চট্টগ্রামে সড়ক সম্প্রসারণের আগেই বিলবোর্ড!
একুশে সংবাদ : নগরের অলি খাঁ মসজিদ মোড় থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত সড়কের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নকাজ এখনো শেষ হয়নি। এর মধ্যেই সড়কের মাঝখানে বিভাজকে বিলবোর্ডের খঁুটি বসিয়ে দিয়েছে বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেয়নি। অথচ কিছু কিছু খঁুটিতে করপোরেশনের অনুমোদনের স্মারক নম্বরও উল্লেখ করে দিয়েছে বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানগুলো।
তবে সড়ক বুঝিয়ে না দেওয়ায় সেখানে করপোরেশনের অনুমোদন নিয়ে বিলবোর্ডের খঁুটি বসানোর সুযোগ নেই জানিয়েছেন সিডিএর কর্মকর্তারা। তাঁদের মতে, নিয়ম না মেনে খঁুটি স্থাপন করায় এগুলো সব অবৈধ।
শুধু অলি খাঁ থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত নয়, সিডিএর সম্প্রসারণ ও উন্নয়নকাজ চলছে এরকম ১২টি সড়কে অবৈধভাবে বিলবোর্ড বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিডিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল হাশেম।
সিডিএ সূত্র জানায়, নগরে সিডিএর কাজ চলছে এই রকম ১২ সড়ক হলো ফিরিঙ্গিবাজার, সদরঘাট, আন্দরকিল্লা, সিরাজদ্দৌলা, পাঠানটুলী, ঢাকা-ট্রাংক (ডিটি), সাগরিকা, অলি খাঁ মসজিদ থেকে মুরাদপুর, মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন, অক্সিজেন থেকে কুয়াইশ, গণি বেকারি থেকে অলি খাঁ মসজিদ ও বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট।
সিডিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল হাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কগুলোর প্রতিটিতে সিডিএর উন্নয়নকাজ চলছে। কিন্তু বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো অনুমতি না নিয়ে সেখানে বিলবোর্ডের খঁুটি বসিয়ে দিয়েছে। এসব খঁুটি সরিয়ে নিতে পত্রিকায় একাধিকবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো সেগুলো সরিয়ে না নেওয়ায় আমরা নিজ উদ্যোগে অপসারণ শুরু করেছি। এখন প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিকভাবে জরিমানা করা হচ্ছে।’
অভিযানের প্রথম দিন গত বৃহস্পতিবার সকালে ডিটি সড়ক থেকে ১১টি বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়। বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৫১ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের গণি বেকারি থেকে অলি খাঁ মসজিদ পর্যন্ত সড়কের বিভাজকে অন্তত নয়টি বিলবোর্ডের খঁুটি স্থাপন করা হয়েছে। গত বুধবার রাতের আঁধারে এই সড়কের চট্টগ্রাম কলেজের সামনে থেকে অবৈধ বিলবোর্ড নামাতে গিয়ে পা হারিয়েছে তুষার সিংহ নামের এক শ্রমিক। ক্রেন থেকে বিলবোর্ড পড়ে তাঁকে চাপা দিলে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নগরের মুরাদপুর মোড় থেকে অক্সিজেন পর্যন্ত বসানো হয়েছে পাঁচটি বিলবোর্ড। কুয়াইশ সড়কের মুখে স্থাপন করা হয়েছে দুটি খঁুটি। আন্দরকিল্লা সড়কের বিভাজকে অন্তত পাঁচটি বিলবোর্ড রয়েছে। কাপাসগোলা সড়েকের অলি খাঁ থেকে উর্দু গলি মোড় পর্যন্ত ১০০ মিটার দূরত্বে তিনটি বিলবোর্ডের খঁুটি বসানো হয়েছে। সিডিএ সূত্রমতে, নগরের পাঠানটুলী সড়কে অন্তত ২২টি এবং ডিটি সড়কে ২৬টি বিলবোর্ডের খঁুটি স্থাপন করেছে বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানগুলো।
সরেজমিনে দেখা যায়, এসব বিলবোর্ডের খঁুটিতে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরেশনের অনুমোদনের স্মারক নম্বর উল্লেখ করেছে। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে সাইনি, এডফ্রেম, ডিজিটাল কনসেপ্ট, প্রাচী অ্যাডভার্টাইজিং ও গ্লোবাল মিডিয়া।
গত বৃহস্পতিবার নগরের ডিটি সড়কে অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ পরিচালনা করে সিডিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত। এই সময় সাইনি ও এডফ্রেমের বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মকর্তারা অভিযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিডিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দাবি করেন, বিলবোর্ড স্থাপনে কপোরেশনের অনুমতি রয়েছে। তবে সিডিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাঁদের দাবি খারিজ করে দিয়ে বিলবোর্ড অপসারণ করেন।
এডফ্রেমের পক্ষে শওকত আলম ও সাইনির পক্ষে মেজবাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা করপোরেশনের অনুমোদন নিয়ে এখানে বিলবোর্ড স্থাপন করেছেন। এ জন্য করপোরেশনকে নিয়মিত ট্যাক্স পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু এখন শুনি সিডিএ এখনো পর্যন্ত করপোরেশনকে সড়ক বুঝিয়ে দেয়নি।
তবে সিডিএর সড়কে বিলবোর্ড স্থাপনের কোনো ধরনের অনুমোদন দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আহমদুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্প্রসারণের কাজ চলছে এমন সড়ক থেকে বিলবোর্ড অপসারণের জন্য সিডিএকে গত বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়েছি।’
প্রসঙ্গত, গত রোববার থেকে সিটি করপোরেশন ও নগর পুলিশ যৌথভাবে নগরের অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদে অভিযান শুরু করে। সিডিএ শুরু করে বৃহস্পতিবার।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৪-১১-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :