AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

পয়সা দিয়ে বই ছাপানো সম্মানজনক মনে করি না : মইনুদ্দীন খালেদ


Ekushey Sangbad

০১:০৮ পিএম, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৫
পয়সা দিয়ে বই ছাপানো সম্মানজনক মনে করি না : মইনুদ্দীন খালেদ

একুশে সংবাদ : মইনুদ্দীন খালেদ স্বনামধন্য শিল্প সমালোচক। শিল্পকে শুধু দেখা বা বিশ্লেষণাত্মক সমালোচনার দিকে নয়, শিল্প ও শিল্পীর ইতিহাসের প্রতি তার সমান আকর্ষণ। শিল্পের স্বরূপ সন্ধানে ঘুরেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ও মিউজিয়ামে। সৃষ্টিকে শিল্পমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার পাশপাশি তার সংকট নিয়েও তিনি ভাবেন। একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত বই, দেশের প্রকাশনা শিল্প ইত্যাদি বিষয় উঠে এসেছে তার সঙ্গে এই আলাপচারিতায়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন অলাত এহসান। একুশে গ্রন্থমেলায় আপনার একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বইটির বিষবস্তু কী? মইনুদ্দীন খালেদ: গত চৌদ্দ-পনের বছরে আমি আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গিয়েছি, বিভিন্ন মিউজিয়াম ভ্রমণ করেছি। এই বিষয়গুলো লিখেছিলাম। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তার কিছু প্রকাশিতও হয়েছে। সেই লেখাগুলো নিয়েই এ বই। ভ্রমণ ও শিল্পপ্রধান, গ্যালারি ও মিউজিয়ামের বর্ণনা এতে রয়েছে। বইটি নাম ‘ঘুড়ি শিল্পালয়ে’। আপনার আরো কিছু বই রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কোনটিকে আপনি এই মুহূর্তে সামনে আনতে চান? মইনুদ্দীন খালেদ : এর আগে আমার যে চারটি বই বেরিয়েছি সেগুলো আর্টের ওপর। এই চারটি বইয়ের একটিও এখন বাজারে নেই। এগুলো পুনরায় প্রকাশে আমি আগ্রহীও নই। তার কারণ হচ্ছে, আমাদের বইয়ের প্রফেশনাল দিকটা খুবই অসম্মানজনক। আমাদের দেশে নানা রকম ব্যবসা আছে বই ঘিরে। এই ব্যবসাটা খুব সুন্দর নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, দু-একটা প্রকাশনী ছাড়া, বেশির ভাগগুলোতে লেখকদের সম্মানজনক সম্মানী দেওয়া হয় না, বা আদৌ কোনো সম্মানী দেওয়া হয় না। তা ছাড়া অনেক লেখক পয়সা দিয়ে নিজের বই ছাপাচ্ছেন। অনেক রকম কিছু হতেই পারে। তবে এ ভাবে পয়সা দিয়ে বই ছাপানো আমি লেখকের জন্য সম্মানজনক মনে করি না । হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন। প্রতিবছর গড়ে চার হাজার বই মেলায় প্রকাশিত হচ্ছে, এই মেলা নিয়ে আপনার মন্তব্য কী? মইনুদ্দীন খালেদ : মেলার বড় সমস্যা হচ্ছে, আপনি দেখছেন মেলায় একটা মাইক লাগনো হয়েছে। এমন প্রতিবছরই হয়। এটা কান কতটুকু গ্রহণ করতে পারছে, তা বিচার করা হচ্ছে না। মানুষ বইয়ে কনসেনট্রেট করতে পারবে না এতো লাউড! কোন লেখকের কোন বই, কোন প্রকাশনী, মূল্য কত তা বলা হচ্ছে। অর্থাৎ আপনি ইনফরমেশন দিতে চাচ্ছেন। তা হলে এতো লাউড হবে কেন, সফট হওয়া দরকার ছিল। আরেকটা জিনিস হচ্ছে, বই প্রকাশ হচ্ছে কিন্তু বইয়ের আর্ট কিন্তু নেই আমাদের দেশে। যেমন আমরা একটা প্রকাশনীতে ঢুকলে কেবল বুঝতে পারবো এটা এই প্রকাশনীর বই। এটা হাতে নিয়ে বোঝার উপায় নেই। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলা একাডেমির দুই-একটা বই ছাড়া, মনে রাখতে হবে এটা বাংলা একাডেমি, যাকে জাতির মননের প্রতীক বলছি, তাদের বই অত্যন্ত ধূসর ছাপা। আমি তাদের লেখক চরিতাভিধান দেখছিলাম, তাতে ছবির অবস্থা এতো খারাপ যে, লেখকের ছবি দিয়ে একজন মানুষকে চেনাই যায় না। ছাপা অত্যন্ত নিন্মমানের। বাংলা একাডেমি এটা বহু বছর ধরেই করছে। তারা কবে সুন্দর ছাপবে, আমি জানি না। তা নিয়ে হয়তো অনেকে অনেক কথা বলবে যে, নানা ভাবে ছাপা হয়। কিন্তু এগুলো কোনো কথা না। একটা জাতীয় প্রতিষ্ঠান এ কথা বলে পার পেতে পারে না। টেক্সট যত ভালো দেই না কেন, ছাপা ভালো না হলে পড়তে পারবে না। মানে বাংলা একাডেমির বই সবচেয়ে বাজেভাবে ছাপা হয়। আমি যতই বলি না কেন, এটা গবেষণা, এটা অন্য কোনো প্রকাশনী বের করেনি, বাংলা একাডেমি করেছে- এটাও কোনো অজুহাত নয়। ক্লাসিফিকেশন নাই বইমেলায়। এটা দুঃখজনক। আমি একটা আর্ট বা ফিল্মের বই কিনবো। আমি সব স্টলে গিয়ে খুঁজবো কেন? আমি তো একটা জায়গায় গিয়ে শিল্প বা আর্টের বই খুঁজবো। আরেক জায়গায় গিয়ে খুঁজবো ফিকশন। আরেকটা জায়গায় গিয়ে দেখবো অনুবাদ বই কারা বের করেছে, অনুবাদের জন্য এরা বিখ্যাত। অর্থাৎ এগুলো এতো দিনে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু হয়নি। এই যে দেখছেন মেলার স্পেস সংকট ঘুঁচে গেছে। মানুষ ঘুরে ফিরে বই দেখতে পারছে। তাহলে ওটাও হতে পারে। আরেকটা হচ্ছে, অন্য পাবলিশারের বই স্টলে তোলা বা বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু সব বই, বই কিনা সেটাও কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এর একটা নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি বলে মনে করি। এ জন্য অবশ্য পাবলিশারদেরই বেশি সচেতন থাকা জরুরি। একাডেমিকভাবে কিছু করার নেই। মেলার পজেটিভ যে দিকটি আমি দেখেছি, বিগত কয়েক বছর যাবত এটা ঘটছে। এক সময় জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের কেন্দ্র করে বইমেলা হতো। তাদের বই বিক্র হওয়া না হওয়া, বইয়ের ব্যবসা, মেলার স্টলসজ্জা বা সৌন্দর্য, প্রচার এগুলো হতো। এখন সে অবস্থাটা নেই। ওরকম জনপ্রিয় সাহিত্যিক সব দেশেই থাকে, থাকাটাই স্বাভাবিক। তার বই বিক্রি হবে, সেটাও জাতির একটা ডায়মেনশন। এটা পজেটিভ। কিন্তু শুধু ওটাই কেন্দ্র হয়ে গেলে সমস্যা। সেটা হয়েই গিয়েছিল এক সময়। এখন সেটা নেই। আরেকটা পজেটিভ দিক হচ্ছে, আমরা যখন মানিক-বঙ্কিম-বিভূতি-শরৎ বা রবীন্দ্র খুঁজেছি, সেটা সব সময়ই পশ্চিমবঙ্গ নির্ভরতা ছিল। সেই নির্ভরতার জয়গাটা আর আমাদের প্রয়োজন নেই। এখন আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। এখন আমরা তাদের বই ছাপছি। আমাদের ছাপার মানও ভালো। সেটা একটা অর্জন। আর যদি দাম হিসাব করি, আমাদের বইয়ের দাম কিন্তু অত বেশি নয়। ইন্ডিয়ান মুদ্রা যদি কারেনসিতে ভাগ করি তাহলে আমাদেরগুলোর দাম কাছাকাছির মধ্যে। বইয়ের আর্ট, স্টল-প্যাভিলিয়ন ব্যবস্থা, ক্লাসিফিকেশন, ঘোষণা সবকিছু মিলিয়েই তো বইমেলা। আমি চাইবো সবকিছুর যেন একটা কম্বিনেশন থাকে। লেখালেখির এখন অনেক মাধ্যম আছে। প্রিন্ট-অনলাইন-বই-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? মইনুদ্দীন খালেদ : ব্যক্তিগতভাবে আমি একটা জিনিস জানাতে চাই, এটাই তো উদ্দেশ্য। সে ক্ষেত্রে প্রিন্ট মিডিয়ার ওপর নির্ভরতা হারালে চলবে না। বইয়ের যে একটা ক্লাসিক পাঠ আছে তাও গুরুত্বপূর্ণ। বই পাঠের যে আর্ট আছে, যেভাবে হাতে বই নিয়ে পড়ি, সেভাবে একটা ধর্মগ্রন্থও ধরি, সেভাবে আমি প্রার্থনা বা মোনাজাতও করি। এ ভাবে বই ধরা, তার সঙ্গে আমার ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের সম্পর্ক, চোখের সম্পর্ক, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সম্পর্ক। আরেকটি কথা, কাগজটা কিন্তু ট্রুথ। সে অর্থে স্ক্রিনটা কিন্তু ফেক। যদিও সত্যেরও অনেক তল আছে। যাই হোক, বইটা আমার কাছে সত্য মনে হয়েছে কারণ বইটা আমার কাছে। কিন্তু ই-বুক বা অনলাইন যাই বলি, সে কিন্তু কাছে থেকেও নেই। সব সময় দৃশ্যমান নয়। ইচ্ছে মতো নয়। তবে এ ক্ষেত্রে সুবিধা হলো, এখানে সম্ভাবনা অনেক বেশি। আমরা যদি আজ লেখালেখির কথা চিন্তা করি, যদি ব্লগ-অনলাইন বা ওয়েব পেজ খুলি আমরা কিন্তু পারি। আমরা যদি সুন্দর গ্রাফিকস্ দিয়ে বই বের করতে চাই সেটা অনেক টাকার বিষয়। অনলাইনে কিন্তু বাসায় বসে আমি নিজে নিজে ডিজাইন করতে পারি। সে ক্ষেত্রে এটা ভালো জিনিস। ওটা তো আমারই অর্থাৎ মানুষেরই বই। আমাকে সেখানেও যেতে হবে। পাশাপাশি আমাদের বইয়ে মান উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে। আপনি লক্ষ্য করবেন, বইয়ে কোনো গ্রাফিকস নেই, পেজ মেকাপ নেই। আগে বইয়ের অঙ্গসজ্জা বলতে একটা বিষয় ছিল। সেটা কোথাও নেই। একটা প্রিন্টার্স লাইন থেকে বোঝা যায় না, কী বলতে চাচ্ছে সে। অনেক বই আছে দেখবেন, বইটা হয়তো আপনি এখন বের করেছেন কিন্তু এর প্রথম এডিশন ছিল হয়তো পঞ্চাশ বছর আগে। তখন বইটির কী অবস্থা ছিল তার কোনো তথ্য থাকে না সেই বইয়ে। তার ভূমিকা, তার তথ্যাবলি, তার প্রচ্ছদ- এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এটা কিন্তু বইয়ের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ধরুন সৈয়দ ওয়ালীউল্লা’র ‘লাল সালু’ বেরিয়েছিল ১৯৪৮ সালে। এখনকার ‘লাল সালু’তে সে সময়ের কোনো তথ্য নেই। এতে ওই বইয়ের ইতিহাসটি হারিয়ে যাচ্ছে। বই সংক্রান্ত এমন আরো অনেক বিষয়ে চিন্তা প্রসারিত করা যায়। আমাদের তা করতে হবে। একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৬-০২-০১৫:
Link copied!