AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

চীন বনাম আইএসআই


Ekushey Sangbad

১০:৫৭ এএম, ডিসেম্বর ২১, ২০১৪
চীন বনাম আইএসআই

একুশে সংবাদ : সংবাদ দুটি সাধারণ দৃষ্টিতে এ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ মনে না হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। কেননা, বিশ্ব উন্মাদনা চলছে আর্থসাম্রাজ্যবাদের স্বার্থনির্ভর উন্মাতালতায়। আপাত যা দেখা যায় তাতেই মানুষ দিশেহারা হচ্ছে। প্রকৃতকে সন্ধান করে দেখছে না। প্রকৃতকে সন্ধান করলে দেখতে পেত সংবাদ দুটির গুরুত্ব কী? প্রথমটি হচ্ছে চীনের বিরুদ্ধে আইএসআইয়ের যুদ্ধ ঘোষণা। চীনে কিছু মুসলমান আছে; কিন্তু তারা সংখ্যায় বেশি নয়। মোট জনসংখ্যার তুলনায় খুবই কম। কিন্তু এরা চীনের সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় একাত্ম হতে পারেনি। তারা বহুদিন ধরে মনে মনে ক্ষুব্ধ হচ্ছিল। এখন তাদের কোনো না কোনো পক্ষ বেশ উসকানি দিচ্ছে। ফলে তারা রাজনৈতিক আন্দোলন করার প্রাথমিক কাজগুলো করছে। যেহেতু চীন ভিন্ন ও স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল স্বীকার করে না, সেহেতু তারা চীনের ওই বিশেষ এলাকায় উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক কার্যকলাপ কঠোর হস্তে দমন করছে। আইএসআই সারা বিশ্বের মুসলমানদের রক্ষা করার কাল্পনিক দায়িত্ব নিয়েছে। তারা বিশ্বব্যাপী তাদের মৌলবাদী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে উগ্র মুসলিম তরুণদের সংগ্রহ করছে এবং জঙ্গি বানিয়ে তাদের মতাদর্শের বিরোধীদের হত্যা করার কাজে লাগাচ্ছে। চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তারা চীনের অভ্যন্তরে বা বিদেশের কোনো কূটনৈতিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে উইঘুরদের ওপরে যে নির্যাতন চালানো হচ্ছে তার প্রতিশোধ নিতে চায়। দ্বিতীয় সংবাদটি হচ্ছে, চীনের অস্ত্রসজ্জা। চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক বিমান আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য প্রয়োজনীয় রাডারযন্ত্র আবিষ্কার করেছে। ক'দিন আগে মহড়া হয়ে গেল। চীনের অস্ত্র কারখানা আগে আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র তৈরি করত। কিন্তু মাও সেতুং-এর মৃত্যুর পর থেকে চীন বাজার অর্থনীতির কৌশল গ্রহণ করে ধনী দেশে পরিণত হতে চায়। ওই উদ্দেশ্যে তারা বিশ্ব অস্ত্রবাণিজ্যে প্রাধান্য বিস্তার করার জন্য অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র বানাচ্ছে এবং মার্কেটিং করার বিশেষ উদ্যোগও গ্রহণ করেছে। এ দুটি সংবাদের মধ্যে সম্পর্ক কী? যদি বলা যায়, চীনের শ্রীবৃদ্ধি স্থবির করার জন্য আর্থসাম্রাজ্যবাদ ব্যবস্থা নিতে চায় এবং একইসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিমদের সঙ্গে চীনের সুসম্পর্ক ধ্বংস করতে চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহুভাবে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিমদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। পুরো মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতি তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে; কিন্তু ইরানকে পর্যুদস্ত করতে পারেনি। ইরানকে যত বারই মার্কিনিরা হুমকি দিয়েছে তত