দেশটা তো পাবলিকেরও || আহসান হাবীব
একুশে সংবাদ : ফ্রান্সের ঘটনায় যারা মারা গেছে তাদের মৃত্যুর একটা কারণ ছিল। কারণটা আমরা সবাই জানি। তাদের নিয়ে বিশ্বজুড়ে এখন আলোচনার ঝড় উঠছে। সেই পত্রিকার সার্কুলেশন এখন ৫০ লাখ কপিতে গিয়ে ঠেকেছে, কিন্তু আমাদের দেশে অবরোধে যে নিরিহ মানুষগুলো মারা গেল বা যাচ্ছে তারা ঠিক কোন কারণে মারা গেল? তাদের নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনার তো প্রশ্নই ওঠে না, যেখানে দেশেই কোনো আলোচনা নেই! এমনকি যে দলের ডাকা অবরোধে মারা গেল তারা সেই দলেও এ নিয়ে কোনো শোক-তাপ, আলোচনা নেই।
সেই ৫০ লাখ সার্কুলেশনে ওঠা পত্রিকায় সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে বাজে একটা কার্টুন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে বাংলাদেশের গরিব গার্মেন্টস কর্মীরাও এই ইস্যু নিয়ে নাকি ব্যবসা করছে! আর তারা পত্রিকার সার্কুলেশন ৫০ লাখ উঠিয়ে কী করেছে? লস করেছে? আলেকজেন্ডার বেঁচে থাকলে হয়তো বলতো ‘সেলুকাস কি বিচিত্র এই শতাব্দির মানুষ!’
হরতালের তবু একটা ব্যাখ্যা আছে কিন্তু অবরোধের কোনো পরিষ্কার ব্যাখ্যা নাই (আমি অন্তত পাইনি)। যারা অবরোধ ডাকেন তারাও পরিষ্কার করে কিছু বলেন না। এ ব্যাপারে তাদের যেন বোবায় ধরে আছে। বোবায় ধরা ব্যাপারটা কিন্তু ইন্টারেস্টিং, মানুষের র্যা ম স্লিপ আর ননর্যা ম স্লিপের মাঝখানে যখন ঘুম ভেঙে যায় তখন নাকি মানুষকে বোবায় ধরে। ঘুমন্ত মানুষ তখন ‘গো গো’ শব্দ করতে থাকে। অর্থাৎ সে যে জেগে গেছে সেই খবর মস্তিষ্কে পৌঁছায় না বলে মস্তিষ্ক তাকে জাগায় না । সেই মুহূর্তে কেউ ছুঁয়ে দিলে সে জেগে উঠতে পারে। এ দেশে এখন যারা অবরোধ ডাকছে তাদের এখন ঠিক ওইভাবে ছুঁয়ে দিতে হবে। তাহলে যদি তারা জেগে উঠে জাতির জন্য কিছু করে! কিন্তু ছোবেটা কে?
এক রাজনৈতিক নেতা তার এলাকা থেকে বিদায় নিচ্ছে (টার্ম শেষ) । তার শেষ বক্তৃতায় জনতার উদ্দেশে বললেন, সুখে-দুখে আপনাদের সঙ্গে ছিলাম এখন আমার বিদায় নেওয়ার সময় হয়েছে। আমি যাচ্ছি।
একজন হাত তুলে বলল, বরং আপনিই থাকেন (লুটপাট তো যা করার করেই ফেলেছেন) আপনি থাকলেই ভালো (লুটপাট আর হবে না হলেও কম হবে)। (ব্রাকেটের কথাটা সে উহ্যই রাখল) তখন নেতা বললেন, না আমি চলে গেলে আমার চেয়ে আরো অনেক ভালো নেতা আসবে, এলাকার উন্নয়ন হবে, নিশ্চিত থাকুন।
তখন আরেকজন হাত তুলে বলল, আপনার আগের জনও এই কথাই বলেছিলেন।
অবরোধে সবারই ক্ষতি হচ্ছে। পণ্য নিয়ে ট্রাক আসতে পারছে না। জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে ট্রাক-বাস, পুরছে মানুষ। কিন্তু এক রাজনীতিককে দেখা গেল সে বেশ খুশি।
: দেশের এই হাল আর আপনার মুখে হাসি?
: আরে ভাই শান্তিতে মিটিং তো করতে পারছি।
: কীরকম?
: আগে আমার বক্তৃতার সময় পাবলিক পচা ডিম, টমেটো, আলু ছুড়ে মারতো। এখন ছুড়তে পারছে না। ছুড়বে কীভাবে ও সবের ট্রাক ঢাকা আসতে পারলে তো ... পথেই জ্বালিয়ে দিচ্ছে!
সেরকম এক লোকের ডিমের ট্রাক জ্বালিয়ে দিয়েছে অবরোধকারীরা (সত্যি না হয়তো, কল্পনা) ডিম ব্যবসায়ীর বিরাট লস হলো। তার মাথা ঠিক নেই। সে তার মুরগির ফার্মে গিয়ে পিস্তল নিয়ে হুংকার দিয়ে বলল, কাল থেকে তোরা প্রত্যেকে দুটো করে ডিম পাড়বি। নাইলে সব কটাকে গুলি করে মারব। আমার লস পুষিয়ে নিতে হবে।
শুনে মুরগিরা সব ভয় পেয়ে গেল। প্রত্যেকে দুটো করে ডিম পাড়তে লাগলো। কিন্তু দেখা গেল একজন একটা করে পাড়ছে। লোকটি ভয়ানক রেগে গেল। ছুটে গিয়ে তার মাথায় পিস্তল ঠেকালো।
: তোর এত সাহস একটা করে ডিম পাড়িস?
: মালিক আপনার পিস্তলের গুলি খাওয়ার ভয়ে তাও তো একটা করে পাড়তেছি, আমি যে মোরগ এটাও তো মাথায় রাখতে হবে আপনাকে।
দেশটা যে শুধু নেতাদের না পাবলিকেরও সেটাও কিন্তু মাথায় রাখা দরকার!
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২১-০১-০১৫:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :