অবশেষে মুক্তি পেল সেই ফরিদা
একুশে সংবাদ : দণ্ডাদেশ পাওয়া এক ফরিদা বেগমের পরিবর্তে অন্য একজন ফরিদা বেগমকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয় দীর্ঘ ৮৮ দিন আগে। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অবশেষে গতকাল সোমবার সেই ফরিদা বেগম পিরোজপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে মুক্ত বাতাসে বেরিয়ে আসার পর ফরিদা বেগম বুকে টেনে নেন তাঁর ছেলেমেয়েকে। আর সন্ধ্যার মধ্যেই তিনি পৌঁছে যান গ্রামের বাড়ি মঠবাড়িয়া উপজেলার কালীরহাট গ্রামে।
গত ৯ জানুয়ারি 'মঠবাড়িয়া থানা পুলিশের কাণ্ড, এক ফরিদার সাজা ভোগ করছে আরেক ফরিদা' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় কালের কণ্ঠে। এরপর গত ১৫ জানুয়ারি খুলনার বিশেষ ট্রাইবুন্যাল-১ আদালতের বিচারক জি এম সালাউদ্দিন ফরিদাকে মুক্তির আদেশ দেন। এ আদেশের কপি গতকাল রবিবার পৌঁছে পিরোজপুর কারাগারে। আদেশ পাওয়ার পরপরই কারা কর্তৃপক্ষ ফরিদা বেগমকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়।
এ বিষয়ে পিরোজপুর কারাগারের জেলর এ জি মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'একজন নিরপরাধ মানুষকে আদালতের আদেশে মুক্তি দিতে পেরে আমরা খুব খুশি।' তিনি আরো বলেন, 'আদালতের আদেশের কপি পাওয়ার পরপরই ফরিদাকে মুক্তি দেওয়া হয়।'
মুক্তি পাওয়ার পর খুশিতে আত্মহারা ফরিদা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মুক্তি পেয়ে আমি খুশি। কিন্তু অপরাধ না করেও আমাকে সাজা ভোগ করতে হয়েছে, এটা ভেবে আমি ভালো নেই।' তিনি বলেন, 'আমার মেয়ে ও ছেলের কাছে ফিরে এসেছি। এটা আমার জন্য আনন্দের। আমার মুক্তির জন্য যাঁরা সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।'
ফরিদার স্বামী মো. দুলাল বলেন, 'আমার দুঃসময়ে কালের কণ্ঠ পাশে দাঁড়িয়েছে, কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছে। আমি কিভাবে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাব, বুঝতে পারছি না। আমি দরিদ্র মানুষ। আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আপনাদের জন্য দোয়া করছি।'
প্রসঙ্গত, চার বোতল ফেনসিডিলসহ বেনাপোল থেকে ২০০৯ সালের ৭ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ফরিদা বেগম নামের এক নারী। এ মামলার বিচার শেষে খুলনার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালত ফরিদা বেগমকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু মঠবাড়িয়া থানার পুলিশ সাজা পরোয়ানা তামিল করতে গিয়ে দণ্ডাদেশ পাওয়া ফরিদা বেগমের পরিবর্তে আরেক ফরিদা বেগমকে গত বছরের ২১ অক্টোবর গ্রেপ্তার করে পিরোজপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। এরপর ৮৮ দিন ধরে কারাভোগ করেন নির্দোষ ফরিদা বেগম।
বিনা দোষে স্ত্রীকে কারাগারে পাঠানোর পর তাঁকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন ফরিদার স্বামী মো. দুলাল। পরে কারা কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হয় দণ্ডাদেশ পাওয়া এক ফরিদার সাজা ভোগ করছেন অন্য এক ফরিদা। দণ্ডাদেশ পাওয়া ব্যক্তির নাম ও স্বামীর নাম ঠিক থাকায় গত ২১ অক্টোবর গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন মঠবাড়িয়া থানার উপপরিদর্শক এনায়েত হোসেন।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২০-০১-০১৫:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :