীগের অবস্থানটাও ছিল হীন রাজনৈতিক স্বার্থোদ্ধারপ্রসূত ও মেকি। পরে তা প্রমাণও হয়েছে। লীগ সরকারই জাগরণ মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে এবং মঞ্চের মুখপাত্র যে ডাক্তার ইমরান সরকারকে মাথায় নিয়ে নেচেছে তাকেই আবার পুলিশ দিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছে। কারণ জাগরণ মঞ্চের রণধ্বনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সর্বোচ্চ দ- নিশ্চিতকরণের সঙ্গে লীগ সরকারও বিট্রে করেছে। জামায়াতের সঙ্গে আপসের রাজনীতির যে অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে উঠেছে, তা এখন অনেক ডালপালা মেলেছে। তাহলে গণজাগরণ মঞ্চের মৌল চেতনার ব্যাপারে বিএনপি আর শাসক লীগের পার্থক্যটা কোথায়? শাসক লীগের অপরাধ কী পিয়াস করিমের ভূমিকার চেয়ে অধিকতর গুরুতর, নিন্দনীয় ও ধিক্কারযোগ্য নয়? গণজাগরণ মঞ্চ সম্পর্কে আওয়ামী লীগ-বিএনপির অবস্থান যাই হোক, আমরা যারা মঞ্চের রণধ্বনির সমর্থক ছিলাম এবং আছি, মনে করি দেশের সব স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষ তার পক্ষে আছে, থাকবে। মঞ্চ যে চেতনার প্রদীপ জ্বেলেছে, মঞ্চকে যদি আরও বহুধাবিভক্তও করা হয়, লক্ষ্যে না পেঁৗছানো পর্যন্ত এ প্রদীপ আলো ছড়াবেই। পিয়াস করিম তার জীবদ্দশায় একটা কথা পরিষ্কার করতে চেয়েছেন, তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে নন, তবে বিচারটা যেন স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের হয় এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থের উদ্দেশ্যে না হয়। লীগ সরকারও বারবার এ নিশ্চয়তা দিয়েছে, বিচার নিরপেক্ষ হবে। তাহলে কোন যুক্তিতে ড. পিয়াস করিমের মরদেহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিতে বাধা দেয়া হলো? শহীদ মিনারটাও কি 'মৌরসি পাট্টামূলে' শাসক লীগের নামে রেজিস্ট্রিকৃত? শহীদ মিনারও কি আওয়ামী লীগের দলীয় সম্পত্তি? এরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকেও দলীয়করণ করতে চেয়েছে শুরু থেকে। মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান সেনাপতি এ কে খন্দকার তার '১৯৭১ : ভেতরে বাইরে' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, '.... আওয়ামী লীগের তরুণ নেতারা, বিশেষ করে নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব, তোফায়েল আহমেদ শুধু নিজেদের সমর্থক এবং ছাত্রলীগের ছেলেদের গেরিলা হিসেবে রিক্র্যুট করা শুরু করেন। ... কর্নেল ওসমানী আমাকে জানান, শুধু আওয়ামী লীগের এমপিএ এবং এমএনএরা আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের যুবকদের মধ্য থেকে গেরিলা যোদ্ধা নির্বাচন করবেন।' অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধটাকেও তারা দলীয়করণ করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু পরে সেক্টর কমান্ডারদের চাপে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ও দলবহির্ভূতদেরও মুক্তিবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। স্বাধীনতার পর থেকে গোটা মুক্তিযুদ্ধকে তারা তাদেরই কৃতিত্ব বলে জাহির করে চলেছেন। কারও কোনো অবদানই স্বীকার করেন না তারা। শহীদ মিনারটা বাকি ছিল। এখন তাও দলীয়করণের নিন্দনীয় কাজটি করল তারা। ড. পিয়াস করিমের সঙ্গে কারও রাজনৈতিক বিরোধ থাকতে পারে; কিন্তু তার অনুরাগীদের শহীদ মিনারের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলে এবং তারা সেখানে তার মরদেহ রেখে সম্মান জানাতে চাইলে বাধা আসবে কেন? এই শীহদ মিনার তো সবার। অগণতান্ত্রিকতা, স্বেচ্ছাচার, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রেরণা কেন্দ্র। পিয়াস করিম তো শহীদ মিনারবিরোধী কোনো লোক নন। তার ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন বৈরী সিদ্ধান্ত নিল? কারা এ ব্যাপারে বিরোধিতা করেছে? ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নামধারী সরকারপক্ষীয় কিছু ছাত্র সংগঠন। গণজাগরণ মঞ্চের মূলধারা নয়, অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখার মতো একটি বাম সংগঠন সমর্থিত জাগরণ মঞ্চের একটি ভগ্নাংশ। এটি অন্যায়, অনৈতিক সিদ্ধান্ত। যারা পিয়াস করিমকে পছন্দ করেন না তারা যাবেন না; কিন্তু যারা তাকে সম্মান জানাতে চান তারা শহীদ মিনারে তার মরদেহ নিয়ে কেন শ্রদ্ধা জানাতে যেতে পারলেন না? আরও দুঃখজনক হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড নামক একটি সংগঠন মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউএজ সম্পাদক নুরুল কবির, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় শিক্ষক আসিফ নজরুল, সংবাদিক গোলাম মর্তুজা, আইনজীবী ড. তুহিন মালিক, কলামিস্ট ফরহাদ মজহার, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপিকা আমিনা মহসিনকেও শহীদ মিনারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কারণ, তারা সবাই পিয়াস করিমের মৃতদেহ শহীদ মিনারে নিতে চেয়েছিলেন। ভাবুন তো, কোথায় আছি আমরা? ভবিষ্যতে যদি লীগ সরকার ও শাসক লীগ বিরোধী কোনো সরকার ক্ষমতায় আসে এবং লীগ দলীয় বা তাদের সমর্থক কোনো সম্মানিত লোককে গণতন্ত্র হত্যাকারী, স্বৈরাচারের লোক অভিযোগ এনে মৃত্যুর পর শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শহীদ মিনারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, তখন কী হবে? কাজী সিরাজ একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২০-১০-০১৪:
Link copied!