AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ব্যস্ত শহর সিডনিতে শুভ দীপাবলী


Ekushey Sangbad

১০:২৪ এএম, অক্টোবর ২৮, ২০১৪
ব্যস্ত শহর সিডনিতে শুভ দীপাবলী

একুশে সংবাদ : অস্ট্রেলিয়া মানেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সিডনির বিখ্যাত অপেরা হাউস। ব্যস্ত শহরে অনেক কর্মব্যস্ততার মাঝেও বেশ কয়েকবার আমার সেখানে যাওয়া হয়েছে। প্রতিবারই আমার মুগ্ধতা কেড়ে নিয়েছে এর অসাধারণ নির্মাণশৈলী, আশ্চর্য সৌন্দর্য আর বৈচিত্র্য। অপেরা হাউসে প্রদীপ প্রজ্বালনসেই অপেরা হাউসে এবার আয়োজন করা হয়েছিল দীপাবলী উৎসব। সেদিন বাসা থেকে সেখানে যাওয়ার পথে গাড়িতে শুনছিলাম, শ্রী রামপ্রসাদ সেন রচিত ও শ্রী ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের কণ্ঠে শ্যামাসংগীত, ‘কালী নামে দেওরে বেড়া, ফসলে তসরুপ হবে না। সে যে মুক্তকেশীর শক্ত বেড়া, তার কাছেতে যম ঘেঁষে না।’ সনাতন শাস্ত্রানুসারে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, দীপাবলীর অর্থ হচ্ছে আলোর উৎসব। দেওয়ালি, দীপান্বিতা, দিপালিকা, সুখরাত্রি, সুখসুপ্তিকা অথবা যক্ষরাত্রি নামেও কেউ কেউ অভিহিত করে থাকেন। তাঁদের বিশ্বাস, অশুভ ও অকল্যাণের প্রতীক অন্ধকার দূর করে শুভ ও কল্যাণের প্রতিষ্ঠায় এই উৎসব পালন করা হয়। অপেরা হাউসে পৌঁছে গাড়িতে শোনা শ্যামাসংগীত আর আগত পূজারীদের দেখে অনুভব করতে পারলাম, সত্যিই হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, বৈষম্য, অন্যায়, অবিচার দূর করে সমাজকে শান্তিময় গড়ে তোলার প্রার্থনা প্রত্যেক মানুষের মাঝে। এ যেন মন আর মননের স্নায়ুযুদ্ধ। ‘মনরে কৃষিকাজ জানো না, এমন মানবজমিন রইল পতিত, আবাদ করলে ফলত সোনা!’ সিডনির অপেরা হাউসে দীপাবলী উৎসবটি ২১ অক্টোবর মঙ্গলবার রাত আটটা থেকে শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত চলেছে। এই প্রথমবার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সহসÊ প্রদীপ জ্বালিয়ে অপেরা হাউসে দীপাবলী উৎসব পালন করেছেন। এ ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ান সরকারের পক্ষে নিউ সাউথ ওয়েলসের পার্লামেন্ট হাউস থেকে সার্বিক সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করা হয়। নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার মাইক বেয়ার্ড বলেন, ‘সাউথ এশিয়ান হিন্দু কমিউনিটি সিডনির অপেরা হাউসে এই প্রথমবারের মতো আয়োজিত দীপাবলী উৎসব উদ্‌যাপন করছে। এতে প্রায় দুই লাখ লোকের সমাগম হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্গাপূজার বিজয়ার পরবর্তী অমাবস্যার রাতেই দীপাবলীর আয়োজন করা হয়। দীপাবলীর রাতে অনুষ্ঠিত হয় শ্যামা কালীপূজা। অমাবস্যা রজনীর সব অন্ধকার দূর করে উজ্জ্বল প্রদীপের আলোয় আলোকিত অপেরা হাউস। অসাধারণ কারুকাজ আর নন্দিত আলোকসজ্জায় এই উৎসব শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যেই নয়, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে আগত সবার মাঝেই অনন্য এক অসাম্প্রদায়িক অনুভূতির সৃষ্টি করেছে। দীপাবলী উপলক্ষে মেসোনিক সেন্টারে প্রদীপ প্রজ্বালনপ্রবাসীদের কেউ কেউ সেদিন মন্দির, নিজ গৃহের দরজা-জানালায় মোমবাতি প্রজ্বালন করেন। বর্ণিল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করেন চারপাশ, আতশবাজি পুড়িয়ে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন সবাই। অস্ট্রেলিয়া মূলত খ্রিষ্টানপ্রধান দেশ। তাই এখানে কোনো মুসলমানদের ঈদ ও হিন্দুদের পূজা-পার্বণে সরকারি ছুটি থাকে না। তাই সাপ্তাহিক ছুটির দিন ২৫ অক্টোবর শনিবার প্রবাসী হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাংলাদেশিদের পক্ষে সেন্ট জর্জ হিন্দু কমিউনিটি সিডনির বেক্সলে এলাকার ফরেস্ট রোডের মেসোনিক সেন্টারে শ্যামাপূজা ও দীপাবলী উৎসবের আয়োজন করা হয়। পূজার মূল অনুষ্ঠান রাত নয়টায় শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে। তখন বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী সিডনিতে ছিলেন। তিনি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি পূজামণ্ডপের সভাপতি ও সম্পাদকসহ পূজারী ও দর্শনার্থীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। মহালয়ায় শ্রাদ্ধ গ্রহণের জন্য যমলোক ছেড়ে যে পিতৃ পুরুষগণ মর্তে আগমন করেন, হিন্দুরা বিশ্বাস করেন তাঁদের পথ প্রদর্শনার্থে উল্কা জ্বালানো হয়। সুখ, শান্তি, জ্ঞান ও সম্পদ প্রদানের জন্য এই উৎসবের মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। সন্ধ্যার আঁধারে মন্দির ও ঘরে ঘরে দীপাবলী, জমকালো বর্ণিল আলোকসজ্জার মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পার্থিব আঁধার বিনাশের প্রার্থনা করেন। আগত দর্শনার্থী ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আনন্দ ধ্বনিতে উৎসবমুখর আনন্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে আলোকসজ্জায় সজ্জিত ফরেস্ট রোডের মেসোনিক সেন্টার। ঢাকের আওয়াজ, শঙ্খ ও উলুধ্বনিতে মুখরিত মেসোনিক সেন্টারটিই যেন পবিত্র মন্দির। মেসোনিক সেন্টারের শ্যামাপূজারাত ক্রমশ গভীর হচ্ছে। এদিকে ঘরে ফেরার তাড়া। তাই বাধ্য হয়ে রওনা হলাম বাসার উদ্দেশে। ফেরার সময় আমার মেয়ে অথৈ আর ছেলে দীপ্রকে বলছিলাম ধর্মনিরপেক্ষতা হলো, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’ যেকোনো ধর্মীয় উৎসব সাম্প্রদায়িক ভেদরেখা অতিক্রম করে মানুষে মানুষে, মানব সমাজের মধ্যে এক অনন্য ভ্রাতৃত্ববোধ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিই সভ্যতা। হ্যাপি রহমান সিডনি, অস্ট্রেলিয়া একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৮-১০-০১৪:
Link copied!