সুন্দরবনে বাবুই উৎসব
একুশে সংবাদ : এক সময় গ্রামে গ্রামে উঁচু তাল গাছে অসংখ্য বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ত। এখন আর বাবুই পাখির বাসা তেমন চোখে পড়ে না। সহসা দেখা মেলে না বাবুই পাখিও।
একদিকে গাছিরা বাঁশ বেধে তাল গাছের মোচা থেকে মিষ্টি রস আহরণ করছে। অন্যদিকে চড়া দামে শোপিস হিসেবে বাবুই পাখির বাসা রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিদেশের বাজারে। তা ছাড়া আগের মতো তালগাছের আধিক্যও নেই। সব মিলিয়ে বাবুই পাখির বসবাস ও বংশ বিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ মানুষ বিপন্ন করে তুলেছে।
সম্প্রতি সুন্দরবনের আলোরকোলের রাস উৎসব উপলক্ষে বেড়াতে গিয়েছিলাম। বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন হিরণ পয়েন্টে ট্যুরিজম এলাকার প্রতিটি তালগাছে বাবুই পাখির অসংখ্য বাসা দেখে আমি ও আমার সব সহকর্মী মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। নৌবাহিনী অফিসের বাঁ পাশের গেট দিয়ে মংলা বন্দর রেস্ট হাউজ এলাকায় ঢুকতেই সারিবদ্ধ তাল গাছ। সেসব তালগাছ ভর্তি বাবুই পাখির বাসা। তাল গাছের প্রতিটি পাতায় জড়িয়ে আছে শ’ শ’ বাবুই পাখির বাসা।
বাসা ও পাখি দেখে অনেকের মনেই দাগ কেটেছিল সেদিন। পাখির বাসা যেন শিল্পীর হাতে সুনিপুণভাবে তৈরি। আর একারণেই দেশ বিদেশের বিত্তশালী ব্যক্তিরা শোপিস হিসেবে নিজেদের সংগ্রহে রাখছেন বাবুই পাখির বাসা। তবে দেশের প্রচলিত আইনে বর্তমানে সকল প্রকার পাখি নিধন দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত হওয়ায় এখন আর বাবুই পাখির বাসা ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিদেশের বাজারে রপ্তানি হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
হিরণপয়েন্টে যারা একবার যান, তারা কেউই বাবুই পাখির বাসার ছবি ক্যামেরা বা মোবাইলবন্দি করতে ভুল করেন না। তাকিয়ে থাকেন বাবুই পাখির অপূর্ব সৃষ্টির দিকে। অনেকে আবার তাদের ছোট্ট সোনামনিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বাবুই পাখির শৈল্পিক সৃষ্টির বর্ণনা দেন।
সেখানে কথা হয় মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান কর্মকর্তা শেখ মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাবুই পাখির বাসা দেখে মনে হয় অসাধারণ এক সৃষ্টি। আসলেই একটি অদ্ভুত সৃষ্টি এই বাসা। ইদানিং আমরা দেখছি অনেক পাখি হারিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে বাবুই অন্যতম। তারা এখন যেখানে খাবার ও তালগাছ পায় সেখানে বাসা বাঁধে। এই পাখি রক্ষা করা সকলেরই প্রয়োজন।’
পাখি গবেষক শরীফ খান বলেন, ‘এক সময় হামেশাই বাবুই পাখি দেখা যেত। এই পাখি যেখানে খাবার ও তালগাছ থাকে সেখানে বাসা বাঁধে, বংশ বিস্তার করে। ওদের প্রধান খাবার আউশ ও আমন ধান। বর্তমানে এই প্রজাতির ধান তেমন মেলে না। তা ছাড়া তাল গাছও কমে যাওয়ার কারণে বাবুই পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সুন্দরবন অঞ্চলে বুনোঘাসের বীজ বাবুই পাখির খাবার। এ ছাড়া সেখানে তালগাছ থাকায় পাখিরা বাসা বাঁধছে।
তিনি আরো বলেন, ‘তালগাছে একটি পুরুষ পাখি প্রথমে অর্ধেক বাসা তৈরি করে। পরে ওই পুরুষ পাখিটি সঙ্গিনী বানানের জন্য স্ত্রী পাখিকে বাসা দেখাতে নিয়ে যায়। যদি স্ত্রী পাখির বাসা পছন্দ হয় তাহলে সে তাকে সঙ্গী করে নেয়। এরপর উভয়ে মিলে পূর্নাঙ্গ বাসা তৈরি করে এবং বংশ বিস্তার করে।’
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৯-১১-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :