মরা খাল এখন ব্রহ্মপুত্র নদ
একুশে সংবাদ : কালের উত্তাল ব্রহ্মপুত্র নদ আজ স্মৃতির গহীনে হারিয়ে যাচ্ছে। ভয়াবহ নাব্যতা সঙ্কট ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় পরিবেশ বিপর্যয়সহ কৃষি আবাদে নেমে এসেছে স্থবিরতা। নদীর তলদেশে পানি না থাকায় সেচ নির্ভর কৃষকরা পড়েছে মহা সংকটে।
সরেজমিনে হোসেনপুর-গফরগাঁও সড়কের খুরশিদ মহল সেতু সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত ৫০ বছরেও কোনো ড্রেজিং না করায় নদের তলদেশে পলি জমে এর নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে। এক কালের উত্তাল নদ ছন্দ হারিয়ে আজ মরা খালে পরিণত হয়েছে। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্রসহ মৎস্য সম্পদ ও নানা জলজ প্রাণী। হাজার হাজার জেলে পরিবার এ পেশা ছেড়ে বেকারত্ব ঘোচাতে বেছে নিয়েছে অন্য পেশা।
খেয়া পারের মাঝিরা বৈঠা ছেড়ে কলের নৌকা চলিয়েও শেষাবধি ছাড়তে হয়েছে বাপ-দাদার পেশা। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা শাখা নদীগুলো এখন বিত্তবানদের ফসলি জমি।
নাব্যতা সংকটে হোসেনপুর, গফরগাঁও ও ময়মনসিংহ জমালপুর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের অস্তিত্ব এখন প্রায় বিলীন। পানির প্রবাহ না থাকায় নদের তলদেশে চলছে চাষাবাদ। এ সুযোগে একটি বিশেষ প্রভাবশালী মহল সিন্ডিকেট তৈরি করে কোটি-কোটি টাকার বালু ও মাটি অবৈধভাবে বাণিজ্য করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। ফলে একদিকে সরকার হারাচ্ছে বিরাট অংকের রাজস্ব অন্যদিকে হুমকির মুখে রয়েছে এলাকার ব্রিজ কালভার্ট। শুকনা মৌসুমে পানি কমে গেলে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল দখল নিতে প্রতি মৌসুমেই মারামারিতে প্রাণহানি ঘটে। ফলে ব্রহ্মপুত্রের খাস জমি ও বালু ব্যাবসার আদিপত্যকে কেন্দ্র করে সামাজিক অসন্তোষ বেড়েইে চলছে।
খুরশিদ মহল গ্রামের রিফেল মিয়া, খোকন মিয়াসহ অনেকেই জানান, নদী ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় বর্ষা মৌসুমে নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম, বিস্তীর্ণ ফসলি জমি,স্কুল মাদরাসা। এ এলাকার মানুষের অভিযোগ বারবার প্রশাসনের কাছে ধর্ণা দিলেও নেয়া হয়নি কোনো সরকারি উদ্যোগ। নাব্যতা সংকটের কারণে শুকনো মৌসুমে সাধারণ নৌকাগুলোও চলতে সমস্যায় পড়তে হয়। ফলে নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ায় ব্যবসা বাণিজ্যেতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্রাকৃতিক জল বৈচিত্র ধংস হয়ে যাওয়ায় প্রাণিকূলের ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে।
জনশ্রুতি রয়েছে, তৎকালীন বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে নৌ-বহর নিয়ে হোসেনপুর এলাকা দিয়ে যাতায়াত করতেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নৌ-বহর ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে নিয়মিত টহল ও রসদ সরবরাহের নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহার করতো। হোসেনপুর তারা নীলকুঠিও স্থাপন করেছিল। সমৃদ্ধ ইতিহাস আজ কেবল স্মৃতি, নাব্যতা সঙ্কটে ব্রহ্মপুত্র বিপন্ন। তাই এ এলাকার মানুষের প্রানের দাবি ব্রহ্মপুত্র নদ সরকারি উদ্যেগে ড্রেজিং করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা।
তাই ব্রহ্মপুত্র নদের দু-পারের মানুষের প্রাণের দাবি অতিদ্রুত নদের ড্রেজিং করে পানির প্রবাহ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৮-১১-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :