AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ইটভাটার কারনে হুমকিতে জীববৈচিত্র্য


Ekushey Sangbad

০১:৪৬ পিএম, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৪
ইটভাটার কারনে হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

একুশে সংবাদ : ইট তৈরি ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ উপেক্ষা করে খাগড়াছড়িতে জ্বলছে ২৭টি ইটভাটা। এদিকে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র। জেলা প্রশাসক কর্তৃক ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে সবক’টি ভাটাকে অবৈধ ঘোষণা করে এগুলোর বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ নিতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হলেও দুই বছরেও কোনো কুলকিনারা হয়নি। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসাধু ভাটা মালিকরা ধ্বংস করছে পার্বত্যাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য। লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা ছাড়া বাকি আট উপজেলায় রয়েছে অবৈধ ইটভাটা। জেলা সদরের সঙ্গে উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কের পাশ দিয়ে, গহীন অরুণ্যের ভেতর ও আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে এসব ভাটাগুলো। দিনদুপুরে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পুড়াচ্ছে বনের মূল্যবান কাঠ, ইট প্রস্তুতের কাটছে পাহাড় ও উর্বর জমির মাটি। আর ভাটাগুলো থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় ধ্বংস হচ্ছে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল। এতে একদিকে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল ও অন্যদিকে পরিবেশ হারাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। একসময় খাগড়াছড়ির বনে জাঙ্গলে বন্য হাতি, হরিণ, কচ্ছপসহ নানা উপজাতির পশুপাখির চলাফেরা দেখা যেত কিন্তু বন উজাড়ের ফলে তা এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই সরকার এখন যদি ভ্রুক্ষেপ না করে তাহলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চির সবুজ পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হবে এবং ধ্বংস হবে এখনকার অবশিষ্ট বনাঞ্চল। সরেজমিনে জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার দূর্গাবাড়ি আনসার ক্যাম্পের পার্শ্ববর্তী ইটভাটা গিয়ে দেখা যায়, তেলের ড্রাম দিয়ে তৈরি অস্থায়ী চিমনি দিয়ে দাউ দাউ করে বের হচ্ছে কালো ধোঁয়া। একটু কাছে গিয়ে দেখা মিলল শ্রমিকদের কর্মতৎপরতা। ইটপোড়ানোর জন্য ইটের তৈরি চুল্লিতে কাঠ দিচ্ছে কয়েকজন। তাদের মধ্যে একজন কাসেম মিয়া। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৬ মাসের চুক্তিতে নোয়াখালী থেকে মাঝির মাধ্যমে ৪০ জনের একটি দল এসেছে। অভাব অনটনের সংসার হওয়ায় তারা ইটভাটা কাজ করে। কাঠ পোড়ানোর ক্ষতিকর প্রভাব সর্ম্পকে জানান, কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো কথার উত্তর না দিয়ে কাজে বিলম্ব হচ্ছে বলে চলে যান। ভাটার পাশের একটি পাহাড় কেটে ভাটা আনা হচ্ছে। উপজেলা পরিষদের কার্যালয় থেকে দশ মিনিটের দূরত্বের ভাটার যদি এ অবস্থা হয় তবে অন্যান্য ভাটার কী অবস্থা এমনিতে অনুমান করা যায়। ভাটার কাছে রয়েছে কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। সেখানকার একজন নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, পাঁচ বছর ধরে ভাটাতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আশপাশের বন ও ব্যক্তিমালিকাধীন বাগান থেকে এখানে কাঠ আনা হয়। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে বিষয়টি জানানো হলেও তিনি চুপ রয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ বিষয়ে অভিযোগ করা হলেও কোনো সুরাহা মিলেনি। আগে এখানে (ইটভাটার স্থানে) কৃষি কাজ করা যেত কিন্তু ইটভাটা স্থাপনের পর থেকে ওই এলাকায় কোনো চাষাবাদ করা সম্ভব করা হচ্ছে না। তাই বাকিরাও ভাটাই কৃষি জমির মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। একই অবস্থা পানছড়ি জেলার লতিবান এলাকায়। জেলা সদর থেকে ভাটা গুটিয়ে একটু ভেতরে নিয়ে ভাটা স্থাপন করেছে ওয়াজ উদ্দিন নামে এক ভাটা মালিক। পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কের পাশেই ‘বিএন্ডএম’ নামে ভাটাই অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটার সামনে অল্প পরিমাণে কয়লা জমিয়ে ভেতরে পুড়ানো হয় কাঠ। আর মাটির আনা হচ্ছে পাশের একটি কৃষি জমি খনন করে। এ বিষয়ে জানতে ভাটার মালিক ওয়াজ উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘সবার সঙ্গে সমন্বয় করে ভাটা চালানো হচ্ছে। আপনার সঙ্গে সমন্বয় করা হবে সন্ধ্যায় অফিসে যোগাযোগ করেন।’ জেলার বেশ কয়েকজন ক্ষমতাসীন জোটের নেতা, প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে জেলার সবকটি ভাটা পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয় এসব হর্তাকর্তারা নৈপথ্যে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলামেইলকে জানান,‘কর্তার ইচ্ছে কর্ম’। এসব কার্যক্রম বন্ধে জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে একাধিকবার চিঠি দেয়া হলেও তার কোনো ফিডব্যাক পাওয়া যাচ্ছে না। জেলার শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা ইটভাটার নৈপথ্যে থেকে প্রশাসনিক স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। ৫নং ভাইবোন ছড়া ইউপির চেয়ারম্যান কান্তি লাল দেওয়ান বলেন,‘স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগের গাফেলতির কারণে ইটভাটাগুলোতে কাঠ জ্বলছে। এখন থেকে যদি এটি রোধ করা সম্ভব না হয় তবে অদূর ভবিষ্যত এ খাগড়াছড়ির প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে।’ তবে এ ব্যাপারে বন কর্মকর্তারা রয়েছে নীরব। নিজেদের ব্যর্থতার কথা আড়াল করতে ইটভাটাগুলোতে কাঠের ব্যবহার হচ্ছে না বলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘বন বিভাগের টহল দল তৎপর রয়েছে। ভাটায় কাঠ পোড়ানোর দায়ে বিগত বছরগুলোতে একাধিক ভাটা মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। তবে লোকবল স্বল্পতার কারণে পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না জানান তিনি। জেলা প্রশাসক মো. মাসুদ করিম বলেন, ‘ইটভাটাগুলোর অবস্থানগত দিক বিবেচনা করে ২০১৩ সালের ৬ জানুয়ারি জেলার সব ক’টি ইটভাটাকে অবৈধ ঘোষণা করে এগুলোর বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবরে চিঠি দিই। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখন পর্যন্ত তার কোনো প্রতিফলন ঘটছে না। তবে জেলা প্রশাসন সাধ্যমত চেষ্টা করছেন। সব উপজেলা নির্বাহীদের ভ্রাম্যমাণ আদালত জারি করতে নিয়মিত বৈঠকেও নিদের্শ দেয়া হয়েছে।’ সময় থাকতে সাধন করার মননে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাথাভারি কর্মকর্তারা সবুজ বনাঞ্চল ঘেরা খাগড়াছড়ি জেলাকে বাঁচাতে উদ্যোগী হবেন এমনটাই প্রত্যাশায় সাধারণ মানুষের। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৫-১২-০১৪:
Link copied!