AB Bank
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

শ্বেতশুভ্র হিমালয় দুহিতা


Ekushey Sangbad

০৫:৪৮ পিএম, জানুয়ারি ২১, ২০১৫
শ্বেতশুভ্র হিমালয় দুহিতা

একুশে সংবাদ : ফেরদৌস জামান, ইচ্ছা ছিল ভুটান দ্রুক পাথ ট্রেইলে ট্রেকিং করার, কিন্তু বাদ সাধল ইন্ডিয়ান ভিসা। ইন্ডিয়ান ট্রানজিট ভিসা জটিলতার কারণে সিদ্ধান্ত বাতিল করে নেপাল যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। থোরাং লা পাস পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এবং বিখ্যাত পাস। এখানে আরোহীরা জীবনে একবার হলেও আরোহণের ইচ্ছা পোষণ করেন। সেপ্টেম্বরের শেষের দিনগুলোকে উপযুক্ত সময় বিবেচনা করে ২৩ তারিখ ঢাকা থেকে রওনা হলাম। পরিকল্পনা আটজন মিলে করলেও, শেষে দেখা গেল দলের সদস্য সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে এগারো জনে। মহাখালী থেকে সঠিক সময়ে বাস ছাড়লেও বুড়িমারি গিয়ে পৌঁছলাম পরদিন সকাল ৮টায়। পাক্কা তিন ঘণ্টা লেট! পথে মাঝারি ধরনের যানজট ছিল বটে, কিন্তু চালকের পেটের গোলমাল হওয়ায় আমাদের বিভিন্ন জায়গায় বাধ্যতামূলক বিরতি দিতে হচ্ছিল। ইচ্ছা ছিল ভোরে পৌঁছে বুড়ির রেস্তোরাঁয় (বুড়িমারির স্থলবন্দরের বিখ্যাত রেস্তোরাঁ) ডিম ভাজি দিয়ে গরম পরোটা খাব। তারপর ছোট্ট একটা ঘুম। কিন্তু সময় না থাকায় পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। কোনোরকমে সব কাজ সেরে ছুটতে হলো ইমিগ্রেশন অফিসে। গত কয়েক বছর হলো প্রয়োজনীয় ফর্ম যাত্রীদের পূরণ করতে হয় না। উভয় দেশের ইমিগ্রেশনের যোগসাজশে কিছু লোক এই কাজগুলো করে দেয় অর্থের বিনিময়ে। সীমান্তজুড়ে যেন অর্থের খেলা! পারাপারের আনুষ্ঠানিকতার এক পর্যায়ে দেহ তল্লাশির পর একজন কানের কাছে মুখ এনে বলেই ফেলল, একশ টাকা দেন। সীমান্তের ওপারে গেলে বেঁচে যাবেন সে উপায় নেই। বাংলাদেশ প্রান্তে দালালদ্বারা রেফারকৃত ইন্ডিয়ান দালালরা তখন আপনাকে ঘিরে ধরবে। সেখানেও গুণতে হবে একশ টাকা। এমনকি মূদ্রা বিনিময়ও করতে হবে ওদের স্টল থেকে! নেপালের প্রবেশদ্বার সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ভাবলাম গ্রামের মাঝ দিয়ে হেঁটে গিয়ে শিলিগুঁড়ির বাসে উঠব। কিন্তু গাড়ির চালক নাছোড়বান্দা। ডলার চেঞ্জ করার সময় থেকে সে পিছু নিয়েছে। জনপ্রতি তার দাবি তিনশ রুপি। আমি বললাম দেড়শ। সে রাজি হলো না। বিশ মিনিট হেঁটে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি সে দাঁড়িয়েই আছে। এবার সে বাধ্য হয়েই মনে হয় ছাড় দিল। আমরা গাড়িতে উঠে বসলাম। কিন্তু তার মন বেজায় খারাপ। তার ধারণা আমরা ভীষণ ঠকিয়েছি তাকে। অভিমানে তিনি গাড়িতে গান পর্যন্ত বাজালেন না। অর্ধেক পথ যেতেই বৃষ্টি এলো। এবার তিনি গাড়ি থামিয়ে একটা পান মুখে দিয়ে গান ছাড়লেন। প্রকৃতিই বোধ হয় তার মনটা নরম করে দিল। সময়মতো শিলিগুঁড়ি পৌঁছে সামান্য কিছু কাজ সারতে হলো। তারপর টাউন সার্ভিস বাসে চলে গেলাম রাণীগঞ্জ ইমিগ্রেশন অফিসে। লেক সাইটের আকাশে সৌখিনদের  ওড়াউড়ি রাণীগঞ্জ ইমিগ্রেশন অফিস যেন টাকা খাওয়ার ফাঁদ পেতে বসে আছে। অমাদের ইন্ডিয়ান মাল্টিপল ভিসা, ট্রানজিট নয়। অফিসার সুযোগটাকে কাজে লাগালেন। জনপ্রতি হাজার রুপি খসানোর জন্য কৌশলে নানাভাবে আমাদের বিপদে ফেলার চেষ্টা করতে লাগলেন। টেবিল ক্লথের নিচ থেকে ট্রানজিট, মাল্টিপল ভিসার কপি দেখিয়ে দীর্ঘ বয়ান দিলেন। সোজা কথা, কাঙ্ক্ষিত ঘুষ না পেলে তিনি আমাদের ছাড়বেন না।  অথচ ঢাকাস্থ ইন্ডিয়ান ভিসা সেন্টার বেশ কয়েক বছর হলো নেপাল অথবা ভুটান কোনো দেশের জন্যই ট্রানজিট ভিসা ইস্যু করে না- এটা তাদের সম্পূর্ণ মনগড়া, লিখিত কোনো নীতি নয়। ২০১১ সাল থেকে একাধিকবার চেষ্টা করেও ভুটানে যাওয়ার জন্য ইন্ডিয়ান ট্রানজিট ভিসা পাইনি। এদিকে বর্তমানে তাদের দেশের সাধারণ ভিসার জন্যও অহেতুক হয়রানির শিকার হতে হয়। আগের মতো দুই টাকার ফর্ম কিনে জমা দেওয়ার পরিবর্তে নতুন নিয়ম প্রবর্তন করা হয়েছে। ইন্টারনেটে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে সাবমিট করলে স্বয়ংক্রিয় রিপ্লাইসহ আবেদনপত্র (ই-টোকেন) জমা দেওয়ার তারিখ জানিয়ে দিত। এতে বাড়তি অর্থ খরচ তো হতোই না, ঘরে বসেই কাজটি করা যেত। বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। ই-টোকেনের জন্য আবেদনকারীকে গুণতে হয় দুই থেকে তিন হাজার টাকা।  যেতে হয় নীলক্ষেতে কম্পিউটার অপারেটরের দোকানে অথবা স্থানীয় ট্যুর অপারেটরের নিকট। এ দেশের অনেকেই চিকিৎসা, ব্যবসা, পর্যটন বা নানান প্রয়োজনে ইন্ডিয়া ভ্রমণ করে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির মানুষ মোটা অঙ্কের টাকা লুটে নিচ্ছে। তাদের ভিসা সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে উল্লেখ আছে, আবেদনের জন্য কোনো ফি দিতে হয় না। অথচ ভিসা প্রার্থীদের সঙ্গে গরু ছাগলের মতো দুর্ব্যবহার করে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হয়। ভেবে অবাক হতে হয়, একটি দেশের পররাষ্ট্র-নীতি কতটা নতযানু হলে সে দেশের সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে এমন ব্যবহার করা যায়! ইন্ডিয়া ও নেপালের মাঝে মেসি নদীর উপর সেতু যাই হোক, প্রায় পঁচিশ মিনিট যুক্তিতর্ক ও দর কষাকষি করে এক হাজার রুপিতে শেষ রক্ষা হলো। আসলে এ জন্য কেবলমাত্র তাকে দায়ী করে লাভ নেই, দায়ি আমরা নিজেরাও। স্বপ্নের দেশ ইউরোপ-আমেরিকা পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যে দু-চারখানা ভিসা লাগিয়ে পাসপোর্ট ভারি করতে প্রতিদিন বহু বাংলাদেশী নেপাল যায়। সীমান্ত পার হয়ে কাকরভিটার কোনো হোটেলে পানাহার করে এক রাত ঘুমিয়ে পরদিন ফিরে আসে। নতুন একটি দেশে ঘুমানোও হলো, ভিসাও হালাল হলো। কিন্তু এ ধরনের লোকের জন্য সমস্যা হয় আমাদের। রাণীগঞ্জ থেকে কাকরভিটা প্রবেশ করতে প্রায় দুইশ মিটার দীর্ঘ একটা সেতু পার হতে হয়। মেসি নদীর উপর স্বল্প উচ্চতার সেতু। দুই দেশের শত শত মানুষ পায়ে হেঁটে, রিক্সায় ও মটর সাইকেলে অবাধে, অনায়াসে পারাপার করছে। ভিসা, ইমিগ্রেশন, সীমান্ত রক্ষী কোনো কিছুরই বালাই নেই। এক দেশের মানুষ অন্য দেশে ব্যবসা পর্যন্ত করছে। আগেরবার ২০০৬  সালে নেপাল গিয়ে যে বাসে কাকরভিটা থেকে পোখারা গিয়েছিলাম তার চালক কৃষ্ণ বিশ্বকর্মা ছিলেন ইন্ডিয়ার জলপাইগুঁড়ি জেলার নাগরিক। তখনই জেনেছিলাম  ১৫ বছর হয় তিনি নেপালে গাড়ি চালান। ইমিগ্রেশন অফিসারের কল্যাণে সীমান্ত পার হয়ে নেপালে প্রবেশ করতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। কাকরভিটা ইমিগ্রেশন অফিসে সেদিন আমরাই সর্বশেষ যাত্রী। ফি নিলেন দুইশ ইন্ডিয়ান রুপি। তারপর ছিল ছাপ্পর দিয়ে ছেড়ে দিলেন। এ যাবৎ যত জায়গায় টাকা দিলাম কোনটারই রিসিট পেলাম না, সুতরাং বুঝতে পারলাম না, কোনটা ঘুষ আর কোনটা ঘুষ নয়। এসব ঝামেলার কারণে কাকরভিটা থেকে পোখারাগামী দিনের সর্বশেষ বাসটা মিস করলাম। বর্ষায় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢল চব্বিশ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এক দেশ থেকে শুরু করে দ্বিতীয় একটা দেশের মাঝ দিয়ে তৃতীয় দেশে প্রবেশ করলাম। ইউরোপের দেশগুলোর ক্ষেত্রে এটা সম্ভব। বাধ্য হয়ে পর দিন ভোর চারটার বাসের টিকিট কাটতে হলো। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে বহু নেপালী শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।  পরিচয় হলো রংপুর মেডিকেল কলেজে পড়ুয়া দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে। পূজার ছুটিতে তারা দেশে বেড়াতে যাচ্ছে। কাকরভিটায় ট্রাভেল এজেন্সির দালালদের উৎপাত বেশি। ওদের দুজনের আন্তরিক সহযোগিতায় টিকিট কাটতে সমস্যা হলো না। রাতের খাবার বাইরে খেয়ে নিলাম ডাল, ভাজি ও সাদা ভাতের সঙ্গে পাপড় ভাজা এবং সালাদ দিয়ে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে হোটেলের ম্যানেজার জানালেন, নেপালে যদিও ইন্ডিয়ান মূদ্রার চল রয়েছে, তবে বর্তমানে এক হাজার ও পাঁচশ রুপির নোট নিষিদ্ধ। তিনি আমাদের সাবধান হতে বললেন এবং আমাদের চাহিদা মোতাবেক নোটগুলো নেপালি মূদ্রায় পরিবর্তন করে দিলেন। সেখানে বাংলা ভাষার মোটামুটি প্রচলন থাকায় আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২১-০১-০১৫:
Link copied!