বারই চীন ও রাশিয়া ইরানকে অভয় দিয়েছে। আগে ভারতও ইরানকে অভয় দিত। কিন্তু এখন মোদি সরকার ক্ষমতায় এসে ইসরাইলের সঙ্গে দৃঢ় অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করে মধ্যপ্রাচ্যে তার সমর্থন শিথিল করেছে। ইরানও সে রকম ইশারা-ইঙ্গিত পেয়েছে। এখন ইরানের সঙ্গে আছে শুধু চীন-রাশিয়া। চীনকে যদি চটিয়ে দেয়া যায় তবে মুসলমানদের ওপর তাহলে হয়তো চীন মধ্যপ্রাচ্যে তার নীতি পাল্টাবে। মার্কিনিরা চায়, তাদের আগ্রাসনের সময় চীন-রাশিয়া যেন প্রত্যক্ষভাবে বিরোধিতা না করে। এর আগেও সাম্রাজ্যবাদীরা চীনে অস্থিরতা তৈরি করতে চেয়েছিল। তিয়েন আনমেন স্কয়ারে তারা তরুণ প্রজন্মকে একত্রিত করে গণতন্ত্রের জন্য সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন করিয়েছিল। চীন কঠোর হস্তে দমন করেছিল। হংকং নিয়েও চীন বেশ ঝামেলায় আছে। এক দেশে দুই অর্থনীতি করেও হংকংয়ের বুর্জোয়াদের মন পাচ্ছে না চীন সরকার। সেখানে হয়তো এক সময় সামরিক সমাধানে নামতে হবে চীনকে। ফরমোজা এখনও বিচ্ছিন্ন। মহাচীনের অংশ ফরমোজা সাম্রাজ্যবাদ নিয়ন্ত্রণ করছে। এটা একটা স্থায়ী ঝামেলা চীনের জন্য। এখন যদি চীনের মূল ভূখ-ের অভ্যন্তরে ঝামেলা বাধে শুধু ধর্মীয়ভাবের কারণে, তাহলে চীন আন্তর্জাতিক সমস্যায় পড়বে। তবে এটা নিশ্চিত যে, চীন শেষ পর্যন্ত সামরিক সমাধানে যাবে। যদি প্রয়োজন হয়। তবুও তার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার নীতি পরিবর্তন করবে না। মার্কিনিরা চীনের মনোভাব ভালোভাবেই জানে। তিয়েন আনমেনে মুসলমান মরেনি। মরেছিল চীনারা। কিন্তু উইঘুরে মরবে মুসলমানরা। আইএসআই উইঘুরের কারণে চীনের স্বার্থে নাশকতা করলেই চীন ক্ষেপে গিয়ে যেসব পদক্ষেপ নেবে, তাতে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ উত্তেজিত হবে এবং চীনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রচারণা চালাবে। চীনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রচারণা চালালে তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশ্বের সব মুসলিম দেশেই চীনের বাজার। এসব বাজারে অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের পাশাপাশি অস্ত্রপণ্যও বিক্রি হয়। বিশ্ব অস্ত্রবাজারে চীনের আগমন পরে হলেও এখন কলেবরে অন্য যে কোনো দেশকেই চ্যালেঞ্জ করতে পারে। চীন যে প্রবৃদ্ধিতে অনেকের চেয়েও এগিয়ে গেছে তা বিশ্ববাজারে তার অস্ত্রপণ্য যে কদর পেয়েছে সে কারণেই। মার্কিনিরা এখনও তাদের অস্ত্রপণ্য পুশ সেলে বাজারজাত করে। চীনের ভাগ্য ভালো মার্কিনিদের অত্যাচার থেকে অনেকেই চীনের দ্বারস্থ হয় অস্ত্রের জন্য। দুটি কারণে চীনের অস্ত্র বাজার পুশ সেলে আছে। প্রথমত, তাদের সব পণ্যের মতোই অস্ত্রপণ্যও সস্তা। দ্বিতীয়ত, অস্ত্র বাজারজাত করার ব্যাপারে চীন কারও কাছেই কৈফিয়ত দেয় না, দায়গ্রস্তও নয়। যদিও কয়েকটি প্রযুক্তি রাশিয়ার সহযোগিতা নিয়েই মার্কেটিং করছে, তবুও চীন রাশিয়ার কাছেও দায়বদ্ধ নয়। যারা কেনে তারাও এ স্বাধীনতার সুযোগ নেয়। এর মাধ্যমে অস্ত্র বেচাকেনার গোপনীয়তা রক্ষিত হয়। চীনের বাজার সম্প্রসারণ বন্ধ করতে চায় সাম্রাজ্যবাদ। সে জন্য চীনকে মুসলিম ঘৃণা সংগ্রহ করতে তারা বাধ্য করতে চায়। চীন সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, ইরাকে, সিরিয়ায় এবং