AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ব্যক্তির চেয়ে সামষ্টিক সূচক গুরুত্বপূর্ণ


Ekushey Sangbad

০১:৩৪ পিএম, নভেম্বর ৩০, ২০১৪
ব্যক্তির চেয়ে সামষ্টিক সূচক গুরুত্বপূর্ণ

একুশে সংবাদ : বাংলাদেশ ছিল একটি দারিদ্র্যপীড়িত দেশ। সে অবস্থার উত্তরণে আমরা অনেক অংশে সফল হয়েছি। আমাদের একটি অধ্যায় ছিল, টিকে থাকা। এ টিকে থাকার ক্ষমতায় বাংলাদেশ যথেষ্ট পারদর্শী হয়েছে। টিকে থাকার ক্ষমতা মূলত হচ্ছে মানুষের। আর সরকারের দায়িত্ব হলো দুর্যোগ মুহূর্তে টিকে থাকার নিশ্চয়তা প্রদান করা। এ দুর্যোগ মুহূর্তে টিকে থাকার দক্ষতাও রাষ্ট্রের তৈরি হয়েছে। আমরা দুর্যোগের মুখে পড়লে এত দলীয়করণের মধ্যেও কিন্তু রাষ্ট্র সাড়া দেয় বা দিতে বাধ্য হয়। এ বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে। আমরা একটা স্তর পার হয়ে এখন বলছি মধ্যম আয়ের কথা। কিন্তু আমাদের ধারণার জগতে আমরা একমাত্রিক ধারণা নিয়ে এগোচ্ছি। আমরা শুধু ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিভিন্ন সূচক, যেমন মাথাপিছু আয়, বাসস্থান ইত্যাদি নিয়ে এগোচ্ছি। কিন্তু আমরা সে স্তরে ঢুকতে যাচ্ছি অর্থাৎ মধ্যম আয়ের স্তরে, সেখানে ব্যক্তির চেয়ে সামষ্টিক সূচক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় যুক্তিযুক্ত। যেমন নগরজীবন। মনে করুন, কেউ একজন ১ কোটি টাকা দামের অ্যাপার্টমেন্টে থাকছেন। এ হিসেবে তিনি মধ্যম আয়ে পৌঁছে গেছেন। এখন তিনি বাসা থেকে বের হয়ে যে রাস্তায় চলবেন, সেটি কিন্তু সবার রাস্তা। রাস্তাটি পরিষ্কার কিনা, তা কিন্তু আয়ের সূচক দিয়ে ঠিক করা যাবে না। এটি একটি সামষ্টিক সমাধানের বিষয়। এ সামষ্টিক সমাধানের জায়গাগুলোয় আমরা অগ্রসর হতে পারছি না। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। যেমন আমরা একটি একমাত্রিক উন্নয়ন ধারণার মধ্যে নিজেদের আটকে ফেলেছি। বাংলাদেশের স্বপ্নটা কিন্তু মধ্যবিত্তরাই চিত্রায়িত করেছিল। কৃষক-শ্রমিকের সহায়তা ছাড়া সে স্বপ্ন অর্জন সম্ভব ছিল না। বাংলাদেশে এখন মধ্যবিত্তের মধ্যে বিশাল শ্রেণিবিন্যাস হয়ে গেছে। উচ্চবিত্তদের একটা অংশ কিন্তু এখনও তার প্রাক-স্বাধীনতা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ধারক হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করে। কিন্তু আসলে তারা শ্রেণিচ্যুত হয়ে এখন উচ্চবিত্ত। তাদের ধ্যান-ধারণা নিয়েই আগানোর চেষ্টা হচ্ছে। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে সম্পর্কযুক্ত একটা শ্রেণী শক্তিশালী হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মধ্যম আয়ের ধারণায় সমতা, ন্যায়বিচারের বিষয়টি অনুপস্থিত হয়ে গেছে। অর্থাৎ ধারণাটা হচ্ছে শুধু উৎপাদনকেন্দ্রিক। কথা হচ্ছে শুধু জিডিপি নিয়ে; কিন্তু জিডিপি যাচ্ছে কার হাতে, তা নিয়ে আলোচনা কম। এ জিডিপি নিয়ে যারা কথা বলছেন, তারা সেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা মধ্যবিত্তদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিন্তু