'কারিগরি শিক্ষা নিয়ে কেউ বেকার থাকে না'
একুশে সংবাদ : ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জলিল। একজন সফল ব্যক্তিত্ব। জন্ম নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার মৌলভিপাড়ায়। বাবা আলহাজ আব্দুস সাত্তার একজন ব্যাংকার। মা আরিফা সাত্তার গৃহিণী। বাবা সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্কুলে পড়ালেখা করতে হয়েছে। এসএসসি পাশের পর ডিপ্লোমা, বিএসসি ও এমবিএ করার পর একটি বায়িং হাউজের ব্যবসা শুরু করেন। দক্ষ কারিগর পেতে তাকে সমস্যায় হয়। তখন সিদ্ধান্ত নেন দক্ষ কর্মী তৈরির মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের জন্য কিছু করবেন।
আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে একটি ভালো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজে নেমে পড়েন আব্দুল জলিল। প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়াই ছিল তার উদ্দেশ্য। তিনি এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন যা অন্য প্রতিষ্ঠানের জন্য মডেল হবে। এ লক্ষ্য নিয়ে ২০০৭ সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি (এনআইএফটি) লিমিটেডের যাত্রা শুরু হয়।
ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জলিল বর্তমানে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল টেকনোলজি, ভাইব্রেটর ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (এনআইইটি) লিমিটেড, ন্যাশনাল প্রফেশনাল ইনস্টিটিউটের (এনপিআই) জেনারেল সেক্রেটারি, ওয়েস্টার্ন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডব্লিউ) ট্রাস্ট, ন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড সোসাল ডেভলপমেন্ট (এনআরএসডি) ফাউন্ডেশন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (এনআইইটি) ঢাকা, ওয়েস্টার্ন আইডিয়াল ইনিস্টিটিউট (ডব্লিউআইআই) নারায়ণগঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ প্রাইভেট পলিটেকনিক ওনারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিপিওএ) জয়েন সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর একজন সক্রিয় সদস্য।
এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তানজিনা ইভা
প্রশ্ন : আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কিছু বলুন ?
উত্তর : দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থেকে ২০০৭ সালে যাত্রা শুরু হয় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি (এনআইএফটি) লিমিটেডের। এখানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, গার্মেন্টস ডিজাইন অ্যান্ড প্যাটার্ন মেকিং, নিটওয়্যার ম্যানুফেকচার অ্যান্ড টেকনোলজি, ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি, অ্যাপ্যারেল ম্যানুফেকচার অ্যান্ড টেকনোলজির ওপর মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া হয়। রয়েছেন অভিজ্ঞ শিক্ষকম-লী। যখন এনআইএফটি থেকে শিক্ষার্থীরা ভালো করতে লাগল তখন স্বপ্নটা আরো বড় হতে থাকে। একে একে সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশনাল রিসার্চ অ্যান্ড সোসাল ডেভলপমেন্ট (এনআরএসডি) ফাউন্ডেশন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিসহ (এনআইইটি) মোট দশটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স এবং মাস্টার্স প্রোগ্রাম এবং কিছু প্রতিষ্ঠানে স্বল্পমেয়াদী কোর্স করানো হয়।
বর্তমানে এনআইএফটিতে দেড় হাজার, এনআইইটিতে প্রায় দুই হাজার, ডব্লিইআইআই এগার শ, এফপিআই এ নয় শ, সোনারগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী আছেন।
প্রশ্ন : শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পেছনের কারণ কী ?
উত্তর : পড়ালেখা শেষ করে প্রথমে একটি গার্মেন্টস বায়িং হাউজ করি। প্রতিষ্ঠানটি চালাতে গিয়ে আমার অভিজ্ঞতা হলো যে, এ সেক্টরে অভিজ্ঞ লোকের সংখ্যা খুব বেশি নয়।
ছোট-বড় সব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ইচ্ছা থাকে দক্ষ কারিগর দিয়ে কাজ করানো। সেক্ষেত্রে বায়িং হাউজে কাজ করতে গিয়ে আমারও এ চাহিদা ছিল। কিন্তু সবকিছু মিলিয়ে আমি সেটা পাচ্ছিলাম না। এ কারণে মনে হলো, এমন কিছু করা যেতে পারে যে আমি দক্ষ কারিগর তৈরি করব। এই উদ্দেশ্যে মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।
প্রশ্ন : উচ্চ শিক্ষার বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু আছে বলে আপনি মনে করেন ?
উত্তর : রাজধানীতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসছে। এর মধ্যে সিংহভাগ শিক্ষার্থী। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এতে ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তোলা যেতে পারে। এ লক্ষ্যে আমরা শুধু ঢাকাতেই নয়, নারায়ণগঞ্জেও বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শাখা খুলেছি।
প্রশ্ন : মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে আপনার প্রতিষ্ঠান কতটুকু ভূমিকা পালন করছে ?
উত্তর : আমরা মূলত চেষ্টা করি শিক্ষার্থীদের হাতেকলমে শিক্ষা দিতে। কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও আমরা চেষ্টা করি প্রাকটিক্যালের ওপর জোর দিতে। যেমন ধরুন, কোনো একটি কোর্সে শিপিংয়ের ওপর প্রায়োগিক ক্লাস নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে ঢাকায় আমাদের ক্যম্পাসে তো আর এটা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের সরাসরি কাজের স্থানে নিয়ে যাই। শুধু পাঠ্যপুস্তকে নয় বাস্তবধর্মী শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে আমরা মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করি।
প্রশ্ন : আগের তুলনায় এখন শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এর পেছনের কারণ কী ?
উত্তর : এমন অনেক শিক্ষার্থী আছেন যারা জেনারেল লাইনে পড়াশুনা করে বেকার আছেন। কিন্তু কারিগরি শিক্ষা নিয়ে কেউ বেকার থাকে না। শুধু চাকরি নয়, নিজে একটি ল্যাব বা ওয়ার্কশপ করেও কর্মসংস্থানের সুযোগ করতে পারে। অর্থাৎ কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকায় কারিগরি শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে।
প্রশ্ন : চাকরির বাজারে দেশের তরুণ-তরুণীরা নিজেদের কীভাবে টিকিয়ে রাখতে পারে?
উত্তর : শিক্ষার্থীদের আগে লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। সে কী করতে চায়। লক্ষ্যটাকে ঠিক করে চোখ-কান খোলা রেখে সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
প্রশ্ন : শিক্ষার্থী এবং অবিভাবকদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী ?
উত্তর : প্রথমে আমি অবিভাবকদের বলব, সন্তানদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিন। তারা কী চায়, তারা কোন বিষয়ে পড়াশুনা করতে চায়, কী হতে চায়। আর শিক্ষার্থীদের উচিত নিজের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ ভালোটা করা।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৬-১০-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :