AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাহী বিভাগ নিরপেক্ষ থাকা উচিত: সাদত হুসাইন


Ekushey Sangbad

০২:০২ পিএম, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪
সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাহী বিভাগ নিরপেক্ষ থাকা উচিত: সাদত হুসাইন

একুশে সংবাদ : জনপ্রশাসনে দলাদলি থাকলে সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি পালন করা দুরূহ হয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে সব কিছুর মতো জনপ্রশাসনে ঢুকেছে অপরাজনীতি। পদোন্নতি, ঘুষ আর সুবিধাজনক বিভাগ বা এলাকায় বদলির পাশাপাশি চাকরি শেষে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য এই দল, ওই দলের সঙ্গে মিশে যাওয়ার প্রবণতা আছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। নানা সময় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা বা কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন একজন যুগ্মসচিবের নেতৃত্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। এর আগেও নানা সময় ঘটেছে একই ধরনের ঘটনা। এ বিষয়ে মুখোমুখি হয়েছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্মকমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. সা’দত হুসাইন। সরকারি কর্মকর্তাদের এর আগেও সরকারবিরোধী আন্দোলনে সরাসরি অংশ নেওয়ার উদাহরণ আছে। মহিউদ্দিন খান আলমগীর জনতার মঞ্চে গিয়েছিলেন কর্মকর্তাদের নিয়ে। ঢাকাতে জনতার মঞ্চ করেছিলেন মেয়র হানিফ। মহিউদ্দিন খান আলমগীর সাহেব তার কিছু অনুসারী নিয়ে জনতার মঞ্চে যোগ দিয়েছেন। এছাড়া সচিবদের মধ্যে জনতার মঞ্চে যোগ দিয়েছেন তৎকালীন পাট সচিব শফিউর রহমান। যিনি পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনার হয়েছিলেন। সচিবের মধ্যে এই দুজনই ছিলেন। জনতার মঞ্চ যারা বানিয়েছিলেন তাদের সমর্থিত দলই ক্ষমতা এসেছিল। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা কেউ বলেওনি। বরং তাদের বিভিন্নভাবে উদ্বুদ্ধও করা হয়েছে। তাদের দেখাদেখি ‘সিভিল অফিসার্স ফেয়ার ডিলিংক গ্রুপ’ বানিয়েছিল। যারা বিএনপিকে সমর্থন করেছে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় এসেছে তখন তাদের প্রভাব একটু বেশি ছিল। আরও চারজন সচিবও জনতার মঞ্চে গিয়েছিলেন। কর্মচারীরা তাদের ধরে নিয়ে গেছে। কর্মচারীদের তখন তোড়জোড় আন্দোলন চলছিল। অফিসে কোনো সিনিয়র কর্মকর্তা বসতেই পারছিলেন না। কর্মচারীরা চারজনকে নিয়ে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে ছিলেন সৈয়দ আহমদ। যিনি পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হয়েছিলেন। আলমগীর ফারুক চৌধুরী, ওয়ালিউল ইসলাম, আমিরুল মোমেনিন। তাদেরকে নিয়ে মঞ্চে উঠিয়েছে। তারা দু-একটি বাক্য বলেছেন, এর বেশি কিছু নয়। কখন থেকে সরকারি কর্মচারীরা রাজনীতিতে জড়িত হতে শুরু করেন? ১৯৬৯ সালের আন্দোলনের সময় কর্মচারীদের রাজনীতিতে যোগদান ও সম্পৃক্ত হওয়া শুরু হয়। ইয়াহিয়ার মার্শাল লর সময় নূর খান অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। অ্যাওয়ার্ড বলে, যারা রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানে (ইপিআইডিসির আওতায়) কাজ করে তাদের কর্মচারীরা ট্রেড ইউনিয়নে যোগ দিতে পারবেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানে রাজনীতির অনুপ্রবেশ কীভাবে হয়? কর্মচারীরা টেনে টেনে রাজনীতিকে সদর দপ্তরেও নিয়ে আসে। এর মধ্যে সরকার রেলওয়ে, ডাক, টেলিফোন, সড়ক ও মহাসড়ক, তৎকালীন সিএনবি (পিডব্লিউডি), জনস্বাস্থ্য, সরকারি ছাপাখানায় যারা চাকরি করে তাদেরকে ট্রেড ইউনিয়ন করার অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। পরবর্তীতে ট্রেড ইউনিয়ন ধরেই আওয়ামী লীগের শ্রমিক লীগ, বিএনপিতে শ্রমিক দল করা হয়। আগেও বোধহয় এমনটা ছিল। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া আদায়ের মাধ্যম কী ছিল? স্বাধীনতার পর কর্মচারীরা সচিবালয়ে এসে তাদের দাবি- দাওয়া পেশ করত। তাদের বেতন বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করত। একবার তৎকালীন শিক্ষা সচিব নূর মোহাম্মদ সাহেবের ঘরে ঢুকেও ভাঙচুর চালায়। তিনি কেন অফিসে এয়ারকুলার ব্যবহার করেন, কর্মচারীরা কেন কষ্ট করেÑএসব নিয়ে স্লোগান দিয়েছে। ১৯৬৯ সালে সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনের ধরন কেমন ছিল? স্বাধীনতার জন্য ছয় দফা আন্দোলনের মধ্যে কোথাও সমাজতন্ত্রের একটা ছোঁয়া ছিল। ১৯৬৯ সালে কর্মচারীরা আন্দোলন করে শফিউল আজম সাহেবের গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করেছিল। সুলতানুজ্জামান সাহেবের গাড়ি আটকে দেয়। তিনি তখন সমাজকল্যাণ সচিব ছিলেন। হাসান তোরাব আলীর গাড়িও আটকে দিয়েছিল। এরশাদ পতন আন্দোলনেও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নিয়েছিলেন। এরশাদ সরকারের যখন পতন হয় তার তিন-চারদিন আগে সচিবালয়ের ভেতরে বড় ধরনের মিছিল হয়েছে। সেখানে কর্মকর্তারা নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমরা তখন যুগ্মসচিব ছিলাম। কাছ থেকে এসব দেখেছি। এর সঙ্গে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীরই সায় ছিল। সরকার থেকে কোনো বাধা আসেনি? এরশাদের বিরুদ্ধে দেশে সামগ্রিকভাবে আন্দোলন হতে ছিল। তখন তো বিআইডব্লিউএর কর্মচারীরা রাস্তায় স্লোগান দিয়েছেÑ‘এরশাদের চামড়া খুলে নেব আমরা। এরশাদের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে।’ ভেবেছি এটা কী হয়? ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কীভাবে এসব স্লোগান দেওয়া হয়? এটা যে সাধারণ মানুষ অপছন্দ করেছেন তাও নয়। এটা নিয়ে কেউ তাদের জিজ্ঞাসাও করেনি, শাস্তির কথা বলেনি। গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর তো সরকারি কর্মচারীরা প্রকাশ্যে রাজনীতিতে আসতে লাগলেন... যখন গণতান্ত্রিক সরকার এলো তখন সরকারি কর্মচারীরা রাজনীতিতে জড়িয়ে যেতে লাগলেন। এটা নিয়ে খুব বেশি কথা হয়নি। আপনারা চাকরিতে থাকতে প্রশাসনে দলাদলি হয়নি? আমরা যখন চাকরি করেছি তখন এর বিপক্ষে ছিলাম। বলেছি, নিরপেক্ষতা মানতে হবে। ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা মানতে হবে। প্রশাসন ক্যাডারে স্লোগান ছিলÑ‘তোমার আমার ঠিকানা ইস্কাটনের (বিআইএম অফিস) সীমানা।’ কেউ কথা রেখেছে? এটা বললে তো আর হয় না; যারা যাওয়ার তারা ঠিকই যেতেন। পেশাদার সংগঠনগুলোর মধ্যেও রাজনীতিকে ঢোকানোর চেষ্টা হয়েছে। প্রশাসনে দলাদলি হওয়ার কারণে কী ধরনের ক্ষতি হচ্ছে? প্রশাসনে দলাদলির কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দলকানা হয়ে যান। তখন অন্যদলের কারো ভাল কাজকে গুরুত্ব দেবে না। দরপত্রে সর্বনি¤œ দরদাতা ভিন্নদলের লোক হলে তাকে কাজ দেওয়া হয় না। সবকিছুতেই ব্যক্তি কোন দল করে তা বিবেচনা করা হয়। ন্যায়ানুগ প্রশাসন আর থাকবে না। এর মধ্য দিয়ে দুর্নীতি প্রবেশ করবে। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অযোগ্য লোককে চাকরি দিলে প্রশাসনের ক্ষতি হবে। সরকারের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট হবে। তাহলে আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিরপেক্ষ থাকা উচিত? আমলাতন্ত্র বলব না। সংসদীয় গণতন্ত্রে নিরপেক্ষ নির্বাহী গোষ্ঠী থাকা উচিত। যারা পেশাগত পারদর্শিতা দিয়ে কাজ করবে। পছন্দ না হলেও জনগণের সমর্থন নিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে তাদের কর্মসূচি বিশ্বস্ততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করবে। অন্তর্ঘাতমূলক কিছু করার চেষ্টা করবে না। অন্য দলের সেবার গ্রাহক হলে তাকে সেবা দেবে না এটা বলতে পারবে না। প্রতিটি কাজের গুরুত্ব বিবেচনা করে কাজ করবে। