AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

স্মৃতি ও আমি


Ekushey Sangbad

০৩:০৯ পিএম, অক্টোবর ২৯, ২০১৪
স্মৃতি ও আমি

আফরোজা রুবী অর্পিতার কথা : বাড়িতে তখন ছেলে (পাত্র) খোঁজার ধুম লেগেছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক বিজ্ঞাপনের বদৌলতে বায়োডাটা আর ছবির হাট বসেছে যেন সারা ঘরময়। এমনি এক সময় তার সাথে দেখা। বলা যায়, একেবারে হঠাৎ করেই। বলা নেই, কওয়া নেই আমার অফিসে এসে হাজির। এখানে বলা দরকার যে সেও কাজ করত আমার মত একই বিশ্ববিদ্যালয়ে, তবে অন্য বিভাগে। সহকর্মী কাম বন্ধু তৃপ্তি ওকে নিয়ে হাজির হল আমার রুমে। খুব সপ্রতিভভাবেই এসে বসল সে আমার রুমের জানালার পাশে রাখা লাল রঙা ক্রোমা ফার্ণিচারের চেয়ারে। আমি দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম। আলগোছে তার দিকে এক পলক চেয়ে চোখ ফিরিয়ে নিতে গিয়েই ঘটল বিপত্তি। তার চোখের উজ্জ্বল দ্যুতিতে চোখ আটকে গেল আবার। ক্ষণিক চোখাচোখি। কি যে দেখলাম আমি ওই চোখে। কি দেখলাম! তখন বুঝিনি। কিন্তু পরে বুঝেছি। আমি দেখেছিলাম আমার সর্বনাশই। সহকর্মী তৃপ্তির কাছে শুনেছিলাম কি এক দুর্দান্ত ছলনার আশ্রয় নিয়ে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল সে! তৃপ্তিকে পই পই করে নাকি বুঝিয়েছে আমাকে বলতে হবে হঠাৎ করেই ওর সাথে দেখা আর আমার অফিসে আসার পথেই দেখা হওয়াতে নিয়ে এসেছে আলাপ করিয়ে দিতে। কি সুন্দর সাজানো মিথ্যে কথা! অথচ সত্যিটা ছিল অন্যরকম। বছর কয়েই ধরেই মনের মতন মেয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে সে। অথচ সারা বিশ্ববিদ্যালয়ে এত মেয়ের ভীরে তার পাওয়া হয়ে ওঠেনি সেই মেয়েটিকে যাকে সে গ্রহণ করতে পারে মন প্রাণ সঁপে দিয়ে। আপন করে। এমনি এক দিন কথায় কথায় সে শুনেছিল আমার কথা। আর সে দিনই আমাকে দেখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল সে। আর তাই এই অভাবিত আগমন। তারপর দেখা হল, কথা হল, কথা প্রসঙ্গে জানা গেল সেও আমার এলাকারই মানুষ। একই জেলায় বাড়ি। আলাপ আড্ডা চলল কিছুক্ষণ। চা পর্বও হল। তার পর সে চলে গেল। কিন্তু যাবার সময় সঙ্গে করে নিয়ে গেল আমার সমস্ত চেতনাকে। ভাবনাকে। ও রেখে গেল এক রকম ভালো লাগা মনের কোনায় কোনায় ছাড়িয়ে দিয়ে। তারপর একদিন ফোনে কথা হল। সেদিন পহেলা বৈশাখ। শুভ নববর্ষ জানতে আমারই ফোন করা। কি করব? খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছিল। আর তাই এক উপলক্ষের আড়ালে খোঁজা। বেশ কিছুক্ষণই কথা হল নানান বিষয়ে। পান্তা ভাত-আর ইলিশ ভাজা খেয়ে তার সারা দিনময় ঘুমিয়ে কাটানোর গল্প আর আমার বাড়ির বাইরে না যেতে পারার আফসোস মিশে গেল ইথার থেকে ইথারে। সেল ফোনের ভেতর দিয়ে তরঙ্গ ছাপিয়ে।স্মৃতি ও আমি ভাললাগার বীজ বপন হয়ে গিয়েছিল মনে তখনই। অথচ তার দিক থেকে সারা কি একটু কম পাচ্ছিলাম? ফোনে সারা যেন একটু কমই পাওয়া যাচ্ছিল। অবশ্য ওকে বুঝা আমার হয়ে উঠলোনা আজও। হঠাৎ হঠাৎ শরৎ আকাশে মেঘের মতন ওর উঁকি-ঝুঁকি, হঠাৎই ফোন করা, খবর নেয়া, আবার হঠাৎ করেই হারিয়ে যাওয়া দূরে। আমার রুমের পূর্ব দিকের জানালায় আসলে যে বিল্ডিংটা চোখে পড়ে সেই বিল্ডিংয়েই ওর অফিস ছিল। আমি জানালায় দাঁড়ালে ওদের করিডোরটা স্পষ্ট দেখা যেত। আর আমি মাঝে মাঝেই দাঁড়িয়ে পড়তাম জানালায়। চোখ চলে যেত আপনা থেকেই ওদের তিন তলার কড়িডোরের দিকে। কাউকে যেন খুঁজে বেরাতো চোখ দুটি। সেও কি খুঁজত আমাকে? আমার জানালায়? পরে জেনেছিলাম। তার চোখ খুঁজতো আমায়। আমার জানালায় কখন আমাকে একটি বারের জন্য দেখা যাবে সে প্রত্যাশা তাকে মনেও উঁকি দিত কখনও কখনও। এসবই জেনেছিলাম পরে। কফি শপে কফি খেতে খেতে। হ্যাঁ, ব্যাপারটা কফিশপ পর্যন্ত গড়িয়েছিল। আমন্ত্রণটা আমারই ছিল। আর ছিল তার সানন্দে সম্মতি। তার সাথে দেখা হওয়ায় উত্তেজনায় বুকের ভেতর দূর দূর করত আমার। মনের ভেতর গুণগুণিয়ে কত গান আসত। গাইতে ইচ্ছে করত, রেওয়াজে বসতে ইচ্ছে করত। সেও আমার মতই গান- ভালোবাসতো। আর রবীন্দ্র ও নজরুলের গানের বিশেষ ভক্ত ছিল। কফি খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে নানা বিষয়ের আলাপ চারিতার মুগ্ধ হতাম। কখনোবা দেরী করে আসার জন্য অনুযোগ করতাম। এক দিন সে রবীন্দ্রনাথের একটি গানের প্রসঙ্গ টেনে বলছিল আমরা সব “ঊর্ধ্বশ্বাসে দাঁড়িয়ে থাকা নর-নারী” যাতে না হই সে জন্য বাবা গ্রামের বাড়িতে যাবার ব্যবস্থা রেখেছেন। বুঝলাম রবীন্দ্র শোনা হয়। ভালোলাগা বেড়ে গেল কয়েকগুন। পরবর্তীতে আরো কিছু গানের পংক্তি তাকে আওড়াতে শুনেছি বিভিন্ন সময়ে। খুব ভালো লাগত শুনতে। সাহিত্যেও তার দখল ছিল বেশ। ইয়েটস এর কবিতার লাইন আওড়ে আমাকে চমকিতও করে ছিল সে। “থিংস ফল এ্যাপার্ট সেন্টার ক্যান নট হোল্ড।” সত্যিই তাই, ওর সেই কথাই সত্য হল। সবকিছু ঝড়ে পড়ে। এই যেমন সত্যি সত্যি আজ আমি চলে যাচ্ছি। ঠিক সেই জানালাটাতেই দাঁড়িয়ে ওদের বিশাল করিডোরটার দিকে চোখ মেলে আছি। তাকিয়ে আছি। কিন্তু কিছুই দেখছিনা। বাইরে প্রচ- বৃষ্টি অথবা নয়নের বর্ষণ যেটাই হোকনা কেন, তা আমার দৃষ্টিকে করে দিচ্ছে ঝাপসা। বুঝতে পারছি, আর হয়ত দেখা হওয়া সম্ভব নয়। দু’জন অচিরেই দু’টি আলাদা কক্ষপথের বাসিন্দা হতে চলেছি। অথচ স্মৃতি? স্মৃতি আমাকে ভারাক্রান্ত করে চলেছে। আবেগ তারিত করে চলেছে। বুঝতে পারছি ভালোবাসা তার শেকড় মেলতে শুরু করেছিল। অথচ নিয়তি! একটু একটু করে গড়ে তোলা স্মৃতির মিনার আজ- ধ্বংসের মুখে। জীবন নিতে চলেছে অচেনা বাঁক। জানে না সে কোথায় তার গন্তব্য। সে বলেছিল বিদায় জানাতে আসবে। বেলা দেড়টা পার হয়ে গেলেও কোনো সারা না পেয়ে ফোন করলাম। রিং বেজে চলেছে অথচ প্রত্যুত্তর নেই। অফিসের ফোন, সেটাও কেউ ধরছে না। বুঝলাম অফিসে নেই সে আজ। তবে তার মনও ভারাক্রান্ত আমারই মত? বিদায় কি যন্ত্রণার সূচ ফোটাচ্ছে তার হৃদয়েও? জানিনা। হয়তো জানবোনা- কখনোই। কেবল এই অসম্পূর্ণ অধ্যায়টুক-রয়ে যাবে মনের গহীনে, শামুকের ভেতর যেমন মুক্তো লুকিয়ে থাকে, তেমনি করে চিরন্তন। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৯-১০-০১৪:
Link copied!