AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

এ মানবদস্যুতার শেষ কোথায় ?


Ekushey Sangbad

০৪:৫৯ পিএম, অক্টোবর ২৯, ২০১৪
এ মানবদস্যুতার শেষ কোথায় ?

একুশে সংবাদ : বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতিনিয়তই দেশের কর্মক্ষম যুবসমাজের একটি অংশকে প্রতারিত করছে একশ্রেণির মানবদস্যু। ব্যক্তিভেদে উচ্চ বেতনে ভালো চাকরি, রেসিডেন্ট পারমিট কিংবা সিটিজেনশিপের মতো লোভনীয় প্রস্তাবে বিভ্রান্ত করে এসব যুবককে কেবল সর্বস্বান্তই করছে না- ‘ক্ষেত্রবিশেষে’ এদের জীবনও বিপন্ন করে তুলছে গণদুশমনরা। আর সাম্প্রতিক কালে তাদের এই দুশমনি এতটাই বেড়ে গেছে যে, সচেতন ব্যক্তিমাত্রই তা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারেন না। সে কারণে এখন স্বভাবতই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এ দস্যুতার শেষ কোথায়? গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী অতি সম্প্রতি এই ‘মানুষখেকো’ চক্রের হাত থেকে অন্তত ২০০ ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এদের কিছুসংখ্যককে উদ্ধার করা হয়েছে পাচারকালে, বাকিদের পাচারের পর এবং অনেককে মৃত্যুর দুয়ার থেকে। গত ১৯ অক্টোবর দেশের একটি জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টালের খবরে জানা যায়, সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টাকালে কক্সবাজারের নাজিরারটেক পয়েন্ট থেকে ২৪ যুবককে আটক করে কোস্ট গার্ড। আটক যুবকদের মধ্যে রয়েছেন কক্সবাজারের আটজন, বগুড়ার চার, ঝিনাইদহের দুই, চাঁদপুরের দুই ও যশোরের আট যুবক। তাদের বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৩০ থেকে সর্বনিম্ন ১৪ বছর। ওই দিন ভোরে বাঁকখালী মোহনায় এক অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে কোস্ট গার্ড। তবে এ সময় কোস্ট গার্ডের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় পাচারে জড়িত মানবদস্যুরা। কোস্ট গার্ডের ভাষ্যমতে, কাঠের তৈরি একটি সাধারণ বোটে চেপে সমুদ্র অতিক্রম করে স্বপ্নের মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছিলেন ওই স্বপ্নবাজ যুবকেরা। এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে অবৈধ পথে মালয়েশিয়ায় পাচারের প্রস্তুতিকালে ১৯ জনকে আটক করে চট্টগ্রাম র‌্যাব, যাদের দুজন পাচারকারী চক্রের দালাল। গোপন সূত্রের খবরের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মহানগরীর বহদ্দারহাট এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাদের আটক করা হয়। র‌্যাবের বক্তব্য অনুসারে, আটক দুই দালালের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীতে অপেক্ষমাণ একটি ট্রলারযোগে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য আটক ওই ১৭ জনকে বহদ্দারহাট এলাকায় জড়ো করা হয়েছিল। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে এদের চট্টগ্রামে জড়ো করা হয় বলেও র‌্যাবের বক্তব্যে জানা যায়। আটক ব্যক্তিরা র‌্যাবের কাছে অভিযোগ করে, পাঠানোর আগেই তাদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় দালাল চক্র। বিবিসির বরাত দিয়ে গত ১৮ অক্টোবর দেশের প্রায় সব গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্ব সহকারে আরো একটি ভয়ংকর সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদে থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গল থেকে ১৩০ জন বাংলাদেশি