ইসলামে বিয়ের বয়স ও নারীবাদীদের যুক্তিতর্ক
বিয়ের বয়স একটি আপেক্ষিক বিষয়। বয়স সীমা নিয়ে চলমান যুক্তি তর্কও আবন্তর। অনেকটা গায়ে পরে পরের রান্নায় লবন দেওয়ার মতো। কোনো তর্কেই বিষয়টার চূড়ান্ত সমাধান নেই। চূড়ান্ত সমাধান দেয়নি ইসলামসহ কোনো ধর্মেও । স্থান কাল ও অবস্থাবেধে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদের। ১৮৯১ সালের ইংরেজ শাসনামলে স্ত্রীর বয়স ১২ আইন পাস করা হলে, হিন্দুসমাজে প্রচুর প্রতিবাদ ওঠে। ইংরেজরা হিন্দুদের ধর্মবিশ্বাসে হস্তক্ষেপ, হিন্দু সংস্কৃতি নষ্ট কারার অভিযোগও করেন হিন্দুরা। কারণ মনুসংহিতায় বলা হয়েছে, মেয়েদের আট বছর বয়সের মধ্যেই বিবাহ দিতে হবে। হিন্দুসমাজে আট বছরবয়সী মেয়েকে বলা হয় গৌরী। নয় হলে রহিনী। হিন্দু মেয়েদের এগারো বছরের আগে বিয়ে না হলে অভিভাবক নরকে যাওয়ার হুমকিও আছে।
ইসলাম তো এই বিষয়ে আরও অনুচ্চারিত। আল্লাহ তায়ালা কোরআন বলছেন, যে পর্যন্ত না তারা বিবাহযোগ্য হয়। সুরা নিসা : ৬
নবীজি সা. হাদিস বলছেন , তোমাদের মাঝে যে নারী পুরুষযোগ্য সে যেন বিয়ে করে। মুসলিম শরিফ : ৩৪০০
উপর্যুক্ত কোরআন ও হাদিসে বিয়ের এই যোগ্যতার বিষয়টি সম্পূর্ণ আপেক্ষিক। ছেলেমেয়ের শারীরিক মানসিক ও আর্থিক যোগ্যতা অবশ্যই বিবেচিত হবে। বিয়ের জন্য ছেলেমেয়ের বয়স যোগ্যতা, শারীরিক অবকাঠামোগত সামর্থ্য, সাংসারিক ব্যয়ের জন্য আর্থিক স্বচ্ছলতা অবশ্যই জরুরি। মানুষের কল্যাণেই বিধি বিধান। সুতরাং যে বয়সে বিয়ে করলে নারীর স্বাস্থ্যহানী হবে বা জরায়ু ক্যান্সার, রক্তশূন্যতা, অপুষ্ট শিশু জšে§র আশঙ্কা ইত্যাদি বাড়বে, সর্বোপরি মা ও শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বাড়বে সে অবস্থায় অবশ্যই বিয়ে করা উচিত নয়। ইসলাম কখনই এই বিয়ে সমর্থন করে না। বরং অনুৎসাহিত করে ও নিষেধ করে। বিপরীতে সামর্থ্যবান নারীপুরুষের শরীয়ত মতো বিয়ে অধিকার হরণ করার ক্ষমতাও ইসলাম কাউকে দেয়নি। অভিভাবকের সম্মতিতে, ছেলেমেয়ের শারীরিক মানসিক ও আর্থিক যোগ্যতা বিবেচিত হলে শুধু বয়স সীমার আপত্তি তোলে বিয়ে ভেঙে দেওয়া অনধিকারচর্চা। কারও জীবনে এই অনধিকারচর্চাটা অভিশাপ হয়েও দেখা দেয়। বাস্তবতা হলো বিয়ের জন্য বয়স বাধা নয়। বাধা হলো যোগ্যতা। বয়স আটারো বা ষোল হোক বৃদ্ধ বাবা মা যদি যোগ্য ছেলেমেয়েকে সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়ম মেনে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, আমাদের কি অধিকার আছে বাধা দেওয়ার? মেয়ের সামাজিক নিরাপত্তা, ছেলের চারিত্রিক ও নৈতিক উন্নতির জন্য বৃদ্ধ বাবা মায়ের এই আয়োজন কি কল্যাণকর নয়? তাহলে বয়সের দোহাই তোলে বিয়ে বাড়িতে পুলিশি নাটক সাজিয়ে একজন উপযুক্ত ছেলে ও মেয়ের জীবনে অভিশাপের কলংক লেপন করার অধিকার সরকার সংরক্ষণ করে কি? নারীবাদী সমাজকর্মীদের আত্মচিৎকার,রাষ্ট্রের সব আইন ও ধর্মের সব বিধান যদি মানুষের কল্যাণে হয়, তাহলে স্থান কাল ও পাত্র কেন বিবেচিত হবে না ?
বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে অনুরোধ থাকবে, বিয়ের জন্য বয়স সীমার নির্ধারণ করে আইন নয়; বরং নারীপুরুষের সামগ্রিক কল্যাণের কথা বিবেচনা করে সরকারি নীতিমালা বা সুপারিশ থাকতে পারে।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২০-১২-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :