এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশ : সাদেকা হাসান সেঁজুতি
একুশে সংবাদ : ‘আমার দেশ আমার গ্রাম’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। যিনি স্থাপত্যে পড়াশোনা করেও নাম লিখেছেন সফল উদ্যোক্তার তালিকায়। ই-কমার্সে রেখেছেন অনন্য অবদান।
সেঁজুতির হাত ধরেই প্রান্তিক অঞ্চলের কৃষক, জেলে, তাঁতি ধারণা পেয়েছেন ডিজিটাল বাংলাদেশের। নিজের ব্যবসায়ের ধরন, কার্যক্রম ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন।
প্রশ্ন : আপনার ব্যবসার শুরুটা সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন ?
উত্তর : আমার স্বামী লন্ডনে ই-কমার্সের কাজ শুরু করেন ২০০৫ সালে। সেখানে গিয়ে তার ব্যবসাটা দেখি। তার ব্যবসা দেখেই আমার ই-কামর্সের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। স্বামীই আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।
দেশের জন্য কিছু করার মনমানসিকা থেকে আমার এই কাজের শুরু। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে আমি ই-কমার্সের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগণের সঙ্গে ভোক্তাদের একটি লিংক-আপ করে দিই।
প্রশ্ন : গ্রাহকদের কী ধরনের সেবা দিয়ে থাকেন?
উত্তর : ই-কমার্সের সেবা। তৃণমূল পর্যায়ের কৃষক, তাঁতি, জেলে যারা নি¤œ আয়ের মানুষের তৈরী পণ্য ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দেয়, তাদের ন্যায্য মূল্য পেতে সাহায্য করি। তারা তো কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারেন না। তাদের তৈরী পণ্যগুলো ঢাকাসহ বিদেশেও অনলাইনে বিক্রির জন্য অনলাইনেই আলাদা একটি দোকান তৈরি করে দিই। সেখানে তারা যে দামটা নির্ধারণ করে আমারা তাই লিখে দিই। ক্রেতারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্যের অর্ডার দেয়। সেখান থেকে আমরা গ্রাহকদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিই। টাকাটা সরাসরি ওই পণ্যের মালিকের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। আমাদের ব্যবসাটাকে বলতে পারেন, সোশ্যাল বিজনেস মডেল। ধরুন, গ্রামের এক নারী একটি নকশী কাঁথা সেলাই করে বিক্রি করবে। এখন এই নারী উদ্যোক্তা আমাদের কাছে এসে কাঁথার মূল্যটা বলবে। আমরা তার নামে অনলাইনে পৃথক একটি পেইজ খুলব। তার পণ্যের মূল্যের সঙ্গে ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে মূল্য ধরা হবে। এই ১৫ শতাংশের মধ্যে পাঁচ শতাংশ হেড অফিসে, পাঁচ শতাংশ সেন্টারে এবং পাঁচ শতাংশ ব্যাংকিং খাত যেখান থেকে অর্থের যোগান আসে সেখানে দেওয়া হয়।
আমরা এখানে আইটি সার্ভিসটা দিই। এভাবেই আমি একজন ব্যক্তি, একটি গ্রাম, গ্রাম থেকে দেশের সেবা করতে চাই। কাজের মধ্য দিয়ে টিকিয়ে রাখতে চাই নিজেকেও।
প্রশ্ন : আপনারা কোন কোন অঞ্চলে কাজ করেন ?
উত্তর : ঢাকাতে আমাদের হেড অফিস। ঢাকার বাইরে নরসিংদী, টাঙ্গাইল, জামালপুর, মংলা, রংপুর, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ, ফুলবাড়িয়া, নড়াইলসহ ১১টি জেলায় আমাদের পয়েন্ট রয়েছে।
প্রশ্ন : গ্রামের সাধারণ মানুষদের ই-কমার্স বিষয়টা বোঝাতে কষ্ট হয় না?
উত্তর : এখন দেশে এগারো কোটি মানুষের হাতে মোবাইল। এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেই টাকা আদান-প্রাদান করা যায়। তাদেরকে বোঝাতে পারি, এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশ।
প্রশ্ন : এগিয়ে চলার পথে কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখী হতে হয়?
উত্তর : এখন সবাই চায় খাঁটি খাবার খেতে। আপনার টাকা আছে কিন্তু ফরমালিনমুক্ত ফল-সবজি খেতে পাচ্ছেন না। এ ক্ষেত্রে আমরা একটা লিংক-আপ তৈরি করে দিচ্ছি খাবার ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে। প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের সমস্যা, ক্রেতাদেরকে বিষয়টার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। আমরা বাইরের কোনো ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে কাজটা করছি না। যেহেতু আমাদের কাজের পরিধিটা কম, তাই এখন বিক্রি করাটা একটু কষ্টকর।
প্রতিটি গ্রামে গিয়ে এগুলো করতে পারব না। এক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে কিছুটা প্রচার দরকার। যদিও আমরা সেক্ষেত্রে অনেকটা সাহায্য পেয়েছি। আমরা এখন গ্রামে গিয়ে বলতে পারি, এটাই হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ।
প্রশ্ন : নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : যখন কোনো কিছু শুরু করা হয়, সেটা অনেক কষ্টের। এই কষ্টটা স্বীকার করে নিতে হবে। আর এটা ধরে রাখতে হবে। সাফল্যের কোনো শর্ট-কাট পথ নেই। অন্যের জন্য কিছু করা, ত্যাগ্যের মন-মানসিকতা থাকতে হবে। ধৈর্য্যরে কোনো বিকল্প নেই।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২২-১১-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :