AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বিনা স্বদেশি ভাষা, মিটে কি মনের আশা?


Ekushey Sangbad

১১:১৮ এএম, নভেম্বর ২১, ২০১৪
বিনা স্বদেশি ভাষা, মিটে কি মনের আশা?

একুশে সংবাদ : আমরা যাঁরা প্রবাসী তাঁরা প্রায় বেশির ভাগ বাঙালিপনার মাঝে খুঁজে পাই এক অবর্ণনীয় সুখানুভূতি। হৃদয় দর্পণে প্রতিনিয়ত পাওয়া না-পাওয়ার হাহাকার, স্বজনহারা চাপা কান্না আর প্রবল আকুলতা থেকেই প্রতিটি বাঙালি বিদেশের মাটিতে এসে প্রথমেই খোঁজ করেন স্বদেশি মানুষ, স্বদেশি ভাষা-কৃষ্টি-সংস্কৃতি। নিউইয়র্কের বাঙালিপাড়া যেমন জ্যামাইকা, লন্ডনের বাঙালি পাড়া ইস্ট লন্ডন, সিডনির তেমন লাকেম্বা। পরিচিত-অপরিচিত অনেক বাঙালির সঙ্গে দেখা হয়। কবির ভাষায়, ‘বিনা স্বদেশি ভাষা, মিটে কি মনের আশা?’ সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো আমরা মাছ-ভাতে বাঙালি। সারা দিন পিৎ​জা, হটডগ, বার্গার যা-ই খাই না কেন, তেল-মসলা আর ফোঁড়ন দিয়ে সবজিডাল সঙ্গে ভাত না খেলে মনে হয় যেন কিছুই খাওয়া হয়নি। এত রান্নার আয়োজনও অনেক। চাই নুন, তেল, চালডাল, ঘটি, বাটি, পাটা আরও কত কিছু! বাংলাদেশি মালিকানাধীন অনেক গ্রোসারি শপ লাকেম্বায়। বাংলাদেশ থেকে আমদানি হয়ে আসা নানা জাতের মাছ, কচুরলতি, মুখি, করলা, উচ্ছে, কাঁচা আম, শজনে, জলপাই থেকে শুরু করে নানা ফ্রোজেন সবজিসহ অনেক কিছু পাওয়া যায় এ দোকানগুলোয়! বঙ্গবাজার, বাংলা বাজার, বাংলাদেশ প্যালেস, আল আমিন স্টোর—এমন নানা নামের দোকানগুলোর নামফলকও (সাইনবোর্ড) বাংলায় লেখা! এক দোকানের সামনে বাংলায় হাতে লেখা বিজ্ঞাপন, ‘এখানে বঁটি-দা, পাটা-পুতা পাওয়া যায়।’ আছে খুশবু, বনলতা নামে বাংলাদেশি খাবারের রেস্তোরাঁ। এসব রেস্তোরাঁয় আপনারা যা ইচ্ছা অর্ডার করতে পারেন। বাঙালিয়ানা খাবারের আইটেম, বাংলা খাবার প্রমোট করার মানসিকতা থেকেই তাঁদের এই উদ্যোগ। সকাল সাতটা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ভর্তা, ভাজি, খিচুরি, তেহারি, ভাত, মাছ, ডাল, সবজি, মাংস, মিষ্টি কী নেই সেখানে। নিজ মাতৃভূমিতে ফেলে আসা প্রিয় মানুষ, তাঁদের সঙ্গ-স্মৃতি বেশির ভাগ প্রবাসীর গহিন হৃদয়ে আঁচড় কাটে। বুক ভেঙে যাওয়া এ শূন্যতা, হাহাকার আপেক্ষিক হলেও তা পরিমাপ করা যায় না। আত্মীয়স্বজন ছাড়া প্রবাসীদের কথা চিন্তা করেই এখানে ছোট-বড় অনেক কমিউনিটি গড়ে তুলেছেন এখানকার বাংলাদেশিরা। আমাদের দেশীয় বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে তাঁরা আয়োজন করে থাকেন বিভিন্ন মেলার। মেলায় প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বেশ কিছু ইন্ডিয়ান আর পাকিস্তানি মালিকানাধীন পোশাক ও জুয়েলারির দোকান এবং মেহেদি সন্ধ্যার আয়োজন থাকে। এসব আয়োজন মনের অজান্তেই মগ্ন চৈতন্যে কড়া নাড়ে যখন দেখি বাংলাদেশি মুদি দোকানগুলো শুধু আমাদের প্রয়োজনেই গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রিয়জনের সান্নিধ্য লাভের ঠিকানা খোঁজার মাঝে, পাওয়া না-পাওয়ার হাহাকার কিছুটা হলেও পূর্ণতায় রূপ দেয়। এত সব ভালো লাগার মধ্যেও আজকাল দু-একটি নেতিবাচক খবরও পাচ্ছি, যা আমাদের বাংলাদেশিদের জন্য বড়ই মর্মান্তিক। আমাদের চাকরিস্থল আর বাচ্চাদের স্কুলের জন্য আমরা থাকি সিডনির ক্যাসেল হিলে। কয়েক দিন আগে (১৫ নভেম্বর) গিয়েছিলাম সিডনির বাঙালিপাড়া লাকেম্বায়। প্রতি​ শনি ও রোববার, সাপ্তাহিক ছুটির এই দুই দিন পরিচিত-অপরিচিত অনেক বাঙালির মিলনমেলা বসে এখানে। একঝলক দেখলে মনে হবে সুখী মানুষের হাটবাজার বসেছে প্রতিটি গ্রোসারি শপ, রেস্তোরাঁ আর অলিগলিতে। এটা দেখলে পরানের গহিনে সুখজাগানিয়া অনুভূতি হয়! তাই বাজার সদাই করতে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই যাই সিডনির বাঙালিপাড়া লাকেম্বায়। সেদিন বাজার করতে করতে একান-ওকান পেরিয়ে শুনতে পেলাম, হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই, ব্যক্তিগত হিংসাবিদ্বেষ আর রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বাঙালিরা স্থানীয় পুলিশের নজরদারিতে আছেন। ছোটবেলায় কবি শামসুর রাহমানের ‘পণ্ডশ্রম’ কবিতায় পড়েছিলাম, ‘কান নিয়েছে চিলে...চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে...!’ এই বিশ্বায়নের যুগে উন্নত দেশের মানুষ যেখানে মঙ্গল আর চাঁদে বসত গড়ার স্বপ্ন দেখছে, আবিষ্কার করছে মানুষের নকল অঙ্গ-প্রতঙ্গসহ নানা জটিল রোগের ওষুধ, সেখানে আমরা পড়ে আছি মধ্যযুগীয় অন্ধকার বর্বরতায়। সেদিন বাসায় ফিরে যখন লিখতে বসেছি তখন অনেক রাত, চারপাশে সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। শুধু আমি জেগে আছি, জেগে আছে আমার বিবেক, বুদ্ধি, চেতনা। আমার ভাবনায় ঘুরপাক খাচ্ছিল, সত্যিই কি আমরা সেই জাতি, তিরিশ লক্ষ মানুষ হাসতে হাসতে নিজের বুকের রক্ত দিয়ে অর্জন করেছিলেন একটি দেশ। বাঙালি আমি যখন আমার এই ব্যক্তিগত মতামত লিখছি তখনো ভোর হয়নি, অনেক রাত। তেমনি বাঙালি জাতিরও কি ভোর হয়নি, এখনো কি অনেক রাত...! একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২১-১১-০১৪:
Link copied!