AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

রেহাই দিন অসহিষ্ণু আলোচনা থেকে


Ekushey Sangbad

১১:১৮ এএম, অক্টোবর ২৭, ২০১৪
রেহাই দিন অসহিষ্ণু আলোচনা থেকে

একুশে সংবাদ : বামপন্থী বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর চটজলদি যে নিবন্ধ লিখেছেন একটি সহযোগী দৈনিকে, তার একটি মন্তব্য আকর্ষণ করেছে এ লেখককে। উমর সাহেব লিখেছেন, তার সালাহউদ্দীন ভাই জীবনভর কারও কাছে কিছু চাননি। আর দশজন স্কলারও যেসব জিনিস চান, সেগুলো থেকে তিনি দূরে ছিলেন। এর পাশাপাশি এত দ্রুততার সঙ্গে তিনি চলে গেলেন যে, তার জন্য কারও কোনো ভোগান্তি হলো না। কাউকে কোনো ধরনের দৌড়াদৌড়ি করতে হলো না। সালাহউদ্দীন আহমদের সঙ্গে বদরুদ্দীন উমরের মতপার্থক্য শুধু নয়, মতভেদ ছিল। কিন্তু অনেক আগে থেকে তাদের মধ্যে যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে, তা এক রকম অটুট ছিল স্যারের জীবনাবসান পর্যন্ত। সেটিও বলেছেন বদরুদ্দীন উমর। ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কায় তারা রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে সাক্ষাতে বা ফোনে কথা বলা সচেতনভাবে বন্ধ রেখেছিলেন বলে জানলাম। এটা অনেকেই করে থাকেন; করা উচিত বলেও মনে হয়। তবে ওই দুজনের মধ্যে কিছুদিন আগেও বাহাস হয়েছে প্রিন্ট মিডিয়ায়। দুজনের লেখালেখি পড়ে আসছি অনেকদিন ধরে আর তাদের চিন্তার বিবর্তনও কম খেয়াল করছি না। বিশেষত সালাহউদ্দীন স্যারের চিন্তাধারায় বিবর্তন ঘটেছে বেশি। ছাত্রজীবনে তিনি কড়া বামপন্থী ছিলেন। কলকাতায় থাকাকালে রীতিমতো শ্রমিক বেল্টে গিয়ে কাজ ও শ্রমিক রাজনীতিতে যোগদান করা মানুষ। পরে অবশ্য উচ্চতর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণাকেই পেশা হিসেবে নেন। এতে তিনি সফল হয়েছিলেন। ইতিহাসের শিক্ষক শুধু নন, তাকে বলা হয় ইতিহাসবিদ। আমরা সাংবাদিকরাও অনেক ক্ষেত্রে ভুলভাল পরিচয় লিখে প্রচার করে দিই। তাই ক্লিয়ার করে লিখলাম। সালাহউদ্দীন স্যারের সঙ্গে পেশাগত কারণে আমারও কিছু স্মৃতি রয়েছে। এর মধ্যে কোনো তিক্ততা নেই; সব ক'টা স্মৃতিই মধুর। লেখা সংগ্রহ করতে বা সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে কিংবা সম্মানী দিতে গিয়ে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে খটরমটর হয়, সম্পর্কের অবনতিও ঘটে। পেশাগত কারণে এ ধরনের অবনতি রোধে উদ্যোগীও হতে হয় আমাদের। কিন্তু সালাহউদ্দীন স্যারকে নিয়ে কখনও এসব করতে হয়নি। আপাদমস্তক অমায়িক মানুষ। কিন্তু নিজের মতে দৃঢ়। যেটা সঠিক মনে করেন, সেটি বলতে তার কোনো দ্বিধা নেই। শেষদিকে দেখতাম, তিনি অসাম্প্রদায়িকতাকে সবচেয়ে বড় করে তুলতেন। আমাকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে সেটা ঘুরেফিরে বলেছিলেন, মনে পড়ে। বদরুদ্দীন উমরও তার লেখায় সেটি স্পষ্ট করেছেন। তবে জনাব উমর মনে করেন, অসাম্প্রদায়িক বা ধর্মনিরপেক্ষ কিংবা সেক্যুলার মানুষও দুর্বৃত্ত হতে পারে। সেটা তো হতেই পারে। তবে এটি বেদনার বিষয় যে, সালাহউদ্দীন আহমদ ছাত্রজীবনে বামপন্থী হয়েছিলেন, শেষ জীবনে তিনি অসাম্প্রদায়িকতাটুকুও দেখে যেতে পারলেন না। তিনি মানবতাবাদী বুদ্ধিজীবী এমএন রায় দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন বলেও জানি। সে কারণেও অসাম্প্রদায়িকতাকে জীবনজুড়ে গ্রহণ করেছিলেন বলে মনে হয়। অনেক বামপন্থীকে কিন্তু (বিবর্তিত হয়ে) সাম্প্রদায়িক হয়ে পড়তে দেখি। চিন্তার বিবর্তন সব সময় ইতিবাচক দিকে নাও যেতে পারে। এর আগের নিবন্ধে ভাষা-মতিনের রাজনৈতিক বিবর্তনের কথা বলেছিলাম এখানে। দেখিয়েছিলাম, তিনি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের ধারা থেকে কীভাবে সরে যান এবং স্বাধীন বাংলাদেশকেও তিনি ও তারা কোন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছিলেন। হঠকারী কর্মকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশের প্রথম শাসনামলে তাকে জেলে থাকতে হয়। মতিন সাহেবের অবশ্য কোনো দণ্ড হয়নি। এসব সত্ত্বেও এটা বলতে হবে, রাজনীতির ময়দানে কখনও বিক্রি হননি তিনি। দীর্ঘ জীবনে অভাব-অনটনের মধ্যেও নির্লোভ ছিলেন। সালাহউদ্দীন স্যার তাঁর চেয়েও বেশিদিন বেঁচেছেন। বৈধ রোজগারে পরিমিতিবোধের পরিচয় দিয়ে জীবনযাপন করে গেছেন। নানা প্রশ্নে যার মতভেদ ছিল, সেই বদরুদ্দীন উমরও এটা মনে করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভুললেন না। এটা মন ছুঁয়ে গেছে। একজন মানুষের যখন জীবনাবসান ঘটে, তিনি তখন সমালোচনার ঊর্ধে উঠে যান না নিশ্চয়ই। তবে মারা যেতে না যেতে অন্যায় সমালোচনা তার ক্ষেত্রে অনুচিত। তিনি যে মতের লোক ছিলেন বা যে ভূমিকা রেখে গেছেন, তার কথা তুলতে হলে সেটারও একটা ভাষা বা ভঙ্গি থাকা উচিত। সালাহউদ্দীন আহমদকে চটজলদি স্মরণ করতে গিয়ে বদরুদ্দীন উমর সেটি রক্ষা করেছেন দেখে ভালো লেগেছে। আমরা যারা এদের অনেক জুনিয়র, তাদের মধ্যে এ সংস্কৃতি যেন উত্তরাধিকার বলে বিবেচিত হয়। সালাহউদ্দীন স্যারের কবর হয়ে যাওয়ার পর আমিও দুর্বল হাতে তার একটি দিকের উল্লেখ করে একটু দুঃখ প্রকাশ করেছি ফেসবুকে। এটি দেখি কোনো কোনো বন্ধুকে আবার ক্ষুব্ধ করেছে। এটুকু বলে শুধু দুঃখ করেছিলাম যে, শেষ সাক্ষাৎকারে সালাহউদ্দীন স্যার দেশের প্রধান নির্বাহীর সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রমকে এক রকম ডিফেন্ড করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এটাও বলেছি, তিনি যেন তার বিশ্বাসের কথা বলছিলেন ওই সময়টায়। সত্যি বলতে, একজন ইতিহাসবিদের কাছ থেকে এটা আশা করিনি। এটাও বুঝতে পারছিলাম, কোনো রকম 'স্বর্ণ-রৌপ্য সূত্রে' আবদ্ধ হয়ে এসব বলছিলেন না তিনি। তার একটা উপলব্ধির জায়গা নিশ্চয়ই ছিল। কিন্তু বয়সের ভারে ক্লান্ত, কথা বলতে বলতে ঝিমিয়ে পড়া একজন স্কলারকে সেটা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করতে আর ইচ্ছা হয়নি। এমনটি লিখে আক্ষেপ করেছি যে, আমার উচিত ছিল একটা দিন সময় করে এ জ্ঞানতাপসের কাছে গিয়ে তার একান্ত উপলব্ধির কথা শোনা। সেটা আর করা হয়নি বলে দুঃখ রয়ে গেল। এভাবে বললে ছোট করা হয় না কিংবা কেউ ছোট হয়ে যান না। তিনি যেখানে বড়, তার ধারেকাছেও আমাদের মতো কেউ যেতে পারবে না। তাই বলে তার সীমাবদ্ধতা থাকলে সেটায় দৃষ্টি দেব না বা কৌতূহলও প্রকাশ করব না—এটা ঠিক নয়। একেক সময় একেকজন মানুষের ভূমিকা একেক রকম হতে পারে। আবদুল মতিনের ক্ষেত্রে তো দেখলাম, গৌরবময় ও অগৌরবের—দুই ভূমিকাই তার রয়েছে। প্রথমটির জন্য দ্বিতীয়টিকে নিশ্চয়ই হালকা করে দেখব না। আবার দ্বিতীয়টির জন্য প্রথমটি নেই হয়ে যাবে না। শেষ পর্যন্ত তিনি অবশ্য প্রথমটি দিয়েই চিহ্নিত হয়েছেন এবং সে পরিচয় নিয়েই চলে গেছেন আমাদের মাঝ থেকে। গোলাম আযমের মতো ব্যক্তিরও দেখি ভাষা আন্দোলনে একটা ভূমিকা ছিল। সেটি নিয়ে পরে তার নিজের মূল্যায়ন অবশ্য ছিল ভিন্নধর্মী। তা যা-ই হোক, ওই সময়ে ইতিবাচক ভূমিকা যদি তিনি রেখেই থাকেন—ওটা অস্বীকারের কিছু নেই। সে কারণে আবার নিশ্চয়ই একাত্তরে ও স্বাধীন বাংলাদেশে তার অত্যন্ত নেতিবাচক ভূমিকার কথা কেউ বিস্মৃত হবে না। সেজন্য বিধিবদ্ধ আদালতে সাজাও হয়েছে এবং সেটি খাটতে খাটতেই তিনি মারা গেলেন। কিন্তু মুশকিল হলো, পক্ষ-বিপক্ষ হয়ে আমরা ব্যক্তিকে হয় দেবতা, নয়তো ডাকাত বানাচ্ছি। এর মধ্যে যারা একটু নির্মোহভাবে দেখতে চাইছে, তাদের স্পেস বা পরিসর হয়ে পড়ছে সংকীর্ণ। একটা গণতান্ত্রিক সমাজে এ পরিসর বরং যতটা সম্ভব বাড়ানো দরকার। এটি ঘটলে উত্তেজনাপূর্ণ ও হিংসাত্মক আলোচনা কমে আসবে বলেই ধারণা। সালাহউদ্দীন স্যারকে নিয়ে তেমনটি হয়নি; হওয়ার অবকাশও ছিল না। তিনি নিভৃতচারী শিক্ষক ছিলেন, অমায়িক আর কখনও পার্টিজান হতে চাননি। তার সময়ে নীরবে কাজ করে যাওয়ার একটা ব্যাপার ছিল; অবকাশও ছিল মনে হয়। সে বৈশিষ্ট্য ধারণ করেই তিনি জীবন কাটিয়ে গেছেন। কিন্তু এখন তো সেলফোন, ইন্টারনেট ও ফেসবুকের যুগ। ইলেকট্রনিক মিডিয়া আর টকশোর সময় এখন। শুধু এসবে ব্যস্ত থেকেও দেখি একজন আলোচিত হয়ে উঠতে পারেন। এ প্রসঙ্গে সদ্যপ্রয়াত ড. পিয়াস করিমের কথা একটু বলতে চাই। ষাট পেরোনোর আগেই তার আকস্মিক মৃত্যু বেদনাদায়ক। এর ওপর তার মৃত্যুর পর ফেসবুকসহ মিডিয়ায় যেসব আলোচনা হয়েছে এবং যেসব ঘটনা ঘটে গেছে—যাতে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে তার বিদুষী স্ত্রীকেও, তাতে লজ্জিত বোধ করছি। সাধারণ এ ব্যাপারকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে, সেখান থেকে ফেরার পথ যেন নেই। একটা সময় লক্ষ করলাম, একাত্তরে প্রয়াত ব্যক্তির পিতার ভূমিকা হয়ে গেল তাকে মূল্যায়নের বড় উপাদান। পিয়াস করিমের বাবার ভূমিকার জন্য তিনি নিশ্চয়ই জবাবদিহি করবেন না। মি. পিয়াস জবাবদিহি করবেন তার নিজের ভূমিকার জন্য। তার ভূমিকাই তো দেখা যাচ্ছে একেক সময় একেক রকম। এখন একটা কাজ করা যেতে পারে—পিয়াসের নেতিবাচক ভূমিকা থেকে থাকলে সেটির জন্য তার পিতাকে জবাবদিহি করতে বলা! আরেকটি কথা, ড. পিয়াস করিমের যে ভূমিকাকে আমার কাছে নেতিবাচক মনে হচ্ছে—সেটি তো অন্যের কাছে ইতিবাচকও হতে পারে। সত্যি বলতে, শেষ ক'বছরে তার ভূমিকা আমার কাছে ছিল কিছুটা 'ইন্টারেস্টিং'। তাকে একটু বিভ্রান্ত বলেও মনে হয়েছে। মাহমুদুর রহমান মান্নার একটি নিবন্ধে দেখলাম, সরকারপক্ষের দ্বারা কিছুটা আক্রান্ত হয়ে বা বোধ করে তিনি বিএনপির ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছিলেন কিংবা নেবেন বলে স্থির করেছিলেন। সেটা নাকি বলেওছিলেন মান্না ভাইকে। তাহলে তো বলতে হয়, অকারণ বাড়াবাড়ি করে মুক্তভাবে মত প্রদানকারী একজন স্কলারকে ওইদিকে ঠেলে দেয়া হয়েছিল। ড. পিয়াসের মধ্যে বিএনপির দিকে যাওয়ার উপাদান ছিল বলেও মনে হয়। বামপন্থীদের মধ্যে তিনি যে ধারায় বেড়ে উঠেছেন, সেটির একজন সিনিয়র ব্যক্তি হেফাজতে ইসলামের উত্থানের সময় তার সরব সমর্থক হয়েছিলেন। তিনি ফরহাদ মজহার। তার জুনিয়র ও পিয়াস করিমের কিছুটা সিনিয়র আরেক স্কলার ড. সলিমউল্লাহ খান আবার এদের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন সাম্প্রতিক। এক সময় আওয়ামী লীগের উগ্র বিরোধিতাকারী কয়েকজন তো এর মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছেন। এমন দুজনের হজব্রত পালন নিয়েও কম রঙ্গ-রসিকতা হচ্ছে না। এসবের মধ্যে না গিয়ে শুধু এটাই বলতে চাই, সব কিছুকে পরিবর্তনের মধ্যে দেখা এবং নিজের কাছে যা সঠিক ও অন্যের জন্য ভালো মনে হয়, তার পক্ষে সংযত কিন্তু দৃঢ়ভাবে বলা এবং কাজ করাটাই হলো যথাযথ। ইতিহাসের শিক্ষক ও ইতিহাসবিদ ড. সালাহউদ্দীন আহমদ সেটি করে গেছেন বলেই মনে হয়। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন বলে জানি। কিন্তু পড়ালেখা, জানাবোঝা, সত্যানুসন্ধান ও মূল্যায়নের ভেতর দিয়ে যা কিছু লিপিবদ্ধ করে গেলেন, সেগুলো তো রইল। তুলনায় অনেক ক্ষুদ্র হয়ে আমরাও এ কাজটা করে যাচ্ছি। এর যেন সঠিক মূল্যায়ন হয় জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পরে। পক্ষে-বিপক্ষে অসহিষ্ণু আলোচনা দেখে তেমন ভরসা অবশ্য পাচ্ছি না। হাসান মামুন | সাংবাদিক একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৭-১০-০১৪:
Link copied!