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাহলে রাজনীতি থেকে দূরে থাকা ভাল? আমার মত পরিষ্কার। প্রথম কথা হচ্ছেÑ প্রশাসনে দলাদলি থাকা ঠিক নয়। দ্বিতীয় হলোÑঠিক হলেও কতটুকু ঠিক তা জাতীয় পর্যায়ে বিতর্কের মাধ্যমে নির্ধারণ করা উচিত। বিতর্কটা কীভাবে হবে? জাতীয় সংসদ থেকে বিতর্কটা শুরু হয়ে সেমিনার, কর্মশালা, পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি, টিভি টক শোতে আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠের ঐকমত্যে একটা নীতিমালা ঠিক করতে হবে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজনীতিতে কতটুকু পর্যন্ত জড়িত হতে পারবেন, তাদের দাবি-দাওয়া কাদের কাছে তুলে ধরবেন, কোথায় তাদের সীমানা হবে, এটা না হলে এগুলো চলতেই থাকবে। এভাবে মতামত নিলে কী সহজে নীতিমালা করা যাবে? এটা করতে সময় লাগবে। অনেক মত আসবে। কেউ আবেগের বশবর্তী হয়ে কথা বলবেন। কট্টরপন্থিরা এর বিরোধিতা করবেন। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে সঠিক দিকনির্দেশনা বেরিয়ে আসবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কী ধরনের নীতিমালার কথা বলছেন? নীতিমালাতে থাকতে পারে যে, তারা সরাসরি কোনো দলের লোকজনদের সঙ্গে দেখা করে সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ করবে না। সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ করবে না। বিরোধীদলের সঙ্গে বসে সরকারের সমালোচনা করবে না। এগুলো করলে সরকারকে অবজ্ঞা করা হবে। দাবি-দাওয়া আদায়ের মাধ্যম কী হবে? তারা কিছু বলতে হলে সরকারপ্রধানকে বলবে। তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তাকে বলবে। মন্ত্রীকে বলবে। আর যদি এটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলে সরকারপ্রধান ও বিরোধীদলীয় নেতাকে ডাকবে। সেখানে এটা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠক জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলার ঘাটতির কারণে হয়েছে বলে মনে করেন? এখানে অনেকেই আছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। দলেবলে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। আলাদাভাবে যেতে পারত। সে বলতে পারে আমার আত্মীয় আছে, জেলার লোক এ ধরনের কথা বলতে পারে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এটাকে অস্বীকার করায় সন্দেহ বেড়েছে? যদি সত্যিই সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাক্ষাৎ বা কথাবার্তা হয়ে থাকে সেটা অস্বীকার করাটা একটু বোকামি হয়েছে। ঢাকাঢাকি না করে দরজা খোলা রেখেও আলোচনা হতে পারত। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কর্মকর্তাদের প্রশাসনে ওএসডি করা হয়। এটা কতটা যুক্তিসঙ্গত? ওএসডি একটা ভিন্ন বিষয়। বিভিন্ন কারণে এটা করা হয়। পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বা বিদেশে প্রশিক্ষণে যাওয়ার ক্ষেত্রেও ওএসডি করা হতে পারে। এই পদ যখন সৃষ্টি করা হয়েছে তখন বিরোধীদলীয় লোকদের শাস্তি দেওয়ার জন্য এটা করা হয়নি। এটা প্রশাসনের কৌশল। এটাকে সোজাসুজি খারাপ বলা ঠিক হবে না। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কর্মকর্তাকে তো ওএসডি করা হয়... জনপ্রশাসনে একটা গোষ্ঠীকে পছন্দ না করলে ওএসডি করা হয়। তবে সরকার যদি মনে করে কোনো কর্মকর্তাকে দায়িত্বে রাখলে প্রশাসনের কাজে ব্যাঘাত ঘটবে তাহলে তাকে ওএসডি করতে পারে। সরকার চালাতে গেলে এমনটা করতে হয়। একেবারে সরলপথে তো আর সরকার চালানো যায় না। ওএসডি তাহলে খারাপ কিছু নয়? যদি সরকারকে বলা হয় যে, ওএসডি করা যাবে না, তাহলে কর্মকর্তাদের বারোটা বেজে যাবে। তাদের রাস্তায় বসতে হবে। তার অবস্থা হবে কর্মহীন নিলম্বিত কর্মচারী। না পাবে বেতন, না পাবে কোনো কিছু। ওএসডি করা হলে সে তো বেতন পায়, গাড়ি পায়। ওএসডি শুনতে যতটা খারাপ মনে হয় অতটা খারাপ কিছু নয়। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন যারা বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেছেন তাদের ব্যাপারে তদন্তের পর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবেন... একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৭-১২-০১৪:
Link copied!