AB Bank
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রয়োজন বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ : মির্জ্জা আজিজুল


Ekushey Sangbad

০২:২৬ পিএম, ডিসেম্বর ৩, ২০১৪
প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রয়োজন বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ : মির্জ্জা আজিজুল

একুশে সংবাদ : অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে নিতে হলে প্রয়োজন বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ। পরিবেশ সৃষ্টির মূল নির্ণায়ক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। আগামী পাঁচ-সাত বছর স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। আপাতত মোটামুটি স্থিতিশীল পরিবেশ আছে। তারপরও এখানে- ওখানে হরতাল হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অঙ্গন যে অস্থিতিশীল হবে না, তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না। বলছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি মনে করেন, অর্থনীতির ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে খুব খুশি হওয়ার কিছু নেই। কারণ মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার স্বপ্ন ছুঁতে হলে প্রবৃদ্ধিকে আরও শিখরে নিয়ে যেতে হবে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ, পুঁজিবাজার নিয়ে সম্প্রতি তিনি কথা হয় তাঁর সঙ্গে। অর্থনীতি হঠাৎ নিম্নগামী, কিন্তু কেন? সার্বিক অর্থনীতির যে সূচকগুলো আছে তার বেশিরভাগই নি¤œগামী। প্রথমত, আমাদের জাতীয় আকাক্সক্ষা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করা। এর জন্য প্রয়োজন সাড়ে সাত থেকে আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি হার। যেটি ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। এখন পর্যন্ত আমরা ছয় শতাংশের ধারেকাছে থাকছি। অদূর ভবিষ্যতে কি এই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে বলে মনে করেন? অদূর ভবিষ্যতে ছয় শতাংশের চেয়ে বড় মাত্রার প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে, সেই সম্ভাবনা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে আমাদের ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা যেটি এই অর্থবছরে শেষ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল ৭.৩ শতাংশ। এটারও অনেক পেছনে আমরা রয়ে গেছি। সরকারের অনেকে দাবি করেন অর্থনীতিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি প্রশংসনীয়... রাজনীতিবিদের অনেকে বলেন, বাংলাদেশ অর্থনীতিতে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছে। এটা পুরোপুরি অসত্য নয়। কারণ, আমাদের প্রবৃদ্ধি হার ৬ শতাংশ, যেটি পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় ভালো। তবে প্রথমত ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অর্থনীতির যে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল আমরা তার পেছনে। দ্বিতীয়ত মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে যে প্রবৃদ্ধি সেটিও অর্জন হচ্ছে না। পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় আমাদের অবস্থা কী পর্যায়ে রয়েছে? পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় আমরা খারাপ করছি। চীন এবং ভারতের কথা বাদ দিলাম। কিন্তু কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইন আমাদের তুলনায় ভালো করছে। ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমাদের খুব বেশি গর্বিত হওয়ার কারণ নেই। অর্থনীতির সার্বিক সূচকগুলো নি¤œগামী হওয়ার কারণ কী? গত কয়েক বছর ধরে প্রবৃদ্ধির যে ছয় শতাংশ অর্জিত হয়েছে তার পেছনে বড় কারণ রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ভালো ছিল। অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়ে গেছে। কিছু কমেছে রেমিট্যান্সও। ব্যাংকিং খাতে সঞ্চয়ের হার কমেছে। সঞ্চয়ে সুদের হার কমেছে। বেড়েছে ব্যাংক ঋণে। যদিও ব্যাংকগুলোতে অতি তারল্য আছে। সুদের হার বাড়ায় সমস্যা কী হচ্ছে? অতিমাত্রায় সুদের কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হন। যে কারণে দেশের বড় বিনিয়োগকারীদের কেউ কেউ বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। বেসরকারিখাতে ঋণের প্রভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিং পলিসিতে ১৬ শতাংশের জায়গায় সাড়ে ১১ বা ১২ শতাংশ আছে। দেশের বিনিয়োগ যে খুব একটা হচ্ছে না এটা তার ইঙ্গিত বহন করছে। বিনিয়োগ না হলে তো প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। এই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হার ছয় শতাংশের ধারেকাছে হয়ত থাকবে। রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার মূল কারণ কী? রপ্তানির ক্ষেত্রে দুটি দিক আছে। একটি সরবরাহ, অন্যটি চাহিদা। এখন ভালো করে বিশ্লেষণ করতে হবে রপ্তানি কেন কমেছে? চাহিদার কারণে নাকি আমাদের এখান থেকে সরবরাহ কমার কারণে এটা হচ্ছে? আমাদের ক্ষেত্রে কোনটা হয়েছে? আমার মনে হয় এই দুটি দিকই একসঙ্গে কাজ করেছে। চাহিদার ক্ষেত্রে রানা প্লাজা ধসের ঘটনা নেতিবাচক হিসেবে কাজ করছে। সরকার তো শিল্প মালিক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে ভাবমূর্তি ফেরাতে যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় যা করণীয় ছিল সব করে ফেলেছি এ রকম স্বীকৃতি কেউ দেয়নি। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সবাই বলছে, বেশকিছু করা হয়েছে। এখনও বেশকিছু করার বাকি আছে। আবার যথাযথ ফিটনেস না থাকার কারণে বেশকিছু পোশাক কারখানাকে আনফিট ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে সরবরাহের ক্ষেত্রেও ঘাটতি আছে। এখন কী করা উচিত? সরকার, বিকেএমইএ, বিজেএমইএ সবাইকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিশ্লেষণ করা উচিত। তারপর কোথায় বাধা আছে তা অপসারণে কাজ করতে হবে। রাজস্ব অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ভালো থাকে কিন্তু অর্জনটা ভালো হয় না, কেন? রাজস্ব আহরণটা সার্বিক অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি না হলে লোকের আয় কম হয়। আয় কম হলে আয়কর অর্জন কম হয়। ভ্যালু এডেড টেক্স (ভ্যাট) রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বড় একটি অংশ। যদি উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবহন এবং ব্যাংকের ক্ষেত্রে লেনদেন কম হয় তবে ভ্যাট আদায়ও কমে যায়। সঞ্চয় প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। গত অর্থবছরে এটা ঋণাত্মক ছিল। এ বছর তার ওপর আরও বেশি ঋণাত্মক হয়েছে। টাইম ডিপোজিটে গত বছরের মতো প্রবৃদ্ধি হার ইতিবাচক আছে। কিন্তু গত বছরের চেয়ে এটা কম। চাহিদা সঞ্চয়ে তো আর সুদ দিতে হয় না। টার্ম ডিপোজিটে সুদ দিতে হয়। তার মানে ব্যাংকগুলোয় তহবিলের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সেটাও ল্যাডিং রেটের ওপর প্রভাব ফেলছে। সব মিলিয়ে সার্বিক প্রবৃদ্ধি, উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য কম হলে রাজস্ব আদায়ে প্রভাব ফেলবে। এখানে প্রশাসনিক কোনো দুর্বলতা কি আছে? দক্ষতার অভাব থাকতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়ত দুর্নীতিও আছে। এগুলোও রাজস্ব আদায় কমার কারণ হতে পারে। প্রশাসনের অদক্ষতা, দুর্নীতির মাত্রা হয়ত আগের মতোই আছে। আগের চেয়ে খুব একটা বাড়ার কারণ নেই। তাই সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিই রাজস্ব আহরণ কমার পেছনে দায়ী বলে মনে হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এডিপির বাস্তবায়ন হয়েছে ৯ শতাংশ। যেটা গতবছর ছিল ১১ শতাংশ। এটাকে কীভাবে দেখছেন? সাড়ে সাত থেকে আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের যেই লক্ষ্যমাত্রা আমরা ঠিক করেছি সেটা যদি অর্জন করতে যাই তাহলে জিডিপির আনুপাতিকহারে ৩৩ থেকে ৩৪ শতাংশ বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগের দুটি উপাদান আছে, একটি সরকারি অন্যটি বেসরকারি। বেসরকারি খাতের সমস্যাগুলো তো আগেই বলেছি। সম্প্রতি বিনিয়োগ এক শতাংশের মতো বেড়ে ২৭ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা মূলত সরকারি বিনিয়োগ থেকে এসেছে। এডিপির সঙ্গে বিনিয়োগ বাড়ার সম্পর্ক কী? সরকারের বিনিয়োগ মূলত এডিপির মাধ্যমে হয়। এডিপি বাস্তবায়নের ধীর গতি হলে সরকারি বিনিয়োগ কমে যায়। এডিপি বাস্তবায়ন হলে নির্মাণসামগ্রী বা অন্যান্য জিনিসের চাহিদা বাড়ে। উৎপাদন বাড়ে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। তাদের চাহিদা বাড়ে। তখন সরবরাহও বাড়ে। সব মিলিয়ে প্রবৃদ্ধি বাড়ে। অর্থনীতিতে আমাদের সম্ভাবনার প্রশংসা তো বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে। হ্যাঁ, বাংলাদেশের সম্ভাবনা বেশি। তার পেছনে কয়েকটি কারণ আছে। প্রথমত, কৃষিখাতে আমাদের চাষিভাই যারা আছেন তারা আধুনিক প্রযুক্তি অতি আগ্রহের সঙ্গে ব্যবহার করছেন। দ্বিতীয়ত, শিল্পখাতে অপেক্ষাকৃত বেশকিছু তরুণ উদ্যোক্তা এসেছেন। তারা বিদেশে কী হচ্ছে না হচ্ছে সেগুলো সম্পর্কে খবর রাখেন। নতুন রপ্তানি বাজার খুঁজে বের করতে কাজ করছেন। তারা উৎপাদনশীলতা বাড়াতে দেশের ভেতরে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারে আগ্রহী। তৃতীয়ত, যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে, আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ তরুণ। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের তরুণদের প্রতি তিনজনের দুজনই কাজ করে আয় করছে। কিন্তু শিক্ষা ও দক্ষতার দিক থেকে তারা পিছিয়ে... দেশের তরুণদের মধ্যে যারা সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে তাদের মধ্যে দক্ষ তরুণের সংখ্যা কম। কারণ, তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা দরকার তা নেই। তরুণদের প্রশিক্ষণ দিতে সরকারের যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের সঙ্গে বাজারের সংযোগ দুর্বল বলে আমি মনে করি। এটা থেকে উত্তরণে কী করা প্রয়োজন বলে মনে করেন? এ ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ লাগবে। সরকারকে সাধারণ শিক্ষা বিস্তার এবং প্রয়োজনে কর্মমুখী শিক্ষা দিতে হবে। বাজারে কী ধরনের দক্ষ লোকের প্রয়োজন তার জন্য বেসরকারি খাতকে সঙ্গে নিতে হবে। তাদের কী ধরনের লোক প্রয়োজন সেটি তারা ভালো বলতে পারবে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তরুণদের অবদান কী হতে পারে? তরুণরা কর্মসংস্থান পেলে দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রাখতে পারবে। উদ্যোক্তারা অপেক্ষাকৃত কম পারিশ্রমিকে অতিমাত্রায় শিক্ষিত না হলেও শিক্ষিতদের শ্রম পেতে পারে। আমাদের আশপাশের বেশ কতগুলো দেশে শ্রমের মজুরি বেড়ে গেছে। ফলে ওই দেশের বিনিয়োগকারীরা তাদের কিছু কিছু উৎপাদন অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করতে আগ্রহী। সেই দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ বেশ গুরুত্ব সহকারে বিবেচিত হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যারা ওইসব দেশে বিনিয়োগ করেছে তারাও বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আমাদের কী করা উচিত? সবকিছু বাস্তবায়নে প্রয়োজন সার্বিকভাবে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা। মধ্যমেয়াদি প্রস্তুতির মধ্যে পরিবেশ সৃষ্টির মূল নির্ণায়ক প্রথমত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। আগামী পাঁচ-সাত বছর স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। কিন্তু সেই পরিস্থিতি এখন নেই। এখন তো রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে... আপাতত মোটামুটি স্থিতিশীল পরিবেশ আছে। তারপরও এখানে-ওখানে হরতাল হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অঙ্গন যে অস্থিতিশীল হবে না, তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্তরায়গুলো কী কী? এখানে জমির অপ্রতুলতা আছে। যার কারণে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ বাস্তবায়নে যথেষ্ট অসুবিধার মুখোমুখি হচ্ছেন। এক্ষেত্রে সরকার কিছু বিশেষ ইকোনোমিক জোন করার কথা বলেছে। কিছু ঘোষণাও এসেছে। তবে বাস্তবায়নে খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা কি যথেষ্ট? অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধাও নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পরিবহন ইত্যাদি। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা কমেছে। তবে এখনও ঘাটতি আছে। গ্যাসের যথেষ্ট মাত্রায় অপ্রতুলতা আছে। পরিবহনের ক্ষেত্রে মহাসড়কগুলো সম্প্রসারণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনও কাজ শেষ করা যায়নি। যে কারণে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগে আইনি জটিলতার কথা বলা হয়... যেকোনো দেশের সরকারকে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে জনস্বার্থে কিছু কিছু আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশে অনেক জটিলতা আছে। নতুন একটি ব্যবসা চালু করতে আমাদের দেশে যতটুকু সময় লাগে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে তার চেয়ে কম লাগে। সীমাবদ্ধতা কোথায়? সীমাবদ্ধতা হচ্ছে রেগুলেটরি কমúেøক্স সিটি, সময়ক্ষেপণ ও দুর্নীতি। এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে না পারলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না। তার ওপর বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে যে ধরনের প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়া দরকার আমরা হয়ত যথাযথভাবে সেটি নিতে পারছি না। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে কী ধরনের উদ্যোগ প্রয়োজন? নিজেদের দেশের বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ না করলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসতে উৎসাহী হয় না। কারণ হচ্ছে, দেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করলে তারা মনে করে এ দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ আছে। আমাদের দেশে দেশি বিনিয়োগ জিডিপির সঙ্গে মেলালে দেখা যাবে স্থির আছে কিংবা গত দুই বছরে কিছু কমেছে। এই পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা সহজ নয়। কিন্তু বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের প্রদর্শনী হচ্ছে, বিভিন্ন মেলায় অংশ নিচ্ছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান। পণ্যের প্রদর্শনী করে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা সহজ নয়। তাদের সামনে যদি খাতভিত্তিক সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য তুলে ধরা যায় তাহলে কিছুটা কাজে আসতে পারে। খাতভিত্তিক কী ধরনের সুবিধা বাংলাদেশ দিতে পারবে সেটি উল্লেখ থাকতে হবে। পরে সেই খাতের সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের তা নজরে আনতে হবে। জিএসপি সুবিধা হারানোয় কী ধরনের ক্ষতি হচ্ছে? আর্থিক দিক থেকে বিবেচনা করলে ক্ষতিটা খুব একটা বড় নয়। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের যে পরিমাণ রপ্তানি যেত তার দুই শতাংশ বা এর চেয়ে কম অংশ জিএসপি সুবিধা পেত। কিন্তু এটার ম্যাসেজ ভ্যালু আছে। বলা হচ্ছে, শ্রমিকদের কল্যাণে বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতার কারণে জিএসপি সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। জিএসপির আওতায় নয় এমন রপ্তানিকেও তো এই বার্তা কিছুটা বাধাগ্রস্ত করে। জিএসপি সুবিধা ফিরে পেলে কী লাভ হবে? ফিরে পেলে আর্থিক সুবিধা যাই হোক না কেন, উন্নত দেশে যেসব জায়গায় কনজ্যুমার লবি আছে তারা কিন্তু কোন দেশে শ্রমিক কল্যাণে কী নীতিমালা আছে না আছে সেটি নিয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনা করে। চাহিদার ক্ষেত্রে তারা প্রভাব ফেলে। জিএসপি আমরা ফেরত পেলে একটা বার্তা সবার কাছে যাবে যে, বাংলাদেশ শ্রম কল্যাণে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে। এটা উন্নত দেশের ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপারে আগ্রহ বাড়াবে। পুঁজিবাজারে শেয়ারের অতিমূল্যায়নটা কি এখনও হচ্ছে? কিছু ক্ষেত্রে আইপিও দেওয়ার পরপরই এটি অতিমূল্যায়ন হচ্ছে। আবার অল্প কিছুদিন পরই দেখা যাচ্ছে সেই শেয়ারটার দাম পড়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমি মনে করি, শুধু আইপিওর সংখ্যা বাড়ানো আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। গুণগতমানসম্পন্ন আইপিও আনার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে এসইসি কতটুকু সাফল্য দেখাতে পেরেছে সেটি নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ আছে। বিনিয়োগকারীরা এসইসির ওপর কতটুকু ভরসা করতে পারেন? বিনিয়োগকারীরা যদি মনে করেন, এসইসি অনুমোদন দিয়েছে, তাই এটা ভালো কোম্পানি তাই আমি এটাতে চোখ বন্ধ করে বিনিয়োগ করব, তাহলে বিপদে পড়বেন। তাদের এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নিজেদের বাছ-বিচার করে বিনিয়োগ করতে হবে। ২০১০ সালের ধসের পর গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে বলে মনে করেন? ২০১০ সালের ধসের পর ইব্রাহিম খালেদ সাহেবের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী কিছু কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে আরও যেসব কোম্পানির নাম ছিল অনেকের ব্যাপারে নমনীয়তা দেখানো হয়েছে। এখানে নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সে বিষয়গুলো দেখার দরকার আছে। বিনিয়োগকারীদের কী পরামর্শ দেবেন? যেহেতু সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে, সেখানে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও অস্থিরতা আছে। তাই দেখেশুনে বিনিয়োগ করতে হবে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/০৩-১২-০১৪:
Link copied!