ইরানে তার অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষার জন্য আইএসআইবিরোধী যুদ্ধে নামবে। হয়তো এ যুদ্ধে চীন ভালো করবে এবং ইউরোপসহ সাম্রাজ্যবাদের সমর্থন পাবে। কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে মুসলিমরা চীনাদের ঘৃণা করতে শুরু করবে এবং ওই কারণে চীনাদের আন্তর্জাতিক বাজার হাতছাড়া হয়ে যাবে। চীনাদের তাৎক্ষণিক বিজয় দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত হয়ে থাকবে। এখন বিশ্বশত্রু সাম্রাজ্যবাদ। সাম্রাজ্যবাদই আইএসআই, আল কায়দা জঙ্গি তৈরি করেছে। আফগানিস্তানের পুরো মাদক ব্যবসা এখন সাম্রাজ্যবাদের নিয়ন্ত্রণে। এ মাদক ব্যবসা থেকেই জঙ্গিরা অর্থ সংগ্রহ করে। আইএসকে উগ্র জঙ্গি হিসেবে প্রমাণ করার জন্য তাদের কার্যকলাপ বিশ্বব্যাপী প্রচার করছে সাম্রাজ্যবাদই। মুসলমানরা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যারোমিটারে অশিক্ষিত পর্যায়েই পড়ে। তাদের অশিক্ষা-কুশিক্ষার সুযোগ নিয়ে বর্বর যুগের বোধে অন্ধ করে মুসলিম নিধনে লাগিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সঙ্কট মূলত ভ্রাতৃঘাতী লড়াই। মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশই জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত নয়। তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব তাই অশিক্ষার মধ্যকার দ্বন্দ্ব। তাদের দ্বন্দ্ব সহজে বন্ধ হবে না। কেননা, অশিক্ষিতরা গণতান্ত্রিক হতে পারে না এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানেও যেতে পারে না। তার উপরে উস্কানিদাতারা তো আছেই। ভ্রাতৃঘাতী লড়াই শেষ পর্যন্ত মুসলিমদের অর্থনীতি শেষ করে দেবে। বিশ্বব্যাপী ইসলাম ধর্মকে খ্রিস্ট সাম্রাজ্যবাদ বর্বরদের ধর্ম হিসেবে উপস্থাপন করবে। ইউরোপে এবং খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে মুসলিমদের সংখ্যা বাড়ছে, তা ক্রমাগত হ্রাস পেতে পেতে শূন্যের কোঠায় নেমে যাবে। খ্রিস্ট সাম্রাজ্যবাদ স্থায়ীভাবে ইহুদিদের মুসলমানদের বিরুদ্ধে লাগিয়ে রেখেছে। কিন্তু মুসলিম সম্প্রসারণ বন্ধ হয়নি। এখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের লাগিয়ে দিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়া চলবে শতাব্দীব্যাপী। চীন-রাশিয়া যদি মুসলমানদের বিরুদ্ধে যায় তবে মুসলিমরা একঘরে হয়ে যাবে এবং কপর্দকহীনও হবে। পথ একটাই। চীন-রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করা। মুসলিম ঘৃণার অপনোদন করা এবং ইসলাম যে শান্তির ধর্ম সেটি বিশ্বব্যাপী প্রচার করা। বিশ্বের সব জঙ্গিকেই শান্তিপ্রিয় মুসলিমদের নিজ দায়িত্বে নিয়ন্ত্রণ করা এবং এদের গণবিচ্ছিন্ন করা। প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে জঙ্গি জন্ম রোধ করা। প্রতিটি মুসলিম দেশেই জিহাদি বুলি শেখানো হয়। বাংলাদেশেও শেখানো হয়। ইসলাম সংঘর্ষ নয়, শান্তি চায়। বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর উচিত হবে ইসলামের শান্তিপ্রিয় রূপের প্রচার করা এবং সমাজ থেকে জঙ্গি উৎপাটন করা। তা না হলে সাম্রাজ্যবাদের নীলনকশাই বাস্তবায়িত হবে। বিশ্বব্যাপী মুসলিম নিধনযজ্ঞ চলতেই থাকবে। ড. ইশা মোহাম্মদ অধ্যাপক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২১-১২-০১৪:
Link copied!