AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বাংলাদেশের মাঠ পর্যায়ে ৫০০ আইএস সদস্য রয়েছে


Ekushey Sangbad

০৭:২০ পিএম, জানুয়ারি ২১, ২০১৫
বাংলাদেশের মাঠ পর্যায়ে ৫০০ আইএস সদস্য রয়েছে

একুশে সংবাদঃ মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তজার্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়ার (আইএসআইএস) বাংলাদেশের ‘সমন্বয়ক’সহ চার জঙ্গিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে দেশব্যাপী বোমা হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ডিবি।   চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে সারাদেশে বড় ধরনের সহিংসতা ঘটিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তোলার পরিকল্পনা ছিল এই জঙ্গিদের। তাদের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (ভিভিআইপি) ওপর হামলা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ মন্ত্রী-এমপিদের স্ত্রী-সন্তানও রয়েছে তাদের টার্গেটে।   এ ছাড়া সচিবালয়সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও পেট্রোলপাম্পে বোমা হামলা চালানোর ঘৃণ্য পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে জামায়াত-শিবিরকে সহযোগিতা করে ঢাকাকে অকার্যকর করার পরিকল্পনা করছে জঙ্গিরা। আইএস এর শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতায় দেশীয় জঙ্গি সংগঠন জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও হিযবুত তাহরীরের মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের কাজে লাগানো হচ্ছে। পাকিস্তানে অবস্থানকারী জেএমবির স্বঘোষিত আমির ইজাজ আহমেদের পরিকল্পনায় এমন আরো ভয়াবহ ছক কষে ইতোমধ্যে সংগঠিত আইএস মতাদর্শের জঙ্গিরা।   এ বিষয়ে ডিবির উপ-কমিশনার (ডিসি) শেখ নাজমুল আলম বলেন, ‘আইএসআইএস’র অর্থে মারাত্মক অস্ত্র সংগ্রহ করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে ক্ষতিসাধন, হুমকি সৃষ্টি ও খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই গ্রেপ্তার জঙ্গি সদস্যদের একমাত্র লক্ষ্য।’   তিনি আরো বলেন, ‘আইএস মূলত জেএমবির সক্রিয় সদস্যদেরকে নাশকতার কাজে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সাখাওয়াতুল কবির ২০০৬ সালে জেএমবি নেতা এজাজের হাত ধরে জেএমবিতে আসেন। সম্প্রতি পাকিস্তানে পুলিশের অভিযানে আইএস এর যে জঙ্গি নিহত হয় সেখানে চারজন বাংলাদেশি ছিল। সেখানে নিহত শামীম সাখাওয়াতুল কবিরের ভায়রা। আর এজাজ ওরফে কারগিল হচ্ছেন বর্তমানে জেলে থাকা মাওলানা সাঈদুর রহমানের মেয়ের জামাই।’   ডিবি সূত্র জানায়, গত রোববার যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকা থেকে চার জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরা হলেন, সাখাওয়াতুল কবির ওরফে কবির, আনোয়ার হোসেন ওরফে বাতেন, রবিউল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম। গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে সাখাওয়াত বাংলাদেশে আইএস এর প্রধান সমন্বয়ক বলে দাবি ডিবির। বাকি তিনজন তার সহকারী।   তাদের কাছ থেকে জিহাদি লিফলেট, জঙ্গি প্রশিক্ষণ ভিডিও, ৩টি ল্যাপটপ, ৮টি মোবাইল ফোন, ২টি সিপিইউসহ কম্পিউটার সরঞ্জাম, সাখাওয়াতুল কবিরের নামে ইস্যুকৃত পাসপোর্ট ও পাসপোর্টের ফটোকপি এবং পাকিস্তান দূতাবাসের ভিসার আবেদন উদ্ধার করা হয়। গত সোমবার থেকে আসামিদের পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।   গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে সাখাওয়াতুল কবির বাংলাদেশে আইএস এর সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর জন্য সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছিলেন। নজরুল ইসলাম ছিলেন অর্থের যোগানদাতা। অপর দুজন ছিলেন এ দুজনের সহযোগী।   সাখাওয়াত জিজ্ঞাসাবাদে ডিবিকে জানান, অনেক ভেবেচিন্তে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই তারা বোমা হামলার ছক করে সংগঠিত হচ্ছেন। তারা গ্রেপ্তার হলেও মাঠ পর্যায়ে এখনও কমপক্ষে পাঁচশ আইএস সদস্য রয়েছে। এদের বেশিরভাগ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা এমনকি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সদস্যও রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই তাদের আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্য।   দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটবে। এতে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হবে। আর এতেই স্বার্থ হাসিল হবে তাদের। ঠিক যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নাশকতা চালিয়ে অবস্থান নিয়েছে তারা। আর বাংলাদেশ আইএস সংগঠিত মূলত ‘জামায়াত-শিবিরের’ সহযোগিতায়। সেখানে জামায়াত শিবির তাদের সহযোগিতা করছে। তা ছাড়া বর্তমান সরকারের কারনে তাদের অনেক নেতা ও সদস্য দেশ ছাড়া। একই অবস্থা জামায়াতসহ তাদের মতাদর্শের লোকজনের।   ডিবি সূত্র জানায়, সাখাওয়াতুল কবির পাকিস্তানে আইএস-এর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং বর্তমানে বাংলাদেশের আঞ্চলিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় নাশকতা সৃষ্টি করে এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যা করে বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করা। যদি তারা এগুলোতে ব্যর্থ হন, তবে তারা তুরস্ক হয়ে সিরিয়াতে যুদ্ধ করতে যাবেন।   গ্রেপ্তার চার জঙ্গিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের তদারকি করছেন ডিবির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মাহফুজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা বাংলাদেশের নাগরিক হলেও তাদের মধ্যে কোনো দেশপ্রেম নেই। আইএস উগ্রবাদী সংগঠন হলেও তাদের ভাল লাগে। অন্যান্য দেশীয় জঙ্গি সংগঠনের পাশাপাশি উগ্রবাদী কিছু ইসলামি দলের সঙ্গেও আইএস এর শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের যোগাযোগ রয়েছে। এরা গোপনে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। সারাদেশেই তাদের মতাদর্শের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। একই সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে তারা নাশকতার সুযোগ খুঁজছেন।   র‌্যাব ও গোয়েন্দাদের তথ্যমতে, জেএমবিসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সহস্রাধিক সদস্য পলাতক রয়েছেন। সরকারের কঠোর অবস্থান আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের ফলে তারা কিছুটা পিছু হটে গেলেও এখন তা সামাল দিয়ে আবার নতুন কৌশলে সামনে এগুতে শুরু করেছেন। তাদের দল ও নেতারা ভিন্ন ভিন্ন হলেও নিজেদের অস্তিত্ব ঠিক রাখতে আর উদ্দেশ্য হাসিল করতে তারা এখন অভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।   পাকিস্তান ও আফগানিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তারা গোপনে সদস্য বাড়ানোর পাশাপাশি বোমা, বিস্ফোরক মজুদ করে রেখেছেন। গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা নাশকতা চালানোর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক হটকারিতার সুযোগে তারা সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। আনসারুল্লাহ জঙ্গিদের বিস্ফোরক বহনে সক্ষম কোয়াড হেলিকপ্টারের (ড্রোন) মতো রিমোট কন্ট্রোল চালিত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে জঙ্গিরা নাশকতার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে বলেও তথ্য রয়েছে।   গত একবছর ধরে শুধুমাত্র ঢাকা থেকেই বেশ কয়েকজন জঙ্গি সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে গতবছরের ২৮ সেপ্টেম্বর কমলাপুর রেলস্টেশনে সামিউন রহমান ইবনে হামদান নামে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটশ নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়, যার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে মামলাও হয়েছে। মামলায় বলা হয়েছে, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সদস্য সংগ্রহ করে সিরিয়ায় পাঠানোর জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন হামদান।   বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে আল-কায়েদা নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং বাংলাদেশে ইসলামি শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তন করাও তার উদ্দেশ্য ছিল। এ ছাড়া ইসলামিক স্টেটের জন্য অনলাইনে সদস্য সংগ্রহের অভিযোগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টন এলাকা থেকে হিফজুর রহমান নামের ২২ বছর বয়সী আরেক জঙ্গি সদস্যকে আটক করা হয়।   এরপর পর্যায়ক্রমে সিলেটের শাহজালাল উপ-শহর এলাকার সরকারি তিব্বিয়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হিফজুর, ওই সময়ই রাজধানীর সেগুনবাগিচা ও রমনা এলাকা থেকে আসিফ আদনান ও ফজলে এলাহী তানজিল আটক হন। আদনান ও তানজিল উগ্রপন্থী সংগঠন ‘আনসারুল্লাহ বাংলাটিম’ এর সদস্য হলেও আইএস এর হয়ে তারা সে সময় কাজ করছিলেন। গত বছর থেকেই বাংলাদেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় ইসলামিক স্টেট’র জঙ্গিরা।   আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সদস্য সংগ্রহ করে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে উগ্রপন্থী ইসলামিক সংগঠন আইএস। তাদের মধ্যে বিশ্বের অন্তত ৮০টির বেশি দেশের ১৫ হাজারেরও বেশি ‘যোদ্ধা’ রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা।   বিভিন্ন দেশ থেকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সদস্য সংগ্রহ ঠেকাতে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে ব্যবস্থা নেয়ার তাগাদা দিয়ে গত বছর একটি প্রস্তাবও পাস করে নিরাপত্তা পরিষদ। ইরাকের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধ করার অভিযোগ রয়েছে এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি কয়েকজন মার্কিন ও ব্রিটিশ নাগরিকের শিরশ্ছেদ করে ইন্টারনেটে তার ভিডিও প্রকাশ করে আইএস।   এদিকে বাংলাদেশের ডিবির দাবি, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সাখাওযাতুল জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বাংলাদেশ প্রতিনিধি ও সমন্বযকের কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। অন্যদের মধ্যে আনোয়র হোসেন বিস্ফোরক রাখার অভিযোগে তিন বছর কারাভোগ শেষে কিছুদিন আগে জামিনে বের হন। গ্রেপ্তার অপর জঙ্গি সদস্য নজরুল জঙ্গি কর্মকাণ্ডের অর্থের যোগানদাতা।   প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাখাওয়াতুল কবির ডিবির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তারা আইএসের হয়ে কাজ করেন। আইএসের কাছ থেকে অর্থ, বোমা ও অস্ত্র সংগ্রহ করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ওপর হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন। ইসলাম বিরোধীদের (কথিত নাস্তিক) ক্ষতি করা, হুমকি ও খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই তার লক্ষ্য।   সম্প্রতি পাকিস্তানি পুলিশের আইএসবিরোধী অভিযানে সাখাওয়াতুল কবিরের ভায়রা শামিম আহম্মেদ এবং আনোয়ার হোসেনের বোনের স্বামী সায়েম মারা গেছেন।   একুশে সংবাদ ডটকম/সংগ্রাম/২১.০১.১৫।
Link copied!