আসলে এখন তারা একটি নতুন উচ্চবিত্ত শ্রেণী। সাধারণ মানুষের শ্রম এবং মেধায় দেশ অনেক এগিয়েছে। কিন্তু উচ্চবিত্ত শ্রেণী তৈরি হচ্ছে সুশাসনের ঘাটতি থেকে। যেমন ব্যাংকিং সেক্টরে ধস, শেয়ারবাজারে দুর্নীতি, রাজনীতিবিদদের ব্যবসায়ীকরণ ইত্যাদির মধ্য দিয়েই উচ্চবিত্ত তৈরি হচ্ছে। * তার মানে এখানে কার্যকর সূচকগুলো সমান গুরুত্ব পাচ্ছে না। ** ঠিক তাই। জীবনমান বৃদ্ধি, বাসযোগ্যতা প্রভৃতি সূচক গুরুত্ব পাচ্ছে না। অবস্থাটা এমন যে, মধ্যম আয়ের স্বপ্ন দেখতে পারাটাই যেন আমাদের সার্থকতা। এখন আমাদের এ স্বপ্নটা ভেঙে দেখা দরকার যে, এটির মধ্যে কী আছে। এ স্বপ্নে কিছু অগ্রহণযোগ্য দিক আছে। যেমন বাসযোগ্যতার ধারণা এখানে অনুপস্থিত। শহরগুলো নোংরা, শৃঙ্খলাহীন এবং অপরিকল্পিত স্থাপনায় পূর্ণ। মানসম্মত শিক্ষার মধ্যে বিরাট বিভাজন তৈরি হয়েছে। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত নিজেদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার একটা দ্বীপ তৈরি করেছে, যার প্রবেশপথ হচ্ছে খরচ। আর গরিবদের জন্য আছে গরিবি শিক্ষা। তৃতীয় অগ্রহণযোগ্য দিকটি হচ্ছে মর্যাদার অভাব। শুধু অর্থনীতির সূচক দিয়ে মধ্যম আয়ের স্বপ্ন চিত্রায়িত করা যাবে না। কারণ আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নে মর্যাদাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। আইয়ুব খানের সময় ষাটের দশককে 'ডিকেড অব ডেভেলপমেন্ট' বলা হয়েছিল। তাকে প্রত্যাখ্যান করেই বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। কারণ আমরা কোনো একমাত্রিক উন্নয়ন চাই না। নাগরিক মর্যাদার বিষয়টিও খুব জরুরি। এখন আপনার পকেটে পয়সা থাকতে পারে, কিন্তু আপনি একটি মর্যাদাসম্পন্ন জীবন নিশ্চিত করতে পারবেন না। যেমন আপনি পুলিশের অযৌক্তিক নানা হেনস্তার মধ্যে সহজেই পড়তে পারেন, ভালো ব্যবহার পাবেন না। নাগরিক অধিকারবোধের ক্ষেত্রগুলো অত্যন্ত সীমিত। দলীয়করণ এবং অন্যান্য কারণে প্রতিকারের জায়গাগুলোও দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। পয়সা উপার্জনের বিভিন্ন পথ সম্প্রসারিত হয়েছে, কিন্তু সেই পয়সা পকেটে নিয়ে মর্যাদার জীবন নিশ্চিত হচ্ছে না। ফলে সমাজে শাসনের ক্ষেত্রে অনুকম্পার একটা প্রচ্ছন্ন দিক থেকে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ফিলিপাইনের উদাহরণটি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিরাট সম্ভাবনার এক দেশ ছিল সেটি। ৪০ থেকে ৫০ বছর আগে সাউথ কোরিয়াকেও ফিলিপাইনের অনেক পেছনে বিবেচনা করা হতো। সেই ফিলিপাইন এখনও সম্ভাবনার কথাই বলছে, আর সাউথ কোরিয়া উচ্চবিত্ত হয়ে দাতা সংস্থা হয়ে গেছে। আমরা ফিলিপাইনের মতো ভবিতব্যের দিকে যাব কিনা, তা আমাদেরই ঠিক করতে হবে। * প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন ছাড়াই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে। সরকারের বিরোধিতা করলেও বিএনপি জোট সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। এ বিষয়টিকে সরকার তাদের প্রতি জনসমর্থনের লক্ষণ হিসেবে দেখছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকারকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? ** লক্ষণীয়, ৫ জানুয়ারির পর যে নির্বাচনগুলো হলো, যেমন উপজেলা নির্বাচন; সেখানে সেই নব্বইয়ের সংস্কৃতি ফিরে এসেছে। কেন্দ্র দখল, ব্যালট পোড়ানো, মানুষকে ভোট দিতে না দেয়া ইত্যাদি। আমরা ভেবেছিলাম যে সংস্কৃতিটি চলে গেছে। কিন্তু সেই স্বৈরতন্ত্রের সংস্কৃতি আবার ফিরে এসেছে। সরকার রাজনৈতিক খেলায় পারদর্শিতা দেখালেও জনসমর্থনের বিষয়টা গৌণ হয়ে দীর্ঘমেয়াদে একটি অনিশ্চয়তা আছে। তার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই যে, বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। সবকিছুই তো সরকারের নিয়ন্ত্রণে; তাহলে বিনিয়োগ বাড়ছে না কেন? এক বিরোধী দলকে সরকার পকেটে রেখেছে, আরেক বিরোধী দলকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে একঘরে হওয়ার আশঙ্কা কাটিয়ে উঠেছে। তবু বিনিয়োগ স্থবির কেন? বিনিয়োগ স্থবির, কারণ অনিশ্চয়তা দূর করতে পারছে না। জনসমর্থনের দুটি দিক আছে- একটি হচ্ছে শাসনের প্রতি সমর্থন, আরেকটা হলো মৌনতাকে জনসমর্থন হিসেবে চিহ্নিত করা। অনিশ্চয়তা যে আছে, তার অন্যতম লক্ষণ হলো বিনিয়োগ স্থবির থাকা। সত্তরের দশকে একনায়ক হওয়ার এক ধরনের আকাঙ্ক্ষা ছিল। আশির দশকেও ছিল, কিন্তু সেটি টিকল না; রাজনৈতিক শাসন ফিরে এলো। এখন কিন্তু সেই আকাঙ্ক্ষা অনেক তীব্রতর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে পকেটে রাখার ব্যবস্থা অনেক এগিয়ে গেছে। মানুষ গত দুই দশকে একটি মডেল মোটামুটি মেনে নিয়েছিল। মানুষ মেনে নিয়েছিল যে, কোনো দলের প্রতি বেশি অসন্তোষ থাকলে ৫ বছর পর ভোটে তারা সেটা বদলে দেবে। আর এর মধ্যে অর্থনীতি এগিয়ে যাবে। তবে এখন কিন্তু জনগণের মধ্যে ঠিক আগের মডেলে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নেই। ২০০৭-০৮ সালে কেয়ারটেকার সরকার ছিল। অনেক প্রশ্ন সত্ত্বেও জনগণ সেখানে সুশাসনের আমেজ পেয়েছিল। ফলে জনগণের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে, রাজনীতির কিছু গুণগত পরিবর্তন প্রয়োজন। ভোটাধিকার এবং মর্যাদার জায়গা দুর্বল হয়ে যাওয়ায় জনগণের মধ্যে অসন্তুষ্টি আছে। কিন্তু এ অসন্তোষ প্রকাশের বাহন তারা খুঁজে পাচ্ছে না। তারা যার পেছনে দাঁড়াবে, তার গুণগত পরিবর্তন চাচ্ছে। সরকারের এ আপাত নিয়ন্ত্রণের অবস্থা চলছে দুটি কারণে- এক. রাজনৈতিক খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে তারা অধিকতর পারদর্শিতা দেখিয়েছে। দুই. সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বীরা জনগণের আস্থাভাজন হতে পারছে না। এ অবস্থায় জনগণ এক রকম অপেক্ষার মুডে আছে এবং নিজের মতো করে এগোনোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সমষ্টিগতভাবে এগোনোর ক্ষেত্রে তারা অপেক্ষায় আছে। বৃহত্তর রাজনৈতিক, সামাজিক প্রেক্ষাপটে এগোনোর বাহন তারা পাচ্ছেন না। অনিয়ম, অপরিকল্পনা এবং অমর্যাদা- এ তিন 'অ'র একটি মিলিত