AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বেশি নম্বর পাওয়ার অর্থ সে ভালো ছাত্র নয় : মুহাম্মদ নাজমুল হক


Ekushey Sangbad

০৬:২৩ এএম, অক্টোবর ২১, ২০১৪
বেশি নম্বর পাওয়ার অর্থ সে ভালো ছাত্র নয় : মুহাম্মদ নাজমুল হক

একুশে সংবাদ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তিনি । দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষার মান, নতুন পাঠ্যক্রমে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের সুযোগ নিয়ে সম্প্রতি খোলামেলা কথা বলেছেন এই শিক্ষাবিজ্ঞানী। কোচিং বাণিজ্য, চাকরির বাজারের পড়াশোনাসহ অন্যান্য বিষয়ও ছিল আলোচনায়। পরীক্ষায় প্রশ্নের পুরোপুরি উত্তর দিতে না পারলেও চেষ্টার জন্য নম্বর দেওয়া হয়। বিশেষ করে গণিতের ক্ষেত্রে এটা হয়। শিক্ষার্থী প্রশ্নের যে উত্তর দেয় সেটার তার জ্ঞানের মধ্য থেকেই। চেষ্টার জন্য তাকে কিছু নম্বর দেওয়া যেতে পারে। এটা অবৈজ্ঞানিক কোনো পদ্ধতি নয়। আগে পুরো অঙ্ক ঠিকভাবে করার পর শেষে এসে উত্তরে ভুল করলে তাকে নম্বর দেওয়া হতো না। এটা অবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। কারণ সে তো চেষ্টা করেছে। হয়ত কোনো একটা জায়গায় এসে ভুল করেছে। এটা ভালো ফল করার ক্ষেত্রে অনেকটা সহায়ক নয়? ধাপে ধাপে নম্বর দেওয়ার পদ্ধতি থাকলে ভালো হয়। এই আধুনিক পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী হয়ত আগের চেয়ে বেশি নম্বর পাচ্ছে। যারা দুর্বল শিক্ষার্থী তাদের ক্ষেত্রে এটা হতে পারে। ভালো শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এটা সমস্যার কিছু নয়। যারা ভালো তারা ভালো নম্বরই পাবে। এভাবে মেধা যাচাই সঠিকভাবে হচ্ছে? মেধা অবশ্যই যাচাই হচ্ছে পরীক্ষার মাধ্যমে। যদি শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে পড়াশোনা করে আসে তা হলে মেধা যাচাই করার সুযোগ আছে। আমার মনে হয় সমস্যাটা অন্য জায়গায়। কোথায় সমস্যা? শিক্ষার্থীরা শুধু নম্বর পাওয়ার জন্যই পড়াশোনা করে। এটা বিপজ্জনক। বেশি নম্বর পাওয়ার অর্থ সে ভালো ছাত্র নয়। ভালো ছাত্র হলেই যে সে বেশি নম্বর পাবে, এটারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। পৃথিবীতে অনেক বড় জ্ঞানী লোক আছেন যারা ভালো ছাত্র ছিলেন না। আইনস্টাইন তো পরীক্ষায় ফেল করতেন। বিল গেটসকেও ইউনিভার্সিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ভালো রেজাল্ট কিন্তু মেধার আসল চিত্র নয়। আমাদের পরীক্ষা পদ্ধতি কি মেধা যাচাইয়ের জন্য উপযোগী? পরীক্ষা পদ্ধতি সঠিক নয়। এটা নিশ্চিত। যদি স্কুলগুলো শুধু ফলের ওপর ভিত্তি করে মেধা যাচাই করে, তাতে আসলে মেধা যাচাই হয় না। মেধা সাবজেক্টিব মেটার। যেমন একটা ছাত্রকে আমি পড়াচ্ছি। আমি কিন্তু বুঝতে পারি ছাত্রটা খুব মেধাবী। সে জীবনে সফল হবে। আবার ক্লাসে প্রথম হয়ে আসছে সে জীবনে সফল নাও হতে পারে। তা হলে ভালো ফলধারীরা কর্মক্ষেত্রে খুব বেশি সফল নয়? বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বড় বড় স্কলার আছেন। তারা সবাই তো বিজ্ঞানী হন না। আবিষ্কার করতে পারেন না। অনেক ভালো ছেলেমেয়ে সরকারি চাকরিতে যাচ্ছে। আমলা, সচিব হচ্ছে। তাদের মধ্যে তো মেধাবী কর্মকর্তা নেই। সেনা সদস্যদের মধ্যেও তো মেধাবীরা কম। সব মধ্যম সারির শিক্ষার্থীরাই তো সব জায়গায় তুলনামূলক ভালো করছে। ফলের সঙ্গে কর্মজীবনের সাফল্যের সম্পর্কটা কী? পরীক্ষার ফল কিন্তু জীবনের সব কিছুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। সাফল্য এক জিনিস। যেটাকে পরিমাপ করা যায় কেবল কর্মজীবনে যাওয়ার পর। আর ফলাফল একটা সনদপত্র। ফলাফল আর পরবর্তী জীবনের সাফল্য এক জিনিস নয়। দুটি একসঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলে না। যে কারণে পরীক্ষার ফলের সঙ্গে মেধাকে না মেলানোই ভালো। বর্তমান পাঠ্যক্রমে মেধা বিকাশের সুযোগ কতটুকু? পাঠ্যক্রমে কয়েক বছর পর পর পরিবর্তন এনে এর মান বাড়ানো উচিত। যেটা অন্যান্য দেশে করা হয়। কেন্দ্রীয় শিক্ষাক্রম যখন পাঁচ বছর পর পরিবর্তন করা হয়, তখন নতুন হয়ত ১০ থেকে ১৫ শতাংশ যোগ হয়। এতে খুব পরিবর্তন আসে না। তা হলে শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের সুফল মিলছে না? শিক্ষাক্রমগুলো আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে কিছুটা সম্পর্কযুক্ত, এটা বলতে পারি। যদি ২০ বছর আগের বইয়ের সঙ্গে তুলনা করি, এখনকার বইকে আমি অবশ্যই বলব গুণগত পরিবর্তন আসছে। ছাপার দিক থেকে, বিষয়বস্তুর দিক থেকে, চিন্তার দিক থেকে। শিক্ষাক্রম অনুযায়ী কি পাঠদান পদ্ধতি এগোচ্ছে? শিক্ষাক্রমটা ভালো। কিন্তু সেটার বাস্তবায়নে কিছুটা দুর্বলতা আছে। শিক্ষাক্রমের উদ্দেশ্য কিন্তু মেধার বিকাশ, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল করে তোলা। যখন শিক্ষক এটা পড়াতে যান তখন শিক্ষক ও অভিভাবক উভয়েরই লক্ষ্য হচ্ছে অধিক নম্বর পাওয়া। পড়াতে গেলে শিক্ষকরা মূল উদ্দেশ্য বেমালুম ভুলে যান। কোনটা পরীক্ষায় আসবে, কোনটা পড়া উচিত সেটাই পড়ান। সৃজনশীল পদ্ধতিতে নতুন কী আছে? আসলে এটা নতুন কিছু নয়। শিক্ষাব্যবস্থায় ৫০ বছর ধরেই একটা পদ্ধতি চলে আসছে। যেটাকে আমরা বলি ক্রিটিক্যাল অ্যানালিটিক্যাল লার্নিং। শিক্ষার্থীরা চিন্তা করবে, নিজেরা বানিয়ে লিখবে- এ বিষয়টারই বাংলায় নাম হয়ে গেছে সৃজনশীল। শিক্ষকরা যদি ঠিকমতো পাঠদান করেন ছাত্ররা যদি ব্যাপারটা বুঝতে পারে, তা হলে যেকোনো ধরনের প্রশ্নের উত্তর তারা দিতে পারবে। এটাই স্বাভাবিক এবং শিক্ষাবিজ্ঞান তাই বলে। তা হলে সৃজনশীল পদ্ধতির সুফল কি আমরা পাচ্ছি? এটা রাতারাতি হবে না। নম্বরভিত্তিক পড়ালেখার এই মনোভাব গত ৩০ বছরের ফল। একটু একটু করে এই মনোভাব চাড়া দিয়েছে। ছাত্ররা নিজেরা নোট করে পড়ত। পরিশ্রম করত। তারপর পরীক্ষার খাতায় লিখত। এখন তো গাইড পড়েই নম্বর মিলছে। সৃজনশীল পদ্ধতি কি ত্রুটিমুক্ত? সৃজনশীল যে প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে এর অনেক ত্রুটি আছে। তবে এটা আমাদের শুরু। আরো ১০ থেকে ১৫ বছর সময় দিতে হবে। কী জন্য সময় লাগবে? শিক্ষকরা কিন্তু সৃজনশীল পদ্ধতিতে পড়ে আসেননি। তাদের কাছে আমরা খুব বেশি আশা করতে পারি না যে, তারা সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করবেন। এই সৃজনশীল পদ্ধতিতে পড়ে যেসব শিক্ষার্থী তৈরি হচ্ছে তারা শিক্ষক হলে প্রকৃত সৃজনশীল শিক্ষক হবে। শিক্ষার্থীরা কোচিং সেন্টার থেকে আসলেই কী ধরনের জ্ঞানার্জন করছে? কোচিং বা প্রাইভেট ছিল দুর্বলদের জন্য। যারা বুঝে পড়তে পারে না। বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীকে এখন শ্রেণিকক্ষে পড়ানো হয় না। তাই তারা বাধ্য হয়ে কোচিং সেন্টারে যাচ্ছে। কোচিং সেন্টারগুলো সেই সুবাদে শুধু নির্বাচিত কিছু পড়াশোনাই করাচ্ছে। নম্বর পাওয়ার জন্য যে কৌশল করা দরকার তারা শেখাচ্ছে। তা হলে এখান থেকে শিক্ষার্থীরা মুক্তচিন্তার বিকাশ বা নিজে থেকে কিছু তৈরি করার শিক্ষা পাচ্ছে না? কোচিং সেন্টার ছাত্রছাত্রীদের চিন্তা-চেতনা উন্মুুক্ত মন-মানসিকতা তৈরিতে কোনোভাবেই সাহায্য করে না। কিছু হলে স্কুলেই হচ্ছে। স্কুলে যতটুকুই পড়ায় ততটুকুই তাদের সম্বল। তা হলে কীভাবে এই কোচিং সেন্টারগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়? সে জন্য কোচিং সেন্টারগুলোকে রাতারাতি বন্ধ করে দিতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু এটা করা যাবে না। নিয়ন্ত্রণ করার একমাত্র উপায় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন করা। অভিভাবকদের কি এ ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা নেই? অবশ্যই আছে। আপনি যদি আপনার সন্তানকে কোচিং সেন্টারে পাঠান সরকারের পক্ষে তো বাধা দেওয়া সম্ভব নয়। আপনি কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দিলেন। কিন্তু অভিভাবকরা যদি চান নিজেদের বাসাতেই কোচিং সেন্টার খুলে বসল। তাই তাদের সহযোগিতা দরকার। তা হলে শিক্ষাব্যবস্থাকে দোষারোপের সুযোগ নেই? আমি ব্যক্তিগতভাবে দোষারোপ করি না। আমি শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত তাই জানি এটা যথেষ্ট পরিশ্রমের পর তৈরি হয়েছে। কোনো জিনিসই পরিপূর্ণ নয়। শিক্ষাব্যবস্থাও যুগে যুগে বদলাবে। এর দুর্বল দিক অনেক আছে, আবার সবল দিকও আছে। বাংলা মাধ্যম ও ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমের তফাত আছে? ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষাক্রম নেই। কিন্তু বাংলা মাধ্যমের আছে। ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয় থেকে পড়ে রাজনৈতিক, বৈজ্ঞানিক তৈরি হচ্ছে না। সব আসছে বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয় থেকে। এটা আমাদের শিক্ষাক্রমের ফসল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ফল বিপর্যয়ের পর বলা হচ্ছে শিক্ষার মান কমছে। শিক্ষার্থীরা মেধাহীন হয়ে পড়ছে। পরীক্ষার সঙ্গে মেধাকে মেলানো উচিত নয়। পরীক্ষা এক জিনিস মেধা আরেক জিনিস। বার্ষিক পরীক্ষার যে মূল্যায়ন ভর্তি পরীক্ষায় তা নয়। ভর্তি পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থীকে বাদ দিতে হয়। তাই সিলেবাসের বাইরে কিছু প্রশ্ন করতে হয়। আর এ জন্যই তারা ফেল করে। এর সমালোচনা করে কোনো লাভ নেই। শিক্ষামন্ত্রী বলছেন এমসিকিউ পদ্ধতিতে ত্রুটি আছে... এমসিকিউ একটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। বহু বছর থেকে এটা চলে আসছে। তবে এমসিকিউ প্রশ্ন তৈরি করার কতগুলো পদ্ধতি আছে। সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে যদি প্রশ্ন করা হয় তা হলে দেখা যাবে তার মধ্য থেকে অনুমান করেও উত্তর দেওয়া যাবে না। দোষারোপ করে লাভ নেই প্রশ্নপত্র তৈরি করা খুব কঠিন কাজ। এই পদ্ধতিতে অনুমান করে উত্তর দিলেও ভালো নম্বর পাওয়া যায় বলা হয়... চিন্তা-ভাবনা করে প্রশ্ন তৈরি করা হলে, ছাত্রদের যদি পড়াশোনা না থাকে তা হলে উত্তর দিতে পারবে না। তখন সে অনুমান করে উত্তর দেবে। কিন্তু দেখা গেল একই উত্তর যদি একাধারে অনেকগুলো ভরাট করা থাকে তা হলে উত্তরপত্র বাতিলের নিয়ম আছে। এমসিকিউ একটা ভালো পদ্ধতি। তবে শুধু এমসিকিউ দিয়ে মেধা যাচাই করা যাবে না। শিক্ষামন্ত্রী বলছেন পরীক্ষা না নিয়ে ফলের ওপর নির্ভর করে ভর্তি করতে। এটার সঙ্গে আমি একমত নই। কারণ একজন শিক্ষার্থীর যেকোনো কারণে পরীক্ষা খারাপ হতে পারে। নম্বর কম পেতে পারে। আসলে তার কম পাওয়ার কথা ছিল না। নম্বরের ভিত্তিতে যদি তাকে ভর্তি করানো হয় তা হলে সে শুরুতেই বঞ্চিত হলো। তাকে তার যোগ্যতা যাচাইয়ের সুযোগ দেওয়া হলো না। চাকরির বাজারের সঙ্গে আমাদের সিলেবাসের একটা বিপরীতমুখী সম্পর্ক আছে বলে মনে হয়। আপনি কী মনে করেন? আসলে আমাদের সিলেবাসগুলো একটু তাত্ত্বিক হয়ে গেছে। তবে সব বিভাগের শিক্ষার্থীরা চাকরির বাজারে খারাপ করছে, তা নয়। ব্যবসায় শিক্ষা, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভালো করছে। বিপদ হচ্ছে মানবিক শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য। পাস করে বের হওয়ার পর যে ধরনের চাকরির পরীক্ষায় তাদের অংশ নিতে হয় তার সঙ্গে একাডেমিক পড়াশোনার মিল থাকে না। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২১-১০-০১৪:
Link copied!