AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

‘স্পিড মানি’ কি ঘুষ নয়?


Ekushey Sangbad

০৫:১৬ পিএম, নভেম্বর ২৫, ২০১৪
‘স্পিড মানি’ কি ঘুষ নয়?

একুশে সংবাদ : সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের একটি বক্তব্য দেশের প্রচারমাধ্যমে ঝড় তুলেছে, স্পিড মানি মানে ঘুষ দেওয়া নাকি অবৈধ নয়। হঠাৎ তিনি এ ধরনের ফতোয়া দিতে গেলেন কেন, সেটা বুঝে উঠতে পারছি না। দেশের আইনে তো ঘুষ দেওয়া-নেওয়া দুটোকেই দুর্নীতি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে এগুলোকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে ক্রিমিনাল প্রসিডিওর কোডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যায়নি। তাই তাঁর এই হঠাৎ গজানো দুর্নীতিপ্রীতির মরতবা বোঝা গেল না! কিন্তু এ ধরনের বেফাঁস মন্তব্য জাতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং সরকারের জন্যও বিব্রতকর। সরকারের সবচেয়ে প্রবীণ, মেধাবী ও অভিজ্ঞ মন্ত্রী তিনি। মাঝেমধ্যে ঝাঁজালো কথাবার্তা ও আক্রমণাত্মক আচরণের জন্য মিডিয়ার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হলেও অভিভাবকসুলভ ব্যক্তিত্বের কারণে তাঁকে পারতপক্ষে কেউ পাল্টা-আক্রমণ করে না। (রাবিশ ও বোগাস শব্দ দুটো তাঁর ট্রেডমার্ক)। কিন্তু তাই বলে দুর্নীতিকে গলার জোরে জায়েজ করতে চাইলে তা তো নীরবে হজম করা যায় না। এ জন্যই তাঁকে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনার এই ভয়ংকর ফতোয়া প্রত্যাহার করুন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে ‘এক নম্বর প্রতিবন্ধক’ ঘুষ-দুর্নীতি-পুঁজি লুণ্ঠন। এটাকে এভাবে সর্বনাশা আশকারা দেবেন না, প্লিজ! ১৯৯৬-২০০১ সালের শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অনেক সুকীর্তি থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতির অভিযোগ সামাল দিতে না পারায় ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল তাদের। আবার ২০০৯-২০১৪ সালের মহাজোট সরকারকেও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল প্রধানত দুর্নীতির লাগাম টেনে না ধরার কারণেই। ২০১৩ সালের বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বিপর্যয় যেভাবে বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে একটা জনসমর্থনের জোয়ারের আভাস দিয়েছিল, তার সুযোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। ফলে সংলাপটি ভন্ডুল হয়ে যায় এবং ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনটি মঞ্চস্থ হয়। সেখানে ১৫৩ আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার যে অভূতপূর্ব নজির স্থাপিত হয়েছে, তাতে ওই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা যে ক্ষুণ্ন হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু আরেকটা বিষয়ও স্পষ্ট যে এই আসনগুলোয় আওয়ামী লীগ-বিএনপির সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ধরে নিয়ে ওগুলোতে মহাজোটের আর কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। মানে, নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণের সময় আওয়ামী লীগ ধারণা করেছে যে বিএনপি-জামায়াত শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ওই মারাত্মক চালের ভুলেই বর্তমানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এখন যতই বড় গলায় গেয়ে বেড়ান না কেন যে শেখ হাসিনার সাজানো নির্বাচনী ফাঁদে পা না দিয়ে তাঁরা ঠিক কাজটিই করেছেন, সে ব্যাখ্যাটা তেমন কেউ গ্রহণযোগ্য মনে করছে না। তরুণ পাঠকদের মনে করিয়ে দিতে চাই, ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও নিঃসন্দেহে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার সাজানো ছক ছিল, অনেক হিসাব-নিকাশ ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার জোয়ারে তাদের ষড়যন্ত্র খড়-কুটোর মতো ভেসে গিয়েছিল বলেই আওয়ামী লীগ ১৬২ আসনের মধ্যে ১৬০টিতে ভূমিধস বিজয় অর্জন করেছিল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ২০১৩ সালে বিরোধী রাজনীতির পক্ষে এ দেশে যে জনজোয়ার দৃষ্ট হয়েছিল, তার বেনোজলে মহাজোটের সাজানো ছকও ভেসে যেত। বিষয়টি মাতা-পুত্র কেউ উপলব্ধি করতে না পারাতেই আম-ছালা দুটোই হারিয়ে এখন বিএনপির নেতা-কর্মীরা হতাশার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, বিএনপির নেতা-কর্মী ও তাঁদের সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা যতই অবৈধ বলে গলাবাজি করুন না কেন, ওটার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও সাংবিধানিক দৃষ্টিতে নির্বাচনটা অবৈধ নয়। তাই বর্তমান মহাজোট সরকারের ‘পপুলার লেজিটিম্যাসি’ নেই মেনেও বলতে হবে, তাদের অবৈধ বলার যৌক্তিকতা নেই। বিএনপিকে বুঝতে হবে যে অদূর ভবিষ্যতে শেখ হাসিনা জাতীয় নির্বাচন দেবেন না, কারণ নির্বাচন হলেই আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হবে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ যতই প্রচারণা চালাক না কেন, এই সংসদ ও সরকারকে পপুলার ম্যান্ডেটবিহীন বলতেই হবে। এ অবস্থায়, আওয়ামী লীগের প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত তাদের হারানো জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়াস চালানো। সেটা করতে হলে তাদের সুশাসন কায়েম করতে হবে এবং বিশ্বাসযোগ্যভাবে দুর্নীতি নিরসনে ব্রতী হতে হবে। ২০০৭-০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিল, সেটা এখনো জনগণ ভুলে যায়নি। তখনকার দুর্নীতি দমন কমিশনের সাহসী ও কার্যকর ভূমিকা জনগণের মনে গেঁথে রয়েছে। আবার জনগণ এটা মোটেও পছন্দ করেনি যে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে সেই দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সুপরিকল্পিতভাবে ‘নখদন্তহীন ব্যাঘ্রে’ পরিণত করেছেন। দুদক স্বাধীনভাবে দুর্নীতি দমনে দায়িত্ব পালন করতে পারলে ক্ষমতাসীন দল বা জোটের বিপদ বেশি হওয়াটাই এ দেশে স্বাভাবিক। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার অভাবেই যে দুদক অকার্যকর রয়ে গেছে, সেটা দুদকের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানের বক্তব্যে প্রমাণিত। সাম্প্রতিক কালে দুদক বেশ কয়েকটা খারাপ নজির সৃষ্টি করেছে। যেমন পদ্মা সেতুর দুর্নীতির ইস্যুতে কানাডার আদালতে ২০১৫ সালে মামলাটির ফয়সালা হবে জানা থাকা সত্ত্বেও আগ বাড়িয়ে দুদক যেভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নির্দোষ ঘোষণা করল, সেটা খুবই হাস্যকর প্রহসন নয় কি? এরপর আরও অনেকগুলো ‘দায়মুক্তি’ ঘোষণার মাধ্যমে দুদক নিজেদের ইমেজের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। সন্দিগ্ধ জনগণ এখন তাদের প্রতিটি পদক্ষেপের পেছনে সরকারের ছায়া দেখতে শুরু করেছে বললে অত্যুক্তি হবে না। এটা জাতির জন্যও দুর্ভাগ্যজনক। আওয়ামী লীগের জনবিচ্ছিন্নতা এতে বাড়বে বৈ কমবে না। এক বছর ধরে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক প্রশংসনীয় পরিবর্তন পরিদৃষ্ট হচ্ছে, কিন্তু দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতার ভূমিকা থেকে সরকার