মধ্যম আয়ের স্বপ্ন আমরা দেখছি। আমাদের মধ্যম আয়ে এ তিন 'অ' উপস্থিত। আমরা অপরিকল্পিত নগর, অমর্যাদার জীবন এবং অনিয়মের সমাজ চাই না। এক্ষেত্রে আমার ফিলিপাইনের কথা মনে হয়। সেখানে কিন্তু স্থবিরতা নেই। ম্যানিলার মতো আন্তর্জাতিক শহরে এখনও দারিদ্র্যের চিহ্ন মুছে যায়নি। মানুষের চেহারায় বিভাজনের ছাপ দেখা যায়। আমরা নিশ্চয় এমন পরিণতি চাই না। নব্বইয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সাহসের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল। আমরা এখন একটা গুণগত ভিন্ন অবস্থায় পেঁৗছেছি। ছিয়ানব্বই তো নব্বইয়ের মতো ছিল না। আবার ২০০৭-০৮ তো ছিয়ানব্বইয়ের মতো ছিল না। রাজনীতি নিয়ে চায়ের স্টলে রাজা-উজির মারলেও মেধা, শ্রম দিয়ে রাজনীতিতে আসছে না মানুষ। এ অবস্থায় যদি আমাদের পরিণতি ফিলিপাইনের মতো হয়, তাহলে সেটা হবে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। * সংসদের বাইরে থাকা বিরোধী রাজনৈতিক দল, যারা এর আগে দেশের ক্ষমতাতেও ছিলেন, তারা রাজনৈতিকভাবে ততটা সক্রিয় হতে পারছেন না। তাদের এ নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে আপনার কী মত? ** সরকারের রাজনৈতিক খেলার সঙ্গে তারা পেরে উঠছে না। তাদের নেতৃত্বেও দুর্বলতা আছে। জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তো মানুষ যোগ দেবে না। হরতাল, ভাংচুর মানুষ পছন্দ করে না। অসন্তোষ থাকলে মানুষ দলে দলে রাস্তায় নেমে সেটা প্রকাশ করতে পারে। বর্তমান সময়ে জনগণের কাছে বিরোধী দলের কোনো শক্তিশালী বক্তব্য নেই। আমাদের পেটাচ্ছে- এছাড়া তাদের কাছে কোনো বক্তব্য নেই। ব্যাপারটা এমন যে, জনগণ যদি তাদের কষ্ট করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়! এখন জনগণ দেখছে, সেই একই শাসন ফিরে এলে আমরা কেন এ কষ্ট করব? জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে ঘাটতি আছে তাদের। অন্যদিকে সরকার একনায়কতান্ত্রিক বিষয়গুলো অনেক শক্তিশালী করে ফেলেছে। এগুলোকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য জনসমর্থননির্ভর যে উদ্ভাবনী প্রক্রিয়াগুলো দরকার, সেগুলো একবারেই অনুপস্থিত দেখছি। * লন্ডনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস সন্ত্রাসবাদের বড় ঝুঁকিতে থাকা ১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে রেখেছে। আপনার কি মনে হয়, বাংলাদেশ কোনো সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকির মধ্যে আছে? ** লন্ডনভিত্তিক এমন বহু সংস্থা আছে। লন্ডন থেকে বলেছে বলেই আমাদের সব গ্রহণ করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। কোন সংস্থা তালিকাটি করেছে এবং কোন সূচকের ওপর ভিত্তি করে করেছে_ এগুলো মাথায় রাখার ব্যাপার আছে। পশ্চিমা দেশগুলো কর্তৃক মধ্যপ্রাচ্যে অনৈতিক যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ার পরে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে এমন সব ন্যারেটিভ তৈরি হয়েছে, যেগুলো খুবই রাজনৈতিক। তাই এক্ষেত্রে খুব সহজ-সরল ব্যাখ্যার পেছনে দাঁড়িয়ে যাওয়াটা ঠিক নয়। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের চেয়ে আমাদের অবস্থা অনেক ভালো। জঙ্গিবাদের চেয়ে এদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন অনেক বড় সমস্যা। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আবেগতাড়িত কোনো আলোচনায় আমাদের প্রবেশ করা উচিত নয়। এখানে নানা রাজনৈতিক মহল নানা স্বার্থে এ বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন ধাপে আলোচনা করে। আমি মনে করি, মানুষ সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, চরমপন্থা পছন্দ করে না। একইসঙ্গে মানুষ অমর্যাদা, একনায়কতন্ত্র পছন্দ করে না। মানুষ তো প্রজা হতে চায় না। একবিংশ শতকে গণতন্ত্রের যুগে সেই সামন্ত যুগের মতো মাথা নিচু করে আমরা বেঁচে আছি বা কিছু আয় করতে পারছি তাতেই গদগদ হয়ে যাব, আর সামন্তরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াবেন_ এটাও তো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। জঙ্গিবাদ, চরমপন্থা নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও প্যারামিটার নিয়ে আলোচনা করা উচিত। আমাদের রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো যথাযথভাবে শক্তিশালী হওয়া দরকার। এখানে রাষ্ট্রের স্বকীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন যদি বক্তব্য আসে যে, আমরা তো আঞ্চলিক অবস্থানে আছি, আমাদের আর কী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দরকার? এটি কি আমরা গ্রহণ করতে পারি? এটি আমরা কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারি না। রাষ্ট্রের সক্ষমতার প্রশ্নে আমাদের কোনো আপস করার সুযোগ নেই। জঙ্গিবাদ নিয়ে আসলে আদর্শিক এবং রাজনৈতিক_ দুই ধরনের আলোচনা হয়। আদর্শের বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আমাদের বাস্তবমুখী চিন্তা করা উচিত। এখন মানুষ যদি সমাজে আনরিপ্রেজেনটেটিভ অনুভব করে, তার আকাঙ্ক্ষার ক্ষেত্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়, মানুষের কিছু ধারণার ওপর আঘাত আসে, তাহলে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তবে আমরা দেখেছি, এসব চরমপন্থা আবার অনেক সময় কুটিল বিশ্বরাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ধর্ম ব্যবসায়ী যেমন আছে, তেমনি অস্ত্র ব্যবসায়ীও আছে। অনেক কিছুর পেছনে তাদেরও বড় ভূমিকা আমরা দেখতে পাই। * বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা বা গতিমুখ নিয়ে আপনার আর কোনো পর্যবেক্ষণ আছে কি? ** প্রতি দশকে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার এক থেকে দুই শতাংশ করে বেড়েছিল। সত্তরে এক থেকে দুই শতাংশ, আশিতে তিন থেকে চার শতাংশ, নব্বইয়ে পাঁচ শতাংশ, দুই হাজার দশকে ছয় শতাংশ। ছয়ের কাছে এসে কিন্তু আমরা আর এগোতে পারছি না। শূন্যের চেয়ে ছয় অনেক বেশি- এটা যেমন ঠিক, তেমনি ঐতিহাসিকভাবে আমাদের এখন আটে পৌঁছে যাওয়া উচিত ছিল। এখন বাংলাদেশের সঙ্কট হচ্ছে প্রবৃদ্ধির হার ত্বরান্বিত করা যাচ্ছে কিনা। সেখানে আমরা স্থবির হয়ে আছি, তা খুবই পরিষ্কার। আরকটি হলো- প্রবৃদ্ধির ধরনে পরিবর্তন আনা যাচ্ছে কিনা। যেমন অপরিকল্পিত নগরায়ণ; অবকাঠামো ঘাটতি রয়ে গেছে। দক্ষতার প্রশ্নে শিক্ষায় বিরাট সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এনার্জি খাতে সমস্যা। চট্টগ্রামে গিয়ে শুনবেন ৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করে রেখেছি, কিন্তু গ্যাস পাচ্ছি না বলে কাজ শুরু হচ্ছে না। বাংলাদেশ একটা ধাপ অতিক্রম করে পরবর্তী ধাপে যেতে পারছে না। এমন না যে, আমাদের ধস নেমেছে। ছয় থেকে আমরা চারেও নেমে যাইনি। বেকারত্বের সমস্যাটা সামনে বড় হয়ে দেখা দেবে। বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারত্ব। এমএ পাস করা পিয়ন ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে- এটিই হবে ভবিষ্যৎ সঙ্কটের সূচক। আবার এ শিক্ষিতদের দক্ষতার ঘাটতি দেখা যাবে। এ সূচকগুলো আমাদের খুঁজতে হবে। আমাদেরও দরকার উচ্চমানের মর্যাদাপূর্ণ মধ্যম আয়ের আকাঙ্ক্ষা। সেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতি যেতে পারছে না; সামষ্টিক বিনিয়োগ আটকে আছে। মানুষের আকাঙ্ক্ষা, চেষ্টা আমাদের এগিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু পরবর্তী ধাপে আমরা যেতে পারছি না। সেই ছয় শতাংশেই আমরা ঘোরাফেরা করছি। মনে হচ্ছে, অর্থনীতিবিদরাও উদ্ভাবনী ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। সূচকগুলো আবিষ্কারের চেষ্টা তাদের মধ্যে অনুপস্থিত। যেমন দুই বৃহৎ অর্থনৈতিক কেন্দ্র ঢাকা-চট্টগ্রামের যাতায়াতে দুই দশক আগে সময় লাগত সাত-আট ঘণ্টা। তারপর এটা নেমে এলো চার-পাঁচ ঘণ্টায়। এখন আবার ১০ থেকে ১২ ঘণ্টায় উঠে গেছে। তো আমরা এগোচ্ছি না পেছাচ্ছি। এ সময়টাই একটা সূচক হতে পারে। আমরা কি কেবল সস্তা শ্রমের মধ্যেই থাকব? শ্রমিকদেরও তো উন্নত জীবনে আনতে হবে। সস্তা শ্রম যদি সম্পদ হয়ে থাকে, তাহলে তো আমরা উন্নত হলাম না। * বিশ্ব অর্থনীতিতে এশিয়া এখন অনেক শক্তিশালী অবস্থানে। চীন সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ব্রিকস গঠিত হয়েছে। এশিয়ার এ অর্থনৈতিক উত্থানকে বাংলাদেশ কীভাবে কাজে লাগাতে পারে? ** একদিকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি থেমে আছে; অন্যদিকে অর্থনীতির সুযোগগুলো কিন্তু অনেক বেড়ে গেছে। চায়না উঠেছে। ভারত আছে। আসিয়ান আছে। মিয়ানমার এক সময় বন্ধ ছিল, এখন খুলে গেছে। বঙ্গোপসাগর একটি বিরাট ক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশের সুযোগ আসলে অনেক বেশি। তিনটি প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রের মধ্যে আমরা বসে আছি- ভারত, চায়না এবং আসিয়ান। আমরা কি এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছি? রিজিওনাল কানেকটিভিটির ক্ষেত্রে ভারতের সুবিধার বিষয়টি কেন্দ্র করে আলোচনা বেশি হয়েছে। এখানে এটা বৃহত্তর আঞ্চলিক কানেকটিভিটির আলোচনা করা উচিত এবং তা আমাদের প্রয়োজনে করা উচিত। আমরা ভারতের সঙ্গে আরও বেশি যোগাযোগ করতে চাই। চায়না, আসিয়ানের সঙ্গে করতে চাই। এনার্জি নিয়েও আমরা দুর্বল আলোচনায় আছি। সূচকের মধ্যে আমরা পেলাম যে, বাংলাদেশে অনেক গ্যাস পাওয়া গেছে। কিন্তু কিছু গ্রুপ সব সুবিধা পেল। কঙ্বাজারের মাতারবাড়ীতে চায়নিজরা এসেছে তাপভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে। অথচ শুরুতেই আমরা ২৩ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণ দুর্নীতি করে ফেলেছি। * পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা প্রায় নিয়মিত হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই। ** এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। নকল এক সময় বন্ধ হলো। এখন নকলের পরিবর্তে প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। যারা দায়িত্বে আছেন, তারা তো এটিকে সমস্যা হিসেবেই স্বীকার করতে চাচ্ছেন না। এটিও তো একটি বড় সমস্যা। জানুয়ারিতে পাঠ্যবই বিতরণই মনে হয় শিক্ষা উন্নয়নের একমাত্র সূচক। পাসের হার বৃদ্ধিও একটি সমস্যা। আমরা দেখেছি, সহজভাবে নম্বর দেয়ার একটা চাপ আছে। প্রশ্ন ফাঁস এবং পাসের হার- দুটিই কি সমাজে প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়নি? জোরালোভাবে দাঁড়িয়ে গেছে। এখন মানসম্মত যা আছে, তা ভেঙে ফেলতে হবে, তা কিন্তু কেউই বলছি না। যেখানে মান নেই, সেখানে কীভাবে মান তৈরি করা যায়, সেটি চিন্তা করা দরকার। * বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সন্ত্রাস, শিক্ষক এবং প্রশাসনের বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকান্ড, তুচ্ছ ঘটনায় সংঘর্ষ ঘটছে। এগুলো নিয়ে আপনার কী পর্যবেক্ষণ? ** এ নিয়ে কড়া কথা বলা ছাড়া কোনো উপায় নেই। প্রাইভেট, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তার ঘটলেও মানের কি বিস্তার ঘটছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঐতিহ্যবাহী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও কিন্তু বৈশ্বিক র‌্যাঙ্কিংয়ে কোনো অবস্থানে নেই। দলীয়করণও সমস্যা নয়, কিন্তু সেটি যদি একেবারের মেধাশূন্য কোনো বিষয় হয়, তাহলে সেটি হলো ভয়ঙ্কর একটা সমস্যা। দলীয় লোক যদি যোগ্য হন, তাহলে তাকে নিয়ে তো কারও আপত্তি থাকে না। দলীয়করণে যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিলে এটি কোনো সমস্যা হিসেবে দেখা হতো না। কিন্তু এখন তো অযোগ্যদের মহোৎসব চলছে। শিক্ষক নিয়োগ এমন অবস্থায় গেছে যে, এরা তো শিক্ষক নয় এরা ভোটার, ক্যাডার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় পদে অধিষ্ঠিতদেরও যে ব্যবহার দেখি বা কথাবার্তা শুনি, তাতে তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক ক্যাডারের কোনো ভিন্নতা দেখি না। আমরা যে নিম্নমানের মধ্যম আয়ের দিকে এগোচ্ছি, তা বুঝতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকানোই যথেষ্ট। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/৩০-১১-০১৪:
Link copied!