AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

পরকীয়ার কারন নৈতিকতার অবক্ষয়


Ekushey Sangbad

১১:৫১ এএম, অক্টোবর ২৮, ২০১৪
পরকীয়ার কারন নৈতিকতার অবক্ষয়

একুশে সংবাদ : সামগ্রিক সমাজব্যবস্থায় এখন একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। সম্প্রতি পারিবারিক কলহের কারণে স্ত্রী স্বামীকে, স্বামী স্ত্রীকে, সন্তান মা-বাবাকে, আবার মা-বাবা তার সন্তানকে হত্যা করছে। আমাদের সমাজে এ ধরনের ঘটনা এখন অহরহ ঘটছে। বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এর মূলে রয়েছে পরকীয়া। বর্তমানে পরকীয়ার প্রবণতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। পরকীয়ার কারণে একই সঙ্গে একটি পরিবারের কয়েকটি জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ঘটেই চলেছে। অনেক সময় লাভ ম্যারেজ হওয়ার পরেও ছেলে বা মেয়েকে পরকীয়ায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। ইভ টিজিং, ধর্ষণ, অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক, গর্ভপাত, পরকীয়া, পরকীয়ার ফলে সন্তান হত্যা আরো অনেক কিছু। এ সব সমস্যার একটি অন্যতম কারণ অবৈধ সম্পর্ক বা সম্পর্কের অনৈতিক ব্যবহার। সৌন্দর্য যেকোনো মেয়ের একমাত্র সম্পদ। আর ছেলেদের স্মার্টনেস । পরকীয়া করার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো নৈতিকতার অবক্ষয় এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে সরে আসা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, নারী-পুরুষ শুধু পরকীয়া করে না, প্রয়োজনে পরকীয়ার কারণে হত্যায় প্ররোচনা দেওয়া এমনকি নিজ হাতে হত্যা পর্যন্তও করছে। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় এমনই চিত্র দেখা গেছে। এসব পরকীয়ার ঘটনার মধ্যে রয়েছে, গত ১৯ অক্টোবর রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর সি ব্লকের ১৫ নম্বর লেনের ১১ নম্বর বাড়িতে স্ত্রী লাভলী ইয়াসমিন লীনার পরিকল্পনায় খুন হন স্বামী গিয়াসউদ্দিন আহম্মেদ। ২০০২ সালে পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়। সংসারে দুটি সন্তান আছে। বিয়ের পাঁচ বছর পর থেকে লীনা ওই এলাকার কলেজপড়ুয়া ছেলে তানভীরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। লীনার সঙ্গে তানভীরের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এটা আগে থেকেই জানতেন গিয়াসউদ্দিন। এ কারণে তাদের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ চলছিল। সম্প্রতি লীনা তার কথিত প্রেমিক তানভীরকে বিয়ে করেন। এটা গিয়াস উদ্দিনের কানে অন্য একটি মাধ্যমে পৌঁছায়। এই নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ বেড়ে যায়। একপর্যায়ে নিজের স্বামীকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করেন লীনা। বর্তমানে শুধু স্বামী-স্ত্রী নয়, পরকীয়ার কারণে বাবা-মা নিজের সন্তানকেও হত্যা করতে পিছপা হচ্ছে না। তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে ডেমরায়। ডেমরা এলাকায় মায়ের অনৈতিক সম্পর্ক মেনে নিতে না পারায় খুন হন ছেলে কামরুজ্জামান। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চারজনকে গ্রেফতার করে এ তথ্য জানতে পারে গোয়েন্দা পুলিশ। আটককৃতরা হলো কামরুজ্জামানের মা মরিয়ম বেগম (৪৪), তার প্রেমিক আজিজুল হক আজিজ (৫০), তাফাজ্জল হোসেন (৬৫) ও মঞ্জুরুল ইসলাম (৫২)। পুলিশ জানায়, আজিজের সঙ্গে মরিয়মের দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া চলছিল। তাদের এ সম্পর্কের কথা জেনে যায় ছেলে কামরুজ্জামান। এ নিয়ে তিনি মায়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই তর্কে জড়িয়ে পড়তেন। একদিন মাকে মারধরও করেন। সন্তানের এ আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মা মরিয়ম। প্রেমিক আজিজের সঙ্গে যোগসাজশে ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মরিয়ম। ১২ আগস্ট রাত ৮টায় ডাক্তার দেখানোর কথা বলে কামরুজ্জামানকে নিয়ে খিলগাঁওয়ের খিদমাহ হাসপাতালে যান তিনি। সেখানে আগে থেকেই আজিজ ও তার দুই সহযোগী মাইক্রোবাস নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে কামরুজ্জামান ফোনে কথা বলার জন্য নিচে নামেন। আজিজ নিজেকে পাথর ব্যবসায়ী পরিচয়ে তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। পরে চায়ের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে দেয়। অচেতন কামরুজ্জামানকে মাইক্রোবাসে তুলে গাড়ির সিটবেল্ট দিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। কামরুজ্জামানকে হত্যা করে ডেমরার চিটাগাং রোডে শুকুরশী এলাকায় লাশ ফেলে যায় খুনিরা। আর তা পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন মা মরিয়ম। কাজ শেষে তিনি খুনিদের ১০ হাজার টাকাও দেন। পরে এ হত্যার দায় পুত্রবধূ নূরজাহানের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ঘটনার পর কামরুজ্জামানের বাবা আশেক আলী বাদী হয়ে মামলা করেন। ১ সেপ্টেম্বর মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর হয়। পরে খিলগাঁও থেকে আজিজকে গ্রেফতার করে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রংপুর থেকে তাফাজ্জল ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে মঞ্জুরুল ইসলাম, এরপর মরিয়ম বেগমকে ডেমরার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে ২০১০ সালে ২৩ জুন রাজধানীর আদাবরে মায়ের অনৈতিক সম্পর্ক দেখে ফেলায় পাঁচ বছরের শিশুসন্তান সামিউল আজিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে করে মা ও তা প্রেমিক। ওই ঘটনায় সামিউলের মা আয়েশা হুমায়রা এশা ও তার প্রেমিক শামসুজ্জামান বাক্কু আরিফকে গ্রেফতার করে পরবর্তীকালে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের হাতে গত পাঁচ বছরে খুন হয়েছেন ১ হাজার ১৭৫ জন নারী। পরকীয়া, বহুবিবাহ, হতাশা, পারিবারিক ভগ্নদশা, বিবাহবিচ্ছেদ, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, দাম্পত্য কলহ, উন্নত জীবনের হাতছানি, অর্থের লোভ, মাদকাসক্তি, দারিদ্র্যসহ বেশ কিছু কারণে এসব ঘটনা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক এ ঘটনাবলি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘এখন আমাদের সমাজ একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সমাজ যত আধুনিক হবে, মানুষের মধ্যে তত দ্বন্দ্ব বাড়বে। আধুনিক বিশ্বের সব ধরনের উপাদান প্রভাব বিস্তার করছে সমাজে। এ কারণে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। বর্তমান যুগের আধুনিক মনোভাবে পরকীয়াকে একটা ফ্যাশন বলে মনে করা হয়। একে অন্য থেকে শারীরিকভাবে তৃপ্তি না পাওয়া ছাড়াও অনেক কারণে পরকীয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সব ক্ষেত্রে টিভি সিরিয়ালের অনেক ভূমিকাও রয়েছে । মানুষ দিনের পর দিন যে জিনিসটা মনোযোগ দিয়ে দেখে, সে জিনিটা অজান্তেই তার মনে গেঁথে যায়। আর এ গেঁথে যাওয়া জিনিসটাই পরে তাকে এসব কাজে জড়াতে অনুপ্রাণিত করে। এটা এসব সামাজিক ব্যাধির অন্যতম কারণ।’ তিনি বলেন, ‘নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যেই দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক করার যেমন মনোবাসনা থাকে, তেমনি সুযোগ এবং পরিস্থিতি বুঝে স্বল্পমেয়াদি সম্পর্কের বিষয়টিও উঠে আসে। কোনো নারীর বর্তমান সঙ্গীর চেয়ে যদি তার প্রেমিকের স্ট্যাটাস ভালো হয়, প্রেমিক দেখতে শুনতে আরো বেশি সুদর্শন হয়, অথবা যে সমস্যাগুলো নিয়ে একটি নারী তার স্বামীর সঙ্গে অসন্তুষ্ট, সেগুলোর সমাধান যদি তার প্রেমিকের মধ্যে খুঁজে পায়, তাহলে নারী পরকীয়া করে।’ এ প্রসঙ্গে ড. জিয়া আরো বলেন, বাংলাদেশের অনেকেই জীবিকার সন্ধানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রবাস জীবন যাপন করছেন। প্রবাসীরা বিয়ে করে দেড় থেকে দুই মাস স্ত্রীর সঙ্গে থেকে চলে যান প্রবাসে। তার পর সেখান থেকে ফিরে আসেন চার থেকে পাঁচ বছর পর। এ দীর্ঘ সময় প্রবাসীদের মধ্যে অনেকের স্ত্রী স্বামীর ফিরে আসার পথ চেয়ে থাকতে থাকতে সময় কাটানোর জন্য হলেও একসময় পাশের ঘর, পাশের বাড়ির, অথবা দূরালাপনে কারো না কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যান। প্রথম দিকে এই সম্পর্ক মনে থাকে। এরপর ধীরে ধীরে এটি শরীর পর্যন্ত গড়ায়। এই অবস্থায় যখন একটি সম্পর্ক শরীর পর্যন্ত গড়ায় তখন সমাজের যে স্তরের পুরুষগুলোর সঙ্গে এই সম্পর্ক হয় তারা প্রবাসীদের স্ত্রীদের ব্ল্যাকমেল করে বাধ্য করে সন্তানসন্ততি ছেড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসতে। অনেক মেয়েই আবার স্বেচ্ছায় ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। সব মিলিয়ে এটা সমাজের একটা স্তরের সামাজিক অবক্ষয়ের চরম রূপ। তবে এ অবক্ষয় শুধু একা প্রবাসীদের স্ত্রীদের কারণে হয়, তা নয়। অনেক সময় দেখা যায় স্ত্রীরা তাদের স্বামীর প্রতি বিশ্বাস ও ভালোবাসার টানে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে চান। কিন্তু তার চারপাশে সমাজের কিছু পুরুষের কু-দৃষ্টি তাদের সেই অবস্থায় থাকতে দেয় না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই অবক্ষয় থেকে মুক্তির বড় উপায় প্রকৃত ভালোবাসা, পারিবারিক শিক্ষা, সামাজিক সচেতনতা, মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিকতার চর্চা করা এবং প্রবাসী স্বামীদের আগমনকাল স্বল্পদৈর্ঘ্য করা। কেবল জাগতিক বিষয়ে ডুবে না থেকে বিবেককে জাগ্রত রাখা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সালমা বেগম এ বিষয়ে বলেন, নানা কারণে এখন সামগ্রিক সমাজব্যবস্থায় একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এসব অপরাধ থেকে রক্ষা পেতে হলে, মানুষকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তিনি আরো বলেন, সামাজিক অবক্ষয়ও বাড়ছে। শিথিল হচ্ছে পারিবারিক বন্ধন, যার প্রভাব পড়ছে পারিবারিক জীবনে। আর মুক্ত গণমাধ্যমের সবকিছু ঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারছে না সাধারণ দর্শক। এসব কারণেই দিন দিন এ ধরনের পারিবারিক অপরাধ বাড়ছে। এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যেন অন্যরা সতর্ক হওয়ার সুযোগ পায়। আর সচেতনতার জন্য গণমাধ্যম বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। সম্প্রতি জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউনিসেফ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান দেখানো হয়েছে শীর্ষে। ৪৭ শতাংশ বিবাহিত নারী স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে এ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ হার ৩৪ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুসারে সারা বিশ্বের মধ্যে নারী নির্যাতনে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে আফ্রিকার দেশ গিনি। সেখানে ৭৩ শতাংশ বিবাহিত নারী স্বামী দ্বারা নির্যাতিত। পারিবারিক সহিংসতার আলাদা পরিসংখ্যান না থাকলেও মামলা বিশ্লেষণ করে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। এ বছর জানুয়ারি মাসে সারা দেশে ১ হাজার ১২৭টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ছিল। ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ২৫৬, মার্চে ১ হাজার ৬৬৯, এপ্রিলে ১ হাজার ৯৮৮, মে মাসে ২ হাজার ৬৯, জুনে ১ হাজার ৯৮১, জুলাইয়ে ১ হাজার ৮২৩ এবং আগস্টে ২ হাজার ২১৩ জন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (গণমাধ্যম) জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হয়। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারণামূলক কাজেও অংশ নিচ্ছে পুলিশ। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৮-১০-০১৪:
Link copied!