AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

সংলাপের মাধ্যমেই দুঃসময়ের অবসান ঘটাতে পারে


Ekushey Sangbad

১২:২১ পিএম, জানুয়ারি ২৫, ২০১৫
সংলাপের মাধ্যমেই দুঃসময়ের অবসান ঘটাতে পারে

একুশে সংবাদ : চলমান টানা অবরোধের ফলে দেশ অচল হতে চলেছে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সড়ক পরিবহন যোগাযোগ ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কমে গেছে। রেল যোগাযোগেও অচলাবস্থা বিরাজ করছে। নদীপথে যোগাযোগ তেমন ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও লঞ্চের কেবিনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর জলপথে যোগাযোগও হুমকির মুখে পড়েছে। ঢাকায় কৃষিপণ্য আসা বাধাগ্রস্ত হওয়ার ফলে শাকসবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর পাশাপাশি কৃষকরা, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিসামগ্রী বাজারজাত করতে না পারার ফলে তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম পড়ে গেছে। কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হতে পারছে না। অভিভাবকরা সন্তানসন্ততিদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। এরই মধ্যে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় অনেক অভিভাবকই তাদের পোষ্যদের স্কুল-কলেজে পাঠাচ্ছেন না। মোটকথা, দেশের অর্থনৈতিক জীবন ভেঙে পড়ার উপক্রম। বাংলাদেশে এ অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এবং জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের সহযোগিতামূলক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যে অবরোধ, হরতাল ও অসহযোগ আন্দোলন হয়েছিল, তাতেও দীর্ঘ তিন মাস ধরে দেশ অচল হয়ে পড়েছিল। তখনও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা যে ধারা লক্ষ্য করি, তাতে যতই দিন যায় ততই অপরাজনীতি, দুর্নীতি এবং কুশাসন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। অর্থাৎ আমরা যেন খারাপ কাজের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছি। এ প্রতিযোগিতায় কারা বেশি অবাঞ্ছিত কার্যকলাপ করছে, সেই বিতর্ক নিরর্থক। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, স্বাধীনতার ৪৩ বছরেও আমরা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান আদর্শ গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারিনি। এদেশে নির্বাচন হয়, তাতে এই দল বা ওই দল জয়ী হয়। কিন্তু ক্ষমতার আসনে বসার পর সুশাসনের কথা বেমালুম ভুলে যাওয়া রীতিতে পরিণত হয়েছে। এ জন্য অনেকে অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নিছক নির্বাচনের গণতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। সেই নির্বাচনী গণতন্ত্রও এখন সঙ্কটাপন্ন। ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বেশিরভাগ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। ওই দলগুলোর মধ্যে বিএনপিও রয়েছে। দল হিসেবে বিএনপি বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের একটি। যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, তাদের প্রায় সবারই আশঙ্কা ছিল বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে নির্বাচন কোনোক্রমেই অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয় তার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা সংবিধান সংশোধন করে প্রবর্তন করা হয়েছিল। কিন্তু এ ব্যবস্থাও সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ফলে বিলুপ্ত হয়ে যায়। যদিও সংবিধান সংশোধনী সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা একক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এ প্রস্তাব নাকচ করে দেন। ফলে তার অভিপ্রায়ই সংবিধান সংশোধনের জন্য চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। শেষ পর্যন্ত সংবিধানে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকল না। ২০০৬-এর শেষ এবং ২০০৭-এর শুরুতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে লক্ষ্যচ্যুত করার অভিযোগে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগও লগি-বৈঠার সহিংস আন্দোলন করেছিল। পরিণতিতে এলো সেনাসমর্থিত অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ সরকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার সীমা অতিক্রম করে দুই বছর ক্ষমতায় থাকল এবং রাজনীতিকদের জীবন, জেল-জুলুম ও মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে অসহনীয় করে তুলল। সামরিক হেফাজতে সিনিয়র রাজনীতিকদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে হেনস্তা করা হয়েছিল। দুই প্রধান নেত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা কারারুদ্ধ হয়েছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগেও মামলা দায়ের করা হয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এ ধরনের একটি অসাংবিধানিক সরকার যখন জবরদস্তিমূলকভাবে ক্ষমতা দখল করে, তখন বর্তমান সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এ সরকার তাদের আন্দোলনের ফসল। যা হোক, এসব পুরনো কথা। পেছনের দিকে তাকালে আমরা সামনে এগোতে পারব না। অতীতে সবারই ভুলভ্রান্তি হয়েছে। যেগুলো পর্যালোচনা করে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলা কাম্য নয়। বর্তমান সঙ্কটের কারণ, দেশে সত্যিকার অর্থে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেনি বা প্রয়োগ করতে পারেনি। ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। এ পরিস্থিতি নৈতিকতার মানদন্ডে গ্রহণযোগ্য ছিল না। এ কারণেই বর্তমান সঙ্কটের উদ্ভব। সংসদের বাইরে থাকা প্রধান বিরোধী দল পুরো এক বছর নীরব থেকেছে। তারা কোনো ধরনের আন্দোলনের পথে যায়নি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন- এ নির্বাচন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার নির্বাচন। আলাপ-আলোচনা করে আরেকবার নির্বাচনের আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু এক বছর সময়েও এ বিষয় নিয়ে কোনো বাক্য উচ্চারিত হয়নি। বরং সরকারি দলের নেতারা আন্দোলনের ক্ষমতা নেই বলে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেছিল। এসব ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে অনেক অশালীন বাক্যও উচ্চারিত হয়েছে। বিএনপি এ সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১১টি সফল জনসভা করেছে। কিন্তু সমস্যা দাঁড়িয়ে গেল গাজীপুরের সভা নিয়ে। তারপর তারা যখন ৫ জানুয়ারি ২০১৫ ঢাকায় সমাবেশ করতে চেয়েছিল, সে সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি বা সমাবেশটি কীভাবে হতে পারে, সে ব্যাপারেও কোনো সমঝোতা সৃষ্টির প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়নি। উল্টো খালেদা জিয়াকে তার রাজনৈতিক অফিসে অবরুদ্ধ করা হলো। তাকে অবরুদ্ধ করার চিত্রই ছিল অসম্মানজনক এবং রুচিবিবর্জিত। এ থেকেই বর্তমান পরিস্থিতির উদ্ভব। এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক- এটা কারোরই কাম্য ছিল না। কিন্তু গণতান্ত্রিক স্পেস দারুণভাবে সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ার ফলে বর্তমান পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে। খালেদা জিয়া বিদ্যমান সঙ্কটের আগ মুহূর্তে সঙ্কট মোচনের জন্য সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং এ প্রস্তাব নিয়ে সংলাপেরও আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার সেই প্রস্তাব তাৎক্ষণিকভাবে শাসক দল প্রত্যাখ্যান করেছিল। ৫ জানুয়ারিতে বিরোধী দলের সভা যাতে না হতে পারে, তার জন্য সরকার পক্ষই ঢাকার সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ, যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছিল। এটা ছিল সরকার আরোপিত অবরোধ। সরকার আয়োজিত অবরোধ কার্যকর করার জন্য প্রশাসনই যথেষ্ট এবং তাই করা হয়েছিল। এখন অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, দেশজুড়ে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এ সহিংসতা কারা করছে তা নিয়েও বিতর্ক চলছে। অন্য দিকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের ঘটনাও ঘটছে। অর্থাৎ এক দিকে ক্ষমতাবহির্ভূতদের সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া এবং অন্য দিকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। মাঝখানে জনগণের নাভিশ্বাস। এ যখন পরিস্থিতি তখন সরকার মনে করছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। কিন্তু মনে রাখা দরকার, পৃথিবীর কোথাও রাজনৈতিক সমস্যাকে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা বলে সমাধান করা যায়নি। সর্বশেষ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের কথাও সংসদে আলোচিত হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করলে সংলাপের মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানের ক্ষীণতম সম্ভাবনাটিও হারিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে একজন রাজনীতিবহির্ভূত মানুষ হিসেবে সবাইকে সংযত হওয়ার আবেদন জানাতে পারি মাত্র। এর বেশি কিছু করার সুযোগ আমাদের নেই। সহিংসতা ও নাশকতা উসকে দেয় এমন খবর প্রচার না করতে দেশের বেসরকারি টেলিভিশনের মালিক এবং প্রতিনিধিদের পরামর্শ দিয়েছে সরকার। চ্যানেলগুলোর প্রতিনিধিরাও এ বিষয়ে সরকারকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ খবরটি দেখার পর মনে হয়েছে, আমাদের দেশের মিডিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে আত্মহত্যা করার আহ্বান মেনে নিয়েছে। এটাই যদি পরিস্থিতি হয় তাহলে বিটিভির সঙ্গে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের কোনো পার্থক্য থাকবে না। প্রশ্ন হলো, সহিংসতা ও নাশকতা উসকে দেয় এমন খবরের সংজ্ঞা কী হবে? কে এর মানদ- নিরূপণ করবে? এ সিদ্ধান্ত মানতে হলে দেশ একটি গুজবের দেশে পরিণত হবে। ফলে সঙ্কট আরও তীব্র হবে। এ ছাড়া সঠিক খবর শুনে নাগরিকরা তাদের চলাচল করার বিষয়ে যে সাবধানতা অবলম্বন করতে পারত, তাও এখন সম্ভব হবে না। ফলে নাগরিকজীবন আরও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে। মনে হচ্ছে, পরিস্থিতি সামাল দেয়ার নামে সরকার একের পর এক ভুল করে চলছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ ও দেশের জনগণ। মানুষকে খাঁচায় বন্দি করা হলে তাদের মধ্যে খাঁচা ভাঙার জন্য প্রবণতা তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। পরিস্থিতি শ্বাসরুদ্ধকর হলে শ্বাস নেয়ার জন্য যে কোনো ধরনের রক্তারক্তির ঘটনা ঘটতে পারে। সুতরাং বিরোধীপক্ষের কোনো ইস্যু নেই বলে বর্তমান পরিস্থিতিকে ভিত্তিহীন প্রমাণ করার প্রয়াস ফলপ্রসূ হবে না। দেশের মানুষ চায় আলাপ-আলোচনা করে কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, সে পথেই সরকার ও সরকারি দল অগ্রসর হোক। সহিংসতা আমাদের কারোরই কাম্য নয়। প্রকৃত সহিংসতাকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করা নিয়ে কারোরই আপত্তি নেই। কিন্তু এটা করতে গিয়ে রাজনৈতিক বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াসও অনুমোদনযোগ্য নয়। তার ফলে সঙ্কট আরও ঘনীভূত হবে। এ নিয়ে কারোরই কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়। মাহবুব উল্লাহ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৫-০১-০১৫:
Link copied!