AB Bank
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ধর্মীয় সন্ত্রাস বনাম সেক্যুলার সন্ত্রাস


Ekushey Sangbad

০৩:৫৮ পিএম, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪
ধর্মীয় সন্ত্রাস বনাম সেক্যুলার সন্ত্রাস

একুশে সংবাদ : বিষয়টা বেশ স্পর্শকাতর, পাশাপাশি এ সময়ে বসে লেখা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণও বটে। সময়টা দুই দলের আগ্রাসী চেতনায় পরিচালিত। বাংলাদেশে এ সমস্যাটা আজকের মতো এতটা আগে কখনও আলোচিত ছিল না। রাজনীতি যখন থেকেই অনেকটা মেধাশূন্য হতে শুরু করে, তখন থেকে এর বিকাশের পরিধি বাড়ে। অনেকের মতে, '৯০-এর দশক থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে 'সন্ত্রাস' অন্যতম একটি ইস্যুই বলা যায়। বাংলাদেশে বিষয়টা যতটা ধর্মকেন্দ্রিক ততটা কিন্তু অন্য কোনো সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে এটা ব্যবহারের প্রবণতা নেই। বিষয়টা লক্ষণীয়ও। সন্ত্রাস বলতে কী বুঝি। অতি সংক্ষেপে এটা হচ্ছে জোরপূর্বক কিছু কারও ওপর চাপানোর প্রবণতা। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বলা যায়, সন্ত্রাস হচ্ছে জোরপূর্বক কোনো রাজনৈতিক, ধর্মীয়, আদর্শগত কোনো গোষ্ঠী মতবাদকে সহিংস পন্থায় চাপিয়ে দেয়া। সম্প্রতি এক জার্মান মুসলিমকে জার্মান টিভির একটি আলোচনা সভায় প্রশ্ন করা হয়- মুসলমানরা কেন সন্ত্রাস করে? এর উত্তরে জার্মান নাগরিক পাল্টা প্রশ্নের আকারে বলেন- ১. যারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল? ২. যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেছিল তারা কি মুসলিম ছিল? ৩. যারা অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কারের পর নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য ২০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীকে হত্যা করেছিল তারা কি মুসলিম ছিল? ৪. যারা হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল? ৫. যারা আমেরিকা আবিষ্কারের পর নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য উত্তর আমেরিকায় ৫০ মিলিয়ন রেড ইন্ডিয়ানকে হত্যা করেছিল তারা কি মুসলিম ছিল? ৬. যারা ১৮০ মিলিয়ন আফ্রিকান কালো মানুষকে ক্রীতদাস বানিয়ে আমেরিকায় নিয়ে গিয়েছিল। যাদের ৮৮ ভাগ সমুদ্রেই মারা গিয়েছিল এবং তাদের মৃতদেহকে আটলান্টিক মহাসাগরে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তারা কি মুসলিম ছিল? এ কথা থেকে কিছুটা তো বোঝা যায় যে, আজকের বিশ্ব মিডিয়া সন্ত্রাস বলতে কোমরে বেল্ট এবং পায়জামার ফিতে কষে যে নেমে পড়েন তাদের কাছে মুসলমান মানেই সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাস- এ ভাবনা ঠিক নয়। বাংলাদেশ মূলত একটি ধর্মপ্রধান দেশ। এ দেশের মানুষ ধর্মবিশ্বাসী ও ধর্মপ্রাণও। এ ধর্মবিশ্বাসী মানুষগুলোর বিরাট অংশই শান্তিপ্রিয় ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার মানুষ। এখানে ধর্মীয় সন্ত্রাসের বা এর বিকাশের অবকাশ নেই বললেই চলে, যদি না একে রাজনৈতিক কৌশল এবং হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারে পরিকল্পনা বা অভিপ্রায় না হয়। আমাদের রাজনীতির জনবিচ্ছিন্নতা, দুর্নীতি, অগণতান্ত্রিক আদর্শ, ভয়ের সংস্কৃতি এবং 'জোর যার মুল্লুক তার' 'মডেলে'র কারণেই বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে সন্ত্রাস-বীজের হাইব্রিড ফলন দেখছি। সময়ের পরিক্রমা, জটিলতা, দ্বন্দ্ব পাশাপাশি সিন্ডিকেট অর্থনীতি ও রাজনীতির প্রভাব এবং এর মনস্তাত্তি্বক চর্চা যত বাড়ছে ততই সমাজ বিভক্ত হয়ে পড়ছে দুই ধরনের সন্ত্রাসের অপকৃষ্টিতে। একটি ধর্মীয় অপরটি সেক্যুলার সন্ত্রাস। এ দুটোর লক্ষ্য- সমাজ ও রাষ্ট্রের সাধারণ জনগোষ্ঠীকে 'ডিভাইড অ্যান্ড রুল' নীতিতে ভাগ করে সম্পদ লুট, দখল ও দুঃশাসনের আধিপত্য বিস্তার। বাংলাদেশের ছদ্ম আলেম সমাজ ও ছদ্ম বুদ্ধিজীবী এর জন্য অনেকাংশেই দায়ী। সম্প্রতি বিলেত প্রবাসী বর্ষীয়ান বুদ্ধিজীবী এক সাক্ষাতে আমাকে প্রশ্ন করেন, আমার ছেলে কি আমার মতো হাফ হিজাবি কিনা? এর মানে কী? ধর্মীয় চিন্তাভাবনা হচ্ছে হিজাবি চিন্তাভাবনা- সেটা তাদের মতে অপ্রগতিশীল। অথবা এভাবেও বলা যেতে পারে, হিজাবি মানে সন্ত্রাসী বা হিজাব নিষিদ্ধ, এটা সামাজিক অন্যায় বা অপরাধ। হিজাবি শব্দের ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ এখানে আর দিচ্ছি না। হিজাবি বলতে কথিত প্রগতিশীলতার দাবিদাররা যে কি বোঝাতে চান বা পারেন, তা ব্যাখ্যার দাবি রাখে না। ইতিহাসের পেছনে যদি তাকাই দেখি বাংলাদেশের যারা যখনই এ দেশের সাধারণ মানুষের সহজ-সরল ধর্মবিশ্বাসকে আঘাত করে কথা বলেছেন, সমালোচনা করেছেন, তাদের কথা এবং চিন্তায় মুসলমানদের প্রতি এক ধরনের অবজ্ঞা, অশ্রদ্ধা, সন্দেহ ও বিতর্ক তুলে ধরতে চেষ্টাই করেছেন বেশি, আরেক অংশ দেশের সাধারণ মানুষের ধর্মবিশ্বাস ও এর কৃষ্টিকে পুঁজি করে রাজনীতি করেছেন। ধর্ম এদের কারও কাছে বোমা, কারও ঘাড়ে বিষফোঁড়া। যদিও মরণোত্তর জানাজা, চেহলাম ইত্যাদিতে ধর্মীয় বারান্দাতে এদের ঘোরাঘুরি করতেই দেখা যায়। আমরা এটা বুঝতেই চাই না যে, পৃথিবীতে প্রতিটা ধর্মই তার নিজ নিজ ধর্মীয় আদর্শিক চিন্তা ও বিশ্বাসের দৃষ্টিকোণে শান্তিপ্রিয় এবং অসাম্প্রদায়িক। তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে, কথিত অসাম্প্রদায়িক গলাবাজরাই সেক্যুলার সন্ত্রাসীর মতোই আচরণ করেন- যেভাবে ধর্মীয় সন্ত্রাসীরা করে থাকে। ধর্মীয় সন্ত্রাস থেকে মুক্ত হতে অন্য ব্যক্তি, গোষ্ঠীর ধর্মকে সমালোচনা নয়। সবার আগে আত্মসমালোচনা ও আত্মসংশোধনের সংস্কৃতিকে প্রাধান্যে আনা জরুরি। নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাসের চর্চায় কাউকেই ছোট বা উপেক্ষা নয় এবং কারও ব্যক্তি-স্বাধীন মতামত ও বিশ্বাসকে আক্রমণ নয় বা সহিংস আচরণ না করে নিজ নিজ ধর্মের মহত্ত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপনের বিকল্প নেই। আর সেক্যুলার সন্ত্রাস থেকে মুক্ত হওয়ার উপায় জ্ঞানের ওজনে অহঙ্কার নয়, বিনয়ের কৃষ্টি চর্চা। বাংলাদেশকে বুঝতে হবে এ দেশের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কৃতি এবং তার প্রতি এ জনগোষ্ঠীর সরল বিশ্বাস ও প্রত্যয়ের জানালা দিয়ে। অনেকের মতে, ধর্মীয় সন্ত্রাসের বিষয়টিকে দেখা হয় রাজনীতি ও ধর্ম। এর একটি শুধু জাগতিক, অপরটি জাগতিক এবং পরজাগতিক একই সময়ে। দ্বন্দ্ব এখানেই। দুটোকে সঠিকভাবে বোঝা। যে কারণে অনেকে মনে করেন রাজনীতি ও সংস্কৃতির জাগতিক পৃষ্ঠা থেকে ধর্মীয় কৃষ্টিকে দূরে রাখাটা যৌক্তিক। তা হলে ধর্মীয় সন্ত্রাসকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। না, তা যাবে না। সাম্প্রতিক বিশ্বরাজনীতি ও সামাজিক পরিবর্তন তা বলে না, বাংলাদেশেও না। ধর্ম বাংলাদেশের মানুষের যাপিত জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, এখানে জোরপূর্বক কিছু করতে গেলে সংঘাত বাড়বে। তখন সেক্যুলার মন্ত্র ও ধর্ম উভয় কৃষ্টিতেই সন্ত্রাসের বহুমুখী ধারার সংযোজন ঘটবে। এক রাষ্ট্র ও সমাজ বিভক্ত হয়ে যেতে পারে দুই প্রান্তিক উগ্রতায়। এটা আমাদের কাম্য নয়। তাই ধর্মীয় ও সেক্যুলার উভয় সন্ত্রাসী কৃষ্টি ও মনোভাবের উত্তরণের আরেকটি দিগন্ত জ্ঞান অর্জন। অনেক অনেক পড়াশোনা করা। জাগতিকতা মানুষের জ্ঞান-পিপাসা ও এর ক্ষেত্রকে বিকশিত করে, আর ধর্ম মানুষকে আত্মসংযম ও বিনয় শেখায়। বিনয় ও আত্মসংযম না থাকলে বিদ্যা, বুদ্ধি, পান্ডিত্য অর্থহীন। একজন জ্ঞানী ব্যক্তি কখনোই অন্যের জ্ঞান বা চিন্তাভাবনা নিয়ে আক্রমণাত্মক হন না, তেমনি একজন ধার্মিক ব্যক্তিও অন্যের ধর্ম ও বিশ্বাসকে নিয়ে সহিংস হতে পারেন না। মাহমুদ রেজা চৌধুরী রাজনীতি বিশ্লেষক। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৭-১২-০১৪:
Link copied!