AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

গণপরিবহনের মূল সমস্যা ব্যবস্থাপনা : নজরুল


Ekushey Sangbad

১১:৫৩ এএম, ডিসেম্বর ১২, ২০১৪
গণপরিবহনের মূল সমস্যা ব্যবস্থাপনা : নজরুল

একুশে সংবাদ : বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেছেন, নগর ব্যবস্থাপনার নীতিমালায় সমস্যা রয়েছে। দুর্নীতি আছে বলেই এ সমস্যাগুলো হয়। পরিবহন খাতেও দুর্নীতি। মোট কথা সুশাসনের অভাব। তিনি মনে করেন, গণপরিবহনের মূল সমস্যা ব্যবস্থাপনার। এই দিকটায় নজর দিতে হবে বেশি। সম্প্রতি তিনি ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থাপনা, নগরীর পরিকল্পনা, সমস্যা ও সমাধানের উপায় নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুল্লাহ ফাহাদ ও তানিম আহমেদ ঢাকা মহানগরীর মূল সমস্যা কী বলে মনে করেন? স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা অতি দ্রুতই বাড়ছে। গড়ে প্রতি বছর চার থেকে পাঁচ লাখ লোক নতুন যোগ হচ্ছে। একাত্তরে যেই এলাকায় ৯ লাখ লোক ছিল সেখানে এখন ৯০ লাখ লোক। এলাকার পরিধিও বেড়েছে। ঢাকায় প্রায় পৌনে দুই কোটি লোক বাস করে। এত লোকের জন্য পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা নেই। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে সরকারের উদ্যোগকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? এত লোক সামাল দেওয়া যেকোনো সরকারের জন্যই কঠিন। তবে পরিকল্পনা তো থাকতে হবে। গোটা শহর নিয়ে আগাম পরিকল্পনা থাকতে হবে। কী ধরনের পরিকল্পনার কথা বলছেন? ভূমি ব্যবহারের পরিকল্পনা। কোথায় কী হবে সেটা থাকতে হবে। কোথায় প্রশাসনিক ভবন, শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকার পরিকল্পনা থাকতে হবে। পাশাপাশি আবাসিক এলাকায় ও স্কুল-কলেজও পরিকল্পনা অনুযায়ী হওয়া উচিত। এসব পরিকল্পনা কারা করবে? এটা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দায়িত্ব। এদের আরও কাজ আছে। সাধারণ নগর পরিকল্পনার মধ্যে পরিবহন পরিকল্পনা থাকতে হবে। কোথায় রাস্তা হবে, কী ধরনের রাস্তা হবে। কী ধরনের পরিবহন চলবে সবই পরিকল্পনার অংশ। এসব কাজে রাজউক আগাগোড়াই পিছিয়ে আছে। রাজউক কখন থেকে পিছিয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন? পাকিস্তান আমলের পর থেকে একেবারে পিছিয়ে আছে। স্বাধীনতার পর থেকেই সামাল দিতে পারছে না। জনসংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি চাহিদা বেড়েছে আবাসন, কর্মসংস্থান ও যোগাযোগের। কিন্তু সেই চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের ব্যবস্থা করতে পারেনি। পাকিস্তান আমলে তো একবার নগর পরিকল্পনা হয়েছিল... নগর পরিকল্পনা পাকিস্তান আমলে প্রথম হয়েছিল ১৯৬০ সালে। সেটা ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত। কিন্তু ১৯৭১ সালে তো আমরা স্বাধীন হয়ে গেছি। স্বাধীন দেশের রাজধানী হিসেবে ঢাকাকে নিয়ে যে পরিকল্পনা হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। এই পরিকল্পনা কোথায় গিয়ে ঠেকেছিল? এই পরিকল্পনা পরবর্তী সময়ে আর গৃহীত হয়নি, বাস্তবায়নও হয়নি। পরে ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে আর একটি পরিকল্পনা করা হয়। সেটি অনুমোদন পেতে আরও দুই বছর লাগে। ১৯৯৭ সালে এসে আওয়ামী লীগ সরকার ওই পরিকল্পনাকে অনুমোদন দেয়। পরিকল্পনাটি ছিল ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ২০ বছরের জন্য। নাম ঢাকা মাস্টারপ্লান। অনুমোদনের পর এটি কি বাস্তবায়ন হয়েছিল? না বাস্তবায়ন করতে পারেনি। কারণ ওই ঢাকা মাস্টারপ্লানের মধ্যে নগর পরিকল্পনা, কৌশলগত পরিকল্পনা বা কাঠামোগত পরিকল্পনার পাশাপাশি ডিটেইল এরিয়া প্লান (ড্যাপ) করার কথা ছিল। সেটি করতেও অনেক সময় পার হয়েছে। পরে ২০০৬ কিংবা ২০০৭ সালের দিকে ড্যাপ হয়। তবে সেটি অনুমোদন পায় ২০১০ সালে। তখন বাকি ছিল পাঁচ বছর। অনুমোদন পেয়েও কাজ করতে পারল না। ডিটেইল এরিয়া প্লানে কি পরিবহন পরিকল্পনা ছিল? রাজউক বড় কোনো পরিবহন পরিকল্পনা করেনি। মাস্টারপ্লানের মধ্যে কিছু পরিবহন দেখানো ছিল। কিন্তু এটা বিস্তৃত ছিল না। ২০০৬ সালে শেষের দিকে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা সরকার করেছিল। এটা বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি দেশি ও একটি বিদেশি কোম্পানি করেছে। বিএনপি এই পরিকল্পনা হাতে পেয়েছিল। কিন্তু কার্যক্রমে যেতে পারেনি সময়ের অভাবে। সেটা সুন্দর পরিকল্পনা ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারও এটি অনুমোদন দিল। হাতিরঝিল প্রকল্পের মতো দু-একটি কাজ শুরু করল। তবে বড় কিছু করতে পারেনি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারও এটাকে অনুমোদন দিল। এই পরিকল্পনার মধ্যে কী কী আছে? পথচারী, গণপরিবহন, মেট্রোরেল, র‌্যাপিড বাস সার্ভিস, কমিউটর ট্রেন সব কথা বলা আছে। এই পরিকল্পনা আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে এসেছে ছয় বছর হতে চললো। এর মধ্যে কয়েকটি ফ্লাইওভার হয়েছে। সেটা মহাপরিকল্পনাতে সেভাবে ছিল না। মহাপরিকল্পনাতে কী ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা ছিল? প্রধান হলো মেট্রোরেল ব্যবস্থা। ছয়টি লাইন হবে। র‌্যাপিড বাস ট্রানজিট সেটাও কয়েকটি হবে। আর ছিল ঢাকা থেকে বের হওয়ার রাস্তা। কমিউটর ট্রেন সার্ভিস যেটা নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে জয়দেবপুর, নরসিংদী পর্যন্ত চলে যাবে। সেগুলো খুব একটা এগোয়নি। শুধু ডেমু ট্রেনটি হয়েছে। ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা কী আধুনিক শহরগুলোর মতো? ঢাকা পৃথিবীর নবম বৃহত্তম জনবহুল শহর। জনসংখ্যাই বিশাল আর অন্যান্য দিকে একেবারে পিছিয়ে পড়া। এই শহরে পরিবহন ব্যবস্থা হলো মিশ্র ও প্রাচীন ধরনের। এখানে এখনও লাখ লাখ রিকশা চলে। তাহলে রিকশা তুলে দেওয়ার কথা বলছেন? একটি আধুনিক শহরে রিকশার ওপর নির্ভরশীলতার কথা চিন্তাই করা যায় না। কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি) বলা হয়েছে, এটা একবারে তুলে দেওয়া যাবে না। আস্তে আস্তে কমাতে হবে। এ ধরনের বড় শহরে কী ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা জরুরি? প্রাথমিক প্রয়োজন সত্যিকারের র‌্যাপিড ট্রানজিট। এর মধ্যে সবচেয়ে ভাল মেট্রোরেল। যে তার লাইন দিয়ে যাবে। প্রতি পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর পর আসবে। লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণেই তো সমস্যা হচ্ছে। এটা টার্মিনাল করার জন্য জমি পাওয়া যাচ্ছে না। এটা কঠিন হলেও বিকল্প নেই। মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন তো পিছিয়ে যাচ্ছে ছয়টি লাইনের মধ্যে সরকার মাত্র একটি লাইনের অনুমোদন দিয়েছে। খরচ অনেক বেড়ে গেছে। পত্রিকায় দেখলাম ব্যয় গিয়ে দাঁড়াবে ২১ হাজার কোটি টাকায়। আরও নাকি বাড়বে জমি অধিগ্রহণে। ২০০৬-এর পরিকল্পনা ২০১৪ সালে একটি লাইন শুরু করবে, তাও সমস্যা। র‌্যাপিড বাস সার্ভিসের চিন্তাও তো ছিল? র‌্যাপিড বাস সার্ভিসের জন্য অনেক চওড়া রাস্তা দরকার। এই বাসের জন্য দুই থেকেই আড়াইটি লেন দিয়ে দিতে হবে। অন্য কেউ এটার ভেতর ঢুকতে পারবে না। দরকার হলে ওয়াল করে দিতে হবে। সরকার এতেও হাত দিয়েছে। প্রথমে বিমানবন্দর হতে জয়দেবপুর পর্যন্ত করার চিন্তা চলছে। কারণ, ওদিকটার রাস্তা অনেক চওড়া। রেল যোগাযোগকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়? কমিউটর ট্রেন সার্ভিসকে শক্তিশালী করা জরুরি। নারায়ণগঞ্জ, জয়দেবপুর, নরসিংদী পর্যন্ত কিংবা আরো দূর পর্যন্ত নেওয়া যেতে পারে। সেটা দেড় থেকে দুই ঘণ্টার দূরত্বে। এর বাইরে আর কী করা যায়? ইন্টারসিটি বাস সার্ভিস চালু করা যেতে পারে। ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-মানিকগঞ্জ, ঢাকা-নরসিংদী রুটে। সব লোক তো আর ঢাকা থাকলে হবে না। গণপরিবহনের ক্ষেত্রে বাস, ডেমু বাস, দোতলা বাস কিংবা আর্টিকুলেটেড বাস আরো চালু করতে হবে। প্রয়োজন হলে দোতলা বাস আরো বাড়ানো যায়। এটা ঢাকা শহরের জন্য উপযোগী। ছোট পরিবহন হিউম্যান হলার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এগুলো... হিউম্যান হলার কম খরচে চলে। আরেকটি সিএনজি অটেরিকশা। এটা নগরের ভেতরে ভাল, কিন্তু মহাসড়কে গেলে ভয় লাগে। সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া নিয়ে তো নৈরাজ্য চলছে? ঢাকায় যেভাবে সিএনজি অটোরিকশা চলে এটা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এখানে হায়ারে সিএনজি অটোরিকশা চলে। কিন্তু আমাদের প¦ার্শবর্তী দেশগুলোতেও অটোরিকশাগুলো চলে শেয়ারে। ভাড়া নির্ধারণ করা থাকে। যদি এমনটি এখানেও চালু করা যায় তাহলে কম খরচে কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছা যাবে। ঢাকার রাস্তায় টেক্সিক্যাবও চলে? তা চলে। কিন্তু এগুলোর ভাড়ার লাগাম টেনে ধরতে হবে। আধুনিক মেগাসিটিতে টেক্সিক্যাব সার্ভিস আরও বাড়ানো দরকার। ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে সমন্বিত উদ্যোগের কথা বলা হয়... হ্যাঁ, সমন্বিত উদ্যোগ তো লাগবেই। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর সেটি টিকসই করার জন্য কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। পথচারী চলাচলের জন্য রাস্তায় কী ধরনের ব্যবস্থা থাকা উচিত? সব পরিকল্পনাতেই পথচারীকে সবার আগে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পথচারীর চলাচলের জন্য উপযোগী সড়কের কথা বলা হয়েছে। এজন্য ফুটপাতগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। রাস্তা পারাপারে জেব্রা ক্রসিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জেব্রা ক্রসিংগুলোতে পা দেওয়ার পর পথচারী যেন মনে করেন তিনি শতভাগ নিরাপদ। আন্ডারপাস থাকতে হবে। বৃদ্ধ, শিশু, প্রতিবন্ধী এরা তো ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে পারবে না। যারা শক্ত সামর্থ্য, যুবক তারা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করবে। ঢাকার রাস্তা পথচারীর জন্য কতটা উপযোগী? এখনও ৩০-৪০ ভাগ মানুষ হেঁটে কর্মস্থলে যায়। তাদের জন্য চলাচলের উপযোগী সড়ক এখনও তৈরি করা যায়নি। ফুটপাতগুলো বেশির ভাগই দখলে থাকে। রাস্তা পারাপারে জেব্রা ক্রসিং মেনে চালকরা গাড়ি চালান না। ফুটওভার ব্রিজেও সবাই উঠতে পারেন না। এসব সমস্যা সমাধান করতে হবে। রাজউকের মাস্টারপ্লানের মেয়াদ আগামী বছর শেষ হচ্ছে... নতুন পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। ওই পরিকল্পনায় যেন এসব বিষয় থাকে। কারণ নগরীর পরিকল্পনা হচ্ছে নগরীর সংবিধান। পরিবেশ ও প্রতিবেশের কথা মাথায় রেখে যেন এটা করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আইন তো অনেক আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই, কেন? নীতিমালার ব্যবস্থাপনাই সমস্যা। দুর্নীতি আছে বলেই এ সমস্যাগুলো হয়। পরিবহন খাতে প্রচ- দুর্নীতি। সমস্যা হলো পরিবহন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে লাগে। সিএনজি অটোরিকশাচালকের সঙ্গে মানুষ কত ঝগড়া করবে? বাসওয়ালার সঙ্গে কথা ঝগড়া করবে? তারা তো ঠিকই জগলুল আহমেদ চৌধুরীর মতো আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চলে যাবে। পুলিশও আমাকে সাহায্য করবে না। মোট কথা সুশাসনের প্রচ- অভাব। কুশাসন চলে আসছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এ থেকে বের হয়ে আসার উপায় কী? নগরীতে দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। যারা নগরী দেখভালের দায়িত্বে থাকবেন তাদের মধ্যে সততা, নিষ্ঠা থাকতে হবে। ব্যবস্থাপনাতে দক্ষ হতে হবে। ব্যবস্থাপক কঠোর হলে দুর্নীতি প্রশ্রয় পাবে না। গণপরিবহনগুলো তো প্রভাবশালী মন্ত্রী, সাংসদ ও রাজনীতিকদের দখলে। এটা কি সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অন্তরায় নয়? সব জায়গায় তো এমনটা চলছে। কিছু ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালীই সব নিয়ন্ত্রণ করছে। এটা তো একদিনে হয়নি। ধীরে ধীরে হয়েছে। দুর্নীতির কারণেই মহাপরিকল্পনাগুলো কাজে আসছে না। -সাপ্তাহিক এই সময়-এর সৌজন্যে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১২-১২-০১৪:
Link copied!