সরে এসেছে বলে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। স্বজনতোষী পুঁজিবাদের (ক্রোনি ক্যাপিটালিজম) পুরোনো পথেই তাঁর অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, ইন্দোনেশিয়ার কুখ্যাত একনায়ক সুহার্তোর ৩৩ বছরের অপশাসনের অবসানের পর তাঁর পরিবার ও আত্মীয়স্বজন এবং সরকারের মন্ত্রী ও জেনারেলদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের দুর্নীতি ও লুটপাটের যে ভয়াবহ প্রামাণ্যচিত্র বিস্তারিত দলিলসহ বিশ্বের সামনে উদ্ঘাটিত হয়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতেই উন্নয়ন-তত্ত্বে ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’ ধারণাটির অবতারণা করা হয়েছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশের ৪৩ বছরের ইতিহাসে ক্ষমতাসীন প্রতিটি শাসক এ ধরনের ‘স্বজনতোষী পুঁজিবাদেরই’ পৃষ্ঠপোষকতা করে গেছে, কোনো ব্যতিক্রমী নেতৃত্ব পাওয়ার সৌভাগ্য আজও এ জাতির ভাগ্যে জোটেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতই বড় গলায় বড়াই করুন না কেন, ‘তাঁকে কেনা যায় না’, কিন্তু তাঁর গত ছয় বছরের ট্র্যাক রেকর্ড কী প্রমাণ করছে? তাঁর আত্মীয়স্বজন, মন্ত্রীদের স্বজন এবং দলীয় নেতারা ও তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ভাগ্যবান ব্যবসায়ীদের অবিশ্বাস্য ধন-দৌলত অর্জনের যে অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো জনগণ জানে না মনে করার কারণ নেই। ব্যাংকের মালিকানা বণ্টন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বণ্টন, ঠিকাদারির টেন্ডার নিয়ে কাড়াকাড়ি, যত্রতত্র দখলদারি, চাঁদাবাজি—এগুলোর স্মৃতি এখন জনমনে একেবারেই তরতাজা! এগুলোর তুলনায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, আরাফাত রহমান, প্রয়াত মেজর সাইদ ইস্কান্দার ও খালেদা জিয়ার অন্যান্য আত্মীয়স্বজন এবং বিএনপির মন্ত্রী ও নেতা-কর্মীদের পুঁজি লুণ্ঠনের কাহিনি এখন বাসি ও গৌণ হয়ে গেছে আট বছর সময়ের ব্যবধানে। ফলে এসব দুর্নীতির নেতিবাচক প্রচারণার মোকাবিলায় আবারও শেখ হাসিনার সরকারের গত ছয় বছরের সাফল্যগুলো চাপা পড়ে যাচ্ছে। অথচ আমাদের বিবেচনায় দেশের অর্থনৈতিক সাফল্যগুলো অনেক বেশি গুরুত্ববহ। দেশ এখন ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। দেশের রপ্তানি খাত প্রশংসনীয় হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী জনসংখ্যার হার ২৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। দেশ জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যের বেশির ভাগই অর্জন করার অবস্থানে রয়েছে। দেশের সামাজিক অর্জনের সূচকগুলো ভারতের চেয়েও ভালো। এ দেশের জনগণের গড় প্রত্যাশিত আয়ু ৬৯ বছর, ভারতের ৬৬ বছর। এ দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ স্যানিটারি পায়খানা ব্যবহার করে, ভারতে মাত্র ৪৫ শতাংশ। এ দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ বিশুদ্ধ পানি পান করে, ভারতে মাত্র ৭৫ শতাংশ। কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরোনোর উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এই সাফল্যগুলোর কৃতিত্ব ঘরে তুলতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য দুর্নীতিবিরোধী সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হবে। ‘স্পিড মানি অবৈধ নয়’ ধরনের ফতোয়া এ সময়ে নিজের পায়ে কুড়াল মারার শামিল নয় কি, অর্থমন্ত্রী? মইনুল ইসলাম : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৫-১১-০১৪:
Link copied!