AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

কোন ভরসায় লতিফ সিদ্দিকী ঢাকায় এলেন?


Ekushey Sangbad

১২:১৬ পিএম, নভেম্বর ২৫, ২০১৪
কোন ভরসায় লতিফ সিদ্দিকী ঢাকায় এলেন?

একুশে সংবাদ : লিখতে বসব, ঠিক তখনই টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠল খবরটি। চাঞ্চল্যকর খবরই বলতে হবে। সংক্ষিপ্ত খবরটি হলো-গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে লতিফ সিদ্দিকী এখন ঢাকায়। লীগ সরকারে তিনি টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন। ছিলেন শাসক দল আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সংস্থা সভাপতিমন্ডলীর সদস্য। পবিত্র হজ এবং নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে জঘন্য উক্তি করে তিনি মন্ত্রিত্ব এবং নেতৃত্ব উভয়ই হারিয়েছেন। তার আরেকটি অপরাধের কোনো বিচার ও প্রতিকার কিছুই হয়নি। সেটি টকশোতে অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে তার অমার্জনীয় অশালীন উক্তি। তার ঢাকায় ফিরে আসা নিয়ে আলোচনায় যাওয়ার আগে যে অভিযোগে তিনি গদিচ্যুত হয়েছেন, তার ওপর চোখ বুলিয়ে নেয়া জরুরি। নিউইয়র্কে জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে নিউইয়র্কের টাঙ্গাইলবাসীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, 'আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ ও তাবলিগ জামাতের বেশি বিরোধী। এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরব গেছে। এদের কোনো কাম নেই। এদের কোনো প্রডাকশন নেই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু যাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে। এভারেজে যদি বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ লোক হজে যায়, প্রত্যেকের ৫ লাখ টাকা করে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়।' হজ কীভাবে এসেছে তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, 'আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ চিন্তা করল, এ জাজিরাতুল আরবের লোকেরা কীভাবে চলবে? তারা তো ছিল ডাকাত। তখন একটা ব্যবস্থা করল, আমার অনুসারীরা, প্রতি বছর একবার একসঙ্গে মিলিত হবে। এর মধ্যে দিয়ে একটা আয়-ইনকামের ব্যবস্থা হবে।' প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কেও কটু মন্তব্য করে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, 'কথায় কথায় আপনারা জয়কে টানেন কেন? জয় ভাই কে? জয় বাংলাদেশ সরকারের কেউ নয়। কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ারও তিনি কেউ নন।' টেলিভিশন টকশোর সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি টকশোতে অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে মন্তব্য করেন, 'তারা টকটকানি, চুৎ...।' শব্দটা পুরোপুরি লিখতে পারলাম না। হজ এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কুমন্তব্যের অপরাধে সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। একটি ইসলামী সংগঠনের ডাকে সারা দেশে হরতালও হয়। বিব্রতকর অবস্থার মুখে পড়ে শেখ হাসিনার ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী লীগ সরকার। জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীও তখন বিদেশে ছিলেন। সারা দেশে একটা প্রচার আছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন ধর্মপরায়ণা নারী। তিনি তার প্রমাণ রাখলেন। বিদেশে অবস্থানকালেই লতিফ সিদ্দিকীকে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। শাসক লীগের অভ্যন্তরে তাকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়। কেবিনেটেও আলোচনা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতি তখন বিদেশে থাকায় তাৎক্ষণিক লতিফ সিদ্দিকীর অপসারণে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ফাইলে স্বাক্ষর হয়নি। পরে কখন তাতে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করেছেন, তা মনে পড়ছে না। তবে দলের সভাপতিম-লী এবং প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কারের বিষয়টি স্পষ্ট মনে আছে। মিডিয়ায় তার হজ ও নবী করিম (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি এবং এ অপরাধে সরকারের ও দলের গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কেই প্রচার হয়েছে বেশি। সজীব ওয়াজেদ জয় এবং টকশোতে যাওয়া সাংবাদিকদের সম্পর্কে অশ্রাব্য মন্তব্য নিয়ে খুব একটা 'রা' হয়নি। সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যাপারটা এভাবেই ধরে নেয়া যায়, তার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের সঙ্গে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়টির সংশ্লিষ্টতা আছে। সে কারণে মন্ত্রী থাকাকালে হয়তো তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী-তনয়ের একটা সুসম্পর্ক ছিল। নানা কাজে তিনি হয়তো লতিফ সিদ্দিকীর সহযোগিতা পেয়েছিলেন, তাই নিজে এ ব্যাপারে রি-অ্যাক্ট করেননি। অন্যদেরও তিনি বারণ করেছিলেন কিনা_ তা আমাদের জানার সুযোগ ছিল না। কিন্তু সরকার বা দলের ভেতর থেকেও জয়কে নিয়ে কটূক্তির কোনো সমালোচনা শোনা যায়নি। তবে শোনা যায়, সজীব ওয়াজেদ জয় লতিফ সিদ্দিকীকে যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করতেন। সে জন্যও হয়তো তিনি বিষয়টা এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু সাংবাদিকদের সম্পর্কে অশ্লীল শব্দোচ্চারণের পরও সংশ্লিষ্টরা কেন নিশ্চুপ থাকলেন_ তা কিছুতেই মাথায় ঢোকেনি। এখন সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে তার ফিরে আসা। প্রথমে শোনা গিয়েছিল তিনি বিদেশি কোনো রাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় নেবেন। তার বিরুদ্ধে যখন সরকার ও দলে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়া চলছিল তখন আবার তিনি কলকাতা পর্যন্ত এসে গিয়েছিলেন। তার খোঁজখবরও পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই আবার উধাও। টিভি পর্দায় দেখা গেল তিনি ঢাকায় ফিরেছেন; কিন্তু এতদিন কোথায় ছিলেন, কোত্থেকে এলেন_ কিছুই জানানো হয়নি। এ লেখা যখন প্রকাশ হবে ততক্ষণে হয়তো সবই জানা হয়ে যাবে। হজ এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে যে জঘন্য উক্তির কারণে লফিত সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে সারা দেশে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ এবং সরকার ও দলের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, সেই উক্তি কিন্তু তিনি অস্বীকার বা প্রত্যাহার কোনোটাই করেননি। বরং বক্তব্যের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে বলেছেন, যা বলেছেন এটা তার বিশ্বাস। একমাত্র তার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেই তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন। অর্থাৎ তার যত আস্থা, তা একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ওপর। তিনি যে মন্তব্য করেছেন কোনো ধর্মপ্রাণ মুসলমানই তা মেনে নিতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রীও তা মেনে নেননি। কারণ, হজ হচ্ছে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। এ পাঁচ স্তম্ভের কোনোটিকে অস্বীকার করলে (হজ ও জাকাত আদায় সামর্থ্যের ওপর নির্ভরশীল) একজন মুসলমান আর মুসলমানই থাকেন না। এমন মন্তব্য বিধর্মীদের মুখ থেকেও শোনা যায় না। লীগ সরকার, আওয়ামী লীগ, সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিষয়টির ব্যাপারে কঠোর মনোভঙ্গি প্রদর্শনের পরও লতিফ সিদ্দিকী দেশে এলেন কোন ভরসায়? তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা হয়েছে, গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে কোনো কোনো স্থানে। অনুতপ্ত হয়ে তিনি কি বিচার ও শাস্তি বরণ করার জন্য এলেন, নাকি যে অভিযোগে তার মন্ত্রিত্ব, নেতৃত্ব গেল, মামলা-মোকদ্দমা হলা_ তাকে চ্যালেঞ্জ করে তার বিরুদ্ধেই আইনি লড়াই করতে এলেন? সরকারের জন্য বিষয়টা নিশ্চয়ই বিব্রতকর। যদি সরকারি মহল থেকে তার প্রতি কোনো ধরনের আনুকূল্য প্রদর্শন করা হয়, এমনকি নমনীয় ভাবও প্রকাশ করা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন একটা ধারণার জন্ম হতে পারে, সরকারের কোনো শক্তিশালী মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করে, আশ্বস্ত হয়েই তিনি দেশে এসেছেন। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, সরকার এ ব্যাপারে তার অবস্থান পরিবর্তন করবে না। উটকো আর একটা জটিল ঝামেলায় জড়াবে না। লীগ সরকারের সাবেক এ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার অনেক অভিযোগও পত্রপত্রিকায় বেরিয়েছে। এমন খবরও বেরিয়েছে, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির ফাইল প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে ছিল সিদ্ধান্তের জন্য। ধারণা দেয়া হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী যে কোনো সময় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তার আগেই লতিফ সিদ্দিকী সরকারকেই বিপাকে ফেলে দিলেন। চাকরি হারালেন; কিন্তু দুর্নীতির জন্য নয়, অন্য কারণে। কেউ কেউ এটাকে তার খুব উঁচু মাত্রার চতুর পদক্ষেপ বলেও বর্ণনা করছেন। কিন্তু অতি চালাকি, চাতুরতা সব সময় ভালো ফল দেয় না। সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সরকারের জন্য একের পর এক সঙ্কট সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ প্রত্যুৎপন্নমতিতার সঙ্গে ম্যানেজ করে ফেলেছিলেন আপাতত। তাতে রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞারও ছাপ ছিল। বিষয়টি ছিল সমগ্র মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার। এ ইস্যুতে সারা দেশে একটা তোলপাড় হয়ে যেতে পারত। একদিকে প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণতা, অপরদিকে দেশের ইসলামী সংগঠনগুলোসহ প্রধান বিরোধী দলের সংযমী ভূমিকার কারণে সরকার একটা রাজনৈতিক 'আইলা-সুনামি'র হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। লতিফ সিদ্দিকী ইস্যু স্তিমিত হয়ে আসতে না আসতেই সরকারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রী পদমর্যাদার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম সরকারকে আরেকটা বিপাকে ফেলে দিলেন। ১২ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগের এক আলোচনা সভায় পাবলিক সার্ভিস কমিশন এবং নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে তিনি এমন একটা ধারণা দিয়েছেন, সাংবিধানিক এ দুটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এখন সরকারের আজ্ঞাবহ। তিনি বলেছেন, পিএসসির লিখিত পরীক্ষায় পাস করলে ছাত্রলীগারদের চাকরিতে নিয়োগের বাকিটা তারাই দেখবেন। তার কথায় এমন একটা ধারণাই জনমনে সৃষ্টি হয়েছে, পিএসি এখন 'ঠুঁটো জগন্নাথ'। এখানে চলছে দলবাজি, দলীয় লোকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া। এটা এক ভয়ঙ্কর বার্তা। এভাবে চললে দেশে দক্ষ প্রশাসন বলতে কিছু থাকবে না। শুনে সবাই অাঁতকে উঠেছেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তাদের 'রিক্রুটেড' লোকরা কীভাবে 'বুক পেতে দিয়েছিল' তার যে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে সেই নির্বাচনে দলীয় হস্তক্ষেপের এক নগ্ন চিত্রই ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি। ১৭ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে তিনি যদিও সব দোষ মিডিয়ার ওপর চাপিয়েছেন, তা কিন্তু বিশ্বাসযোগ্যতা পায়নি। এরও বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে সর্বমহলে। শাসক লীগেও হয়েছে প্রতিক্রিয়া। দলের প্রবীণ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এইচটি ইমামকে অনেকটা মুখ সামলে কথাবার্তা বলতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীও একই কথা বলেছেন। এ পরিস্থিতি সামলানোর যখন চেষ্টা চলছে, তখন পুরনো প্রসঙ্গটাও আবার সামনে নিয়ে এলেন স্বয়ং লতিফ সিদ্দিকী। দুটো ইস্যুই সরকারের জন্য সঙ্কট। প্রধানমন্ত্রীর জন্যও। এদিকে ছাত্রলীগের জ্বালায় তো প্রধানমন্ত্রীর পাগল হয়ে যাওয়ার দশা। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি এক নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় চলে যাচ্ছে। অন্যদের কথা দূরে থাক, প্রধানমন্ত্রীর কথাও শুনছে না। যুবলীগও কোথাও কোথাও যেন ছাত্রলীগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেছে। সর্বক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণ যখন শিথিল হয়ে যায় দুর্নীতি, অনিয়ম, অনাচারসহ নানা কারণে তখনই শাসক দলের মধ্যে এ ধরনের বহুমুখী সঙ্কট সৃষ্টি হয়। সরকার কী পারবে এতসব সঙ্কট মোকাবিলা করতে? লতিফ সিদ্দিকী ইস্যুটা সরকার কী করে হ্যান্ডলিং করে_ এটাই এখন সবার আগে দেখার বিষয়। কাজী সিরাজ একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৫-১১-০১৪:
Link copied!