ক্রীতদাস উদ্ধারের কথা উল্লেখ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ থাইল্যান্ডের একটি চক্র সে দেশের খেতখামার ও মাছ ধরার কাজে এসব বাংলাদেশিকে ব্যবহার করছিল বলেও খবরে বলা হয়। ভালো চাকরির লোভ দেখিয়ে ওইসব বাংলাদেশিকে সেখানে নেওয়া হলেও তারা সবাই মূলত মানবপাচারের শিকার। ওই সংবাদসূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ছাড়ার পরপরই তাদের ওষুধ খাইয়ে হাত-পা বেঁধে নৌকাযোগে থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই নৌকায় প্রায় ৩০০ বন্দি ছিলেন। এরপর থাইল্যান্ড উপকূলে একটি জঙ্গলের মধ্যে লুকানো কিছু ক্যাম্পে নিয়ে দাসশ্রমিক হিসেবে তাদের বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেখান থেকে উদ্ধার পাওয়া ব্যক্তিদের একজন আবদুর রহিম ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা রীতিমতো রোমহর্ষক! সভ্য এই যুগেও তা যেন সর্বযুগের মানবতাকে হার মানায়। আবদুর রহিমের ভাষ্যমতে, জঙ্গলে নিয়ে তাদের কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। ১০ দিন ধরে শুধু গাছের পাতা খেয়ে বেঁচে ছিলেন তারা। পাশাপাশি, থাই দালালরা তাদেরকে এতটাই শারীরিক নির্যাতন করেছে, যাতে অনেককেই পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। বলতেই হয়, তার পরও আবদুুর রহিমরা বড় ভাগ্যবান। কারণ, অত্যাচার-নির্যাতনের পরে হলেও, তারা জীবন্ত ফিরেছেন! কিন্তু ওই নৌকায় তাদের সহযাত্রী বাকি ১৭০ জনের ভাগ্যে কী ঘটেছে কে জানে? উল্লেখিত সংবাদগুলো বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে ওঠে। এর একটি হলো, পাচারের শিকার মানবসন্তানদের প্রায় সবাই বয়সে টগবগে যুবক। এদের বেশিরভাগের বয়সসীমা ১৪ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তার অর্থই হলো- শিক্ষিত-অশিক্ষিত-নির্বিশেষে তারা সবাই কর্মক্ষম। কোনো অবস্থাতেই তারা সমাজের বোঝা বা অভিশাপ নয়, আশীর্বাদ। তারা বরং অভিশপ্ত এই সমাজের ভাগ্যবিড়ম্বিত প্রতিনিধি। দেশে কোনো রকম কর্মসংস্থানের সুযোগ না পাওয়ায় ভাগ্যবদলের স্বপ্নে বিভোর হয়ে ‘অনেকটা জেনেশুনেই’ তারা এ ঝুঁকিপূর্ণ বিদেশযাত্রায় পা বাড়ান। বড়ই আশঙ্কার কথা! কেবল একটি কর্মসংস্থানের জন্য, একটু আর্থিক সচ্ছলতা কিংবা যাপনযোগ্য একটা জীবনের জন্য এভাবে ‘অনেকটা জেনেশুনে’ নিজেকে বিপন্ন করবেন একজন তরুণ? এ যে জীবনের জন্যই জীবনদান; বিনিময়হীন আত্মবলিদান! আসলে ব্যাপারটা কি তাই? অবাধ তথ্যপ্রবাহের এই যুগেও একজন যুবক এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পথে পা দিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করবেন? এর জবাব হয়তো ‘না’। কিন্তু অমোঘ সত্য হলো, এটি ঘটছে এবং তা অহরহই। কারণ, তাদের এই ‘অনেকটা জানাশোনা’র বাইরেও থেকে যায় আরো ‘অনেক অজানা’। তারই ফলে বিপন্ন হয় আমাদের সোনালি-স্বপ্নের ফেরিওয়ালাদের জীবন। আর, যখন তারা নিজেদের অনিশ্চিত গন্তব্যের ওই অজানা বিষয়ে জানতে পারেন তখন কেবল ‘ইষ্টনাম জপ’ ছাড়া তাদের আর কিছুই করার থাকে না। বস্তুত, পাচারকারী মানবতার শত্রুরা এতটাই শক্তিশালী এবং সংঘবদ্ধ যে, একবার তাদের জালে আবদ্ধ হলে, তাদের মর্জি ছাড়া কোনোভাবেই সেখান থেকে বেরিয়ে আসা যায় না। তাই, তাদের প্রতিরোধে, তথা আমাদের সোনার ছেলেদের রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকেই। সুমন মুস্তাফিজ একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৯-১০-০১৪:
Link copied!