AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

কল্পনার চেয়েও বিস্ময়কর বাস্তব


Ekushey Sangbad

০৫:৪১ পিএম, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪
কল্পনার চেয়েও বিস্ময়কর বাস্তব

একুশে সংবাদ : কল্পনা যে পথ মাড়াতে সাহস পায় না, বাস্তবতা সে পথে ঘোড়া দাবড়ায়। আমাদের বাস্তব জগতের ঘটনা কখনো কখনো আমাদের সবচেয়ে সৃজনশীল কল্পনার সীমাও ছাড়িয়ে যায়। এ ব্যাপারে ফিলিপ রথের একটি বিখ্যাত অভিযোগ আছে, ‘বাস্তবতা সব সময়ই আমাদের মেধার পরিসর ছাড়িয়ে যায়।’ অনেক ঔপন্যাসিকও হয়তো এরূপ ঘটনার অবতারণা করতে সাহস পাবেন না, পাছে তা অদ্ভুত বা অতিকাল্পনিক লাগে। আমার এ প্রত্যয়ের সর্বশেষ প্রমাণ হচ্ছে, ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’ সিআইএর ব্যবহৃত নির্যাতন কৌশল নিয়ে সিনেটের প্রতিবেদন। হ্যাঁ, হলিউডি ছবিতে আমরা বল্গাহীন কল্পনার ফল্গুধারা ছুটতে দেখেছি। কিন্তু কখনোই ‘পায়ুপথে পানি ঢালা’র মতো কিছু নিশ্চয়ই দেখিনি। এটা আসলে মধ্যযুগীয় কৌশল, পায়ুপথে ধর্ষণ করার শামিল। এর ফলে অন্ত্র ফুলে যায়। আর পেটের ভেতরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। ২৪ শীর্ষক অনুষ্ঠানের দর্শকেরা হয়তো ওয়াটারবোর্ডিংয়ের দৃশ্য দেখে সহ্য করতে পারেন, কিন্তু একজনের ওপর যখন এক মাসে ১৮৩ বার তা প্রয়োগ করা হয়, তখন তা সহ্য করা খুবই দুরূহ। খুব কম টিভি প্রযোজকই এ দৃশ্য দেখানোর সাহস করবেন যে, বন্দীকে অমানুষিক নির্যাতনের ফলে তদন্তকারীর অঙ্গুলি হেলনে সে আবারও উঠে ওয়াটারবোর্ডিংয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। আমি এই অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে চাই। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার ইউনিয়নের প্রধান বারাক ওবামাকে অনুরোধ করেছেন, তিনি যেন এর সঙ্গে যুক্ত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। ভাবখানা এমন যে এঁদের ক্ষমা পাওয়ার অন্তর্নিহিত অধিকার রয়েছে। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে, এই ক্ষমা করা হলে অন্তত এটা প্রতিষ্ঠিত হবে যে অপরাধ হয়েছে। আর ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি রোধে আইনি নজির স্থাপন সম্ভব হবে। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, এর বিচার হলে তা আরও জোরালো নজির স্থাপন করবে। এই প্রতিবেদন আমরা কীভাবে ধর্তব্যের মধ্যে নেব বা এর ফল কী হবে, এখন সেই প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ভাষা ও সুভাষণের যে অনুভূতিশূন্যকরণের ক্ষমতা আছে, সেদিকে নজর দিতে হবে। খেয়াল করে দেখুন, সিআইএর পরিচালক বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদনের বিষয়ে যুক্তি খণ্ডন করতে গিয়ে কিন্তু নির্যাতন শব্দটা উচ্চারণ করেননি। এর বদলে তিনি বলেছেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপ্ত কৌশল’। ফলে, এটার সুফল-কুফল নিয়ে আলোচনা করা কোনো সমস্যা নয়। এই ভাষা তাঁর নিচের স্তরের কর্মচারীরাও আয়ত্ত করেছেন। তাঁরা বলেন, ‘মনোযোগ ধরা’ ও ‘শীতল প্রকোষ্ঠ’, কিন্তু বন্দীদের ধাক্কা মারা বা জমাট বাঁধা তাপমাত্রায় তাদের নগ্ন করে দাঁড় করিয়ে রাখার বিষয়ে কিছু বলেন না। ‘পায়ুপথে পানি সিঞ্চন’ এ শব্দবন্ধটিই একটি সুভাষণ। যেমন ‘নৃতাত্ত্বিক উৎখাত’ শব্দবন্ধটিও একটি সুভাষণ। আসলে বক্তা ও শ্রোতার মধ্যে একটি দূরত্ব সৃষ্টি করার জন্য এসব শব্দবন্ধ তৈরি করা হয়েছে। ব্রিটেনে আমরা এখনো ২০০৩ সালের ইরাক দখলে আমাদের অংশগ্রহণবিষয়ক চিলকট তদন্তের ফলাফলের অপেক্ষায় আছি, যেটা ছিল নয়-এগারোর পরিণতি। