AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

প্রবাস, যেখানে যৌবন অনিয়ন্ত্রিত


Ekushey Sangbad

১২:০৩ পিএম, জানুয়ারি ২০, ২০১৫
প্রবাস, যেখানে যৌবন অনিয়ন্ত্রিত

একুশে সংবাদ : "এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় "-কবি হেলাল হাফিজের এই কথাটি সত্য করার প্রয়াসে হাজারো উদ্দীপ্ত বাঙালি যুবক জীবন সংগ্রামের লড়াইয়ে সামিল হতে পাড়ি জামায় মরুভূমির সুদূর প্রবাসে। সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে শুধুমাত্র জীবনের তাগিদে সোনালী দিনের রঙিন ঊষাকে ছিনিয়ে আনতেই তাদের এই কঠিন সংগ্রাম। এই প্রবাসের তপ্ত মরুর বুকে শতশত দেশের হাজার হাজার মানুষ পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এখানে কর্মরত বিভিন্ন দেশের কর্মজীবী মানুষের বয়সের গড় হিসাব করলে দেখা যাবে যে, একমাত্র বাংলাদেশের শ্রমিকদের গড় বয়স সবচেয়ে কম। এর কারণ আমরা খুবই অল্প বয়সে প্রবাসে পাড়ি দেই। আমাদের দেশে কোন ছেলে একটু মাথা তোলা হলেই চিন্তা করে কখন বিদেশে যাবো। বিশেষ করে যাদের সাথে প্রবাসীদের সম্পর্ক আছে। কোন পিতা বিদেশে থাকলে ছেলে পনের ষোলো হলেই চেষ্টা করে বিদেশে নিয়ে আসার। কোন বড় ভাই থাকলে সেও খুবই চেষ্টা করে অন্যান্য ভাইদের দ্রুত এদেশে পার করার। এর অবশ্যই ভালো দিক আছে। যে যত তাড়াতাড়ি এসে এই দেশে কাজ ভাষা এবং আনুসাঙ্গিক সবকিছু শিখে নিতে পারে, সে ততই দ্রুত পয়সা উপার্জন করতে পারে। এই ধরনের চিন্তা থেকেই আমাদের বাংলাদেশীরা অল্প বয়সে প্রবাসে পাড়ি। এখানে অল্প বয়সে আসাটা যত ভালো ঠিক তেমনি কিছু কিছু অনেক ক্ষতিও বটে। আমি যখন প্রবাসে আসার জন্য সবার কাছ থেকে বিদায় নিতে গেলাম তখন একজন বড়ভাই বলেছিলেন যে," দেখ তুমি দেশে ছিলে সবাই তোমাকে দেখেছে। কিন্তু এখন তুমি সবাইকে ছেড়ে বিদেশে যাচ্ছো। সেখানে আমরা তোমাকে কেউ দেখব না। বিদেশ এমন একটি জায়গা তুমি চাইলেই অনেক কিছুই করতে পারবে যা এখানে করতে পার নাই। তুমি নিজে রোজকার করে নিজে চলবে। সেখানে কেউ নেই যে কোন কিছুতে তোমাকে বাধা দিতে পারে। তাই তোমার জন্য একটি মাত্র উপদেশ :সবসময় ভালো পথে চলবে। কেননা ঐদেশে যে জায়গায় মসজিদ আছে তার আশেপাশেই খারাপ জায়গাও আছে। তুমি যদি নিজেকে সঠিক পথে রাখতে পার তবে তুমি জয়ী। নচেৎ তুমি অন্ধকার কানা গলিতে হারিয়ে যাবে। " আমি তার কথার মর্ম তখন বুঝিনি। তবে যখন এই দেশের সবকিছুর সাথে নিজে পরিচিত হচ্ছি তখনই তার কথার প্রমাণ পেলাম। আল্লাহ্ আমাকে ভালো কিছু চিন্তা করার তৌফিক দিয়েছেন বলে আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত ঠিক আছি। তবে আমার জানা মতে হাজারো বাঙালি আছে যারা সত্যিই অন্ধকার কানা গলিতে আজ হারিয়ে গেছে। যার চাক্ষুস প্রমাণ গত সংখ্যার "হিরো থেকে জিরো "লেখাটি। যে কথাটি প্রথমে বলেছিলাম, এই দেশে বাঙালিরা সবচেয়ে কম বয়সে আসে। যাদের বেশিরভাগের তেমন আত্মীয় স্বজন নেই এই দেশে। তারা হঠাৎ করে এসে অনেক কিছুই বুঝতে পারে না। যদি ভালো কারো সংস্পর্শে আসে তো আলহামদুলিল্লাহ। যদি কোন খারাপ সঙ্গীর খপ্পরে পড়ে তবে আর রক্ষা নাই। যেহেতু যৌবনের প্রাণচাঞ্চল্যে উদ্দীপ্ত যুবক। তাই তারা রঙিন ধোঁয়াশার মরিচিকার দিকে ধাবিত হবে এটাই স্বাভাবিক। যারা নিজেদের সংযত রাখতে পারে তাদেরকে কেউ বিচ্যুত করতে পারে না। বিশেষ করে যারা ভালো ঘরের সন্তান। যারা একটি সুন্দর সুশীল ইসলামিক পরিবার থেকে এসেছে তারা সহজে এই খারাপ পথ মাড়ায় না। তবে যারা সাধারণ পরিবার থেকে প্রবাসে পাড়ি দেয় তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেক ধরনের বিচ্যুতি ঘটে। যদি পরিবারে নিয়মিত টাকা পাঠাতে না হয় তবে তারা সুযোগ পায় খারাপ পথে টাকা উড়াতে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, যারা দেশে মোটামুটি উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করত তারা এখানে এসেও সেই শৃঙ্খলহীন জীবন ছাড়তে পারে না। আর এভাবেই অনেকে তাদের সুন্দর জীবন থেকে নিজেরাই হারিয়ে যায়। অনেক সময় পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক না থাকার কারণে বা পারিবারিক ভুলবোঝাবুঝির কারণে বিভিন্ন ধরনের হতাশায় ভুগতে থাকেন। তখন নানান রকম মানুষের পাল্লায় পড়ে সেই হাতাশাছন্ন প্রবাসী ভাইয়েরা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত কষ্টের পয়সা বিভিন্ন বারে নাচ গান আর সামান্য ক্ষণিকের শরীর উত্তেজনায় খরচ করে। কিছু ভাই আছেন যারা সদ্য বিবাহিত। কিন্তু বিভিন্ন কারণে দেশে যেতে পারছেন না। কিংবা অনেকে আছেন যদি দেশে যেতে হয় তবে একেবারেই যেতে হবে। তখন নিজেদের প্রবৃত্তিকে দমিয়ে রাখতে না পারার কারণে মাঝে মাঝে ঢুঁ মারেন বিভিন্ন হোটেলে। অথচ এটা এমনই এক খারাপ নেশা যা নিজেকে পর্যন্ত বিক্রি করে দেয়। এভাবে একদিন দুইদিন যেতে যেতে এটা তাদের অভ্যাসে পরিনত হয় যা তারা নিজেরাই জানে না। এদেশে হাজার হাজার শ্রমিক আসে যারা একেবারেই কিশোর। যদি সঠিক গাইডেন্স পায় তাহলে কোন সমস্যা হয়না। কিন্তু ঐভাবে এখানে কেউ কাউকে গাইডেন্স করে না শুধুমাত্র রক্তের আপন ছাড়া। প্রবাসে যারা কাজ করেন তারা ভালোই উপার্জন করেন(কিছু ব্যতীত) । তাই সবার দৃষ্টি থাকে প্রবাসে আসার। প্রতিটি পরিবারের স্বপ্ন থাকে তার ছেলে বিদেশে গিয়ে ভালো রোজগার করে সবার কষ্ট মুছে দিবে। কিংবা একজন স্ত্রী চিন্তা করে তার স্বামী বিদেশে গিয়ে কাজ করলে সে তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে একটু শান্তিতে দিন পার করতে পারবে। প্রায় সবক্ষেত্রেই সবার আশা পূরণ হয়। কিন্তু কয়েকটা ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে ব্যতিক্রম দেখা দেয়। তাই আমাদের উচিত হবে যাতে করে এই ধরনের ব্যতিক্রম যেন না হয়। বাংলাদেশের প্রতিটি প্রবাসী পরিবারের কাছে অনুরোধ করব আপনি এবং আপনারা অবশ্যই আপনার প্রবাসী যে ছেলে, ভাই, স্বামী ইত্যাদি আছেন তাদের খবরাখবর নিন। তাদের সব প্রকারের খোঁজখবর নেওয়া অবশ্যই জরুরি। আপনি হয়তো ভাববেন আমার ছেলে, ভাই, স্বামী ইত্যাদি ঐরকম না। সে খুবই ভালো। সে এমন হতে পারে না। আপনাদের বিশ্বাস আপনাদের জায়গাতে সঠিক। কিন্তু মানুষ পরিবর্তন হতে সময় লাগে না। একটা কথা আছে " সঙ্গ দোষে লোহাও ভাসে "।তাই যতদিন আপনার কাছে ছিলো ততদিন আপনার মতো ছিলো। এখনে সবকিছুই অন্যরকম। এখানে কেউ খারাপ হতে চাইলে একেবারেই সময় লাগবে না। তাই এটা প্রতিটি প্রবাসী পরিবারের কর্তব্য যে তাদের সকল প্রবাসীর খবরাখবর রাখা। যাদের ছেলে আছে বা যেসব ভাইদের ছোট ভাই আছে তাদের প্রতি অনুরোধ তারা যেন তাদের ছেলে বা ভাইদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখে। একজায়গায় কাজ করলে তেমন সমস্যা নেই। সবসময়ই আপনি খোঁজখবর নিতে পারছেন। কিন্তু দূরত্বে কাজ করলে অবশ্যই এটা উচিত হবে সবকিছুর খবর নেওয়া। নিজে যেহেতু ওখানে নেই সেহেতু এমন কোন আত্মীয় স্বজন খুঁজুন যে আপনার ছেলে বা ভাইকে সঠিক গাইডেন্স রাখবে। তাছাড়া ছেলে বা ভাইদের সাথে সবসময় খোলাখুলি আলাপ আলোচনা করুন। আপনি জানেন তারা ভালো তবুও বলুন সবসময়। এইক্ষেত্রে নিজেকেও সঠিক পথে থাকতে হবে। আপনি নিজে খারাপ রাস্তায় হাটলে কখনোই আপনার অধীনস্ত কাউকে সঠিক পথে নিতে পারবেন না। বরং তারা খারাপ পথে যেতে উৎসাহিত হবে। অনেক বাবা বা ভাই আছেন যারা একই জায়গায় থাকলেও আলাদা বাসায় থাকেন। এটাও উচিত নয়। আপনার ছেলে বা ভাই আপনার সাথে থাকলে আপনি নিজে যেমন খারাপ কিছু করতে সাহস পাবেন না ঠিক তেমনি সেও একটা নির্দিষ্ট শৃঙ্খলে থাকবে। অনেক ক্ষেত্রে একসাথে থাকার পরও ছোট ভাই কী করছে বড় ভাই জানে না। দুইজনের দুই জায়গায় কাজ। ছোট ভাই কখন কোথায় কী করে আসছে সেটা সম্পর্কে বড়ভাই অজ্ঞাত। তাই হাজারো চোখ রাখলেও মনমানসিকতা যদি ভালো না হয় তবে এতো কড়াকড়িতেও কিছু হবেনা। তাই সবসময় নিজেকে সৎ থাকতে হবে সেইসাথে ছেলে বা ভাইকে সৎ থাকার পরামর্শ দিতে হবে। বিশেষ করে ছেলে বা ভাইকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝাতে হবে। একটা ছেলে ধর্মীয় লাইন থেকে এসেছে। তার ভাইও আছে। সেইসাথে শাসন বারণও আছে। পরিবারও ধর্মীয় মনমানসিকতার। তবুও ছেলেটি সুযোগ পেয়ে খারাপ কাজে চলে যায়। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো পয়সা খরচ হচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে হয়তোবা হচ্ছে না। কিন্তু একবার যখন ওপথে গিয়ে মজা পেয়েছে তখন তার দৃষ্টি সবসময় ঐদিকেই থাকবে। তাই ছেলে বা ভাইকে সঠিক উপায়ে বুঝাতে হবে। অনেকে এটা লজ্জ্বা পায়। লজ্জ্বা পেলে তো ছেলে বা ভাইকে খারাপ পথ থেকে ফেরাতে পারবেন না। আবার দেখা যায় ছেলে বা স্বামী বছরের পর বিদেশে পড়ে আছে। পরিবার তাকে দেশে যেতে বলছে না। ছেলেও নিজে থেকে কিছুই বলতে পারছে না। ছেলের বয়স হয়ে যাচ্ছে। অথচ পরিবারে সেই খবর নেই। তখন সেই ছেলে বা স্বামী কী করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করবে? এইজন্য এটা খুবই জরুরি যে সঠিক সময়ে বিয়ে করা। সেইসাথে নির্দিষ্ট সময় পর পর হাজারো কষ্ট হলেও দেশা আসা। পরিবারের মধ্যে ধর্মীয় অনুশাসনের চর্চা করা। প্রবাসী ছেলে বা স্বামীকে সবসময় নামাজ কালাম সহ ভালো পথে চলার তাগিদ দেওয়া। নিজের ছেলের বা স্বামীর সবধরণের খোঁজখবর নেওয়া। বিদেশে অন্যান্য আত্মীয় স্বজনদের সাথে ভালো যোগাযোগ রাখা। ছেলে বা স্বামীর উপার্জন সম্পর্কে ধারণা রাখা। যাতে করে বুঝা যায় যে আপনার প্রবাসী ছেলে বা স্বামী সঠিক পথে আছে কিনা। কেননা আজকে এই প্রবাসে আমাদের যে ইমেজ সংকট তৈরি হয়েছে তার একমাত্র কারণ এইসব কিছু কুলাঙ্গার বাঙালির জন্য। যারা খারাপ পথে গিয়ে নিজে নিঃস্ব হয়েছে সেইসাথে অন্যন্য বাঙালি ভাইদেরও ঐপথে ডেকে নিয়ে নিঃস্ব করছে। বাঙালিরাই বাঙালিদের ধ্বংসের মূল কারণ। আজকে যেখানে বাঙালি সেখানেই মাদক, জুয়া, পতিতালয় ইত্যাদি। এরাই এইসব খারাপ কাজের মূল ইন্ধনদাতা। যদিও এইসবের মালিক তারা নয় কিন্তু এরাই ব্যবহৃত হচ্ছে বেশি। এরাই ভাই হয়ে ভাইয়ের পকেট খালি করে দিচ্ছে বিভিন্ন খারাপ পথে নিয়ে গিয়ে। তাই আসুন আমরা সচেতন হই। চেষ্টা করি যৌবনকে নিয়ন্ত্রিত করে উন্নত জীবনযাপনের। সবাই যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে সৎ থাকি সুন্দর চিন্তা করি এবং সেইসাথে ধর্মীয় মূল্যবোধের বিবেচনায় চলি, তবে আমরা ইনশাআল্লাহ আমাদের সবাইকে সুন্দর পথে পরিচালিত করতে পারব। সাখাওয়াৎ আলম চৌধুরী দেরা দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২০-০১-০১৫:
Link copied!