‘ যোগাযোগ বাড়লে বাংলাদেশের রপ্তানি অনেক বাড়বে’
একুশে সংবাদ : ইউনিভার্সেল ফিন্যান্সিয়াল সলিউশনস লিমিটেডের (ইউএফএসএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আমিনুল কবির। কাজ করেছেন এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও আইসিআইসিআইসহ কয়েকটি ব্যাংকে। তার প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কোম্পানির জন্য ঋণ ও অর্থায়ন বিষয়ে পরামর্শ সেবা, মূলধন উত্তোলন, বন্ড ইস্যু ইত্যাদি সেবা দিয়ে থাকে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটি বে-মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ড আনতে যাচ্ছে বাজারে।
মূলত আপনি একজন ব্যাংকার। তো সেই ট্র্যাক ছেড়ে পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেন কেন, কিভাবে?
সৈয়দ আমিনুল কবির: আমি মূলত আর্থিক সেবা (ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস) খাতের সাথে যুক্ত। আমি আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ খাতের কিছুটা হলেও উন্নতি করতে চাই। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কাঠামো ও মৌলিক নিয়ন্ত্রণের অভাব রয়েছে। ব্যাংকিং খাতে অর্জিত আমার জ্ঞান ও নিষ্ঠাকে আমি একত্রে কাজে লাগাতে চাই।
আপনার প্রতিষ্ঠান ইউএফএসএল সম্পদ ব্যবস্থাপনা করে থাকে।আমাদের দেশে এ ধরণের প্রতিষ্ঠানের প্রধান কাজ মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করা। আপনারাও কি তা-ই করবেন, নাকি নতুন কিছু করার পরিকল্পনা আছে?
সৈয়দ আমিনুল কবির: আমাদের মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিক্যালস অব অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী আমরা ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস দেবো। শুরুটা আমরা ওপেন ইন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা ইউনিট ফান্ড দিয়ে করবো।
বর্তমানে আমাদের দেশে মিউচুয়াল ফান্ডের দু:সময় যাচ্ছে।তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ ফান্ডের ইউনিট তার সম্পদ মূল্যের চেয়ে কম দামে কেনা-বেচা হচ্ছে। ইউনিট ফান্ডগুলোতে কাঙ্খিত সাড়া নেই বলে শুনি। আপনাদের ফান্ডের অবস্থা কি? প্রতিকূল সময়ে টিকে থাকতে কি কৌশল নেবেন আপনারা?
সৈয়দ আমিনুল কবির: সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য মিউচ্যুয়াল ফান্ড হচ্ছে শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ। এ সম্পর্কে বাজারে জ্ঞানের অভাব আছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অর্থ বিনিয়োগ করা হয় সুষ্ঠ নীতি ও মৌলিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে। যার কারণে এর নীট সম্পদ বৃদ্ধিতে ধারাবাহিকতা থাকে। ফান্ড থেকে ভাল লভ্যাংশ পাওয়া যায়। আমাদের দুটি ফান্ড নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমতির অপেক্ষায় আছে। আমরা এর অর্থ বিনিয়োগে মৌলিক বিশ্লেষণ ও জ্ঞানের ওপর গুরুত্ব দিবো। একই সঙ্গে আমরা ইউনিটিহোল্ডারদেরকে নিয়মিত লভ্যাংশ দেওয়ার চেষ্টা করবো।
আমরা যতদূর জানি আপনারা বেশ কিছু বন্ড নিয়ে কাজ করছেন। এ বিষয়ে আপনাদের পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতা কী?
সৈয়দ আমিনুল কবির: আমরা কয়েকটি স্বনামধন্য ব্যাংকের টায়ার টু ক্যাপিটালের জন্য বন্ড ইস্যুর ব্যবস্থা করছি। এর মধ্যে ট্রাষ্ট ব্যাংক লিমিটেড ও যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের ২০০ কোটি টাকার বন্ড নিয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যে ট্রাষ্ট ব্যাংকের বন্ড ইস্যু করে টাকা অর্থ উত্তোলন শেষ করেছি।
একটি কার্যকর বন্ড মার্কেট গড়ে তোলার জন্য অবকাঠামো ও নীতিগত কী সমর্থন প্রয়োজন?
সৈয়দ আমিনুল কবির: আমার মতে একটি কার্যকর বন্ড মার্কেট গড়ে তোলার জন্য কয়েকটি বিষয়ে জোর দেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত স্টক এক্সচেঞ্জের মতো আলাদা বন্ড মার্কেট, দ্বিতীয়ত পৃথক রুলস-রেগুলেশনস এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর পাশাপাশি ইস্যুয়ার এবং বিনিয়োগকারী দু-পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে।
আপনারা বেশ কিছু বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে অ্যাভাইজরি সেবা দিচ্ছেন বলে জানি। একটু সুনির্দিষ্ট করে যদি বলতেন এর মধ্যে কোন কোন সেবা অন্তর্ভূক্ত?
সৈয়দ আমিনুল কবির: আমরা ক্যাপিটাল স্ট্রাকচার অ্যাভাইজরি (লোন অ্যান্ড ইক্যুইটি), রেইজিং ফান্ড ফর কর্পোরেট ফিন্যান্স এবং প্রজেক্ট ফাইন্যান্স এবং ট্রেড ফাইন্যান্স অ্যাভাইজরি সেবা দিয়ে থাকি।
আপনি আইসিআইসিআইসহ কয়েকটি বিদেশী ব্যাংকের প্রতিনিধিত্ব করছেন।তো বাংলাদেশের শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতি সম্পর্কে তাদের পর্যবেক্ষণ কি? স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানে অর্থায়নে কতটুকু আগ্রহী তারা।
সৈয়দ আমিনুল কবির: বাংলাদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রাইভেট সেক্টর নির্ভর এবং এটি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইসিআইসিআই ব্যাংকের এখানে কোনো অফিস নেই। তাই সিডিউল ব্যাংকের মতো তাদের পক্ষে প্রত্যক্ষ অর্থায়ন করা সম্ভব নয়।
বিদেশী ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে আপাতত চাপ কম পড়ছে। সুদ হার নিয়ে প্রতিযোগিতার আবহ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এর বিপরীত কিছু দিকও তো আছে। সুদ-আসলে বিদেশী ঋণ ফেরত দেওয়ার কারণে দেশের অর্থনীতি কি এক সময় বড় ধরণের চাপে পড়বে না?
সৈয়দ আমিনুল কবির: না, পড়বে না। কারণ কম সুদে ঋণ নিয়ে উদ্যোক্তারা বেশি ভ্যালু তৈরি করছেন। দেশে ব্যবসা ও কর্মক্ষেত্রের প্রসার হচ্ছে। তাছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠানের বৈদেশিক মুদ্রায় আয় রয়েছে তারাই শুধু বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিচ্ছে।
আপনি আইসিআইসিআই ব্যাংকে থাকাকালে উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্যগুলো (সেভেন সিস্টারস) নিয়ে কাজ করেছেন। বেশ কিছুদিন ধরেই ওই অঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের কানেক্টিভিটি বা যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এ যোগাযোগ বাড়লে আমাদের অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়তে পারে?
সৈয়দ আমিনুল কবির: যোগাযোগ বাড়লে বাংলাদেশের রপ্তানি অনেক বাড়বে। যদি আমরা ভারতের গোঁহাটিতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের একটি অফিস স্থাপন করতে পারি, তাহলে প্রচুর পর্যটক আকৃষ্ট করতে পারবো।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৪-১১-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :