AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

তামাক ব্যবহার ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ জরুরি


Ekushey Sangbad

০৫:১৬ এএম, অক্টোবর ২২, ২০১৪
তামাক ব্যবহার ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ জরুরি

একুশে সংবাদ : তামাক খুব বাজে জিনিস, যা উৎপাদন থেকে ব্যবহার- সব পর্যায়ে মানুষের ক্ষতি করে। যারা নিয়মিত ধূমপান করে তাদের শরীরে যেসব রোগ বাসা বাঁধে, এমনকি অকাল মৃত্যু হয়, সে ব্যাপারে আমরা অনেকেই মর্মাহত হই, পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেউ বাঁচতে পারে না। যে ধূমপান করে সে তো নিজেও মরে অন্যকেও মেরে যায়। তার আশপাশে যারা থাকে তারাও ধোঁয়ায় আক্রান্ত হয়ে সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়; কিন্তু কেউ বুঝতে পারে না, কারণ সে তো ধূমপায়ী নয়। এ ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রয়েছে বেশিরভাগ নারী ও শিশু। স্বামী, ভাই, বাবার ধোঁয়ায় তাদের মৃত্যু ঘটতে পারে কিংবা হতে পারেন রোগগ্রস্ত। এসব জানা কথা। দেশে ধূমপানের বিরুদ্ধে আইন রয়েছে, শাস্তি ও জরিমানার বিধান রয়েছে; কিন্তু তাও থামছে না। কারণ যারা এ মরণ-পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করে বিপুল অঙ্কের মুনাফা গুনছে তাদের তৎপরতা থামছে না। তারা তরুণদের পেছনে লেগেই রয়েছে এবং সরকারকে এ বিষয়ে নির্লিপ্ত থাকার জন্য উৎসাহ জোগাচ্ছে। যত ইচ্ছা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আইন অমান্য করে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করছে সিগারেট পানের জন্য। ২১ সেপ্টেম্বর, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গ করে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বেনসন সিগারেটের প্রচারণা বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের টার্গেট করে এক জাঁকজমকপূর্ণ কনসার্টের আয়োজন করেছিল। যদিও তারা বিষয়টি কিছুটা গোপন রাখতে চেয়েছিল; কিন্তু তামাকবিরোধী সচেতন গণমাধ্যম ও বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট (বাটা), তামাকবিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) ও অন্যান্য সংগঠনের প্রতিবাদের মুখে তা স্থগিত করতে বাধ্য হয়। তামাকের প্রচারণার এ কাজ সম্পূর্ণভাবে আইনের লঙ্ঘন। এর জন্য সংশ্লিষ্ট যারা এ কনসার্ট আয়োজনে সহায়তা করেছেন তাদের ওপরও দায় বর্তায়। বিশ্বব্যাপী তামাক নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ জোরদার করা হচ্ছে। এ বছরের অক্টোবর মাসের ১৩ থেকে ১৮ তারিখে মস্কোতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (FCTC) স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর ষষ্ঠ সভা (COP6)। তবে এ গুরুত্বপূর্ণ সভা নিয়ে বাংলাদেশে খবর খুব একটা দেখা যায়নি। এ সভার আগেই বাংলাদেশে বৃহত্তম তামাক কোম্পানির এ ধরনের আইন ভঙ্গকারী কার্যক্রম কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। বোঝা যাচ্ছে তারা তোয়াক্কা করে না। বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (FCTC) প্রথম কয়েকটি স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ২০০৫ সালে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করেছিল। এ আইনের দুর্বল দিক চিহ্নিত করে ২০১৩ সালে সংশোধিত আইন হয়েছে। সেদিক থেকে বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে মোটামুটি চেষ্টা করছে, যদিও এক্ষেত্রে তামাক নিয়ন্ত্রণ সংগঠন এবং তামাকবিরোধী সাংবাদিকদের ভূমিকা উল্লেখ করা অবশ্যই দরকার। কপ৬ সভায় উত্থাপিত সব বিষয় নিয়ে এ লেখায় আলোচনা সম্ভব নয়। তবে বিশেষ কয়েকটি দিক এখানে তুলে ধরতে চাই। কপ৬ সভায় প্রকাশিত দৈনিক বুলেটিন থেকে তথ্য নিয়ে লিখছি। কপ৬ সভায় তামাক ও নারী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন এলায়েন্স (FCA) প্রকাশিত নারীদের আর উপেক্ষা করা যাবে না (Women cannot be Left Behind) পলিসি ব্রিফিংয়ে বলা হয়, FCTC Article 4.2 (d) অনুযায়ী জেন্ডার এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখানে এ ধারাটি তুলে ধরছি- FCTC Article 4.2 (d) : Strong political commitment is necessary to develop and support, at the national, regional and international levels, comprehensive multisectoral measures and coordinated responses, taking into consideration … the need to take measures to address gender-specific risks when developing tobacco control strategies. আগামী কপ৭-এ বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন নারীদের তামাকমুক্ত করার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নীতি-নির্ধারণে সহায়ক হবে এবং এ কাজে নারীদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা যাবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এরই মধ্যে তামাকবিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) বেশ সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য তামাকের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা রেখেছে এবং এখনও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের জন্য সচেষ্ট রয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে নারীদের সংগঠন বা জোট বাংলাদেশে আর নেই, অন্যান্য দেশেও খুব কম। বুলগেরিয়ায় Association Women Against Tobacco-Bulgaria নামক একটি সংগঠন আছে। তামাক কোম্পানিগুলো নারীদের সহজ টার্গেট হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য যেমন জর্দা-গুল ইত্যাদি ছাড়াও ধূমপানের দিকে নারীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা চলছে, কারণ এতে কোম্পানির বাজার সম্প্রসারিত হবে। পৃথিবীতে বছরে ১৫ লাখ নারী (১.৫ মিলিয়ন) তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে মৃত্যুবরণ করছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যদি নারীদের রক্ষার জন্য নির্দিষ্টভাবে কোনো নীতি গ্রহণ করা না হয়, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্য এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২৫ লাখ (২.৫ মিলিয়ন)। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ ঘটবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে। অথচ তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শক্তিশালী হলে এসব মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। মে মাসে প্রকাশিত বিডিনিউজ২৪.কম-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমা দেশগুলোতে ধূমপানের ওপর কড়াকড়ি বাড়ার কারণে তামাকজাত পণ্য প্রস্তুত কোম্পানিগুলো ভারত ও চীনের ভোক্তাদের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে। এখানে জনসংখ্যা বেশি, কাজেই বাজারও বড়। জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (জেএএমএ) নামের একটি স্বাস্থ্য সাময়িকীর খবরে বলা হয়, ভারতে ৩০ বছরে পুরুষ ধূমপায়ীর হার ৩৩.৮ শতাংশ থেকে কমে ২৩ শতাংশ হয়েছে। একই সময়ে নারী ধূমপায়ীদের হার ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩.২ শতাংশ হয়েছে। তামাক কোম্পানি নারীদের আকৃষ্ট করার জন্য সিগারেটের প্যাকেটে আকর্ষণীয় ছবি দেয়; FCTC-এর ১১ ধারা অনুযায়ী নারীদের জন্য প্যাকেজিং কেমন হচ্ছে, তা দেখার বিশেষ উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। অন্যদিকে FCTC ১৪ ধারা অনুযায়ী আগে নারীদের মাধ্যে ধূমপান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি শুধু গর্ভধারণ সময়কালে সীমাবদ্ধ ছিল; কিন্তু নারীদের মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণের পরিধি আরও বাড়াতে হবে এবং সব বয়সের নারীদের, বিশেষ করে কিশোরী ও তরুণীদের সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়। উৎপাদনের ক্ষেত্রে কপ৬ সভায় তামাক চাষের নেতিবাচক দিক তুলে ধরা হয়েছে। এবারের সভায় তামাক চাষের ক্ষতি এবং এ থেকে বেরিয়ে আসার পথ অনুসন্ধানমূলক গবেষণা প্রকাশ করা হয়েছে। কপ৬ সভার তৃতীয় দিনে (১৫ অক্টোবর, ২০১৪) প্রকাশিত বুলেটিনে একটি নতুন গবেষণা বইয়ের উন্মোচন উপলক্ষে বলা হয়, এ পর্যন্ত তামাক ব্যবহার বন্ধের জন্য বেশি মনোযোগ দেয়া হয়েছে; কিন্তু সরবরাহের দিক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তামাক চাষিদের আন্তর্জাতিক সংগঠন (International Tobacco Growers Association, ITGA) প্রচার মাধ্যমে তাদের বক্তব্য এমনভাবে প্রকাশ করে যেন FCTC বাস্তবায়ন না করা হয়। তারা দাবি করে এর ফলে চাষিদের ক্ষতি হবে, তারা দরিদ্র হয়ে পড়বে। কিন্তু মালাওয়ি, বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক চাষিদের দারিদ্র্যের কারণ সিগারেট কোম্পানি এবং তামাক পাতা কেনার কোম্পানি, অন্য কেউ নয়। তামাক চাষের বিক্রি পণ্য হচ্ছে তামাক পাতা এবং তামাক পাতা বিক্রির ক্ষেত্রে কোম্পানির শোষণমূলক নীতি চাষিদের কখনোই লাভের মুখ দেখতে দেয় না। তাদের মুনাফার লোভ দেখানো হয়; কিন্তু সত্যিকারের লাভ তাদের হয় না। শুধু তাই নয়, তামাক উৎপাদনে শিশু শ্রমের ব্যবহার অত্যন্ত বেশি। মালাওয়িতে প্রায় ৭৮ হাজার শিশু এ কাজে জড়িত। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব লেবারের হিসাবে পৃথিবীর প্রায় ১৫টি দেশে তামাক উৎপাদনে শিশু শ্রম ব্যবহার হচ্ছে। এটা দারিদ্র্যের লক্ষণ। বাংলাদেশে উবিনীগের গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক চাষে পারিবারিক শ্রম হিসেবে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে তামাক পাতা মাঠ থেকে ঘরে এনে চুলি্লতে তোলার সময় শিশুদের ব্যবহার করা হয়। শিশুদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিতে হয়, এ সময় তাদের কোনো পরীক্ষা থাকলে সে পরীক্ষাও দিতে পারে না। FCTC-এর ১৭ এবং ১৮ ধারা অনুযায়ী তামাক চাষ থেকে বিকল্প ফসল উৎপাদনে সহায়তা করার কথা রয়েছে, অথচ এ ব্যাপারে এখনও সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে উবিনীগের গবেষণায় সফলতার সঙ্গে খাদ্য উৎপাদনে ফিরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা দেখানো হয়েছে। কপ৬-এ উন্মোচিত আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা (IDRC) প্রকাশিত গ্রন্থে বাংলাদেশ, কেনিয়া ও ব্রাজিলের বিকল্প ফসল উৎপাদনের সাফল্য তুলে ধরা হয়েছে। তামাক চাষকে লাভজনক ও অর্থকরী ফসল হিসেবে এতদিন তুলে ধরা হয়েছে; কিন্তু আসলে তা সঠিক নয়। বাংলাদেশে তামাক চাষের অনেক ক্ষতির মধ্যে তিনটি বিশেষ ক্ষতি নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। এক. তামাক চাষের কারণে খাদ্য ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়, দুই. তামাক চাষে বিপুল পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহার হয় এবং তামাক পাতা পোড়ানোর জন্য বিপুলসংখ্যক গাছ কাটা হয়, যা পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে এবং তিন. তামাক চাষের কারণে নারী, পুরুষ ও শিশুদের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। প্রথম দুটি কারণ এরই মধ্যে স্বীকৃত হলেও স্বাস্থ্য ক্ষতির দিক থেকে তামাক চাষকে দেখা হয়নি; অথচ তামাক ব্যবহারের চেয়ে স্বাস্থ্যের দিক থেকে তামাক চাষ কোনো অংশে কম নয়। উবিনীগের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক চাষি পরিবারের প্রায় সবাই নানা রোগে ভুগছেন। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, হাত-পা, সারা শরীর ব্যথা, পেটের নানা ধরনের রোগ, চর্মরোগ এবং বিশেষ করে নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে। ওজন কম বাচ্চা হওয়া, সময়ের আগে প্রসব হওয়া, এমনকি মরা বাচ্চার জন্মদানের ঘটনা তামাক চাষি পরিবারে ঘটছে। এ বিষয়গুলো স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মীদেরও নজরে এসেছে। কাজেই বিষয়টি একদিকে কৃষি ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে দেখতে হবে অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। কাজেই তামাক চাষ বন্ধের উদ্যোগ নেয়া খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী তামাক চাষের নিয়ন্ত্রণে বিকল্প ফসল উৎপাদনের নীতিমালা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আশা করি, সরকার এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেবে। ফরিদা আখতার একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২২-১০-০১৪:
Link copied!