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমাদের সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী ঘটনাটি ঘটে, আজ প্রায় দেড় দশক পরও এর প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। আমরা এখনো সেই দুটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের ছায়ায় বসবাস করছি। প্রতিটি তদন্তেই দেখা যাচ্ছে, ইরাক দখল ও সামগ্রিকভাবে ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ কী সব মারাত্মক ভুলের জন্ম দিয়েছে। সিনেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নয়-এগারোর ঘটনায় ভীতসন্ত্রস্ত একটি সংস্থা যাদের জিজ্ঞাসাবাদে কোনো রকম অভিজ্ঞতা নেই, তারা এমন এক পন্থা অবলম্বন করেছিল, যা ইতিহাসের পাতায় শুধু অনৈতিকই নয়, অকার্যকর হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছে। সহজভাবে বললে, নির্যাতনে কোনো কাজ হয় না। এতে কোনো ফল পাওয়া যায় না। মানুষ নির্যাতন এড়াতে ভুল তথ্য দিয়ে থাকে। এতে শত্রুপক্ষই লাভবান হয়। নির্যাতকের কাজে অসন্তুষ্ট হয়ে নির্যাতিতরা তার বিরুদ্ধে একত্র হয়। আবু গারাইব কারাগার কীভাবে মার্কিন দখলদারের বিরুদ্ধে ইরাকে প্রতিরোধ সৃষ্টি করেছিল, সেদিকে একবার খেয়াল করুন। যাঁরা ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের’ সাফাই গেয়েছেন, তাঁরা বারবার ভুল প্রমাণিত হয়েছেন। মার্টিন চুলভ আইএসের উত্থানের বিস্ময়কর কাহিনি উদ্ঘাটন করেছেন। এতে দেখা যায়, ইরাকে মার্কিন নিয়ন্ত্রিত কারাগারে এর শীর্ষ নেতারা একত্র না হলে হয়তো এ সংগঠনের সৃষ্টি হতো না। সিআইএর নির্যাতনের মতো ইরাক দখল সন্ত্রাস মোকাবিলা করতে পারেনি, এসব সন্ত্রাসকে পরিপুষ্ট করেছে। ডায়ান ফেইনস্টেইন হোয়াইট হাউসের বিরোধিতা সত্ত্বেও তাঁর তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করতেই পারেন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার পৃথক্করণ ঘটেছে। তাদের আইন বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে একেবারেই আলাদা, তারা নির্বাহী বিভাগের কাজে লাগাম দিতে পারে (ব্রিটেনে সেটা হতে এখনো ঢের দেরি)। তবে এটা কোনো পূর্ণাঙ্গ সমাধান নয়। এটা আমাদের সামষ্টিক অন্ধ আবেগ এবং গভীর ও অন্ধকারতম তাড়না প্রকাশের পথ করে দিয়েছে। গল্পের মধ্যে আটকে গিয়ে আমরা চেয়েছি, ধরুন, বয়্যার কুড়াল দিয়ে খলনায়কের মাথা কেটে ফেলুক। কিন্তু আমাদের সরকারের কাছ থেকে আমাদের চাওয়াটা ঠিক এ রকম নয়। রাষ্ট্র আমাদের প্রবৃত্তি ও তাড়নার যোগফল হতে পারে না। রাষ্ট্রকে আইনের শাসনের কথা শুনতে হবে। মানুষের মৌলিক অধিকার ও সাধারণ মানবিক সৌজন্যের বোধ আমলে নিতে হবে। বাস্তবতা কল্পনার সীমা ছড়িয়ে যেতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রকে ঠিকঠাক কাজ করতে হবে। তা না হলে গত সপ্তাহে আমরা যে ভয়াবহ সত্যের মুখোমুখি হয়েছি, ভবিষ্যতেও সে রকম কিছুর মুখোমুখি হতে হবে। ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন; দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া জোনাথন ফ্রিডল্যান্ড: দ্য গার্ডিয়ানের নির্বাহী সম্পাদক। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৭-১২-০১৪:
Link copied!