পোশাক শিল্পে মন্দা
একুশে সংবাদ : মন্দা চলছে সবচেয়ে বেশি রফতানি আয়ের খাত তৈরি পোশাক শিল্পে। বেশ কয়েক মাস ধরেই রফতানি আদেশ কমে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় বন্ধ হচ্ছে একের পর এক পোশাক কারখানা। আবার কাজের পরিবেশ কাঙ্ক্ষিত মানে উন্নীত না হওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠানের সংস্কার কাজও চলছে। ফলে বিপুল পরিমাণে শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে। কোরবানি ঈদের পর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে দুই লাখ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করছেন শ্রমিক নেতারা। তবে পোশাক খাতে উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনসে দুর্ঘটনার পর এ পর্যন্ত দেড় লাখের মতো শ্রমিক বেকার হয়েছেন। তবে পরিমাণে যাই হোক না কেন, তিন দশকের বেশি সময় ধরে সম্প্রসারণের পর পোশাক খাত সঙ্কুচিত হওয়ায় জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কারখানায় নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, নতুন মজুরি অনুযায়ী বেতন-ভাতা প্রদানে অপারগতার কারণেই বেশি শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। কারখানায় উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে ক্রেতাদের চাপ, ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের পরিদর্শন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কট এবং ব্যাংকের চড়া সুদের কারণে পোশাক শিল্প সঙ্কটে পড়ছে বলে মন্তব্য করছেন শিল্প-সংশ্লিষ্টরা।
বিজিএমইএ বলছে, এক বছরে ২৩৮টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এর ফলে প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। এ বিষয়ে বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, তাজরীন ফ্যাশনস ও রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ক্রেতারা কর্মপরিবেশের বিষয়ে অনেক মানদ- বেঁধে দিয়েছেন।
কারখানার পরিবেশের বিষয়ে বিজিএমইএ'র অবস্থানও কঠোর। দুর্বল কারখানাগুলোর ত্রুটি দূর করার পরই কেবল চালু করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া গত বছরের শেষ দিকে ও চলতি বছরের শুরুতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক ক্রেতা হাতছাড়া হয়েছেন। এর ফলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেড় লাখের মতো শ্রমিক বেকার হয়েছেন। চাকরি হারানো অনেক শ্রমিক অন্য কারখানায় কাজ পেয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন আজিম। বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক লীগ সভাপতি ও নূ্যনতম মজুরি বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, কোরবানির ঈদের পরই প্রায় দুই লাখ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। শুধু ঢাকা মহানগরীতেই বর্তমানে ৫০ হাজার শ্রমিক বেকার রয়েছেন। তাদের অনেকেই বকেয়া বেতন ও পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। এসব শ্রমিক মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তিনি বলেন, পোশাক খাতের উদ্যেক্তারাও বেকায়দায় রয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোরও সুযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় মানবিক বিবেচনায় শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করার দাবি জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিদিনই কোনো না কোনো পোশাক কারখানায় সমস্যা হচ্ছে। কোথাও হয়তো কারখানা বন্ধ হচ্ছে। আবার কোথাও হয়তো শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে। ছোটখাটো ছুটির পর অনেক কারখানার শ্রমিকরা এসে দেখছেন ভবন খালি পড়ে আছে। রাতের অাঁধারে যন্ত্রপাতি নিয়ে গাঢাকা দিয়েছে মালিকপক্ষ। এসব কারখানার শ্রমিক পাওনার দাবিতে দেনদরবার করছেন বিজিএমইএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে। আবার কখনও অবরোধ করছেন সংগঠনটির কার্যালয়। কখনও কখনও সমাবেশ-মানববন্ধন করছেন জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায়।
জানা যায়, সাভারের প্রিমিয়ার অ্যাপারেলস ও ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের এঙ্সেনসিপ ফ্যাশন নামে দুটি পোশাক কারখানা সম্প্রতি বন্ধ করে দিয়েছে মালিকপক্ষ। দুই কারখানার ছয় শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়েছেন। আশুলিয়ার হ্যাসং সোয়েটার কারখানায় ঈদের ছুটির সময় ২১৬ শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা পাওনা বেতনের দাবিতে কারখানায় গেলে তাদের ওপর হামলা হয়। গাজীপুরের তামান্না সোয়েটার্সে ৫৫ ও হাসিন অ্যাপারেলসে ২৩ শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। এছাড়া সাভারের প্রিমিয়ার গার্মেন্ট, সিটিএল গার্মেন্ট, স্পেন সোয়েটার্স নামে তিন কারখানায়ও প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে।
একইভাবে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম অঞ্চলেও পোশাক শ্রমিক ছাঁটাই চলছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের অন্য কারখানায় চাকরি দেয়ার সুযোগ আছে। অনেক ভালো কারখানায় শ্রমিক ঘাটতি রয়েছে। বিজিএমইএ সমন্বয় করে চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের চাকরির ব্যবস্থা করলে ছাঁটাই ঘিরে পোশাক শিল্প অস্থির হবে না। অন্যথায় শ্রমিকরা রাস্তায় নামলে পোশাক শিল্পে অস্থিরতা বাড়বে।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৯-১১-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :