সাইকিয়াট্রিস্ট আশ্রাফ উদ্দীন || আহসান হাবীব
একুশে সংবাদ : আশরাফ উদ্দীন একজন সাইকিয়াট্রিস্ট। অল্প বয়সে তিনি বেশ নাম করেছেন। অন্তত তার তাই ধারণা। তার স্যার ছিলেন ড. সিফাত রহমান। তিনিও দেশের নামকরা সাইকিয়াট্রিস্ট। তিনি বলেছিলেন, কোন সাইকিয়াট্রিস্ট যদি পর পর তিনটা কেস সফলভাবে সলভ করতে পারে তাহলেই সে নামকরা সাইকিয়াট্রিস্ট। আশরাফ উদ্দীনের বেলায় দুটা কেস বেশ সফলভাবে সলভ হয়েছে। এখন বাকি আছে একটা। সাধারণ কেসগুলোতো সফল হচ্ছেই।
প্রথম কেসটা বেশ মনে আছে।
তার কাছে এক তরুণ এলা অভিভাবককে নিয়ে। তরুণের গলায় একটা ক্রশ ঝুলছে। বোঝা গেল তরুণ খ্রিস্টান।
- আপনি খ্রিস্টান?
না স্যার, সমস্যাটা এখানেই। ও মুসলিম। গলায় ক্রশ ঝুলিয়ে ঘুরে- তরুণের অভিভাবক বলল।
- এটাই সমস্যা?
- জি স্যার, ওর ধারণা ও বিংশ শতাব্দীর যিশুখ্রিস্টের অনুসারী।
- হুম বুঝতে পেরেছি। কাউন্সিলিং করতে হবে। কয়েকদিন টানা সেশন লাগবে।
আশরাফ উদ্দীনের কথামতো শুরু হলো সেশন। সেশনে নানারকম কথাবার্তা হতো। শেষের দিকে একদিন হলো এমন-
- আপনি নিজেকে যিশুখ্রিস্টের অনুসারী ভাবছেন?
- জি।
- বিংশ শতাব্দীর যিশুখ্রিস্টের অনুসারী?
- জি।
- তাই গলায় ক্রশ ঝুলাচ্ছেন?
- জি।
- কিন্তু আপনি প্রকৃত বিংশ শতাব্দীর যিশুখ্রিস্টের অনুসারী না।
- কেন?
- কারণ বিংশ শতাব্দীর যিশুখ্রিস্টের অনুসারী হলে গলায় ক্রশ ঝুলাতো না।
- কী ঝুলাতো?
- ডেথ চেয়ার!
রোগী কি বুঝলো, না বুঝলো সে ভালো হয়ে গেল। পরের কেসটাও কম ইন্টারেস্টিং না। এই রোগী নিজেকে নিয়ে খুব হতাশ।
- আমি জীবনে কখনই প্রথম হতে পারি নি। না স্কুল কলেজের কোনো পরীক্ষায়, না কোনো সামাজিক কর্মকাণ্ডে; না কোনো কিছুতে। এ কারণে আমার মধ্যে এক ধরনের হীনম্মন্যতা সৃষ্টি হয়েছে ।
হুম, মাথা ঝাকালেন সাইকিয়াট্রিস্ট আশরাফ উদ্দীন। ভালো কাউন্সেলিং লাগবে। শুরু হলো এই জটিল রোগীর কাউন্সিলিং। তিনি এটা বুঝলেন, জীবনের একটা ক্ষেত্রে এই রোগী ফার্স্ট হয়েছে জানতে বা বুঝতে পারলে তার এ রোগ সেরে যাবে। এবং হলোও তাই।
- আপনি ভাবছেন আপনি জীবনে কখনো ফার্স্ট হন নি তাই না?
- জি। কখনই না।
- আপনারা ধারণা ভুল। আপনি ফার্স্ট হয়েছেন।
- ফার্স্ট হয়েছি??
- হ্যাঁ, হয়েছেন অন্তত একবার।
- কিসে?
- দৌড়ে।
- কী বলছেন? কখনই না। স্কুলের কোনো স্পোর্টসে আমি হিটেই টিকতে পারি নি।
- না না, অবশ্যই আপনি দৌড়ে ফার্স্ট হয়েছেন।
- কোন দৌড়ে?
- আপনার ‘জাইগোট’ ফর্ম করার আগের মুহূর্তের দৌড়ে।
সত্যি সত্যি এই জটিল রোগীর হীনম্মন্যতা দূর হয়ে গেল। সে ভালো হয়ে গেল। এবার আর একটা জটিল রোগী ভালো করতে পারলেই সে সেরা সাইকিয়াট্রিস্ট। কিন্তু সেরকম জটিল রোগী আর আসছেই না। কিন্তু কপাল ভালো, একদিন সকাল সকাল এক জটিল রোগী এসে হাজির হলো। এই অদ্ভুত রোগী কোনো কথা না বলে সোজা তার টেবিলের নিচে ঢুকে গেল। আশরাফ উদ্দীন বুঝলেন, এ আসলেই জটিল রোগী। ফলে দেরী না করে তিনি কাউন্সিলিং শুরু করে দিলেন।
- আপনার নাম?
- মোতাব্বের।
- আপনার বয়স?
- ৩৫।
- কতদিন ধরে এই সমস্যা?
চলতে লাগলো কাউন্সিলিং। এবং আধা ঘণ্টার মাথায় সাইকিয়াট্রিস্ট তাকে টেবিলের তলা থেকে বের করে আনতে সমর্থ হলেন।
তবে জানা গেল যে মোতাব্বির আসলে রোগী না, সে কর্পেন্টার! তার টেবিল ঠিক করতে এসেছিলেন। তার আসার কথা ছিল।
না, সাইকিয়াট্রিস্ট আশরাফ উদ্দীন হতাশ হন নি। প্রফেশনাল হ্যাজার্ড বলে একটা কথা আছে। তিনি অপেক্ষায় আছেন নতুন কোনো জটিল রোগীর।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৬-১১-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :