সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র ঐতিহাসিক জীয়ন্ত কূপ
একুশে সংবাদ : চলনবিলের কিংবদন্তি বেহুলা সুন্দরীর স্মৃতিধন্য জীয়ন্ত কূপ ও চান্দের বাজার হতে পারে সম্ভাবনাময় পিকনিক স্পট বা পর্যটন কেন্দ্র। ১৬০০ শতাব্দীর প্রাচীন লোককাহিনির নায়িকা বেহুলা সুন্দরীর জন্মস্থান সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার তৎকালীন নিচানীনগর (বর্তমানে বিনসাড়া) গ্রামে। বাছবানিয়ার একমাত্র রূপসী কন্যা বেহুলা। রূপে, গুণে সে অনন্য। বাবার সঙ্গে সে প্রায়ই বাজারে যেত। বেহুলা যে বাজারে যেত তার নাম চান্দের বাজার। প্রায় ৩০০ বিঘা জমির উপর চান্দের বাজার বসতো তাড়াশ উপজেলার বস্তুল গ্রামে।
অপরদিকে বগুড়ার মহাস্থানে গোকুল গ্রাম থেকে চাঁদ সওদাগর ছেলে লক্ষ্মীন্দরকে নিয়ে চান্দের বাজার আসতেন। হঠাৎ একদিন চান্দের বাজারে বেহুলা সুন্দরীর সঙ্গে লক্ষ্মীন্দরের দেখা হয়। প্রথম দেখাতেই দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যে বটগাছের নিচে বসে দুজন গল্প করতেন সেই বটগাছটি এখনও প্রায় ৫ বিঘা জায়গাজুড়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চান্দের বাজারে এখন স্কুল, কলেজ, ভূমি অফিস, হাট-বাজার ইত্যাদি গড়ে উঠেছে।
জেলার তাড়াশ উপজেলার মধ্যে বস্তুল গ্রামে খাস জায়গা রয়েছে প্রায় ৭০০ বিঘা। প্রভাবশালীরা জায়গাগুলো দখল করে আছে। অনেকে প্রভাব খাটিয়ে নিজের নামে জায়গাগুলোর কাগজপত্রও তৈরি করে নিয়েছেন। অনেকেই সেখানে অট্টালিকা তৈরি করে বাস করছেন। অথচ সরকারি উদ্যোগে খাস জমি লিজ দিলে সেখান থেকে প্রতি বছর সরকার আয় করতে পারত। শুধু তাই নয়, পর্যটন কেন্দ্রের উদ্যোগে ঐতিহাসিক এই স্থানটির প্রচার পেলে প্রতি বছর চান্দের মেলায় হাজার হাজার মানুষ আসতো। ফলে ধীরে ধীরে এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেত।
বেহুলা-লক্ষ্মীন্দরের স্মৃতিধন্য চান্দের বাজারের বটগাছের উচ্চতা প্রায় ৮০ ফুট। প্রায় ৫৬০টি বহর দ্বারা বেহুলা-লক্ষ্মীন্দরের বসে থাকার আসন ঘিরে রাখা হয়েছে। বটগাছের বহরগুলো দেখতে অপরূপ। দর্শনার্থীরা ঘুরে ঘুরে এর সৌন্দর্য উপভোগ করেন। কিন্তু বসার জায়গা না থাকায় তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সরকারি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে চান্দের মেলার ঐতিহ্য। এখনও বহুদূর থেকে বটগাছটি দেখা যায়। তাছাড়া বেহুলার স্মৃতিধন্য বিনসাড়া গ্রামের জীয়ন্ত কূপ এখনও কালের সাক্ষী হয়ে আছে। এটা দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ। প্রতিদিন শত শত দর্শক জীয়ন্ত কূপ দেখার জন্য বিনসাড়া গ্রামে আসেন।
প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসে তিন দিনব্যাপী চান্দের মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বহুদূর থেকে দর্শনার্থীরা এসে জীয়ন্ত কূপে দুধ, কলা মানত করে। ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে বেহুলা সুন্দরীর স্মৃতি রক্ষার্থে এলাকাবাসী সরকারের কাছে এই স্থানটিকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা করে সংরক্ষণের দাবি জানান।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৫-১১-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :