চট্টগ্রামের বিজয় মেলা ২৫ পেরিয়ে
একুশে সংবাদ : স্বৈরাচার আন্দোলনের শেষ দিকে ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বরে ছোট্ট পরিসরে চট্টগ্রামে সূচনা হয়েছিল বিজয় মেলার আসর। সেই বিজয় মেলা ২৫ বছর পেরিয়ে ২৬ বছরে পা দিয়েছে। এখন এটি চট্টগ্রামের প্রাণের মেলা। প্রতিবছর বিজয়ের মাসে আয়োজন করা হয় বিজয় মেলার। সে ধারাবাহিকতায় কাজীর দেউড়ি আউটার স্টেডিয়াম মাঠে এবারও চলছে মেলাটি।
ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকেই মেলা শুরু হলেও শিখা প্রজ্বলনের মাধ্যমে মেলার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে ১০ ডিসেম্বর। সে দিন থেকে জিমনেশিয়ামের পাশে নির্মিত বিজয়মঞ্চে শুরু হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, গান, নাটকসহ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিকেল চারটা থেকে শুরু হওয়া বিজয় উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবার জন্য উন্মুক্ত। বিজয়মঞ্চের উৎসব চলবে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
যত দিন গড়াচ্ছে, মেলায় ভিড় ততই বাড়ছে। গৃহস্থালির টুকিটাকি জিনিস থেকে শুরু করে হস্তশিল্প, পোশাক সবকিছু এক মাঠেই পাওয়া যায় বলে গৃহিণীদের কাছে এ মেলার কদর বেশি। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চললেও ভিড় জমে মূলত বিকেল ও সন্ধ্যায় এবং ছুটির দিনে। আয়োজকেরা জানান, মেলায় ছোট–বড় মিলিয়ে ২১৫টি স্টল বসেছে এবার।
গত বৃহস্পতিবার মেলার মাঠে গিয়ে কথা হয় পাথরঘাটা থেকে আসা জোবাইদা খানম ও তাঁর ননদ আনজুমান আরার সঙ্গে। কেনাকাটার ফাঁকে জোবাইদা বলেন, ‘মেলায় সংসারের প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই একসঙ্গে কেনার সুযোগ থাকে। দামও তুলনামূলক কম মনে হয়।’
১০ টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা দামের পণ্য কিনতে পাওয়া যাচ্ছে মেলায়। মেলার প্রবেশমুখেই বসেছে মাটির তৈরি তৈজসপত্রের দোকান। হাঁড়ি, ঢাকনা ছাড়াও শীতের পিঠা তৈরির বিশেষ বাটির বিক্রি চলছে সেখানে। গৃহসজ্জার নানা উপকরণ, রান্নাঘরের তৈজসপত্র, দা-ছুরি-বঁটি, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, শাল, গহনা, জুতা, স্যান্ডেল, ইলেকট্রনিকস পণ্য, আচার, নানা ধরনের মুড়িমুড়কির দোকান দেখতে পাওয়া গেল মেলায়। জাদু শেখানোর স্টল হিং টিং ছটেও দেখা গেল শিশু–কিশোরদের ভিড়। নন্দনকানন বৌদ্ধমন্দির ন্যাশনাল প্রাইমারি বিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীকে দেখা গেল মেলায়। তারা জানাল, পরীক্ষা শেষ, তাই বাবা–মায়ের অনুমতি নিয়ে বন্ধুরা মিলে মেলায় বেড়াতে এসেছে।
প্রসাধন ও নানা পণ্যের খেঁাজে নারীরা ভিড় জমান মেলায় l প্রথম আলোমেলা উপলক্ষে বিভিন্ন পণ্য হ্রাসকৃত মূল্যে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। অনেক স্টলে বিভিন্ন পণ্যর সঙ্গে উপহার দেওয়া হচ্ছে। শাহীন নামের এক বিক্রেতা জানালেন, মেলায় লাভের চেয়ে পণ্যের প্রসারের দিকে অনেকে নজর দেন। সে কারণে কম দামে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের কেনাকাটার হার সন্তোষজনক বলেও তিনি জানান।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের মহাসচিব মোহাম্মদ ইউনুছ প্রথম আলোকে বলেন, বিজয় মেলা এখন চট্টগ্রামের সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ের চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে বিজয়মঞ্চে আয়োজন করা হচ্ছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকের বয়স হয়েছে। অনেকে বেঁচেও নেই। তবে তাঁদের বীরগাথা যাতে হারিয়ে না যায়, সে কারণেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এমন আয়োজনের মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধারণ করতে পারবে।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৪-১২-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :