শেষ রক্ষার চেষ্টায় গ্রামবাসীর ভিটেমাটি
একুশে সংবাদ : প্রতিবারই বন্যায় নদীর তীব্র খড়স্রোতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শতশত ঘরবাড়ি আর ফসলি জমি। ভাঙনে অনেকের মাথা গোজার শেষ সম্বল টুকুও হারাতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে তাদের স্বপ্নও। কিন্তু প্রান্তিক এ মানুষগুলোর ভিটেমাটি রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। তাই অবশেষে নিজেদের ভিটেমাটি নিজেরাই রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছেন ভাঙন কবলিত গ্রামবাসী।
এমনই উদ্যোগ নিয়েছে ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমর নদীর অববাহিকায় অবস্থিত কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ভাঙন কবলিতরা।
গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে নদী ভাঙন রোধে শুকনো মওসুমেই ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমর নদীতে বাঁশের বেড়া ও বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ নির্মাণ করছেন। এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হলে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে বলে মনে করছেন তারা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমর নদীর অববাহিকায় অবস্থিত কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন। গত ৩ বছরের অব্যাহত ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয় ইউনিয়নের দুই হাজার ঘরবাড়ি ও ৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো সর্বস্ব হারিয়ে এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
নদীর অব্যাহত ভাঙন রোধে সরকার কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়ায় এবারও বর্ষা মওসুমে ভাঙনের মুখে পড়েছে ইউনিয়নের যাত্রাপুরহাট, ফারাজীপাড়া, বলদীপাড়া, গারুহারা, পারবতীপুর ও চর যাত্রাপুরগ্রামসহ আরও কয়েকটি গ্রাম।
তাই নিরুপায় হয়ে ভাঙন ঠেকাতে অবশেষে নিজ উদ্যোগেই মাঠে নেমেছে আতঙ্কিত গ্রামবাসী। কেউ বাঁশ আবার কেউ অর্থ দিয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তনে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের বেড়া ও বালুর বস্তা ফেলে বাধ নির্মাণের কাজ শুরু করছেন তারা।
এদিকে গ্রামবাসী এ কাজে সম্পৃক্ত করেছেন সরকারি কর্মকর্তাসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে। সম্প্রতি নদী পাড়ে এ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এলাকাবাসীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষও।
ভাঙন কবলিত একাধিক গ্রামবাসী বলেন, ‘নদীর গতিপথ পরিবর্তনে বাঁশের বেড়া ও বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে নিজেদের শেষ সম্বল টুকু বাঁচানোর চেষ্টা করছি। সবার সহযোগিতায় বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ করা গেলে আগামী বন্যায় নদীর গতি পথ পরিবর্তন হলে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।’
সূত্র জানায়, যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অব্দুল গফুর, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমর নদীর ভাঙন রোধে বহুবার স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তাই এবার স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙন রোধের এ ব্যবস্থা নিতে এলাকাবাসীর সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদকে সমপৃক্ত করে বাঁশের বেড়া ও বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে।
বাঁধ নির্মাণস্থল পরিদর্শনে গিয়ে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার ডা. তবারক উল্ল্যা বলেন, ‘বাঁশ, গাছ, অর্থ ও স্বেচ্ছা শ্রমদিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার এমন নজির চোখে পড়ে না। তাই সরেজিমেনে দেখতে এখানে এসেছি। শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে দেশের সাধারণ মানুষ সকল ক্ষেতে ভালো কাজে এভাবে এগিয়ে এলে দেশে খুব দ্রুত উন্নতি হবে।’
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক এবিএম আজাদ জানান, এই উদ্যোগটি দেশের সাধারণ মানুষের জন্য একটি অনন্য উদাহরণ হতে পারে। এতে করে যাত্রাপুর ইউনিয়নের মানুষ ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২৬-০১-০১৫:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :