বন্দর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে সিবিএ'র আন্দোলন
একুশে সংবাদ : জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠার পর চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনে যাচ্ছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা।
সরকারি পদে থেকে সরকার বিরোধীদের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগে আগামী সপ্তাহে আন্দোলন শুরু হবে বলে সিবিএ সূত্রে জানা গেছে। এরই মধ্যে বন্দর চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবিতে প্রাথমিকভাবে একদফা সমাবেশও করেছে শ্রমিক-কর্মচারীরা।
গত বৃহস্পতিবার(২২ জানুয়ারি) সংসদ সচিবালয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে অভিযুক্ত দল জামায়াতে ইসলামী’’র সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলে কমিটি।
বৈঠকে কমিটির সদস্যরা বন্দরের যন্ত্র সামগ্রী কেনাকাটা, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা ও সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে কমিটির পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন সংসদ সদস্যরা।
বৈঠকের পর ‘চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ হয়। ওই সংবাদটি চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ও জাতীয় কয়েকটি পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশ করে। এ নিয়ে বন্দর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
এদিকে বন্দর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছে বন্দর রক্ষা পরিষদ। বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মের তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সর্বশেষ বন্দর উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকেও চেয়ারম্যানের দুর্নীতির তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ব্যবস্থা না নিলে আন্দোলনে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।
এরমধ্যে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সবচেয়ে গুরুতর যে অভিযোগটি করেছেন সেটি হলো বন্দর চেয়ারম্যান বর্তমানে জামায়াত-বিএনপির সমর্থনে কাজ করছেন। সম্প্রতি লন্ডন ভ্রমণে গিয়ে জামায়াত ইসলামীর লন্ডন শাখার নেতা মাহবুব আলম, আফজাল মিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী সপ্তাহ থেকে আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদ’’র (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল্লাহ সরকার বলেন, সরকারের উচ্চ পদে থেকে জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক করবেন এটা মেনে নেওয়া যায় না। তাকে আর বসতে দেওয়া হবে না।
আন্দোলনে শুরু করতে বন্দর রক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন জানিয়ে ওয়াহিদুল্লাহ সরকার বলেন, শ্রমিক-কর্মচারীরা এরই মধ্যে সভা-সমাবেশ করেছে। আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হবে।
বন্দর চেয়ারম্যানকে জাতীয় বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত করে তাকে অপসারণের দাবিতে শ্রমিক-কর্মচারীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে জানিয়ে সিবিএ সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী মিন্টু বলেন, সামরিক আইনে চেয়ারম্যানের বিচারের দাবিতে বন্দর ভবন ঘেরাও করা হবে। পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে। স্বাধীনতা বিরোধী মোনাফেক চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চাই।
মিন্টু বলেন, বিভিন্ন সময়ে চেয়ারম্যানের অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারাই কথা বলেছেন তারা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। এমনকি চাকরিও হারিয়েছেন।
চেয়ারম্যানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় বর্তমানে তিনিসহ দুইজন চাকরিচ্যুত রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কমিটি তদন্তে নির্দোশ প্রমাণিত হওয়ার পরও আমাদের চাকরি ফিরিয়ে দিচ্ছেন না।
এর আগে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বন্দর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তিনটি জাহাজ ক্রয়ে ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। অভিযোগে বলা হয়, সকল নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে ১৮-২০ বছরের পুরনো ২০ কোটি টাকার জাহাজ কিনে ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তার ভাইরা ভাই জিয়াউল হক চিশতির মাধ্যমে ক্রয় করেছেন। এছাড়া একই কোম্পানিকে বিনা টেন্ডারে জাহাজ ম্যানেজম্যান্ট নিয়োগ করা হয়েছে।
বন্দরের টাকায় বিদেশ সফর করেছেন। এছাড়া অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রেক্ষিতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের শিপিং বিভাগ থেকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আরো বেশ কিছু প্রকল্পে দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৬-০১-০১৫:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :