ধর্ষণ- নারীর যৌন তৃপ্তির জন্য !
একুশে সংবাদ : সম্প্রতি ধর্ষকের হাতে ডাক্তার সাজিয়া আফরিন এবং এবছরেই আরো কিছু নারীর( পেশাজীবী সহ) ধর্ষিতা হবার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমি প্রস্তাব করেছিলাম যে প্রতিটি পেশাজীবী মেয়েকে পিস্তলের লাইসেন্স দেয়া এবং এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া উচিৎ যাতে সে ধর্ষকের উদ্ধত, দুর্বিনীত, নির্লজ্জ অংগকে গুলি করে গোড়া সুদ্ধ উপড়ে ফেলতে পারে ।
এর পরিপ্রেক্ষিতে একজন ফেসবুক বন্ধু লিখলেন যে, যৌন অংগ উপড়ে নিলে মেয়েদের যৌন তৃপ্তি দিবে কীভাবে এবং মেয়েরা না কী এটা চায় ! আমি সাধারণতঃ কারো মন্তব্য মুছে ফেলি না যদি আমাকে গালিগালাজ করা না হয়। কিন্তু তার এই কথা আমার এতো আপত্তিকর মনে হলো যে আমি মুছে ফেললাম। কিন্তু তিনি আবার মন্তব্য করলেন এবং আমাকে তা – ও এক-ই কারণে মুছে ফেলতে হল। কিন্তু তিনি আবার মন্তব্য করেছেন এবং ধর্ষণের জন্য মেয়েদের দোষী করেছেন। তাই এই পোস্টের অবতারণা । তার মন্তব্য পড়ে আমার মনে প্রশ্ন জাগলো আসলে ধর্ষণ বলতে তিনি ( তার মতের আরো অনেকে) আসলে কী বোঝেন ? ধর্ষণ আর স্বাভাবিক যৌন সম্পর্কের মধ্যে পার্থক্যটি কী তাদের কাছে পরিষ্কার ?
স্পষ্টতঃ বোঝা যাচ্ছে যে এসব বিষয়ে অনেকের -ই ভুল ধারণা রয়েছে । শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে আমাদের অজ্ঞতা সীমাহীন- যদিও আমরা নিজেদের অনেক সময়-ই পন্ডিৎ মনে করি । ধর্ষণে মেয়েরা যৌন তৃপ্তি লাভ করে বা গার্ল ফ্রেন্ড/ প্রেমিকা বা স্ত্রীকে যৌন তৃপ্তি দিতে হলে তাকে ধর্ষণ করতে হবে এই তথ্য ধর্ষণ সমর্থনকারী ( একে হালকা করে দেখা ) পুরুষেরা কোথায় পেলেন ? মেয়েরা কী তাদের বলেছে ? কয়টি মেয়ে বলেছে ? কোন সার্ভে বা স্টাডি আছে কী ?
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ২ লক্ষ বাংগালী মেয়ে ধর্ষিত হয়েছিলেন পাকিস্তানী পশুদের দ্বারা। আপনি কী এখন বলবেন যে পাকিস্তানী পাঞ্জাবী এবং মাকরানী জওয়ানেরা বাংগালী মেয়েদের ধর্ষণ করে যৌন তৃপ্তি দিয়েছিল ? !!!!!!! তাহলে আর বিচার দাবি করছি কেন ? বার বার এই ধর্ষণের কথা প্রচার করি কেন ? আমাদের তো খুশি হ ওয়ার কথা এই ভেবে যে দীর্ঘদেহী পাকিস্তানী জওয়ানেরা আমাদের দেশের মেয়েদের ধর্ষণ করে তাদের যৌন তৃপ্তি দিয়েছে ভেবে ধর্ষণ সমর্থনকারীদের কথা মত ? আর তারা কী পাকিস্তানী সৈন্যদের প্রলুব্ধ করেছিল তাদের ধর্ষণ করার জন্য ?এই সব নির্যাতিত বীরাঙ্গণারা কী বলেছে যে তাদের ধর্ষণ করে তৃপ্তি দিয়েছে পাকিস্তানী সৈন্যরা এবং এ জন্য তারা কৃতজ্ঞ তাদের কাছে ? ধর্ষণ সমর্থকেরা কী বুঝতে পারছেন তাদের কথার তাৎপর্য্য ?
একটি নারীর অবশ্য-ই যৌন চাহিদা আছে-যেমন আছে একটি পুরুষের। একটি নারী যৌন তৃপ্তি পেতে চায়- যেমন চায় একটি পুরুষ। এটা প্রাকৃতিক এবং স্বাভাবিক। এই চাহিদা আছে বলেই তো পুরুষ এবং নারী যৌন সম্পর্ক করে যাতে একটি মানুষের জন্ম হয় এবং মানব জাতির অস্তিত্ব টিকে থাকে। কিন্তু তাই বলে কী একটি নারী ধর্ষণের মাধ্যমে একটি সন্তানের মা হতে চায় ? সে কী একজন ধর্ষকের সন্তানের মা হতে চায় ? চায় বলে কখনো শুনি নি। অথচ একজন ধর্ষক সেই কাজটি-ই করে। সে একটি নারীর অনুমতির তোয়াক্কা না করে- তার আবেগ -অনুভূতির প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করে গায়ের জোরে, আক্রমণ করে তার শরীরের ভেতর ঢুকে পড়ে এবং ডাস্টবিনের মতো দেহ নিঃসৃত পদার্থ নিষ্ক্রান্ত করে চম্পট দেয় । একটি নারী কী তাই চায় ? আর চায় না বলেই এ ধরণের পুরুষতন্ত্র কর্ত্তৃক ধর্ষিত এবং নির্যাতিত হয়ে ভারতের চম্বলের ফুলন দেবী হাতে তুলে নিয়েছিল বন্দুক এবং তার ধর্ষণকারীদের চিরতরে যমের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল।
ধর্ষণ বা ধর্ষকের সমর্থকেরা আরেকটি যুক্তি দেন যে নারীরা-ই পুরুষদের প্রলোভিত করে বা Provoke করে। তারা এই প্রলোভন বা প্রভোক করা বলতে কী বোঝে আমি জানি না। একটি মেয়ে তো একটি পুরুষের প্রতি আকর্ষণবোধ করতেই পারে- যেমন একটি পুরুষ ও আকর্ষণ বোধ করে একটি মেয়ের প্রতি। একটি মেয়ে একটি পুরুষের প্রতি আকর্ষণ বোধ করলে সে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করবে এটা ও কী স্বাভাবিক নয় – যেমন একটি পুরুষ ও করে ? একটি নারী একটি পুরুষের বা কিছু পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়- মানে সে একজন সংগী ( বয় ফ্রেন্ড, প্রেমিক বা স্বামী খুঁজছে ) যার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হতে পারে । কিন্তু তার মানে কী এই যে সে ধর্ষিত হতে চাইছে ? ফুলন দেবী কী ধর্ষিত হবার জন্য গ্রামের পুরুষদের প্ররোচিত করেছিল ? এবং ডাক্তার সাজিয়া আফরিন ? এবং এ বছরেই শত টুকরো হওয়া সেই মেয়েটি ?
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৬-১১-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :