AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

শর্শায় কুল চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছে কৃষকেরা


Ekushey Sangbad

০৩:২২ পিএম, জানুয়ারি ২৫, ২০১৫
শর্শায় কুল চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছে কৃষকেরা

একুশে সংবাদ : বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউটের (বারি) উদ্ভাবন করা কুল চাষ বদলে দিয়েছে যশোরের শার্শা উপজেলার অনেক যুবক-যুবতীর ভাগ্য। চার মাসের ফসলে বিঘায় লাখ টাকার স্বপ্নে বদলে গেছে তাদের জীবনধারা।পাল্টে গেছে আর্থ-সামাজিক পেক্ষাপট। পাঁচ শতাধিক পরিবারে ফিরেছে  স্বচ্ছলতা। সবমিলিয়ে কুল চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছে মানুষ। এমনই এক স্বাবলম্বী কৃষকের নাম খোরশেদ আলম (৪৫)। খোরশেদ আলম কুল চাষ করেই জীবন-জীবিকার নজরকাড়া যে মান অর্জন করেছেন, তা অনুপ্রাণিত করবে অন্যদের। শার্শা উপজেলা জুড়েই এখন কুলচাষ করা হয়। এমন কোনো এলাকা নেই, যেখানে এ চাষ করা হয় না। তবে বেনাপোল, বাগআঁচড়া, উলাশি, শার্শা, কায়বা ইউনিয়নের মাঠে কুলচাষ বেশি নজরে পড়ে। শার্শার, কাগজপুকুর, উলাশি, নাভারন, হাড়িখালি, বাগআঁচড়া বেলতলা বাজারে চলে মৌসুমী কুলের বেচাকেনা। এখানে আছে অনেকগুলো কুলের আড়ত। প্রতিদিন ওইসব আড়ত থেকে অন্তত দুই ট্রাক কুল যায় ঢাকা বরিশালের ফল বাজারে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউটের (বারি) উদ্ভাবন করা আপেলকুল, বাউকুল ও ঢাকা-৯০ জাতের কুল চাষ করে শার্শার কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের রেক্সনা খাতুন, শ্যামলাগাছির মনি বেগম, গাতিপাড়ার আহসান হাবিব, গোগার সহিদুল ইসলাম, গাতিপাড়ার সফিউদ্দিন সাফল্যের শীর্ষে উঠেছেন বলে শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার জানিয়েছেন। দ্বিতীয় শস্য বহুমুখিকরন প্রকল্পের আওতায় প্রদশর্নী প্লটের মাধ্যমে মনি বেগম এক বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছেন। স্বামী শহিদুল ইসলাম একজন রাজমিস্ত্রি। স্বামীর প্রতিদিনের আয় ৩শ’টাকা। ওই টাকা আয় করে চার জনের সংসারে সবসময় ছিল অশান্তি। সরকারের সহায়তায় কুল চাষ করে আজ আমাদের সংসারে শান্তি ফিরেছে বলেন মনি বেগম। তিনি বলেন, এপর্যন্ত ৩৫ হাজার টাকার কুল বিক্রি করেছি। এখনও ৫০/৬০ হাজার টাকার কুল বিক্রির আশা করছি।“এ বছর খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। আল্লায় দিলে ১০ বছর আর বড় কোন খরচ নেই বাগানে। এখন বছর বছর শুধু টাকা আসবে। শার্শায় পাঁচ শতাধিক কুলচাষি অন্তত হাজার বিঘা জমিতে কুলচাষ করেছেন বলে শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ উপজেলার ৭০হেক্টর (৫৬০ বিঘা) জমিতে তাদের দেখিয়ে দেওয়া নিয়মানুযায়ী কুলের চাষ হয়েছে। ওদেরকে কৃষিবিভাগ বিভিন্ন পরামর্শ ও সহায়তা করে আসছে। ব্যাক্তিগত উদ্যোগেও অনেকে কুল চাষ করেছেন। চার মাসের ফসল কুল। অক্টোবরের শেষে কুল তোলা শুরু হয়। চলবে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। উপজেলায় কুল চাষির সংখ্যা ৫ শতাধিক। কুলচাষ বিষয়ে আলাপ হয় কুলচাষি খোরশেদ আলমের সাথে। তিনি উপজেলার সামটা গ্রামের খোদাবক্স মোড়লের ছেলে। উলাশির কাঠুরিয়া মাঠে তার কুল বাগান দেখে চোখ ফেরানোই দায়। গোটা বাগানজুড়ে বাউকুল, আপেলকুল ও নারকেলকুল তারকা পুঞ্জের মতো ছেয়ে আছে। স্বল্প উচ্চতার গাছগুলো সইতে পারছে না ধরন্ত কুলের ভার। অনেক স্থানে নুইয়ে পড়েছে গাছ। বাউকুল পুরোপুরি পুষ্ট হয়ে গেছে। আকারও বেশ বড় বড়। আপেল কুল এখনো পুষ্ট হয়নি। সেগুলো অনেকটা বাদামি ও খয়েরি রঙের মিশ্র বর্ণ পেয়েছে। খোরশেদ বললেন, পুষ্ট হলে এগুলো সাদা হয়ে যাবে। আর নারকেলকুল তীব্র শিতের কারনে এখনো অপুষ্ট রয়েছে। তিনি জানান, এ বছর ৮ বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছেন। বর্তমানে তার বাগানের সংখ্যা ৩ টি। বিগত ১০বছর তিনি সফলভাবেই কুলের চাষ করে আসছেন। ভালো ফলনের জন্য নিয়মিত সেচ ও সার দিতে হয়। বাগান নিয়মিত পরিচর্যার জন্য ৬/৭জন লোক রাখার পাশাপাশি ব্যাপক শ্রম দিতে হয়। বিঘা প্রতি সবমিলিয়ে খরচ পড়ে প্রায় ৩০/৩২ হাজার টাকা। আর ফলন পাওয়া যায় ৯০হাজার থেকে এক লাখ টাকা। এবছর তার ৮বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে আড়াই লাখ টাকার কিছু বেশি। প্রথম বছর তাই খরচ একটু বেশি। দ্বিতীয় বছর থেকে খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। মৌসুম শেষে তিনি বিক্রি করে পাবেন ৮লাখ টাকা। ৩/৪ লাখ টাকা তিনি লভ্যাংশ পাবেন বলে আশা করছেন। এ মৌসুমে ইতোমধ্যে ঢাকা ও বরিশালের ফলের আড়তে ট্রাকযোগে কুল পাঠানো শুরু করেছেন। একই মাঠে কথা হয় কুলচাষি আব্দুল জব্বার ও আব্দুল আহাদের সাথে। জব্বার বলেন,“এই মাঠে এবছর নতুন করে ১১ বিঘা জমিতে কুল গাছ লাগাইছি। একদিন বাদে ৪শ’ কেজি করে কুল পাচ্ছি। প্রতিকেজি কুল বিক্রি করছি ৮০/৯০ টাকায়।” প্রতি বিঘায় এক লাখ টাকার কুল বিক্রি করার আশা করছেন তিনি। ছোট আঙ্গিকে শুরু করা কুলচাষি খোরশেদ আলমকে নিয়ে গেছে এক অন্য উচ্চতায়। কুলচাষ তার স্বাবলম্বিতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। একটি কুলবাগান দিয়ে পথচলা শুরু করে ৩টি বাগান সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। নিজে স্বাবলম্বী হয়ে পথ দেখাচ্ছেন অন্যদেরও। শার্শার নাভারন-সাতক্ষীরা সড়কের হাড়িখালি মোড়ে “বিমিল্লাহ ফলভান্ডারের” মালিক খোরশেদ। ৪৫জন কুলচাষি তার মাধ্যমে ঢাকা ও বরিশালে ফল পাঠায়। বুধবার ১০০কার্টুনে ৬হাজার কেজি কুল ঢাকার বাবুবাজারের ‘ইমতিয়াজ এন্টারপ্রাইজের’ নামে পাঠাতে দেখা গেল। খোরশেদ আলম এর মতো কুলচাষিকে অনুসরন করে শার্শা উপজেলায় ৫ শতাধিক কুল চাষি নিজেরাই নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করে তুলছে। সরকারি প্রশিক্ষন ও ক্ষুদ্রঝন সহায়তা পেলে সকল কুল চাষি আত্মনির্ভরশীল হতে পারেন। আর ওরাই আমাদের গোটা অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করতে পারবে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৫-০১-০১৫:
Link copied!