পবিত্র কোরানে রাসুল (সা.) এর পদবী ও খেতাবসমূহ
একুশে সংবাদঃপবিত্র কোরানে রাসুল (সা.) এর অনেকগুলো পদবী ও খেতাব সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। যা সংক্ষেপে আমরা এখানে বর্ণনা করব:
নবী করিমের (সা.) পদবী ও খেতাবসমূহ
১। আহমাদ:
“ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ یأْتِی مِنْ بَعْدِی اسْمُهُ أَحْمَدُ ”। (১)
“ এবং আমি এমন একজন রাসুলের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আগমন করবেন। তাঁর নাম আহমাদ ”।
২। মোহাম্মদ:
“ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ ”। (২)
“ মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ্র রাসুল ”।
৩। আব্দুল্লাহ্:
“ وَأَنَّهُ لَمَّا قَامَ عَبْدُ اللَّهِ یدْعُوهُ ”। (৩)
“ আর এই যে যখন আব্দুল্লাহ্ (আল্লাহর বান্দা) তাঁকে আহবান করতে দাঁড়িয়েছিলেন ”।
৪। খাতামুন্ নাবিয়্যিন:
“ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِیین ”। (৪)
“ বরং তিনি হচ্ছেন আল্লাহর রাসুল এবং শেষ নবী ”।
৫। রাহ্মাতুল্লিল্ আলামীন:
“ وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِین ”। (৫)
“ আর আমরা তোমাকে বিশ্বজগতের জন্য রহমত রূপে প্রেরণ করেছি ”।
৬। বশীর ও নযীর:
“ وَدَاعِیا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِیرًا * یا أَیهَا النَّبِی إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِیرًا ”। (৬)
“ হে প্রিয় নবী! আমরা নিশ্চয়ই তোমাকে প্রেরণ করেছি একজন সাক্ষীরূপে, আর সুসংবাদদাতারূপে ও সতর্ককারীরূপে। এবং আল্লাহ্র অনুমতিক্রমে তাঁর প্রতি একজন আহবায়করূপে আর একটি উজ্জ্বল প্রদীপরূপে ”।
৭। আপনাকে মহান চরিত্রের অধিকারী বলা হয়েছে:
“ وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِیمٍ ”। (৭)
“ আর নিঃসন্দেহ তুমি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত ”।
৮। আপনাকে উত্তম আদর্শ বলা হয়েছে:
“ لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِی رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ ”। (৮)
“ তোমাদের জন্য নিশ্চয়ই আল্লাহ্র রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ বা নমুনা ”।
৯। কোমল হৃদয়:
“ فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِیظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِك ”। (৯)
“ আল্লাহর রহমত ও করুণাতেই তুমি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছিলে। আর তুমি যদি রুক্ষ ও পাষাণ হৃদয় বা নিষ্ঠুর হতে, তাহলে তারা তোমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো ”।
১০। তাওরাত ও ইন্জিলে আপনার নিদর্শন ও নাম উল্লেখ করা হয়েছে:
“ الرَّسُولَ النَّبِی الْأُمِّی الَّذِی یجِدُونَهُ مَكْتُوبًا عِنْدَهُمْ فِی التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِیل ”। (১০)
“ রাসুল যিনি উম্মী নবী, যার সম্পর্কে তারা তাদের নিজেদের কাছে রক্ষিত তাওরাত ও ইন্জিল লিখিত দেখতে পায় ”।
১১। পৃথীবির সমস্ত ধর্মের উপর বিজয় পাওয়ার অঙ্গীকার আপনার মাধ্যমেই করা হয়েছে:
“ هُوَ الَّذِی أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِینِ الْحَقِّ لِیظْهِرَهُ عَلَى الدِّینِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ ”। (১১)
“ তিনিই সেইজন যিনি তাঁর রাসুলকে হেদায়েত ও সত্য ধর্ম সহকারে প্রেরণ করেছন, যাতে এই দ্বীনকে অন্যান্য ধর্মের উপর প্রাধান্য দিতে পারেন, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে ”।
১২। আপনাকে সমস্ত মানব জাতির জন্য প্রেরণ করা হয়েছে:
“ وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِلنَّاسِ ”। (১২)
“ আর আমরা তোমকে সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরণ করেছি ”।
১৩। জিনদের জন্যও প্রেরণ করা হয়েছে:
“ قُلْ أُوحِی إِلَی أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِنَ الْجِنِّ فَقَالُوا إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا ”। (১৩)
“ বলঃ আমার প্রতি ওহী নাযিল করা হয়েছে যে, জিনদের একটি দল (আমার বাণী) শ্রবণ করেছে, অতঃপর তারা বলেছেঃ আমরা বিষ্ময়কর বা আশ্চযর্জনক কোরান শ্রবণ করেছি ”।
১৪। আপনি আপনার উম্মত ও সকল নবীদের (আ.) জন্য সাক্ষীসরূপ:
“ فَكَیفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِیدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلَاءِ شَهِیدًا ”। (১৪)
“ আর তখন তাদের অবস্থা কি দাঁড়াবে, যখন প্রত্যেক জাতি থেকে আমরা (তাদের কৃতকর্মের জন্য) একজন সাক্ষী ডেকে আনব, আর তোমাকে আনবো তাদের উপর সাক্ষীরূপে ”।
১৫। বিদ্রূপকারীদের বিপরীতে আপনাকে এলাহী সহায়তা দান:
“ إِنَّا كَفَینَاكَ الْمُسْتَهْزِئِینَ ”। (১৫)
“ আমরাই তো বিদ্রূপকারীদের বিরুদ্ধে তোমার জন্য যথেষ্ট ”।
১৬। কোরানের আয়াতের মাধ্যমে আপনার মনকে সুদৃঢ় করা হয়েছে:
“ كَذَلِكَ لِنُثَبِّتَ بِهِ فُؤَادَكَ وَرَتَّلْنَاهُ تَرْتِیلًا ”। (১৬)
“ আমরা এমনিভাবে অবতীর্ণ করেছি যেন এর দ্বারা তোমার হৃদয়কে সুদৃঢ় ও মজবুত করতে পারি, আর (এই জন্য) আমরা ক্রমান্বয়ে তা আবৃত্তি করেছি ”।
১৭। খোদা আপনার অনুরোধ ও সুপারিশ গ্রহন করবে:
“ وَلَسَوْفَ یعْطِیكَ رَبُّكَ فَتَرْضَى ”। (১৭)
“ আর শীঘ্রই তোমার পালনকর্তা তোমাকে (প্রচুর পরিমাণে) দান করবেন যে তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যাবে ”।
১৮। আপনার একটি বড় গুণ হচ্ছে প্রশস্ত বক্ষ হওয়া:
“ أَلَمْ نَشْرَحْ لَكَ صَدْرَكَ * وَوَضَعْنَا عَنْكَ وِزْرَكَ * الَّذِی أَنْقَضَ ظَهْرَكَ * وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَك”। (১৮)
“ আমরা কি তোমার বক্ষকে প্রশস্ত করে দেইনি? আর তোমার ভারী বোঝা লাঘব করিনি? যা তোমার পিঠে দুঃসহ বোঝা হয়ে ছিল। আর আমরা তোমার খ্যাতিকে করেছি সমুচ্চ ”।
১৯। কাওসারের মালিক:
“ إِنَّا أَعْطَینَاكَ الْكَوْثَرَ ”। (১৯)
“ নিশ্চয় আমরা তোমাকে কাওসার (প্রাচুর্য = কল্যাণ ও বরকত) দান করেছি ”।
২০। আপনি এলাহী সোজা সরল পথে আছেন:
“ إِنَّكَ عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِیمٍ ”। (২০)
“ নিঃসন্দেহ তুমি সরল ও সোজা পথে রয়েছ ”।
তাছাড়া খোদা আপনাকে বন্ধীদের সাথে দয়াশীল ও আহতদের শুশ্রুষা এবং রাতের এক ভাগে ইবাদত বন্দেগীর নির্দেশ দিয়েছেন।
যারা পবিত্র কোরান তেলাওয়াত করেন তারা এ বিষয়ে অবশ্যই অবগত যে, কোরানের একটি বড় অংশ নবী করিম (সা.) ও তাঁর আহ্লে বাইতগণ (আ.) ও তাঁর অনুরক্ত সাহাবায়ে কেরাম ও হযরতের চরিত্র ও শিশু, বৃদ্ধ, পুরুষ, মহীলা, মুমিন ও মোনাফেকদের সাথে আপনার রহমত ভরা আচরণ রয়েছে। আমাদের উচিৎ এই সর্ব শ্রেষ্ঠ নবীকে (সা.) যথাযথ মর্যাদা সহকারে জানা আর তার পবিত্র সুন্নাতের উপর আমল করা।
একুশে সংবাদ ডটকম/সংগ্রাম/২০.১০.১৪।
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :