AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

আঞ্চলিক উন্নয়নের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট


Ekushey Sangbad

০৫:১৯ এএম, অক্টোবর ২৬, ২০১৪
আঞ্চলিক উন্নয়নের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট

একুশে সংবাদ : যে কোনো দেশের সার্বিক ও সমন্বিত উন্নয়ন অনেক বড় এবং ব্যাপক বিষয়। এর মধ্যে যেটি সচরাচর সর্বাগ্রে সামনে আসে তা হলো, উন্নয়নের নামে, উন্নয়ন বরাদ্দে আঞ্চলিক বৈষম্য কিংবা এমনকি আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট প্রান্তরে অঞ্চলভেদে আইন ও অধিকারগত কোনো ব্যত্যয় ঘটে কিনা, ঘটলে তার মাত্রা এবং প্রকৃতি কেমন। একথা অস্বীকারের জো নেই, উন্নয়ন বরাদ্দের ক্ষেত্রে অঞ্চলভেদে সাধারণত গোষ্ঠী বা দলীয় বিবেচনা প্রাধান্য পায়। নানা গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাষ্ট্রের চেয়ে সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে আঞ্চলিক উন্নয়ন। এটা ঐতিহাসিক সত্য, আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকার-সৃষ্ট আঞ্চলিক বৈষম্যের অবসান আকাঙ্ক্ষাই ছিল পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মূল লক্ষ্য ও প্রেরণা। তৎকালীন পাকিস্তানের নীতিনির্ধারক রাজনীতিক ও সামরিক-বেসামরিক প্রভাবশালী আমলারা অধিকাংশই ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানি। এ সুবাদে 'পূর্ব' এর তুলনায় 'পশ্চিম' পাকিস্তানে তুলনামূলকভাবে বেশি উন্নয়ন হয়েছিল অঞ্চলভিত্তিক। পশ্চিম পাকিস্তানেই সিংহভাগ বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহার ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হতো। অন্যদিকে বাংলাদেশ বা পূর্ব পাকিস্তান ছিল বরাবরই বরাদ্দবঞ্চিত। এ বৈষম্যের কথা তুলেই বাংলাদেশের স্বাধিকার এবং স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা অর্জনের দাবি ওঠে, আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয়। ইতিহাসখ্যাত 'ছয় দফা' দাবির অন্যতম মর্মবাণীও ছিল_ 'পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার অর্থনৈতিক এবং উন্নয়ন বৈষম্য দূর করার পথ ও পন্থা বের করতে হবে।' এ প্রেক্ষাপটেই শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্য দূরীকরণার্থে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশে কেন্দ্রীভূত চিন্তাচেতনায় পরিকল্পনা কমিশন গঠন করা হয়। সব অঞ্চলের সমান সুবিধা প্রাপ্তির কথা মাথায় রেখেই এ কেন্দ্রীয় ভাবনার মহামহিম কমিশন গঠিত হয়। এসব কথা কমিশন গঠনের গৌরচন্দ্রিকায় উদ্দেশ্য ও বিধেয় হিসেবে লেখা থাকলেও বাস্তবে দেখা যায় বশংবদ ভিন্ন চিত্র। সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দেখা গেল, সাবেক পাকিস্তানের মতোই বিশেষ দল, মত, গোষ্ঠী, নেতা, কর্মকর্তা বা অঞ্চল প্রাধান্য পেতে থাকে, যার ফলে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল দীর্ঘদিন অবহেলার শিকার হয়। যমুনা নদীর ওপর বহুমুখী সেতু নির্মাণের পর উত্তরবঙ্গে নানাবিধ উন্নয়ন প্রকল্প শুরু ও বাস্তবায়ন সহজ হচ্ছে। নির্মীয়মাণ পদ্মা সেতু চালুর ওপর নির্ভর করবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সুষম উন্নয়ন। আমাদের সংবিধানে লেখা আছে_ জন্মস্থান, বংশ, ধর্ম, অঞ্চল নির্বিশেষে সবার সমান সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির মৌলিক অধিকার থাকবে। কিন্তু বাস্তবে মৌলিক অধিকার প্রাপ্তি প্রশ্নাতীত হয় না অনেক সময় ও ক্ষেত্রে। বশংবদ নানা জটিলতা ও অপারগতার কারণ তো রয়েছেই। যে কোনো আঞ্চলিক উন্নয়নের সুবিধা ক্ষমতাসীন দল, নীতিনির্ধারক কর্মকর্তারা বেশি ভোগ করেন। সবার মৌলিক অধিকার সমভাবে সুনিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে যা যথেষ্ট বিচ্যুতি বা ব্যত্যয় বলা যায়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিদেশি সাহায্য প্রাপ্তিবিষয়ক বিভাগের ক্ষমতাধর কর্মকর্তারা দাতা গোষ্ঠীকে নিজ গ্রাম বা অঞ্চলে নিয়ে যান উন্নয়ন প্রকল্প নির্বাচন ও অর্থায়নের জন্য। দেখা যায়, বাংলাদেশের অধিকাংশ সাহায্য সংস্থা ও তাদের সহযোগী এনজিও কাজ করে ঢাকার অদূরের একটি বিশেষ অঞ্চলে। বোঝাই যায়, ওই অঞ্চলের প্রতি বিশেষ পক্ষপাতিত্ব রয়েছে। তাই বড় যে কোনো এনজিও এলেই ওই অঞ্চলে কাজ শুরু করে। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক পক্ষপাতিত্ব বাদ দিয়ে ও সর্বজনীনতার ভিত্তিতে মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণের আবশ্যকতা উঠে আসে। ২০০৭-০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশের পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের উন্নয়নের সমস্যা জানা এবং প্রতিকারের উদ্যোগ নিয়েছিল। সে সময় সরকার গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে পদ্মার দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ের জনগণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক সৌভাগ্য অবগাহনে তুলনামূলকভাবে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। পদ্মার ওপারে বিশেষত, বরিশাল ও খুলনায় উন্নয়নের ছোঁয়া পড়েছে বেশ কম। এমনকি বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রেও এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠী যথেষ্ট বিলম্ব ও বৈষম্যের শিকার হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকার মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের বাসিন্দারা বিদেশে চাকরির সুবিধা বেশি ভোগ করছেন। ফলে খুলনা বা বরিশালের চেয়ে এসব অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক জীবনযাত্রার মান যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল তো পিছিয়েই, এডিপিতে এসব অঞ্চলের উন্নয়ন প্রকল্প তালিকা তত্ত্ব-তালাশেও দেখা গেছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন অভিযাত্রায় তারা যথেষ্ট পিছিয়ে। বাংলাদেশের জিডিপির শতকরা ২৫ ভাগ আসে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে। এখানে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গরান বন (ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট), দুটি প্রধান সমুদ্রবন্দর, বিশ্বের দীর্ঘতম আনব্রোকেন সি-বিচ। অথচ উপকূলীয় অঞ্চলের স্থায়ী উন্নয়নে কেন্দ্রীয়ভাবে বিশেষ মনোযোগের অভাব পরিলক্ষিত হয়। এক পর্যায়ে একটি উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠনের কথা বলা হয়েছিল। কিছু কথাবার্তা হলেও আলোর মুখ দেখেনি সে পরিকল্পনা। তার মূল কারণ একটাই। উপকূলীয় অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিরা না সরকারে, না প্রশাসনে শক্তিশালী ভূমিকায় ছিল বা আছে। বাংলাদেশের উপকূল বরাবরই উপদ্রুত ও সুবিধাবঞ্চিত রয়েছে। অতি সম্ভাবনাময় ও সম্পদশালী উপকূলীয় অঞ্চল এবং সেখানকার মানুষ রয়েছে এখনও অরক্ষিত। আইলা বা সিডরের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রায়ই এ অঞ্চলের মানুষকে মোকাবিলা করতে হয়। অভিযোগ ওঠে সিডর ও আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষতিপূরণ পেতেও সমস্যা হয়েছে। সুন্দরবনে ক্ষতিগ্রস্ত জীববৈচিত্র্য পুনর্গঠন, পুনর্বাসন মনোযোগে রয়েছে সবিশেষ অপারগতা আর উদ্ভ্রান্ত উপেক্ষা। সবকিছুর মূলে রয়েছে ক্ষমতায়নের অসমতা, অপারগতা আর অঞ্চলভিত্তিক বৈষম্যের বিলাস। রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় নির্বাচনের আগে ইশতেহার ঘোষণা করে। প্রতিশ্রুতি দেয় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে তারা তদনুযায়ী কাজ করবে। নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনাকে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব বলা যেতে পারে এবং এর প্রচ্ছন্ন প্রভাব পড়ে আঞ্চলিক উন্নয়নে। দেখা যায়, জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে শুধু নিজের এলাকার উন্নয়নের কথা বলেন। স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও নিজেদের জনপ্রিয়তার বিষয় বিবেচনায় রেখে স্থানীয়ভাবে কর বা শুল্ক আরোপ করতে চান না। ভাবেন, এতে তার ভোট নষ্ট হবে। কিন্তু এমনটা হওয়া উচিত নয়। সব উন্নয়ন সব সরকারকেই করতে হবে। উন্নয়নের জন্য অর্থের প্রয়োজন। জনগণকে বোঝাতে হবে, আপনার অর্থ ব্যয় করা হবে আপনারই সেবায়। উন্নয়ন হওয়া দরকার সার্বিক ও নিরপেক্ষভাবে। ব্র্যাক সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখিয়েছে, নব্বইয়ের দশক থেকে ক্ষমতাসীন দল কিংবা প্রভাবশালী মন্ত্রীরা শুধু নিজেদের এলাকার উন্নয়ন করেছেন। এ তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই। জাতীয় বাজেটের ওপর আলোচনাকালে সংসদে দেখা যায়, সংসদ সদস্যরা প্রস্তাব উত্থাপন করেন, 'মাননীয় স্পিকার আমার অমুক এলাকায় ডাকঘর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাজেটে তা দেখতে পাচ্ছি না।' বাজেট তো জাতীয় উন্নয়নের দলিল। এখানে আঞ্চলিক স্বার্থ বা নিজের স্বার্থ মুখ্য হতে পারে না। জাতীয় বাজেটের পর্যালোচনায় আলোচিত হবে_ কোন দিকদর্শন, কোন কর্মপদ্ধতি সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করবে তার ওপর। ড. আকবর আলি খান এক চমৎকার গবেষণার ভিত্তিতে উল্লেখ করেছেন_ বাজেট পর্যালোচনায় প্রাপ্ত ১০ মিনিটের সুযোগ ও সময়ের সিংহভাগ সংসদ সদস্যরা প্রতিজনই ৬ মিনিট অর্থাৎ ৬০ শতাংশ সময় ব্যয় করেন দলের নেতাসহ অন্যদের স্তুতি ও বন্দনাগীতিতে। বাকি ৪ মিনিটে তারা নিজের কিংবা নিজ অঞ্চলের স্বার্থের কথা তুলে ধরেন। অথচ যেখানে জাতীয় বাজেটে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও পরামর্শ প্রস্তাব করাই বাঞ্ছিত ছিল। একইভাবে বিরোধী দলের অধিকাংশ সদস্য প্রথম ৬ মিনিট বাজেটের কূট-সমালোচনা করেন, পরে নিজের কিছু কথা থাকলে তা বলেন। এতে জাতীয় স্বার্থের প্রতিফলন ঘটে না। বিশেষ করে, বৈদেশিক সাহায্যের ব্যবহার-পদ্ধতি নিয়ে সংসদে সচরাচর কোনো আলোচনা হয় না। হলে দেশবাসী বুঝতে পারত উন্নয়ন কোথায় কী হচ্ছে, কীভাবে বিদেশের সহায়তা ব্যয় হচ্ছে, কোন কোন শর্তে কী প্রকার ও পরিমাণে বিদেশি ঋণ বা অনুদান সহায়তা নেয়া হচ্ছে। বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ, সংহতি ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের প্রতিফলন হওয়া সবচেয়ে জরুরি। দেখা গেছে, সংসদে উত্থাপিত লিখিত তারকা চিহ্নিত প্রশ্নগুলোও একই ধারায় হয়ে থাকে। প্রশ্ন আসে, 'মাননীয় মন্ত্রী বলবেন কি এ পর্যন্ত আমরা কত বৈদেশিক সাহায্য পেয়েছি?' এটা মহান জাতীয় সংসদে উত্থাপনযোগ্য কোনো প্রশ্ন হতে পারে না। এসব তথ্য সবখানেই পাওয়া যায়। বরং প্রশ্ন হতে পারত, 'এ পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে পাওয়া আমাদের বৈদেশিক সাহায্য দিয়ে কোন কোন এলাকায় কী কী উন্নতি হয়েছে?' তাহলে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে জনগণ তা জানতে পারতেন। সম্মানিত জনপ্রতিনিধিরা এ ধরনের প্রশ্ন করে জাতীয় চেতনাকে শানিত ও উজ্জীবিত করতে পারেন। প্রতিষ্ঠা করতে পারেন জবাবদিহির পরিবেশ। সাংবিধানিক আইন অনুযায়ী সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা সমগ্র দেশের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। যে মুহূর্তে তিনি সরকারের মন্ত্রী হবেন, সে মুহূর্তে তিনি থাকবেন না শুধু দলের কিংবা শুধু তার নিজের নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধি। তিনি শপথের সময় বলছেন, 'রাগ কিংবা অনুরাগের বশবর্তী হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।' এ কথার মাধ্যমে স্পষ্ট বোঝা যায়, তিনি শুধু নিজের অঞ্চলের কিংবা তার দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের প্রতি অনুরাগে পক্ষপাতিত্বে সিক্ত হবেন না। অন্যান্য অঞ্চলেরও দলমত নির্বিশেষে সবার প্রতিও সমভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবেন। যদি দেখা যায়, মন্ত্রী বা ক্ষমতাসীন দলের অঞ্চলে চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন হচ্ছে, যদি দেখা যায় কোনো এলাকার বিশেষ মন্ত্রীর ক্ষমতাবলে ওই এলাকায় অভূতপূর্ব সব উন্নয়ন কার্যক্রম হয়েছে। হঠাৎ করে ওইসব এলাকা দেখলে আরেক বাংলাদেশ কিংবা দেশের বাইরের কোনো জায়গা বলে মনে হবে। উন্নয়ন হোক তবে সব এলাকায় সমপর্যায়ে। যেসব অঞ্চল থেকে কোনো প্রভাবশালী মন্ত্রী আসেননি তারা শুধু কি রবীন্দ্রনাথের ভাষায় 'দরখাস্তের দ্বিতীয় পাতায়' চলে যেতে থাকবে? এ জাতীয় পক্ষপাতিত্বমূলক কাজের মাধ্যমে মন্ত্রীরা তাদের শপথ ও জাতীয় উন্নয়ন বিনির্মাণে প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ করছেন কিনা_ তা দেখার প্রশ্ন এসে যায়। মাননীয় মন্ত্রী মন্ত্রী হওয়ার পর যদি ভাবেন, আগামীবার ক্ষমতায় আসতে হলে নিজের এলাকায় কাজ দেখাতে হবে। এতে করে তিনি গোটা দেশের কাছে মন্ত্রী হিসেবে তার দায়িত্ব পালনে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারেন। গোটা দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটানো তার সাংবিধানিক দায়িত্বের পর্যায়ে পড়ে। এসব সমস্যা সমাধানের সময় ফুরিয়ে যায়নি। এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াসে সব সময় থাকতে হবে সংস্কারের, উন্নয়নের পক্ষে। বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণবিষয়ক কিছু প্রস্তাব_ প্রথমত, সব অঞ্চলের সমউন্নয়নে কেন্দ্রীয়ভাবে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। দাতা গোষ্ঠীর সব উন্নয়ন সাহায্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমানভাবে বণ্টন করতে হবে। অঞ্চল ও ক্ষমতায়নে বৈষম্য বাদ দিয়ে সবার প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘ বছরে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলোকে উন্নয়নের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে হবে। অবহেলিত অঞ্চলগুলোতে তাই বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ জরুরি। যে অঞ্চলের মানুষের ক্ষমতায়নের সুযোগ রয়েছে তারাই সব সুবিধা পাবে_ এ মনোভাব বাদ দিতে হবে। আপাতত, দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য হলেও সমঅধিকারের একটি নীতিগত সিদ্ধান্তে আসতে হবে। তৃতীয়ত, বৈদেশিক সাহায্যের ব্যবহার সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত। যে কোনো বৈদেশিক সাহায্য প্রস্তাব নিয়ে প্রথমে সংসদে আলোচনা হবে। এরপর এ সাহায্য কোথায়, কেন, কীভাবে, কী শর্তে ব্যবহূত হচ্ছে_ তার সবকিছু বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে সাব্যস্ত হবে। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে নীতিনির্ধারক মহোদয়দের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। চতুর্থত, আমাদের পরিকল্পনা নীতিতে গোটা দেশকে ইকোনমিক জোনিং করার বিষয় উল্লেখ আছে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তিতে এলাকাগুলো ভাগ করতে হবে। কোন এলাকায় কোন শিল্প হবে, কোন এলাকায় শিল্পাঞ্চল নাকি কৃষি প্রাধান্য পাবে_ তা কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারণ করে রাখা উচিত। যেমন_ উত্তরবঙ্গের কাঁচামালের প্রাপ্যতা অনুযায়ী সেখানে সেই ধরনের শিল্প গড়ে তুলতে হবে। আবার দক্ষিণাঞ্চলে মাছের প্রাপ্যতাভিত্তিক ফিশ প্রসেসিং, পোনা চাষনির্ভর শিল্প গড়ে উঠবে। এভাবেই সম্ভাবনাভিত্তিক প্রতিটি অঞ্চলকে ইকোনমিক জোনিং বা অর্থনৈতিক সম্ভাবনা অনুযায়ী ভাগ করা উচিত। পঞ্চমত, অনগ্রসর এলাকাগুলোর জন্য শুল্কনীতি, বাণিজ্যনীতি, রফতানিনীতি ও বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে নীতিমালা শিথিল বা সমন্বয় করা উচিত। আঞ্চলিক বা অর্থনৈতিক বৈষম্যের সৃষ্টি হলে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। সাম্প্রতিক আন্দোলনে দেখা যায়, কিছু এলাকার মানুষ অতিরিক্ত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। দীর্ঘদিনের অবহেলায় পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও না পাওয়ার বঞ্চনা বেদনায় সংক্ষুব্ধ হয়ে নিজেরাই নিজেদের সম্পদের ক্ষতিসাধন করেছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে বলেছেন, সমতার ভিত্তিতে সবার ও সব অঞ্চলের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ পক্ষপাতিত্বপূর্ণ আচরণ হ্রাস পেলে সন্ত্রাস হ্রাস পায়। ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ সাবেক সচিব ও এনবিআরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৬-১০-০১৪:
Link copied!