AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

পানিশূন্য নদী, হতাশায় কৃষক


Ekushey Sangbad

০৪:৫৯ পিএম, জানুয়ারি ১৩, ২০১৫
পানিশূন্য নদী, হতাশায় কৃষক

একুশে সংবাদ : গেল বছরের শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতি, এর আগের বছর আগাম বন্যায় পানিতে ধান তলিয়ে গেছে, মহাজনী ঋণতো বছরের পর বছর লেগেই থাকে। আসলে ফসলে বার বার মার দিচ্ছে। আর এইবারতো এখনও ধানের চারাই রোপন করতে পারি নাই। আসলে আমাদের এ এলাকা ছেড়ে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’ পানির অভাবে জমিতে বোরা আবাদ করতে না পারায় কষ্টে কথাগুলো বলছিলেন মিঠামইনের ঘাগড়া ইউনিয়নের কৃষক মুক্ত মিয়া। তিনি বলেন, ‘বাপ-দাদার রেখে যাওয়া জমিতে ধান চাষ করি, ৩০ একর জায়গা পতিত পড়ে আছে। এখনও ১০ শতাংশ জমিতে চারা রোপন করতে পারি নাই। চোখের সামনে, পানির অভাবে এতো জমি পতিত থাকবে, আসলে না খেয়ে আমাদের মরা ছাড়া আর কোনো গতি থাকবে না এবার।’ শুধু মুক্ত মিয়া নয়, এমন করুণ অবস্থা এই জনপদের হাজার হাজার কৃষকের। নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার একর জমিতে বোরো আবাদ করতে পারছেন না এখানকার ৮ হাজার কৃষক। ঘাগড়া ইউনিয়ের চমকপুর গ্রামের কৃষক বোরহান উদ্দিন শেখ বলেন, ‘প্রতি বছরই পানির অভাবে জমিতে বোরো আবাদ করতে অনেক বেগ পেতে হয়। কিন্তু এবার একটুকুও পানি নেই। অথচ কষ্ট করে জমিতে হাল চাষ করে রাখা হয়েছে। পানির অভাবে ধানের চারা রোপন করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।’ হাটুরিয়া নদী। কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত হাওর উপজেলা মিঠাইমনের ঘাগড়া ও কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের মাঝদিয়ে ভয়ে যাওয়া এক সময়ের খরস্রোতা নদীটি আজ মৃতপ্রায়। এই নদীকে ঘিরেই এই দুই ইউনিয়নের মানুষের জীবন-জীবিকা। অথচ পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে নদীর তলদেশ। আর এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন এই জনপদের কৃষকরা। হাওরের কৃষকদের একটি মাত্র বোরো ফসল উৎপাদন করে থাকে। আবাদের সেই মৌসুম শেষ হতে চলেছে, অথচ এখন অনাবাদী রয়েছে কৃষকের ১০ হাজার একর জমি। হাটুরিয়া নদীর পানি দিয়ে অন্তত ১৫ হাজার একর বোরো জমি আবাদ করে কৃষকরা। কিছুদিন আগেও নদীতে পানি ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই নদীর পানি শুকিয়ে যায়। ডিসেম্বরের শেষ দিকে নদীতে কিছু পানি থাকলেও এখন আর পানি নেই। তাই অনাবাদি পড়ে আছে এই এলাকার ১০ হাজার একর বোরো জমি। পানির অভাবে জমিতে চারা রোপন করতে পারছেন না কৃষকরা। দুই একদিনের মধ্যে যদি বিকল্প পথে পানির ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে পতিত পড়ে থাকবে বিশাল জমি। এতে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছেন এখানকার মানুষ। বিশাল এই বোরো জমিকে ঘিরে বিএডিসির ২০টিরও বেশি সেচস্কিম রয়েছে। বোরো মৌসুমের শুরুতে, কয়েকটি সেচস্কিম থেকে কিছু পানি দিয়ে ৪/৫ হাজার একর জমিতে চারা রোপন করলেও, তাও এখন নষ্ট হতে চলেছে। আর পানির অভাবে বন্ধ রয়েছে সেচস্কিমগুলো। ঘাগড়া ইউনিয়নের একে বাদল সেচস্কিম ম্যানেজার তোতা মুন্সি জানান, তার আওতাধীন ১২শ একর জমি রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩শ একর জমিতে পানি দিতে পেরেছেন। তাও, চারা রোপনের পর, পানির অভাবে নষ্ট হতে চলেছে। তিনি জানান, নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। দ্রুত পানির ব্যবস্থা না করলে, না খেয়ে থাকতে হবে এলাকার মানুষদের। একই গ্রামের কৃষক নূর হোসেন জানান, এবার ১০ একর জমির এক শতাংশ জতিতেও বোরো আবাদ করতে পারেননি। গেল বছরের শিলা বৃষ্টিতে এমনিতেই মহাজনী ঋণের চাপে রয়েছেন। এর মধ্যে যদি, এবার বোরো আবাদ করতে না পারেন, তাহলে পরিবার নিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে। হাটুরিয়া নদীর পানি দিয়ে ঘাগড়া ও কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের অন্তত ৮ হাজার কৃষক তাদের একমাত্র বোরো ফসল উৎপাদন করে থাকে। স্থানীয় উদ্যোগে কালনী-কুশিয়ারা নদীর মুখের প্রবেশদ্বার এসকেভিউটর দিয়ে খাল কেটে পানি আনার ব্যবস্থার কথা বলছেন ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন। তিনি জানান, এতে বেশ কয়েক লাখ টাকা খরচ হবে। তবে এটি কোনো সমাধান নয়, নদীটি স্থায়ীভাবে খননের দাবি জানান এই জনপ্রতিনিধি। এই বিপর্যয় থেকে কৃষকদের রক্ষায় দ্রুত পানির ব্যবস্থার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান মিঠামইন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজীজ হায়দার ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠাইমন-অষ্টগ্রাম) আসনের এমপি রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক এবং জেলা পরিষদের সহায়তায় খাল কেটে পানির ব্যবস্থা করার জন্য আর্থিক সহায়তা কথা বলেছেন। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই পানির ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।’ হাওরের কৃষকদের একটি মাত্র বোরো ফসলের উপর নির্ভর করে তাদের জীবিকা। এ মৌসুমে ধান রোপন নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে এ জনপদের হাজার হাজার কৃষক। যদি ২/৩ দিনের মধ্যে জমিতে কৃষকরা ধানের চারা রোপন করতে না পারেন, তাহলে এই বিশাল জমি পতিত পড়ে থাকবে। কারণ, আর কিছুদিন পরে জমিতে বোরো ধান রোপন করলেও বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকদের। তাই দ্রুত পানির ব্যবস্থা করে কৃষকদের রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সেই সঙ্গে স্থায়ীভাবে নদীটি খননের দাবি জানান তারা। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৩-০১-০১৫:
Link copied!