AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ঘুরে এলাম খৈয়াছরা


Ekushey Sangbad

০৮:৪২ এএম, অক্টোবর ২১, ২০১৪
ঘুরে এলাম খৈয়াছরা

একুশে সংবাদ : পৃথিবীর মানচিত্রে ছোট্ট একটি দেশ বাংলাদেশ। দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পাহাড়-পর্বত রয়েছে। আর এ কারণেই বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি- দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এই তিন জেলাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বলা হয়। এই এলাকাগুলো ছাড়াও দেশের উত্তর-পূর্বে সিলেট, মৌলভীবাজারেও পাহাড়, টিলা দেখা যায়। আর পাহাড় মানেই তার আনাচে-কানাচে লুকিয়ে থাকে অসংখ্য ঝরনা। পাহাড়ের গায়ে খৈয়াছরা তেমনই একটি দৃষ্টিনন্দন ঝরনা। খৈয়াছরা ঝরনা অনেকগুলো ধাপে পাহাড়ের চূড়া থেকে নেমে এসেছে। সাধারণত এখানে দশটি ধাপ পর্যন্ত যাওয়া যায়। ঝরনার একটি থেকে আরেকটি ধাপের দূরত্ব খুব বেশি না হলেও এটি অতিক্রম করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ২০১২ সালের মার্চে হঠাৎ সিদ্ধান্ত হলো খৈয়াছরা দেখতে যাব। মনটা অনেক আগে থেকেই ভ্রমণের জন্য অস্থির হয়ে ছিল। সুতরাং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে খুব বেগ পেতে হলো না। ঢাকা থেকে ট্রেনে রওনা হলাম। ভোরবেলা ট্রেন নামিয়ে দিল ফেনি রেল স্টেশনে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। কিন্তু বেড়াতে এসে বৃষ্টিকে ভয় পেলে চলবে কেন? বৃষ্টি মাথায় নিয়েই লোকাল বাসে পরবর্তী গন্তব্য মিরেরসরাই বড়তাকিয়া বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। বড়তাকিয়া বাজার খুব যে বড় এমন নয়। তবে বাজারের প্রাণ আছে। সেখানে গরম পরটার পর মহিষের দুধের চা দিয়ে সকালের নাস্তাটা সেরে নিলাম। আহ্! মহিষের দুধের চায়ের স্বাদ আজও জিভে লেগে আছে। এরপর হাঁটা ধরলাম গাঁয়ের পথ ধরে। রেল লাইন পার হওয়ার আগেই চোখের সামনে ভেসে উঠল সবুজ পাহাড়ের সারি। অলস ভেসে বেড়ানো ধবধবে সাদা ধুনো মেঘ যেন মিতালী করেছে দূরের সেই সবুজ পাহাড়ের সঙ্গে। দেখে মনটা ভরে গেল। লাউ, কুমড়া ও পটল মাচায় ছাওয়া ক্ষেত- তার মাঝ দিয়ে সরু পথ। যেতে যেতে সরু খাল পথ রোধ করে দাঁড়াল। অর্থাৎ এবার খাল পাড় হতে হবে। কিন্তু উপায়? কাপড় সেখানেই পরিবর্তন করে জল কেটে কেটে হাঁটতে শুরু করলাম। খালের পাথুরে পথ নিয়ে গিয়ে এমন একটি জায়গায় পৌঁছে দিল, যেখানে কানে এল অচেনা এক পশুর ডাক। কাঠ সংগ্রহরত কাঠুরিয়ার নিকট থেকে জানা গেল হরিণ ডাকছে। অল্প কয়েক বছর আগেও নাকি ছরার আশপাশে অনেক হরিণ দেখা যেত। যাই হোক, হরিণের কথা শুনে মন থেকে অজানা ভয়ের স্রোত অনেকটাই কেটে গেল। সবুজ লতাপাতা মাঝেমধ্যেই খালটিকে ঢেকে রেখেছে। অসমান পিচ্ছিল পথ, দুপাশের দৃশ্য দেখে সহজেই বোঝা যায়, দু-একদিন আগেই হঠাৎ বানের জলে ভেসে গেছে খালের বুক। খৈয়াছরা ইতিমধ্যেই ধরা দিয়েছে চোখের সামনে। অভিযাত্রীদের উল্লাসে ভেঙে গেল নীরবতা। অল্প দূরত্বেই একেকটি ধাপ। দেখে মনে হয়, দীর্ঘ থান থেকে জলের চাদর অনবরত নেমে আসছে নিচের দিকে। ঝরনা মাত্রই সুন্দর, কিন্তু খৈয়াছরার সৌন্দর্য একেবারেই ভিন্ন। মহাসড়ক থেকে এত নিকটে পাহাড়ের মাঝে চুপটি করে বসে আছে এই ঝরনা, অথচ স্থানীয়দের মধ্যে খুব কম সংখ্যক মানুষই তা দেখতে গিয়েছে। সেখানে এমনও লোক আছে, যাদের বয়স সত্তুর পেরিয়েছে কিন্তু খৈয়াছরা দেখেননি। কথাটি শুনে একটু অবাকই হলাম। তবে ইদানিং লোকজনের আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষ করে পত্রিকায় লেখালেখির পর ভ্রমণপিপাসু মানুষের মধ্যে এই ঝরনা নিয়ে এক ধরনের কৌতূহল সৃষ্টি হচ্ছে। কৌতূহল ওই ধাপের কারণেই। তবে শুকনো মৌসুমে এই ঝরনারই কিন্তু অন্য রূপ। সকাল দশটার মধ্যেই পৌঁছে যাওয়ায় আমাদের তাড়া নেই। সুতরাং শুরু হলো ঝরনার সামনে দাঁড়িয়ে ফটোসেশন। সেলফি নিয়েও ব্যস্ত হয়ে উঠল কেউ কেউ। এক পর্যায়ে মাথায় ভূত চাপল সবচেয়ে উপরের ধাপে ওঠার। সুতরাং সবাই মিলে সে চেষ্টাও করা হলো। এবং কষ্ট হলেও আমরা ভালোভাবেই উপরে উঠে গেলাম। সেখানে কিছুক্ষণ হইচইয়ের পর নেমে আসব এমন সময় সহযাত্রীদের একজন বলল, আরেকটু এগিয়ে দেখেই আসি কি আছে! আমরা সায় দিলাম। কারণ হাতে তো সময় রয়েছেই। কিন্তু এবার প্রমাদ গুণলাম। কারণ যে গেল সে তো আর ফিরে আসে না! অনেকেই বলছিল, সময় যখন আছেই তখন সীতাকুণ্ড যাওয়া যেতে পারে। আমারও এমন ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এ আবার কোন বিপদ হলো! পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট- তার আর ফিরে আসার নাম নেই। এখন তো আর বসে থাকা যায় না। উঠতে যাব এমন সময় হঠাৎ চিৎকার শুনতে পেলাম। ভ্রমণে এসে এর আগে কখনও এতটা ভয় পাইনি। কিন্তু যখন বুঝলাম এটা বিপদ নয়, উল্লাসের আনন্দ তখন দেহে প্রাণ ফিরে পেলাম। আমরাও এগিয়ে গিয়ে দেখলাম প্রায় একই মাপের আর একটি ঝরণা! অর্থাৎ একটি ঝরনা দেখতে গিয়ে আরেকটি ঝরনা আবিষ্কারের আনন্দে বেচারা এমন চিৎকার দিয়েছিল। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২১-১০-০১৪:
Link copied!